সাক্ষাৎকারে লুক ইনস্টিটিউটের প্রতিষ্ঠাতা
প্রবা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ০৮ মার্চ ২০২৫ ২১:০৮ পিএম
আপডেট : ১৫ মার্চ ২০২৫ ১৪:২৬ পিএম
আসগর মিরন
কেউ ভাবেনি যে বিউটি পার্লার ব্যবসা কখনও একটি শিল্পে পরিণত হবে। কিন্তু দিন যত যাচ্ছে ফ্যাশন সচেতন মানুষের সংখ্যা ততো বাড়ছে । মানুষের আগ্রহ বাড়ায় বিউটিশিয়ান পেশায় যোগদানের প্রবণতাও বাড়ছে। যেখানে আগে কেউ বিবাহ অনুষ্ঠানের বাইরে সাজসজ্জা নিয়ে মাথাই ঘামাত না। যেকোনো পরিস্থিতিতে, মানুষ তাদের চেহারা এবং রূপসজ্জা সম্পর্কে আগের চেয়ে অনেক বেশি সচেতন। যার ফলে এই খাতে কর্মসংস্থান বেড়েছে এবং বিউটিফিকেশনের বাজারও প্রসারিত হয়েছে। সৌন্দর্য শিল্পের পরিধি, সম্ভাবনা, চ্যালেঞ্জগুলি নিয়ে প্রতিদিনের বাংলাদেশের সঙ্গে কথা বলেছেন লুক ইনস্টিটিউটের প্রতিষ্ঠাতা আসগর মিরন।
প্রতিবেদক: বিউটিফিকেশন পেশায় এলেন কেন?
আসগর মিরন: বিউটি পার্লার শিল্প আসলে অনেক আগে থেকেই শুরু হয়েছিল কিন্তু তা পরিপূর্ণ হয়ে উঠেনি। সময়ের সাথে সাথে মানুষ সচেতন হচ্ছে। এখন মেয়েরা পাশাপাশি ছেলেরাও পার্লারে যাচ্ছে। মানুষের চাহিদা ও আগ্রহ দেখে মানসম্মত পরিষেবা নিশ্চিত করার লক্ষ্যেই মূলত এ পেশায় আশা। এই শিল্পকে আরও বেশি আধুনিক করায় আমার মূল লক্ষ্য। আমি শতভাগ আশাবাদী যে আমাদের কাজ সর্বস্তরে গ্রহণযোগ্যতা পাবে।
প্রতিবেদক: এই শিল্পের ভবিষ্যৎ সম্পর্কে আপনার মতামত কি ?
আসগর মিরন: বর্তমানে দেশের মানুষ উদ্যোক্তা হতে কিংবা ভালো চাকরি পেতে বিউটি পার্লারে কাজ শিখছে। তাছাড়া দেশের বাইরে পেশাদার বিউটিশিয়ানদের চাহিদা থাকায় অনেকে এ কাজ শিখে বিদেশে যাচ্ছে। বিদেশে এই খাতে আয় বা আয়ের সম্ভাবনা দ্রুতগতিতে বাড়ছে। এই কারণেই মানুষ যখন দেশের বাইরে যায় তখন এই কাজটি করে এবং সেই সংখ্যাটি বিশাল।
প্রতিবেদক: বিউটিশিয়ানদের চাহিদা কোথায় বেশি? দেশে না বিদেশে?
আসগর মিরন: চাহিদা সব জায়গায় আছে, কিন্তু বিদেশে মানব সম্পদের অভাবের কারণে তা অনেক বেশি। বাংলাদেশে পরিস্থিতি একই রকম নয়। তাছাড়া বাংলাদেশে এখনো এই পেশাকে যথাযথ সম্মান দেওয়া হয় না; অনেকেই অবজ্ঞার চোখে দেখে। কিন্তু বিদেশে বিউটিশিয়ানদের শিল্পীর মতো মর্যাদা দেওয়া হয় এবং তাদের বেতন ও সুযোগ-সুবিধাও ভালো মানের। একজন শিল্পীর যা প্রাপ্য, তা পান। যদি আপনি ইউরোপের কথা বলেন, তাহলে ইউরোপে চুল কাটার গড় মূল্য ৪০ ডলারের কম নয় এবং যদি আপনি চুল কাটার সাথে সাথে দাড়ি শেভ করেন, তাহলে দেখা যাবে তার মূল্য শুরুই হবে ৬৫ ডলার থেকে। এমনকি অস্ট্রেলিয়াতেও চুল কাটার দাম ৪৫ ডলার থেকে শুরু হয় যেটা সাধারণত মানুষ ফ্রিলান্সইং করে আয় করে, এবং বাংলাদেশের মধ্যে তা অসম্ভব। যেহেতু আয়ের সুযোগ অনেক বেশি তাই হোটেল, রেস্তোরাঁ বা পেট্রোল পাম্পের মতো অন্যান্য চাকরি বা অন্য কোনও দক্ষতাভিত্তিক চাকরি না করে মানুষ বিদেশে গিয়ে এই চাকরির প্রতি বেশি আগ্রহী হয় ।
প্রতিবেদক: এই সম্ভাবনা কাজে লাগানোর জন্য কী কী উদ্যোগ নেওয়া যেতে পারে বলে মনে করেন?
