× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধি

দাম বাড়ল সবকিছুর

প্রবা ডেস্ক

প্রকাশ : ০৯ আগস্ট ২০২২ ২০:৩৫ পিএম

আপডেট : ০৯ আগস্ট ২০২২ ২১:২৭ পিএম

সংগৃহীত ছবি

সংগৃহীত ছবি

জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির প্রভাব পড়তে শুরু করেছে বহুমাত্রিকভাবে। এরই মধ্যে বাজারের প্রায় সব ধরনের পণ্যের দাম কেজিতে ২ থেকে ১০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে।

উত্তর বাড্ডা কাঁচাবাজারে বাজারের থলে নিয়ে সবজি বাজারের এদিক-সেদিক ঘুরতে দেখা যায় হোসেন মিয়াকে। এভাবে কিছুক্ষণ ঘুরে ফিরে, বাজারের একপাশে দাঁড়িয়ে সবজি বাজারের দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকেন। এভাবে দাঁড়িয়ে কি দেখছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ছুটির দিন থাকায় বাসায় নাতনিকে নিয়ে মেয়ে এসেছে। নাতনিটা আমার মালাইকারি পছন্দ করে। বাজারে এসে জিনিসপত্রের দাম দেখে চিন্তায় পরে গেছি। আক্ষেপ করে বলতে থাকেন, নাতনিটাকে হয়তো তার পছন্দের খাবার খাওয়াতেই পারবো না।

অন্যদিকে মিরপুরের কয়েকটি কাঁচাবাজার ঘুরে দেখা যায়, দোকানে দোকানে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি আর জীবনযাত্রার খরচ নিয়ে আলোচনা করছেন ক্রেতা-বিক্রেতারা।

তারা জানান, মূল্যবৃদ্ধির আকস্মিক চাপে খরচের খাতায় ভারসাম্য ধরে রাখতে পরিমাণে কম কিনছেন নিম্নআয়ের মানুষ।

মিরপুর শেওড়াপাড়া এলাকায় আনন্দবাজার গলিতে মঙ্গলবার সকালে সবজি কিনতে এসেছিলেন শেফালী সাহা। গুনে গুনে চারটি টমেটো ওজন দিয়ে দেখা যায় ৪০ টাকা এসে যাচ্ছে। সঙ্গে সঙ্গে একটি নামাতে বলেন। এভাবেই ৩০ টাকার টমেটো, পাঁচ টাকার ধনিয়া পাতা আর ৫ টাকার কাঁচা মরিচ কিনে বাড়ি ফেরেন তিনি।

নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে আলাপ উঠতেই তিনি বলেন, কী করব বলেন? যেইটা ধরি সেইটারই দাম বেশি। এখন তো চাইলেও চাহিদা মতো টমেটো কিনতে পারব না। আরও তো কেনাকাটা আছে।

আনন্দবাজারের এক সবজি বিক্রেতা জানান, গত দুই দিনে সব মালের দামই কমবেশি বেড়েছে। এখন মিষ্টি কুমড়া ৪০ টাকা, কচুমুখী ৫০ টাকা, মরিচের কেজি ২৪০ টাকা, চিচিঙ্গা ৫০ টাকা, বেগুন ৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

গত চার দিনে পটলের কেজি ১০ টাকা বেড়ে ৪০ টাকা থেকে ৫০ টাকা হয়ে গেছে। ঢেঁড়শও কেজিতে ১০ টাকা করে বেড়ে ৫০ টাকা হয়েছে, ধুন্দল ১০ টাকা বেড়ে ৬০ টাকা হয়েছে।

টমেটো প্রতি কেজি ১৪০ টাকা, বরবটি ৬০ টাকা, করলা ৮০, কাকরোল ৬০ টাকা, শসা ৬৯ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে।

সবজির বাজারে কেবল পেঁপে এখনও সুলভমূল্যে বিক্রি হচ্ছে বলে জানালেন বিক্রেতারা। প্রতিকেজি ২০ থেকে ২৫ টাকার মধ্যেই পাওয়া যাচ্ছে কাঁচা পেঁপে।

