আরমান হেকিম
প্রকাশ : ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ১২:৩১ পিএম
আপডেট : ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ১২:৩১ পিএম
ফাইল ছবি
দেশের অর্থনীতিতে সংকট এখনও কাটেনি। বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের প্রায় ১৬ বছরের বিভিন্ন প্রকল্পের জন্য নেওয়া বিদেশি ঋণ এখন চাপ বাড়িয়েছে অন্তর্বর্তী সরকারের ওপর। বিদেশি মুদ্রার রিজার্ভ যখন বাড়ছে, একই সময়ে চাপ বাড়াচ্ছে আগে নেওয়া বিদেশি ঋণের কিস্তি পরিশোধে। চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরে আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ঋণ পরিশোধ বেড়েছে ৩০ শতাংশের বেশি। এ ছাড়া ঋণের প্রতিশ্রুতি ৬৭ দশমিক ২২ শতাংশ কমেছে।
অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) প্রকাশিত জানুয়ারি মাসের হালনাগাদ প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।
ইআরডির (জুলাই-জানুয়ারি) সাত মাসের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, চলতি অর্থবছর ঋণ পরিশোধ করা হয়েছে ২৪১ কোটি ৮৯ লাখ ডলার, বাংলাদেশি মুদ্রায় ২৯ হাজার কোটি টাকার কিছু বেশি। আগের অর্থবছরের একই সময়ে এ ঋণ পরিশোধের পরিমাণ ছিল ১৮৫ কোটি ৬৭ লাখ ডলার। অর্থাৎ গত বছরের একই সময়ের তুলনায় চলতি অর্থবছরের ঋণ পরিশোধের পরিমাণ বেড়েছে ৩০ দশমিক ২৭ শতাংশ।
এ সাত মাসে উন্নয়ন সহযোগীদের যে পরিমাণ প্রতিশ্রুতি আসার কথা ছিল সে পরিমাণ প্রতিশ্রুতি তো আসেইনি, বরং গত বছরের একই সময়ের তুলনায় প্রতিশ্রুতি কমেছে ৬৭ দশমিক ২২ শতাংশ।
ইআরডির কর্মকর্তারা জানান, অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতায় আসার পরে বৈদেশিক অর্থায়নের প্রকল্পের ক্ষেত্রে সতর্কভাবে এগোচ্ছে। পাইপলাইনে থাকা প্রকল্পগুলো নতুন করে পর্যালোচনা করছে। একই সঙ্গে প্রকল্পের গুরুত্ব ও অগ্রাধিকার বিবেচনায় নিয়ে ঋণ প্রক্রিয়াকরণের কাজ করছে। এ কারণে উন্নয়ন সহযোগীদের সঙ্গে নতুন প্রকল্পে চুক্তি হচ্ছে ধীরগতিতে।
তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, জানুয়ারি শেষে উন্নয়ন সহযোগীরা বিভিন্ন প্রকল্পে প্রতিশ্রুতি দিয়েছে মাত্র ২৩৫ কোটি ডলারের। গত বছরের একই সময়ে প্রতিশ্রুতি এসেছিল ৭১৭ কোটি ২১ লাখ ডলারের। অর্থাৎ বছরের ব্যবধানে প্রতিশ্রুতি কমেছে ৬৭ দশমিক ২২ শতাংশ।
সাম্প্রতিক বছরগুলোয় ক্রমেই বড় হয়েছে সরকারের ঋণ ও ঋণের সুদ পরিশোধের চাপ। চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরে তা অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে যাবে বলে অর্থ মন্ত্রণালয়ের এক হিসাবে উঠে এসেছে। মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪-২৫ অর্থবছরেই ঋণের আসল ও সুদ পরিশোধ বাবদ সবচেয়ে বেশি অর্থ পরিশোধ করতে হবে সরকারকে। এমনকি এ ব্যয় এবার রাজস্ব আহরণকেও ছাড়িয়ে যেতে পারে।
এ সাত মাসে বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়ায় বিদেশি ঋণনির্ভর প্রকল্পগুলোয় অর্থছাড়ও কমেছে। এ সময়ে বিদেশি ঋণের অর্থছাড় হয়েছে ৩৯৩ কোটি ৮৮ লাখ ডলার, গত অর্থবছরের একই সময়ে অর্থছাড় হয়েছিল ৪৩৯ কোটি ৮৪ লাখ ডলার। অর্থাৎ বছরের ব্যবধানে অর্থছাড় কমেছে ১০ দশমিক ৪৪ শতাংশ।
চলতি অর্থবছর উন্নয়ন সহযোগীদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি অর্থছাড় করেছে এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (এডিবি)। এ উন্নয়ন সহযোগী অর্থছাড় করেছে ১ বিলিয়ন ডলারের কিছু বেশি। বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় উন্নয়ন সহযোগী বিশ্বব্যাংক অর্থছাড় করেছে ৮৬ কোটি ডলারের কিছু বেশি।
তবে প্রতিশ্রুতি দেওয়ার দিক থেকে এগিয়ে রয়েছে বিশ্বব্যাংক। ৯৪ কোটি ডলারের বেশি প্রতিশ্রুতি এসেছে সংস্থাটির কাছ থেকে। এ সংস্থাটিই এ বছর সবচেয়ে বেশি প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৭০ কোটি ডলারের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে এডিবি।
প্রকল্প প্রস্তুত ও কাজের অগ্রগতি না হওয়ার কারণে ঋণের প্রতিশ্রুতি ও অর্থছাড় কমেছে বলে মনে করেন বেসরকারি গবেষণা সংস্থা ইনস্টিটিউট ফর ইনক্লুসিভ ফিন্যান্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (আইএনএম) নির্বাহী পরিচালক অর্থনীতিবিদ ড. মোস্তফা কে মুজেরী। প্রতিদিনের বাংলাদেশকে তিনি বলেন, প্রকল্পের আওতায় অর্থছাড় হয়ে থাকে কাজের অগ্রগতির ওপর। যতটুকু কাজ হয়েছে সেটির ওপরই উন্নয়ন সহযোগীরা অর্থছাড় করে থাকে। কাজের অগ্রগতি বাড়লে অর্থছাড়ও বাড়বে। এটি সাময়িক।
ঋণ ও ঋণের সুদ পরিশোধসহ সার্বিক পরিচালন ব্যয় মেটাতে সরকারকে রাজস্ব আহরণের ওপর নির্ভর করতে হয়। অন্যদিকে উন্নয়ন সহযোগীদের কাছ থেকে পাওয়া অনুদান ও ঋণের অর্থে বাস্তবায়িত হয় উন্নয়ন ব্যয়ের বড় অংশ। তবে প্রতিবছরই কাঙ্ক্ষিত পরিমাণে রাজস্ব আহরণে ব্যর্থ হচ্ছে সরকার। যদিও কখনই বাজেটে ঘোষিত রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে পারে না সরকার। গত ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেটে ৪ লাখ ৯৯ হাজার ৯৯৫ কোটি টাকা রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল। যদিও শেষ পর্যন্ত আলোচ্য অর্থবছরে ৪ লাখ ৮ হাজার ৫০০ কোটি টাকার রাজস্ব আহরণ করা সম্ভব হয়েছে। চলতি অর্থবছরের বাজেটে ৫ লাখ ৪১ হাজার ২ কোটি টাকা রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারিত রয়েছে।