বাজার পরিস্থিতি
প্রবা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ১৩:২৭ পিএম
ছবি : সংগৃহীত
রমজান শুরুর আগেই বাজার ‘গরম’ করে ফেলেছেন অসাধু ব্যবসায়ীরা। পবিত্র শবেবরাতের সুযোগ নিয়ে রাতারাতি বাড়িয়ে দিয়েছেন গরু, খাসি, মুরগির দাম। বিশেষ করে ব্রয়লার ও সোনালি মুরগি, গরু ও খাসির মাংসের দাম কেজিতে ২০ থেকে ১০০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর সেগুনবাগিচা, মেরাদিয়া, ভাটারার জোয়ার সাহারাসহ বিভিন্ন বাজার ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে। ক্রেতারা বাজারে গিয়ে আগের দিনের সঙ্গে এসব পণ্যের দামের মিল পাননি। এভাবে রাতারাতি দাম বেড়ে যাওয়া নিয়ে তারা অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন।
গরু-খাসির বেশি চাপ
শবেবরাত উপলক্ষে সবচেয়ে বেশি বেড়েছে গরু ও খাসির মাংসের দাম। কোনো কোনো মহল্লায় দেখা গেছে, কয়েকজন মিলে গরু জবাই করে উচ্চ দামে মাংস বিক্রি করছেন। বাজারে অঞ্চলভেদে প্রতি কেজিতে বেড়েছে ৫০ থেকে ১০০ টাকা পর্যন্ত। গরুর মাংস কেজিতে ৫০ টাকা বেড়ে ৭৮০ থেকে ৮০০ টাকায় এবং খাসির মাংস কেজিতে ১০০ টাকা বেড়ে বিক্রি হয়েছে ১ হাজার ২০০ টাকায়।
ধানমন্ডির জিগাতলায় দেখা যায়, শবেবরাত উপলক্ষে রাস্তায় কয়েকজন মিলে গরু জবাই করেছেন। সেসব গরুর প্রতি কেজি মাংস বিক্রি হচ্ছে ৮৫০ টাকা। যেখানে গত সপ্তাহে ওই এলাকার বাজারে মাংসের কেজি ছিল ৭৫০ টাকা। গতকাল বাজারেও বাড়তি দাম রাখেন ব্যবসায়ীরা।
সেগুনবাগিচার মাংস ব্যবসায়ী সাইদুল ইসলাম বলেন, ৩ দিন ধরে গরু ও খাসির মাংসের দাম বেড়েছে। শবেবরাতের সময় প্রতি বছরই কিছুটা দাম বাড়ে। রোজার প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত দাম বেশি থাকে। আবার ঈদের এক সপ্তাহ আগে থেকে দাম বাড়ে।
মেরাদিয়া বাজারে দেখা যায়, গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে ৭৮০ টাকা ও খাসির ১ হাজার ২০০ টাকায়। গত সপ্তাহে গরুর মাংস ছিল ৭০০ থেকে ৭২০ টাকা। খাসির মাংসের দাম ছিল ১ হাজার ১০০ টাকা কেজি।
মুরগির দামও কেজিতে ২০-৩৫ টাকা বাড়তি
গতকাল সকালে রাজধানীর সেগুনবাগিচা এলাকার মুরগি বিক্রেতা মো. বিল্লাল হোসেন জানান, ৩ দিনের ব্যবধানে ২০ টাকা বেড়ে ব্রয়লার মুরগি ২১০ টাকা, সোনালি হাইব্রিড কেজিতে ২০-৩০ টাকা বেড়ে ২৭০-২৮০, সোনালি অরিজিনাল ৩০-৩৫ টাকা বেড়ে ৩৩০-৩৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তিনি বলেন, এই দাম রোজার প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত থাকতে পারে। ২০ রমজানের পর আবার বাড়তে পারে।
মেরাদিয়া বাজারে ব্রয়লার মুরগি ২১০ থেকে ২৩০ টাকা, সোনালি মুরগি ৩১০ থেকে ৩৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ফার্মের মুরগির ডিমের হালি ৪৮ থেকে ৫০ টাকা ও দেশি হাঁসের ডিমের হালি ৮০ টাকা করে ২৪০ টাকা ডজনে বিক্রি হচ্ছে।
সবজির বাজার এখনও স্থিতিশীল
বাজারে পর্যাপ্ত সরবরাহ থাকায় শীতকালীন সবজির দাম গত সপ্তাহের মতোই স্বাভাবিক রয়েছে। তবে করলা ও লাউয়ের দাম কিছুটা বেড়েছে। সেগুনবাগিচা বাজারের সবজি বিক্রেতা হাফিজুর রহমান বলেন, প্রতি কেজি টমেটো বিক্রি হচ্ছে ২০-৩০ টাকায়, মুলা ২০ টাকা, করলা ৮০-১০০, ফুলকপি ৩০, পেঁপে ৪০, কাঁচামরিচ ৮০, লাউ ৬০-৭০, শিম ৩০-৫০, আলু ২৫, রসুন ২২০, বেগুন ৩০ টাকায়। দুই দিনে আদার দাম কেজিতে ২০ টাকা বেড়ে ১২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। নদীর তেলাপিয়া ২০০-২৫০, বড় সরপুঁটি ২০০, কাতলা ৩০০, মলা ৩০০, পাঙাশ ১৯০-২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
ভাটারা বাজারে ফুলকপি ১০, টমেটো ২০, লালশাক ৩০, লাউ আকারভেদে ৪০ থেকে ৬০, বেগুন ৩০ টাকা এবং পালংশাকের আঁটি ২০ ও কাঁচকলা ৩০ টাকা হালি দরে বিক্রি হচ্ছে। আকারভেদে ২০ থেকে ২৫ টাকা কেজি দরে আলু, পেঁয়াজ ৪৫-৫০ কেজি দরে, রসুন ১৭০ থেকে ২৩০ টাকার মধ্যে কেজিপ্রতি বিক্রি হচ্ছে।
মেরাদিয়া বাজারের ক্রেতা বিপুল হোসেন বলেন, শীতকালীন সবজি, আলু-পেঁয়াজের দাম হাতের নাগালে। তবে তেল ও চালের দাম বেশি। বাজারে বোতলজাত সয়াবিন তেল পাওয়া যাচ্ছে না। তাই খোলা সয়াবিন তেল কিনতে হচ্ছে, বিক্রি হচ্ছে ২০০ টাকা লিটার দরে। বোতলজাত সয়াবিন তেল ১৯০ টাকা। তবে তার সঙ্গে অন্য কোনো আইটেম কিনতে হচ্ছে।
ভাটারার জোয়ার সাহারা বাজার ঘুরে দেখা যায়, শীতকালীন শাকসবজির দাম নাগালের মধ্যেই রয়েছে। ডাটা দুই হালি ২৫ টাকা, মিষ্টি কুমড়া আকারভেদে ৪০ থেকে ৫০ টাকা, পেঁপে কেজি ৪০, বেগুন কেজি ৩০ থেকে ৪০, ফুলকপি প্রতিটি ২০, পাকা টমেটো ২০ থেকে ৩০, শসা ৫০, শিমের কেজি ৪০, ধনেপাতার কেজি ১২০ টাকা, কাঁচা মরিচ ৬০, নতুন আলু ২৫ থেকে ৩০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
মাছের দামও বেড়েছে
বাজারগুলোতে মাছের দামও কিছুটা বেড়েছে। কোনো কোনো মাছ কেজিতে ১০ থেকে ৩০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে বলে জানিয়েছেন বিক্রেতারা। গতকাল সেগুনবাগিচায় শিং মাছ বিক্রি হয়েছে ৪৩০ থেকে ৫০০ টাকা কেজি, রুই মাছ ৩২০, পাঙাশ ২০০ টাকা। মেরাদিয়া বাজারে তেলাপিয়া ১৩০ থেকে ১৫০ টাকা, পাবদা ৪০০ থেকে ৪৫০, রুই ৩০০ থেকে ৩৫০, ট্যাংরা ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা, চিংড়ি প্রকারভেদে ৫০০ থেকে ৭০০ টাকা, পাঙাশ আকারভেদে ১৮০ থেকে ২০০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। অন্যান্য মাছের তুলনায় পাঙাশ মাছের দাম কম। কেজিপ্রতি ১৬০ থেকে ২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে বড় সাইজের পাঙাশ মাছ। মাছ কিনতে আসা মোহাম্মদ ইকবাল বলেন, বাসায় মোটামুটি সবাই পাঙাশ পছন্দ করে। তবে পাঙাশের দাম কেজিতে কিছুটা বেড়েছে।