পীরেরবাগ বাজারে সবজি বিক্রেতা জামশেদ মিয়া বলেন, এখন সবজির পর্যাপ্ত জোগান আছে। তেলের দাম না বাড়লে এখন হয়তো সবজির দাম আরও কম থাকত। তার পরেও গত চার দিনে দাম বেড়েছে কেজিতে ৫ থেকে ১০ টাকা।

জ্বালানি তেলের দাম এক লাফে প্রায় ৫০ শতাংশ বাড়ানোর পর ভোগ্যপণ্যের বাজারে দৈনন্দিন কেনাকাটার তালিকায় থাকা প্রায় সব ধরনের পণ্যের দাম কেজিতে ২ টাকা থেকে ১০ টাকা পর্যন্ত বেড়ে গেছে।

রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার খুচরা বাজার ঘুরে দেখা যায়, চাল, মাছ-মাংস, শাক-সবজি, ডিমসহ দূরের পথে পরিবহন করতে হয় এরকম সব ধরনের নিত্যপণ্যের দামই বাড়তি।

বাজারে এখন এক ডজন মুরগির ডিম বিক্রি হচ্ছে ১৩৫ টাকায় যা এক সপ্তাহ আগেও ১২০ টাকার মধ্যে ছিল।

অনেক মাংসের দোকানেই লেয়ার মুরগি পাওয়া যাচ্ছে না। ব্রয়লার মুরগির দাম প্রতিকেজি ১৫০ টাকা থেকে বেড়ে ১৬৫ টাকা হয়েছে। সোনালি মুরগি বিক্রি হচ্ছে ২৭০ টাকায়।

গত বছর ৩ নভেম্বরে ডিজেল ও কেরোসিনের দাম ২৩ শতাংশ বাড়িয়ে ৮০ টাকা করেছিল সরকার। এরপর শনিবার প্রথম প্রহর থেকে আবারও এ দুটি জ্বালানি তেলের দাম ৪২.৫% বাড়িয়ে প্রতি লিটার ১১৪ টাকা করা হয়।

এর পাশাপাশি শনিবার থেকে পেট্রোলের দাম ৫১.১৬% বাড়িয়ে প্রতি লিটার ১৩০ টাকা, আর অকটেনের দাম ৫১.৬৮% বাড়িয়ে প্রতি লিটার ১৩৫ টাকা করা হয়েছে।

জ্বালানি হিসেবে ডিজেল ব্যবহার করেই দেশের সব ধরনের পণ্য পরিবহন করা হয়। দাম বাড়ানোর পর বাস ভাড়া প্রায় ২৭ শতাংশ বাড়িয়ে ঢাকার মধ্যে প্রতি কিলোমিটারে ৩৫ পয়সা ও ঢাকার বাইরে ৪০ পয়সা করে বাড়ানো হয়েছে।

তবে ট্রাকের ভাড়া এখনও নির্ধারণ করা হয়নি। পণ্য পরিবহনে জড়িতরা বলছেন, দেশের বিভিন্ন দূরত্ব বিবেচনায় বিভিন্ন জেলা থেকে ঢাকার উদ্দেশে আসা ট্রাকের ভাড়া তিন হাজার থেকে পাঁচ হাজার টাকা পর্যন্ত বেড়েছে।

পীরেরবাগে মায়ের দোয়া রাইস এজেন্সির মালিক জানান, জ্বালানির দাম বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে মিল পর্যায়ে ৫০ কেজির বস্তায় ৫০ টাকা করে চালের দাম বাড়ানো হয়েছে।

আবার মিল থেকে ঢাকায় আনার পথেও ট্রাক ভাড়া বেড়ে যাওয়ায় কেজিতে ১/২ টাকা করে বেড়েছে চালের দাম। সব মিলে গত এক সপ্তাহে প্রতিকেজি চালে ২/৩ টাকা করে বেড়েছে।

রশিদের মিনিকেট চাল ৩৩০০ টাকা থেকে বেড়ে ৩৩৫০ টাকা হয়ে গেছে। ঢাকার দোকান পর্যায়ে আসতে দাম পড়ে যাচ্ছে ৩৪০০ টাকা। বিক্রি করতে হচ্ছে তার চেয়ে একটু বেশি দামে।

