আহমেদ ফেরদাউস খান
প্রকাশ : ১৩ মার্চ ২০২৫ ১২:৩৩ পিএম
প্রবা গ্রাফিক্স
দীর্ঘদিন ধরেই অস্থিরতা চলছে পুঁজিবাজারে। ফলে মন্দাবস্থা থেকে বেরিয়ে আসতে পারছে না দেশের পুঁজিবাজার। অন্যদিকে টানা দরপতনের কারণে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে উদ্বেগ বিরাজ করছে। এ কারণে অনেক বিনিয়োগকারী পুঁজিবাজার ছেড়ে চলে গেছেন। কমেছে বিদেশি বিনিয়োগ। কিন্তু এসবের মধ্যেও গত আট মাসে বেনিফিশিয়ারি ওনার্স (বিও) হিসাব বেড়েছে। ২০২৪ সালের ৬ আগস্ট থেকে চলতি বছরের ১১ মার্চ পর্যন্ত শেয়ারধারী হিসাব বেড়েছে ১৮ হাজার ৬৯৮টি। সেন্ট্রাল ডিপোজিটরি বাংলাদেশ লিমিটেড (সিডিবিএল) সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পুঁজিবাজারে ধারাবাহিক মন্দা পরিস্থিতিতে বিও হিসাবধারীদের সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়া ইতিবাচক। এটা ধরে রাখতে হবে। এখন যেভাবে পুঁজিবাজার চলছে, এভাবে বেশি দিন চলতে দেওয়া যাবে না। তাহলে পুঁজিবাজারে আর বিনিয়োগকারী খুঁজে পাওয়া যাবে না। নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোকে এটা কাজে লাগাতে হবে। আস্থা ফেরাতে মনোযোগ দেওয়া উচিত তাদের।
সিডিবিএলের তথ্যমতে, গত ৬ আগস্ট বিও হিসাবের সংখ্যা ছিল ১৬ লাখ ৫১ হাজার ১৮টি; যা গত ১১ মার্চ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৬ লাখ ৬৯ হাজার ৭১৬টিতে। ৬ আগস্টে পুরুষ বিও হিসাবধারী ছিল ১২ লাখ ৪৮ হাজার ৫৪৫টি, যা ১১ মার্চ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১২ লাখ ৬৫ হাজার ৩৬৩টিতে। সে হিসাবে গত আট মাসে পুরুষ বিও হিসাবধারীর সংখ্যা বেড়েছে ১৬ হাজার ৮১৮টি। অন্যদিকে নারী বিও হিসাবধারীর সংখ্যা বেড়েছে ১ হাজার ৮৮০টি। ৬ আগস্ট পুঁজিবাজারে নারী বিও হিসাবধারীর সংখ্যা ছিল ৪ লাখ ২ হাজার ৪৭৩, যা ১১ মার্চ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪ লাখ ৪ হাজার ৩৫৩টিতে।
প্রসঙ্গত, বিও হলো পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের জন্য ব্রোকারেজ হাউস অথবা মার্চেন্ট ব্যাংকে একজন বিনিয়োগকারীর খোলা হিসাব। এই বিও হিসাবের মাধ্যমেই বিনিয়োগকারীরা পুঁজিবাজারে লেনদেন করেন। বিও হিসাব ছাড়া পুঁজিবাজারে লেনদেন করা সম্ভব না। বিও হিসাবের তথ্য রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব পালন করে সিডিবিএল।
দেশের পুঁজিবাজারে বিদেশি ও প্রবাসী বিনিয়োগকারীদের সংখ্যা কমলেও শেখ হাসিনা সরকার পতনের পর স্থানীয় তথা দেশি বিনিয়োগকারীদের সংখ্যাও বাড়তে দেখা যাচ্ছে। গত চার মাসে স্থানীয় বিনিয়োগকারীদের বিও হিসাবে বেড়েছে। এই বৃদ্ধিকে চমক বলে আখ্যায়িত করেছেন খাত সংশ্লিষ্টরা।
পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ পরিস্থিতি নিয়ে ডিএসই ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশন সভাপতি সাইফুল ইসলাম প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, ‘সরকার পরিবর্তনের পর শুরু হওয়া সংস্কার এখনও চলমান। সরকার পরিবর্তনের পর আগস্টে বিনিয়োগ বাড়ে। এরপর বিদেশি বিনিয়োগ অনেক কমে যায়। এখনও অনেক বিদেশি বিনিয়োগকারী বাজার পর্যবেক্ষণ করছেন। তারা সংস্কারের দিকে তাকিয়ে আছেন।’
তিনি বলেন, ‘বিও হিসাবধারীদের সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়া কিছুটা হলেও ইতিবাচক। তবে যা বাড়ছে, তা খুব একটা বেশি নয়। বিদেশি বিনিয়োগ কমে যাওয়ায় আমাদের পুঁজিবাজারে এখন দেশি বিনিয়োগকারী বেড়েছেÑ যা খুব একটা ইতিবাচক নয়।’
ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে গত ৫ আগস্ট প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করেন শেখ হাসিনা। পদত্যাগ করে তিনি দেশে ছেড়ে পালিয়ে যান। সরকার পতনের পর ৮ আগস্ট দেশ চালানোর দায়িত্ব নেয় অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। এরই মধ্যে এই সরকারের প্রায় সাড়ে ৮ মাস পার হয়েছে। শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারের পতনের পর প্রথম চার কার্যদিবস পুঁজিবাজারে বড় উত্থান হলেও অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর পুঁজিবাজারে পতনের পাল্লা ভারী হয়েছে। তবে পুঁজিবাজারে মন্দা দেখা দিলেও বিনিয়োগকারীদের সংখ্যা বাড়তে দেখা যাচ্ছে।
অবশ্য সার্বিকভাবে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগকারীর সংখ্যা বাড়লেও বিদেশি ও প্রবাসী বিনিয়োগকারীর সংখ্যা কমছে। বিদেশিদের পুঁজিবাজার ছাড়ার প্রবণতা অব্যাহত থাকলেও সরকার পতনের পর স্থানীয় বিনিয়োগকারীদের সংখ্যা বাড়তে দেখা যাচ্ছে।
বাজারের সার্বিক পরিস্থিতি জানতে চাইলে রাষ্ট্রায়ত্ত বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠান ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশের (আইসিবি) চেয়ারম্যান ও পুঁজিবাজার বিশ্লেষক অধ্যাপক আবু আহমেদ প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, ‘বাংলাদেশে তো এমনিতেই বিদেশি বিনিয়োগ কম। গত দুই-তিন বছর ধরেই কমছে। অন্যান্য দেশের তুলনায় আগস্টে যা বাড়ছে, তা খুবই কম। সরকার পরিবর্তন হওয়ায় কিছু আসছিল। কিন্তু বাজারে এখনও সরকার পরিবর্তনের ভালো কোনো প্রভাব পড়েনি। বিও হিসাবধারী ৮ মাসে যা বেড়েছেÑ তা পুঁজিবাজারে খুব একটা কাজে আসবে না। বাজার যদি স্থির না হয় তাহলে বিও হিসাবধারী বৃদ্ধি পাওয়াতে লাভ নেই।’