× ই-পেপার প্রচ্ছদ সর্বশেষ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি শিক্ষা ধর্ম ফিচার ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

বিশেষায়িত বলে ‘দুর্গন্ধযুক্ত পানি’ উচ্চদামে বিক্রি

প্রবা প্রতিবেদক

প্রকাশ : ০৩ মার্চ ২০২৫ ২১:২৭ পিএম

আপডেট : ০৩ মার্চ ২০২৫ ২১:৩২ পিএম

বিশেষায়িত বলে ‘দুর্গন্ধযুক্ত পানি’ উচ্চদামে বিক্রি

বিশেষায়িত বলে দুর্গন্ধযুক্ত খাবার পানি বিক্রি করছে রাজধানীর অভিজাত গুলশান এলাকার হোটেল ‘সান্তুর রেস্টুরেন্ট’। শুধু দুর্গন্ধযুক্ত নয়, সামুরাই নামের ওই বোতলজাত পানি উচ্চ দামে বিক্রি করে রেস্টুরেন্টটি। বাজারে অন্যান্য ব্র্যান্ডের আধা লিটারের বোতলজাত পানি যেখানে ১৫-২০ টাকার মধ্যে পাওয়া যায়, সেখানে সান্তুর রেস্টুরেন্ট কাস্টমাইজড বলে বিক্রি করছে ৬০ টাকায়। 

সামুরাই প্যাকেজড ড্রিংকিং ওয়াটার নামের উচ্চ দামে বিক্রি করা দুর্গন্ধযুক্ত ওই পানি খেয়ে অনেকের বমির উপক্রম হয়েছে বলেও অভিযোগ পাওয়া গেছে। দুর্গন্ধযুক্ত পানি বিক্রির বিষয়টি সামনে এসেছে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) একটি অনুষ্ঠান শেষে। 

জানা গেছে, বিবিএস আয়োজিত ‘ভায়োলেন্স এগেইন্সট উইমেন (ভাউ)’ শীর্ষক জরিপ প্রকাশ অনুষ্ঠানে অতিথিদের জন্য খাবার সরবরাহের দায়িত্ব পায় গুলশানের সান্তুর নামের রেস্টুরেন্টটি। সেখানে খাবারের সঙ্গে ‘সামুরাই’ নামের আধা লিটারের একটি বোতলজাত পানি সরবরাহ করা হয়। 

অনুষ্ঠান শেষে ওই পানি খেয়ে একজনের বমির উপক্রম হয়। আরমান নামের ওই ব্যক্তি বলেন, ‘অনুষ্ঠানে নাস্তা করার সময় উপস্থিত একজন গণমাধ্যমকর্মী পানিতে দুর্গন্ধের বিষয়টি সামনে আনেন। ওই গণমাধ্যমকর্মী জানায় পানিতে দুর্গন্ধ, লাইনের পানির মতো লাগছে। পরে আমাকে টেস্ট করতে বললে অন্য একটি বোতল খুলে পানি মুখে নেওয়ার পরই প্রচণ্ড দুর্গন্ধ লাগে এবং বমির উপক্রম হয়, সঙ্গে সঙ্গে ওয়াশরুমে গিয়ে মুখ থেকে পানি ফেলে দেই। পরে অন্য আরেক গণমাধ্যমকর্মীও পানিতে দুর্গন্ধের অভিযোগ করেন।’ 

পরবর্তীতে উপস্থিত কয়েকজন পানিতে দুর্গন্ধের বিষয়টি খাবার সরবরাহকারী রেস্টুরেন্টের স্টাফ এবং বিবিএসের কর্মকর্তাদের নজরে আনে এবং তাদের খেয়ে দেখতে বলেন। উপস্থিত বিবিএসের কর্মকর্তা এবং সান্তুর রেস্টুরেন্টের স্টাফরাও পানি পান করে একইরকম অভিব্যক্তি প্রকাশ করেন। তবে অনুষ্ঠানে উপস্থিত ‘সান্তুর রেস্টুরেন্টের’ ম্যানেজার পরিচয় দেওয়া ইমরান নামে একজন পানি খেয়ে বলেন, কোনো দুর্গন্ধ নেই। এটা বিশেষায়িত পানি, এ কারণে এমন লাগছে। 

কিন্তু উপস্থিত বিবিএসের কর্মকর্তারা বলেন, পানিতে দুর্গন্ধ, স্বাভাবিক বোতলজাত পানির মতো না, বিশেষায়িত বলে তারা নিম্নমানের পানি দিয়েছে। 

তারা বলেন, খাবারের প্যাকেটে তারা সামুরাইয়ের পানি দিয়েছে, কিন্তু এখানে খাওয়ার জন্য আলাদা ‘মাম’ কোম্পানির পানি দিয়েছে। তারা হয়তো এটা ইচ্ছাকৃত করছে। কারণ খাবারের প্যাকেট নিয়ে অনেকে চলে যান, তাই তারা অভিযোগ করবে না ভেবেই এই কাজ করেছে খাবার সরবরাহকারী রেস্টুরেন্টটি। 