একইভাবে বিআর আটাশ, পাইজাম চালের দাম ২৪০০ টাকা থেকে বেড়ে ২৫০০ টাকা হয়ে গেছে।

খুচরায় প্রতিকেজি আটাশ চাল ৫৫ টাকা, পাইজাম চাল ৫২ টাকা থেকে বেড়ে ৫৫ টাকা, মিনিকেট চাল এখন ৭০ টাকার মধ্যে আছে, তবে এর দাম আরও বাড়বে বলে জানান ওই ব্যবসায়ী।

নাজির শাইল আগের ৭০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৭৫ টাকা করে বিক্রি করতে হবে। এ ছাড়া কাটারি চাল ৬৮ টাকা থেকে বেড়ে ৭২ টাকা হয়েছে জানিয়ে বলেন, অর্থাৎ একেক ধরনের চালে একেক ধরনের দাম বৃদ্ধি ঘটেছে।

মিরপুরে চালের আড়ৎ জনতা রাইস এজেন্সির মহিউদ্দিন হারুন জানান, গতকাল কুষ্টিয়া ও জামালপুর থেকে দুটি চালের ট্রাক এসেছে।

এর মধ্যে কুষ্টিয়ার ট্রাকে অতিরিক্ত তিন হাজার টাকা ও জামালপুরের গাড়িতে অতিরিক্ত চার হাজার টাকা বেশি ভাড়া দিতে হয়েছে। চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে আসা ট্রাকগুলোতে পাঁচ হাজার টাকা বেশি দিতে হচ্ছে।

তিনি বলেন, ফলে গড়ে প্রতি বস্তা চালে ভাড়া বাবদ নতুন করে ৩০ থেকে ৩৫ টাকা বেশি গুণতে হচ্ছে।

মিল মালিকদের দাবি, হাট ও মোকাম থেকে ধান কিনে মিলে আনতে ২৫ থেকে ৩০ টাকার বেশি পরিবহন খরচ বেড়েছে। সেকারণে তারা বস্তায় ৩০ থেকে ৫০ টাকা বাড়িয়েছেন।

নওগাঁ থেকে আগে যেখানে ১২ হাজার টাকায় ট্রাক আসত, তারা এখন ১৫ হাজার টাকায় আসছে। চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে আগে যেখানে ১৫,৫০০ থেকে ১৬,০০০ টাকায় আসত, সেগুলো এখন ২০,০০০ টাকায় আসছে।

নাজির শাইল ও পোলাও চালের দাম বস্তায় ১০০ টাকা করে বেড়েছে। পাইজাম ও মিনিকেট চাল ৫০ টাকা করে বেড়েছে।

বাজারে এখন ময়মনসিংহ ও শেরপুরের চাল ৫০ কেজির বস্তা ৪,৭০০ টাকা থেকে ৪,৮০০ টাকা দাম দাঁড়াচ্ছে। আর চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে আসা সুগন্ধি চালের বস্তার দাম পড়ছে ৫,৭০০ টাকা থেকে ৫,৮০০ টাকা।

ময়মনসিংহ ও শেরপুরের নাজির শাইলের দাম বস্তায় ১০০ টাকা থেকে দেড়শ টাকা বেড়ে ৩৩৫০ থেকে ৩৪০০ টাকা হয়েছে। আর কাটারি নাজির আগে থেকে ৩৯০০ থেকে ৪০০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, এর দাম বাড়েনি।

মিনিকেট চাল আগে থেকেই ৩২০০ টাকা থেকে ৩৩৫০ টাকা ছিল। এখন গড়ে সব কোম্পানি বস্তায় ৫০ টাকা বাড়িয়ে দিয়েছে। একইভাবে পাইজাম ও বিআর আটাশ চাল বস্তায় ৫০ টাকা করে বেড়ে ২৪৫০ টাকায় গিয়ে ঠেকেছে।

প্রবা/রাই

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা