প্রবা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ২২:৩১ পিএম
শেখ হাসিনা সরকারের আমলে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানসহ দেশের বিভিন্ন খাত থেকে নজিরবিহীন লুটপাট করেছেন রাজনীতিবিদ, ব্যবসায়ী ও আমলারা। পাচার হওয়া সেই অর্থ ফেরাতে নানামুখী উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের প্রথমদিকে বলা হচ্ছিল দেশ থেকে পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনা প্রধান টার্গেট। কিন্তু ছয় মাস পার হয়ে গেলেও কোনো টাকা ফেরত আসেনি। এমনকি একজনের বিরুদ্ধেও আদালতে মামলা হয়নি।
সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর জানিয়েছেন, পাচারের অর্থ ফেরত আনতে চার-পাঁচ বছর সময় প্রয়োজন। কিন্তু চার বছর মেয়াদে নিয়োগ হওয়া গভর্নরের হাতে সময় আছে সাড়ে তিন বছর। আর পাচার হওয়া অর্থ ফেরতের কাজে নেতৃত্ব দানকারী সংস্থা বিএফআইইউ প্রধানের মেয়াদ দুই রয়েছে বছর।
খাত-সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পাচারের টাকা ফেরত আনা খুব কঠিন ও সময়সাপেক্ষ। এর জন্য প্রয়োজন দেশীয় এবং আন্তর্জাতিরক সমন্বিত উদ্যোগ। বিশ্বের অন্য দেশগুলো পারলে আমরাও বিদেশ থেকে এসব অর্থ ফেরত আনতে পারব।
অর্থনীতি বিষয়ক শ্বেতপত্র কমিটির প্রতিবেদনে বলা হয়, আওয়ামী লীগের শাসনামলে দেশ থেকে ২৩৪ বিলিয়ন ডলারের সমপরিমাণ ২৮ লাখ কোটি টাকা (ডলারের বর্তমান বাজারদর ১২০ টাকা হিসাবে) পাচার হয়েছে।
সবচেয়ে বেশি দুর্নীতিগ্রস্ত চারটি খাতের তালিকায় ১ নম্বরে হলো ব্যাংক খাত। দ্বিতীয় স্থানে অবকাঠামো, তৃতীয় স্থানে জ্বালানি ও চতুর্থ স্থানে তথ্যপ্রযুক্তি খাত।
তবে অন্তর্বর্তী সরকার বিদেশে পাচার হওয়া বিপুল পরিমাণ অর্থ ফেরত আনতে কিছু উদ্যোগ নিয়েছে। এরই মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, সুইজারল্যান্ডসহ বেশ কয়েকটি দেশের কাছে সহায়তা চাওয়া হয়েছে। এ ছাড়া ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশ, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, থাইল্যান্ড, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, হংকং ও সংযুক্ত আরব আমিরাতসহ আরও যেসব দেশে বাংলাদেশের মন্ত্রী-এমপি, আমলারা অবৈধভাবে অর্থ পাচার করে জমি, ফ্ল্যাট কেনাসহ নামে-বেনামে বিভিন্ন কোম্পানি গড়ে তুলেছেন; তাদের তথ্য সংগ্রহ ও পাচারকৃত সম্পদ ফিরিয়ে আনতে সরকারি দপ্তরগুলো মাঠে নেমেছে। কয়েকটি দেশে চিঠিও পাঠিয়েছে আর্থিক গোয়েন্দা ইউনিট-বিএফআইইউ।
সূত্রগুলো জানায়, প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের অন্তর্বর্তী সরকারের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকারের মধ্যে রয়েছে দেশ থেকে পাচারকৃত অর্থ ফেরত আনার বিষয়টি। এ লক্ষ্যে তিনি সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোকে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণের নির্দেশনা দিয়েছেন। শুধু তা-ই নয়, কূটনৈতিক প্রক্রিয়াও শুরু করেছেন।
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম জানান, পাচার হওয়া টাকা ফেরত আনা খুবই কঠিন। এখন পর্যন্ত যে দেশগুলোর কাছে কূটনৈতিক প্রক্রিয়ায় চুরি যাওয়া সম্পদ ফেরত আনতে সহায়তা চেয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা, তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য। যুক্তরাষ্ট্রের রাজস্ব দপ্তরের ডেপুটি আন্ডার সেক্রেটারি ব্রেন্ট নেইম্যানের নেতৃত্বে একটি উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন প্রতিনিধিদল সম্প্রতি ঢাকায় তার সঙ্গে দেখা করলে এ বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে তুলে ধরে দেশটির সরকারের সহায়তা চান প্রধান উপদেষ্টা। অ্যাঙ্গোলা যদি ১৪ বিলিয়ন ডলার ফেরত পেতে পারে। তাহলে ড. ইউনূসের নেতৃত্বে আমরাও ২৩৪ বিলিয়ন ডলার ফেরত আনতে পারব। আমাদের শুধু একটাই অনুরোধ আপনারা ধৈর্য ধরুন। নিজের হাতে আইন তুলে নেবেন না।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সূত্র বলছে, পাচার হওয়া অর্থ ফেরত পেতে এখন পর্যন্ত যতটুকু কাজ হয়েছে, তা করেছেন বিএফআইইউর সাবেক উপপ্রধান এম এহেসান। তবে অদৃশ্য কারণে তাকে এ দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। নতুন বিএফআইইউ প্রধান দায়িত্ব নেওয়ার পর পাচার হওয়া অর্থ উদ্ধারের গতি হারিয়েছে। অভিযোগ রয়েছে, বর্তমান প্রধান শাহিনুল ইসলাম শিল্পগোষ্ঠী এস আলমের ঘনিষ্ঠ ব্যক্তি। তা ছাড়া তিনি দুর্নীতি মামলায় কারগারে থাকা বিএফআইইউর সাবেক প্রধান মাসুদ বিশ্বাসের ঘনিষ্ঠ ছিলেন।