চট্টগ্রাম অফিস
প্রকাশ : ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ০০:১৮ এএম
প্রস্তাবিত দর রিজার্ভ ভ্যালুর ৬০ শতাংশের শর্ত পূরণ না করায় ঝুলে গেছে সাবেক ২৪ সংসদ সদস্যের শুল্কমুক্ত কোটায় আমদানি করা গাড়ি নিলামে বিক্রি। নিলামে তোলা সংসদ সদস্যদের ২৪টি গাড়ির মধ্যে ১৫টি গাড়ি কেনার জন্য নিলামে অংশ গ্রহণকারীরা দর দিলেও বাকি ৯টি গাড়ি নিলামে কেনার জন্য কেউ আগ্রহ দেখায়নি।
চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউসের সহকারী কমিশনার (নিলাম শাখা) মো. সাকিব হোসেন এ তথ্য জানিয়েছেন।
প্রতিদিনের বাংলাদেশকে তিনি বলেন, সাবেক সংসদ সদস্যদের ২৪টি গাড়িসহ আজ মোট ৪৪টি গাড়ি নিলামে তোলা হয়। এর মধ্যে সংসদ সদস্যদের আমদানি করা ২৪টি গাড়ির একটিরও প্রস্তাবিত দর ৬০ শতাংশ ক্রস করেনি। এমপিদের ২৪টি গাড়ির মধ্যে ১৫টি গাড়ির প্রস্তাবিত দর ওঠে এক লাখ টাকা সর্বোচ্চ ৩ কোটি ১০ লাখ টাকা। তাই এই গাড়িগুলো এবার নিলামে বিক্রির সুযোগ নেই। বাকি গাড়িগুলোর মধ্যে ১৪টি গাড়ির প্রস্তাবিত দর রিজার্ভ ভ্যালুর ৬০ শতাংশের বেশি পাওয়া গেছে। ওই গাড়িগুলোর বিপরীতে কোনো রিট মামলা না থাকলে গাড়িগুলো নিলামে বিক্রির জন্য সুপারিশ করা হবে।’
গত ২৭ জানুয়ারি আনুষ্ঠানিকভাবে সাবেক সংসদ সদস্যদের ২৪টিসহ মোট ৪৪টি গাড়ি নিলামে বিক্রির ঘোষণা দেয় চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউস। একইসঙ্গে ওই দিন থেকে আগ্রহী ক্রেতাদের কাছ থেকে নিলামের প্রস্তাবিত দর গ্রহণ শুরু হয়।
কাস্টমস কর্মকর্তারা জানান, নিলামে তোলা ৪৪টি গাড়ির মধ্যে ৩৫টি গাড়ির বিপরীতে ১৪৩টি আবেদন ও দরপ্রস্তাব জমা পড়ে। এর মধ্যে সাবেক সংসদ সদস্যদের ২৪টি গাড়ির মধ্যে ৯টির জন্য কোনো আবেদন ও দরপ্রস্তাব জমা পড়েনি। বাকি ৩৫টি গাড়ির মধ্যে সাবেক সংসদ সদস্য এস এম কামাল হোসেনের আমদানি করা গাড়িটির দর উঠেছে তিন কোটি ১০ লাখ টাকা। এটিই সব গাড়ির মধ্যে সর্বোচ্চ দর। কিন্তু এটি রিজার্ভ ভ্যালুর ৬০ শতাংশের কম হওয়ায় নিলামে বিক্রির সুযোগ নেই।
কাস্টমস কর্তৃপক্ষ আমদানি ব্যয় ও শুল্ক মিলিয়ে গাড়িগুলোর সংরক্ষিত দর নির্ধারণ করে ৯ কোটি ৬৭ লাখ টাকা। প্রথম নিলামে অংশ নিয়ে গাড়ি কিনতে হলে তাকে রিজার্ভ ভ্যালুর ৬০ শতাংশ বা তার বেশি সর্বোচ্চ দরদাতা হতে হবে। এ হিসেবে প্রতিটি গাড়ি কিনতে ন্যূনতম ৫ কোটি ৮০ লাখ টাকা দর দিতে হবে। ২৫ শতাংশ করসহ এই গাড়ির সর্বনিম্ন দাম পড়বে ৭ কোটি ২৫ লাখ টাকা। সেখানে সর্বোচ্চ দর উঠেছে মাত্র ৩ কোটি ১০ লাখ টাকা।
এনবিআর সূত্রে জানা যায়, দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের পর বিগত সরকারের আমলে ৫১ জন সাবেক সংসদ সদস্য শুল্কমুক্ত সুবিধায় গাড়ি আমদানির ঋণপত্র খোলেন। এর মধ্যে আমদানির পর ছয়জন শুল্কমুক্ত সুবিধায় গাড়ি খালাসও করে নেন। এর মাঝে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃত্বে সংঘটিত গণ-অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর গত ৬ আগস্ট সংসদ ভেঙে যাওয়ার পর শুল্কমুক্ত সুবিধা বাতিল করে এনবিআর। এরপর শুল্ককর পরিশোধ করে গাড়িগুলো খালাস নিতে সংশ্লিষ্টদের চিঠি দেয় এনবিআর। এরপর ফরিদপুর-৩ আসনের সাবেক স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য ও হা-মীম গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এ কে আজাদ তার নামে আমদানি করা গাড়িটি শুল্ককর পরিশোধ করে খালাস করে নিলেও অন্যরা নেননি। একাধিকার চিঠি দেয়ার পরও খালাস না নেয়ায় এইগাড়িগুলো নিলামে তোলার সিদ্ধান্ত নেয় চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউস। সেই অনুযায়ী সাবেক সংসদ সদস্যদের নামে আমদানি করা ২৪ ল্যান্ড ক্রুজার গাড়ির নিলাম আয়োজন করে চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউস।
যেসব এমপিদের গাড়ি নিলামে তোলা হয়েছে তারা হলেন- সাবেক তথ্য প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী আরাফাত, সাবেক সংসদ সদস্য মোহাম্মদ সাদিক, এস এ কে একরামুজ্জামান, মো. নাসের শাহরিয়ার, জান্নাত আর হেনরি, শাহ সরোয়ার কবির, মো. মজিবুর রহমান, মো. তৌহিদুজ্জামান, এস এম কামাল হোসাইন, মো. আবুল কালাম আজাদ, সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী, আকতারুজ্জামান, মোহাম্মদ আব্দুল ওয়াহেদ, আব্দুল মোতালেব, সানজিদা খানম, মো. আসাদুজ্জামান, মো. সাদ্দাম হোসেন (পাভেল), মো. সাইফুল ইসলাম, এ বি এম অনিসুজ্জামান, সাজ্জাদুল হাসান, তারানা হালিম, রুনু রেজা, শাম্মি আহমেদ ও সুরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী।