প্রবা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ০৯ মার্চ ২০২৫ ১১:০৬ এএম
প্রবা গ্রাফিক্স
বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান ও তিন কমিশনারের পদত্যাগের দাবির কারণে অস্থির হয়ে ওঠে দেশের পুঁজিবাজার। তাদের পদত্যাগের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিলের পাশাপাশি এক দিন কর্মবিরতিও পালন করেন সংস্থাটির কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। এ সময় বন্ধ হয়ে যায় পুঁজিবাজারের ওপর বিএসইসির নজরদারি সংক্রান্ত সার্ভিলেন্স কার্যক্রম। বিএসইসির সার্ভিলেন্স ছাড়াই পুরো এক দিন চলে পুঁজিবাজারের লেনদেন। তবে পুঁজিবাজারে গত সপ্তাহে পাঁচ দিনের তিন দিনই দরপতন হয়েছে। এতে কমেছে বাজার মূলধন। গত সপ্তাহে ডিএসইর বাজার মূলধন কমেছে ১৩ হাজার কোটি টাকার ওপরে।
ঘটনার শুরু গত ৪ মার্চ, মঙ্গলবার। বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক (ইডি) সাইফুর রহমানকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠায় বর্তমান কমিশন। এর প্রতিবাদে আন্দোলনে নামে সংস্থাটির কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। পরের দিন বুধবার বিক্ষোভ মিছিলের পাশাপাশি কর্মবিরতির মতো কর্মসূচির ঘোষণা দেয় সংস্থাটির কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। বিএসইসির চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদ ও কমিশনারদের পদত্যাগের জন্য এক দিনের আল্টিমেটাম দিয়ে কর্মবিরতির মতো কঠোর কর্মসূচি দেন তারা। গত বৃহস্পতিবার থেকে কর্মবিরতি পালন করছেন আন্দোলনরত কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। কর্মসূচি চলাকালে ফের বিক্ষোভ ও মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করছেন বিনিয়োগকারীরা। তারা বিএসইসির কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দাবির সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করে এ কর্মসূচি পালনের উদ্যোগ নিয়েছেন।
গত বৃহস্পতিবার সকালে বিএসইসি ভবনের সামনে বাংলাদেশ ক্যাপিটাল মার্কেট ইনভেস্টর অ্যাসোসিয়েশনের (বিসিএমআইএ) নেতৃত্বে বিক্ষোভ কর্মসূচি শুরু করা হয়। বিসিএমআইএর সমন্বয়ক নুরুল ইসলাম মানিক বলেন, বিএসইসির চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদের পদত্যাগের দাবিতে ক্ষতিগ্রস্ত বিনিয়োগকারীদের নিয়ে আমরা মাঠে নেমেছি। বিএসইসির কর্মকর্তা-কর্মচারীরা যে দাবি নিয়ে লড়ছেন, আমরাও একই দাবিতে বিক্ষোভ ও মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করছি।
তবে কোনো ধরনের অন্যায় দাবির কাছে আমরা মাথা নত করে পদত্যাগ না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বিএসইসি চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদের নেতৃত্বাধীন কমিশন। সেনা ও কোস্টগার্ড সদস্যদের কড়া নিরাপত্তা বেষ্টনীর মধ্য দিয়ে কার্যালয়ে প্রবেশ করেন বিএসইসি চেয়ারম্যান ও কমিশন সদস্যরা। এরপর তিনি সাংবাদিকদের এ কথা বলেন।
বিএসইসির অভ্যন্তরে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মাঝে সৃষ্ট ঘটনায় গভীর উদ্বেগ জানিয়েছে স্টক ব্রোকারদের সংগঠন ডিএসই ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ডিবিএ) এবং বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিএমবিএ)। পুঁজিবাজারের বৃহত্তর স্বার্থে এই ঘটনার দ্রুত সমাধান চেয়ে সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের হস্তক্ষেপ দাবি করেছে সংগঠন দুটি।
অন্যদিকে গত সপ্তাহে দেশের পুঁজিবাজারে লেনদেন হওয়া পাঁচ কার্যদিবসের মধ্যে তিন কার্যদিবসেই দরপতন হয়েছে। এতে সপ্তাহজুড়ে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) লেনদেন হওয়া বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের দাম কমেছে। সঙ্গে কমেছে সূচকও। গত সপ্তাহে লেনদেনের পরিমাণও কমেছে। পাশাপাশি ডিএসইর বাজার মূলধন ১৩ হাজার কোটি টাকার ওপরে কমেছে।
ডিএসইতে ৮৬টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের দাম বেড়েছে। বিপরীতে কমেছে ২৮৯টির। আর অপরিবর্তিত ছিল ২০টির শেয়ারের দাম। অর্থাৎ ৭৩ শতাংশ প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের দাম কমেছে। অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের দাম কমায় সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসের লেনদেন শেষে ডিএসইর বাজার মূলধন দাঁড়িয়েছে ৬ লাখ ৮২ হাজার ১৪৭ কোটি টাকা। যা আগের সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে ছিল ৬ লাখ ৯৫ হাজার ৩৬৪ কোটি টাকা। অর্থাৎ এক সপ্তাহের ব্যবধানে বাজার মূলধন কমেছে ১৩ হাজার ২১৭ কোটি টাকা বা ১ দশমিক ৯০ শতাংশ। আগের সপ্তাহে বাজার মূলধন বাড়ে ৫ হাজার ৪৫২ কোটি টাকা। এর আগে টানা ছয় সপ্তাহ ডিএসইর বাজার মূলধন বাড়ে। ছয় সপ্তাহের বাজার মূলধন বাড়ে ৩৮ হাজার ৪২৪ কোটি টাকা।
বাজার মূলধন কমার পাশাপাশি গত সপ্তাহে সূচকেরও পতন হয়েছে। ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক ডিএসইএক্স গত সপ্তাহে কমেছে ৪৩ দশমিক ৩৪ পয়েন্ট বা দশমিক ৮৩ শতাংশ। আগের সপ্তাহে সূচকটি বাড়ে ৪৬ দশমিক ৯৩ পয়েন্ট বা দশমিক ৯০ শতাংশ। ইসলামী শরিয়াহ্ ভিত্তিতে পরিচালিত কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই শরিয়াহ্ সূচক গত সপ্তাহজুড়ে কমেছে ৬ দশমিক ১১ পয়েন্ট বা দশমিক ৫২ শতাংশ। আগের সপ্তাহের সূচকটি বাড়ে ৪ দশমিক শূন্য ৮ পয়েন্ট বা দশমিক ৩৫ শতাংশ। আর বাছাই করা ভালো কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই-৩০ সূচক গত সপ্তাহজুড়ে কমেছে ১৫ দশমিক ৮৭ পয়েন্ট বা দশমিক ৮৩ শতাংশ। আগের সপ্তাহের সূচকটি কমে ৪ দশমিক ৩৪ পয়েন্ট বা দশমিক ২৩ শতাংশ।
সবকটি মূল্যসূচক কমার পাশাপাশি ডিএসইতে লেনদেনের গতিও কমেছে। গত সপ্তাহের প্রতি কার্যদিবসে ডিএসইতে গড়ে লেনদেন হয়েছে ৩৬২ কোটি ৭০ লাখ টাকা। আগের সপ্তাহে প্রতিদিন গড়ে লেনদেন হয় ৫১৮ কোটি ৬ লাখ টাকা। অর্থাৎ প্রতি কার্যদিবসে গড় লেনদেন কমেছে ১৫৫ কোটি ৩৬ লাখ টাকা বা ২৮ দশমিক ৭৯ শতাংশ।
সপ্তাহজুড়ে ডিএসইতে টাকার অঙ্কে সব থেকে বেশি লেনদেন হয়েছে ওরিয়ন ইনফিউশনের শেয়ার। এ কোম্পানিটির শেয়ার প্রতিদিন গড়ে লেনদেন হয়েছে ২১ কোটি ৪৬ লাখ টাকা, যা মোট লেনদেনের ৫ দশমিক ৯২ শতাংশ। দ্বিতীয় স্থানে থাকা প্রাইম ব্যাংকের শেয়ার প্রতিদিন গড়ে লেনদেন হয়েছে ৮ কোটি ৩২ লাখ টাকা। প্রতিদিন গড়ে ৭ কোটি ৬৭ লাখ টাকা লেনদেনের মাধ্যমে তৃতীয় স্থানে রয়েছে বিচ হ্যাচারি। এ ছাড়া লেনদেনের শীর্ষ ১০টি প্রতিষ্ঠানের তালিকায় রয়েছেÑ শাইনপুকুর সিরামিক, আলহাজ টেক্সটাইল, লাভেলো আইসক্রিম, রবি, কেডিএস, ফু-ওয়াং ফুড এবং আইএফআইসি ব্যাংক।