আসগর মিরন: প্রথমে আপনাকে নির্ধারণ করতে হবে, কোন দিকে যেতে চান। আমরা এখনও মনে করি বিউটিফিকেশন শিল্প কেবল চুল কাটা বা চুলের স্টাইলের মধ্যেই সীমাবদ্ধ। কিন্তু বাস্তবে জিনিসগুলি আরও ব্যাপক। বিউটিফিকেশনে অনেকগুলি বিভাগ রয়েছে। যদি কেউ কেবল মেক-আপের উপরও সম্পূর্ণ জ্ঞান অর্জন করতে চায়, তবে তাকে কমপক্ষে ৩ থেকে ৪ বছর পড়াশোনা করতে হবে। কেউ যদি বডি ম্যাসাজ শিখতে চায় তবে তার প্রায় ১ বা ২ বছরের একটি কোর্স করা উচিত। হেয়ার থেরাপিস্ট বা বিশেষজ্ঞ হতে চাইলে তাদের সেই বিষয়ে একইভাবে “বিশেষজ্ঞ” হতে হবে, যার মানে কোনো বিষয়ে দক্ষ হওয়া। আমরা প্রায় মনে করি, অল্প অল্প করে সবকিছুই শেখা যথেষ্ট, কিন্তু আসলে ব্যাপারটা এমন নয়। একজন হেয়ার এক্সপার্ট কেবল একজন হেয়ার এক্সপার্ট। তার কখনই মেকআপ করতে যাওয়া উচিত নয়। এবং যেহেতু মেকআপের জিনিসপত্রে অনেক ডিটেইলিং থাকে, তাই যদি কেউ মেকআপ শেখে, তাহলে সেই ক্ষেত্রেই বিশেষজ্ঞ হওয়া ভালো। যদি কেউ এক ধরণের বিষয়ে পারদর্শী হতে চায়, তাহলে সেই বিষয়ে এগিয়ে যাওয়াই বেশি গ্রহণযোগ্য।
প্রতিবেদক: “বিউটিশিয়ান” পেশায় যারা আসতে চান তাদের আপনি কী পরামর্শ দেবেন?
আসগর মিরন: কেন তারা এই পেশায় আসতে চায় প্রথমে এটা ঠিক করা জরুরী - চাকরির জন্য, উদ্যোক্তা হওয়ার জন্য, দেশের বাইরে অতিরিক্ত আয়ের জন্য, খণ্ডকালীন কাজের জন্য নাকি ফ্রিল্যান্সিংয়ের জন্য। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই আমরা বাংলাদেশে চাকরির প্রচার করি না, কারণ বিশেষভাবে এই শিল্পে প্রশিক্ষণার্থীদের সুযোগ অনেক বিস্তীর্ণ। আমরা বরং উদ্যোক্তা হওয়ার পরামর্শ দিই এবং সেই অনুযায়ী আমাদের কোর্সগুলি তৈরি করেছি।
প্রতিবেদক: বিদেশে বিউটিফিকেশন পেশা বেছে নিলে একজন মানুষ আসলে কত আয় করতে পারে?
আসগর মিরন: আমি আগেই বলেছি, একজন ব্যক্তি সাধারণত ফ্রিল্যান্সিং করলে চুল কাটা এবং শেভিংয়ে দিনে ৬৫ ডলার পর্যন্ত আয় করতে পারেন। আর যদি বেতনের কথা বলি তাহলে সর্বনিম্ন ৩৫০০ ডলার থেকে ৮৫০০ ডলার পর্যন্ত আয় করা সম্ভব।
প্রতিবেদক: আপনি কি মনে করেন এই পেশায় দীর্ঘ ক্যারিয়ার গড়া সম্ভব?
আসগর মিরন: অবশ্যই! এই পেশায় দীর্ঘ ক্যারিয়ার গড়ে তোলা সম্ভব। যদি কেউ একটু একটু করে সবকিছু না জানতে চেয়ে বরং নির্দিষ্ট বিষয়ের বিশেষজ্ঞ হতে পারে। তাহলে সেখান থেকে তৈরি হওয়া ক্যারিয়ার অনেক বেশি টেকসই হবে।
প্রতিবেদক: আপনার কি মনে হয় দেশে এই পেশা বেছে নেওয়া সঠিক সিদ্ধান্ত হবে?
আসগর মিরন: পেশাটি বেছে নেওয়ার ব্যাপারটি একটি ব্যক্তিগত বিষয়। যদি কেউ সত্যিই আগ্রহ ও আবেগ অনুভব করেন। তাহলে তাকে এটি করা উচিত। আগ্রহ না থাকলে আসলে এই পেশা বেছে না নেওয়াই স্বাভাবিক।
প্রতিবেদক: দক্ষ বিউটিশিয়ান গড়ে তুলায় আপনার ভূমিকা কী?
আসগর মিরন: আসলে আমরা বলেছি যে যারা দেশে বিউটি পার্লার বা সেলুন ব্যবসা শুরু করতে চান, তাদের আমরা সম্পূর্ণরূপে প্রস্তুত করি যাতে তারা বাংলাদেশে সফলভাবে ব্যবসা করতে পারেন। আর যদি তারা দেশের বাইরে কাজ করতে চান, সেক্ষেত্রে আমরা তাদের কিছু প্যাকেজ অফার করি যেখানে তারা অল্প সময়ের মধ্যে এই কোর্সগুলির মাধ্যমে বিশেষজ্ঞ হয়ে উঠতে পারেন।
প্রতিবেদক: কেউ যদি বিউটিশিয়ান হতে চায়, তাহলে কীভাবে শুরু করবে?
আসগর মিরন: বিউটিশিয়ান পেশায় যুক্ত হতে চাইলে প্রথমে কিছু পেশাদার কোর্স সম্পন্ন করা প্রয়োজন। যে কেউ সহজেই ইউটিউব, গুগলে সমস্ত তথ্য পেতে পারেন এবং বিষয়গুলো শিখতে পারেন। যেকোনো ইনস্টিটিউটে কোর্স করা ছাড়াও, যদি কেউ নিজেরাই উন্নতি করার চেষ্টা করে, তবে তাও খুব সহজেই সম্ভব।