উপস্থিত অনেকে পানিতে দুর্গন্ধের অভিযোগ তোলার কারণে বাকি প্যাকেটগুলো থেকে পানির বোতল চেঞ্জ করে ফেলে এবং ‘সামুরাইয়ের’ পরিবর্তে ‘মামের’ বোতল ভরে দেয় তারা। দুর্গন্ধযুক্ত পানি বিক্রির বিষয়ে জানতে চাইলে সান্তুরের ম্যানেজার পরিচয় দেওয়া ইমরান সুর পাল্টে বলেন, ‘পানি তো আমরা উৎপাদন করি না, দুর্গন্ধ থাকলে সেটা উৎপাদনকারী কোম্পানির দোষ। আমরা খাবার সরবরাহ করি, পানি সামুরাই থেকে আনা হয়েছে। পানির যদি কোনো সমস্যা থাকে সেটা সামুরাই কোম্পানির দোষ। আমরা এর সঙ্গে জড়িত না। পানিতে দুর্গন্ধের বিষয়ে উৎপাদনকারী কোম্পানি বলতে পারবে।’ 

পানি পরীক্ষা না করে কেন বিক্রি করছেনÑ এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমরা তাদের পানি অনেক দিন ধরে নিয়ে থাকি, এর আগে এমন অভিযোগ পাইনি। এটি আমাদের কাস্টমাইজড পানি। তারপরেও যেহেতু অভিযোগ উঠেছে সামুরাইয়ের সঙ্গে আমরা কথা বলব। এর আগে কিছুই বলতে পারব না।’ 

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সামুরাই প্যাকেজড ড্রিংকিং ওয়াটার নামের ওই পানি উৎপাদন করে ‘ডাইনেস্টি ফুড অ্যান্ড বেভারেজ ইন্ডাস্ট্রিজ’। মুন্সীগঞ্জের সিরাজদিখানের ফ্যাক্টরিতে এই পানি উৎপাদন হয়। শুধু সামুরাই না, সাকুরা নামেও আরেকটি বোতলজাত পানি উৎপাদন করে প্রতিষ্ঠানটি। সামুরাই পানিতে দুর্গন্ধের বিষয়ে জানতে চাইলে প্রতিষ্ঠানটির ম্যানেজার রাজিব বলেন, ‘ইতোমধ্যে বিষয়টি শুনেছি। পানির কোয়ালিটি নিয়ে আমরা কোনো কম্প্রোমাইজ করি না, পানিতে কোনো দুর্গন্ধ হওয়ার প্রশ্নই আসে না।’ 

তিনি বলেন, ‘আমাদের পানি রাজধানীর বড় বড় হোটেলগুলোতে সরবরাহ করা হয়। তবে যেহেতু অভিযোগ উঠেছে, আমরা পানির স্যাম্পল কালেক্ট করে ল্যাবে পাঠানোর প্রস্তুতি নিয়েছি। কী কারণে দুর্গন্ধ হয়েছে সেটা ল্যাবটেস্টের পর বলা যাবে। তবে স্যাম্পল দেখে প্রাথমিকভাবে মনে হয়েছে, পানির বোতলগুলো অনেকদিন ধরে স্টোর করে রাখার কারণে এমন হতে পারে। সান্তুর রেস্টুরেন্ট হয়তো স্টোর করে রাখা পানিগুলোই ওই অনুষ্ঠানে দিয়েছে।’ 

পানিতে শুধু দুর্গন্ধ বিষয়টি এমন নয়, দুর্গন্ধযুক্ত আধা লিটারের ওই পানি আবার সান্তুর রেস্টুরেন্ট বিক্রি করছে ৬০ টাকা করে। অথচ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান ডাইনেস্টি ফুড অ্যান্ড বেভারেজ ইন্ডাস্ট্রিজের কাছ থেকে কিনছে মাত্র ২৫ টাকায়। অর্থাৎ কাস্টমাইজের কথা বলে প্রতিটি বোতলে ৩৫ টাকা বেশি লাভ করছে সান্তুর রেস্টুরেন্ট। কাস্টমাইজড বলা হলেও ওই কোম্পানির প্রতিটি পানির মান একই রকম বলে নিশ্চিত করেছে প্রতিষ্ঠানটি। 

এ বিষয়ে পানি উৎপাদনকারী কোম্পানিটির ম্যানেজার রাজিব বলেন, ‘আমাদের উৎপাদিত আধালিটার পানির দাম ২৫ টাকা। খুচরা পাইকারি সব এক রেট। তাহলে সান্তুর রেস্টুরেন্টের সরবরাহ করা পানি কেন ৬০ টাকা? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘তারা আমাদের কাছ থেকে কাস্টমাইজড করে নেয় এ কারণে তারা যে দাম বলে সেটা লিখে দিতে হয়। আমরা শুধু কাস্টমারের চাহিদা অনুযায়ী কাস্টমাইজড করে দেই।’ 

উচ্চ দামে পানি বিক্রির বিষয়ে মন্তব্য জানতে বারবার যোগাযোগ করেও সান্তুর রেস্টুরেন্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। এমনকি রেস্টুরেন্টটির ম্যানেজার ইমরানের সঙ্গে যোগাযোগ করেও পাওয়া যায়নি। যদিও ইমরানই এর আগে প্রতিষ্ঠানটির হয়ে কথা বলেন। তবে অভিযোগের বিষয়ে মালিকের বক্তব্য নিতে চাওয়ার পর থেকে ম্যানেজারের নম্বরও বেশিরভাগ সময় বন্ধ পাওয়া গেছে, হোয়াটসঅ্যাপে মেসেজ সিন করলেও কোনো রিপ্লাই দেননি ইমরান। 

সার্বিক বিষয়টি অবহিত করে মন্তব্য জানতে চাইলে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মোহাম্মদ আলীম আখতার খান বলেন, ‘এ বিষয়ে একটি অভিযোগ পেয়েছি, আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। পানিতে দুর্গন্ধ এবং উচ্চদামে বিক্রির বিষয়টি দেখা হবে, প্রমাণ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক : মোরছালীন বাবলা

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা