বিআইডিএসের গবেষণা
প্রবা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ২০:১৬ পিএম
আপডেট : ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ২০:১৬ পিএম
গ্রামীণ অর্থনীতিতে ক্ষুদ্রঋণ প্রতিষ্ঠানগুলোর (এমএফআই) প্রতিযোগিতা বেড়ে যাওয়ার ফলে মহাজনদের সুদের হার উল্লেখযোগ্যভাবে কমেছে। তবে ব্যাংকের চেয়ে এখনও এনজিওর ঋণ নিতেই বেশি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন গ্রামের মানুষেরা। প্রতিযোগিতা বাড়লে সুদের হার ২৫ শতাংশ পর্যন্ত কমে যায়।বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজের (বিআইডিএস) এক গবেষণায় এ তথ্য উঠে আসে।
বৃহস্পতিবার (২০ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীর আগারগাঁওয়ের বিআইডিএস কনফারেন্স রুমে এ গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। অনুষ্ঠানে ‘ক্ষুদ্রঋণ প্রতিযোগিতা এবং মহাজনদের উপস্থিতি : তত্ত্ব এবং প্রমাণ’ শীর্ষক গবেষণাটি তুলে ধরেন অস্ট্রেলিয়া-দক্ষিণ এশিয়া গবেষণা কেন্দ্রের পরিচালক অধ্যাপক শ্যামল চৌধুরী।
গবেষণায় উঠে এসেছে, যখন একটি নতুন এনজিও কোনো গ্রামে প্রবেশ করে, তখন ঐ গ্রামে মহাজনের কাছ থেকে ঋণ নেওয়ার প্রবণতা ৩৩ শতাংশ কমে যায় এবং তাদের সুদের হার প্রায় ২৫ শতাংশ হ্রাস পায়।
অস্ট্রেলিয়া-দক্ষিণ এশিয়া গবেষণা কেন্দ্রের পরিচালক অধ্যাপক শ্যামল চৌধুরী বলেন, ‘বাংলাদেশে ব্যাংক ও এনজিওর সংখ্যা বাড়লেও মহাজনদের উপস্থিতি পুরোপুরি নির্মূল হয়নি। কারণ, অনেক গ্রামবাসী এখনও জরুরি প্রয়োজনে মহাজনদের কাছ থেকে ঋণ নিতে বাধ্য হন। এনজিওর ঋণই গ্রামের মানুষের মূল ভরসা।’
তিনি আরও বলেন, ‘৫০ শতাংশ গ্রামীণ ঋণগ্রহীতা এনজিও থেকে ঋণ নিলেও, প্রায় ২০ থেকে ৩০ শতাংশ মানুষ এখনও মহাজনদের কাছে ঋণ নেন।’
গবেষণায় উঠে এসেছে, বর্তমানে দেশের প্রতিটি গ্রামে গড়ে ৫-৬টি এনজিও কার্যক্রম পরিচালনা করছে। গ্রামের প্রায় ৫০ শতাংশ মানুষ এনজিও থেকে ঋণ নেয়, যেখানে ব্যাংক থেকে ঋণ নেওয়া মানুষের সংখ্যা মাত্র ৫ শতাংশের কম।
গবেষণায় দেখা গেছে, মহাজনদের গড় সুদের হার এখনও ১৪৫ শতাংশের মতো, যা এনজিওর সুদের হার (২৪-২৮ শতাংশ) থেকে কয়েকগুণ বেশি। যদিও এনজিওর ঋণের শর্ত তুলনামূলক সহজ, তবুও কিছু ক্ষেত্রে মহাজনের কাছে ঋণ নেওয়ার প্রবণতা রয়ে গেছে।
বিআইডিএসের গবেষণা পরিচালক কাজী ইকবাল বলেন, ‘মহাজনরা একদিকে উচ্চ সুদ নিলেও অন্যদিকে দ্রুত ঋণ দিতে পারে, যা এখনও গ্রামীণ অর্থনীতির বড় চ্যালেঞ্জ। তবে এনজিওর সংখ্যা বাড়ার ফলে এ প্রবণতা কমে আসছে।’
পল্লী কর্ম-সহায়ক ফাউন্ডেশনের (পিকেএসএফ) ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. ফজলুল কাদের বলেন, ‘এমএফআই এবং ঋণগ্রহীতাদের মধ্যে ঋণ বিতরণ সময়সীমা নিয়ে যে অমিল রয়েছে, তা অনেক সময় গ্রামীণ ঋণগ্রহীতাদের মহাজনদের কাছে ঋণ নেওয়ার জন্য বাধ্য করে।’
এ সময় অধ্যাপক শ্যামল বলেন, ‘বাজারে মহাজন থাকবে কি না তা নির্ভর করছে মহাজনের ঋণের চাহিদার ওপর। চাহিদা থাকলে মহাজনও থাকবে। কারণ হঠাৎ করে অসুস্থ হয়ে পড়ার কারণে মহাজনের কাছে এখনও মানুষ যাচ্ছে। ব্যাংকগুলো দ্রুত যাচ্ছে না। বেশি করে যখন এনজিও যাচ্ছে তখন গ্রামের মানুষ হসপিটালে যাবে।
তিনি বলেন, ‘উৎপাদনশীল খাতের ঋণ আসছে এনজিওদের কাছ থেকে যেমনÑ কৃষিজমি বন্ধক দিচ্ছে বা খাদ্যশস্য বন্ধক দিচ্ছে। তার বিনিময়ে ঋণ নিচ্ছে এনজিও থেকে। কিন্তু অন্য কোনো কারণে হঠাৎ করে ঋণের দরকার পড়ছে তখন মহাজনের কাছ থেকে ঋণ নিচ্ছে।’
সেমিনারে আরও বক্তব্য দেন ইকোনমিক রিসার্চ গ্রুপের নির্বাহী পরিচালক সাজ্জাদ জহির এবং বিআইডিএসের গবেষণা পরিচালক কাজী ইকবাল।