প্রবা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ১০ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ১৬:৫৬ পিএম
পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানি বিডি থাই অ্যালুমিনিয়াম লিমিটেডের ৩০ জুন ২০২৪ সমাপ্ত বছরের জন্য লভ্যাংশ বিতরণের তথ্য গোপন রেখেছে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই)। কোনো কোম্পানির ক্যাটাগরি অবনতির ক্ষেত্রে সময় না দিয়ে ব্যবস্থা নেয় ডিএসই। কিন্তু ক্যাটাগরি উন্নতির ক্ষেত্রে সময়ক্ষেপণ করেন ডিএসইর কর্মকর্তারা। নিজেদের স্বার্থ হাসিল করে সুবিধা গ্রহণের অভিযোগও রয়েছে তাদের বিরুদ্ধে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
সূত্রমতে, গত বৃহস্পতিবার বিএসইসি, ডিএসই ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ (সিএসই) কোম্পানিটির লভ্যাংশ বণ্টন কমপ্লায়েন্স রিপোর্ট গ্রহণ করলেও তা ওয়েবসাইটে প্রকাশ করেনি। গতকাল রবিবার সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবসে এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত ডিএসইর ওয়েবসাইটে বিডি থাইয়ের লভ্যাংশ বিতরণের তথ্য পাওয়া যায়নি।
ডিএসই (লিস্টিং) রেগুলেশন, ২০১৫ অনুযায়ী পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোকে লভ্যাংশ বিতরণের কমপ্লায়েন্স রিপোর্ট জমা দেওয়ার বিধান রয়েছে। সে অনুযায়ী প্রকৌশল খাতে তালিকাভুক্ত কোম্পানি বিডি থাই অ্যালুমিনিয়াম তাদের লভ্যাংশ বিতরণের কমপ্লায়েন্স রিপোর্ট গত ৬ ফেব্রুয়ারি ডিএসইকে জমা দিয়েছে।
জানা গেছে, তালিকাভুক্ত কোম্পানির লভ্যাংশ বিতরণের কমপ্লায়েন্স রিপোর্ট স্টক এক্সচেঞ্জে জমা দেওয়ার কার্যদিবসে অথবা তার পরের প্রথম কার্যদিবসে ওয়েবসাইটে প্রকাশ করার বিধান রয়েছে। তবে তা প্রকাশ না করে গোপন রেখেছে ডিএসই।
সমাপ্ত বছরে কোম্পানিটি শেয়ারহোল্ডারদের জন্য দশমিক ২৫ শতাংশ লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে। ডিএসইর সূত্রমতে, সমাপ্ত দ্বিতীয় প্রান্তিকে কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি লোকসান হয়েছে ৬২ পয়সা। গত বছর একই সময়ে লোকসান হয়েছিল ২৩ পয়সা। হিসাববছরের প্রথম দুই প্রান্তিক মিলিয়ে তথা ৬ মাসে (জুলাই ’২৪-ডিসেম্বর ’২৪) কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি লোকসান হয়েছে ৯০ পয়সা। গত বছর একই সময়ে লোকসান ছিল ৪২ পয়সা। গত ৩১ ডিসেম্বর, ২০২৪ তারিখে কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি নিট সম্পদমূল্য (এনএভিপিএস) ছিল ২৮ টাকা ৬৮ পয়সা।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ডিএসইর জনসংযোগ কর্মকর্তা শফিকুর রহমান প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, ‘লভ্যাংশ বিতরণের কমপ্লায়েন্স রিপোর্ট গত কার্যদিবসে অফিস আওয়ারের পরে পেয়েছি। তা ছাড়া এটা কোনো পিএসআই বা মূল্য সংবেদনশীল তথ্য নয়। নিয়মানুযায়ী কোম্পানির সঙ্গে যোগাযোগ করে কমপ্লায়েন্স রিপোর্ট যাচাই-বাছাই করে ডিএসই। আর এতেই সময় লেগে গেছে। আজকে (গতকাল) দিনের মধ্যে যেকোনো একসময় লভ্যাংশ বিতরণের নিউজটা ওয়েবসাইটে দিয়ে দিলেই চলে।’
পুঁজিবাজার বিশ্লেষকরা বলছেন, তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর মূল্য সংবেদনশীল তথ্যসহ সকল তথ্য সবার আগে কমিশন ও স্টক এক্সচেঞ্জের কাছে যায়। সে অনুযায়ী স্টক এক্সচেঞ্জের করণীয় দ্রুততার সঙ্গে তা প্রকাশ করে বিনিয়োগকারীদের জানানো।
বাংলাদেশ ক্যাপিটাল মার্কেট ইনভেস্টর অ্যাসোসিয়েশনের (বিসিএমআইএ) প্রধান মুখপাত্র মো. নূরুল ইসলাম মানিক বলেন, ‘বর্তমানে পুঁজিবাজারে লভ্যাংশ বিতরণ নিয়ে খেলা চলছে। এতে করে সুবিধা নিচ্ছে ডিএসইর কিছু অসাধু কর্মকর্তা। লভ্যাংশ বিতরণের তথ্য গোপন রেখে তারা সস্তায় শেয়ার ক্রয় করে সুবিধা নিয়ে নেবে। এতে সাধারণ বিনিয়োগকারীরা অনেক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এসব কর্মকাণ্ডে জড়িতদের শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের প্রত্যাশা করি।’
মিডওয়ে সিকিউরিটিজ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আশিকুর রহমান প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, ‘ডিএসইর উচিত এই অভিযোগের দায়িত্ব নেওয়া থেকে সরে আসা। ইস্যুকারী কোম্পানিগুলোর জন্য পিএসআই (মূল্য সংবেদনশীল তথ্য) তথ্য ডিএসইতে পাঠানো আন্তর্জাতিকভাবে সর্বোত্তম অনুশীলন নয়। পরিণত স্টক মার্কেটে, ইস্যুকারী কোম্পানিগুলো একটি নিয়ন্ত্রিত অ্যাপ্লিকেশনের মাধ্যমে পিএসআই প্রকাশ করে। বর্তমান সমস্যা হলো ইস্যুকারী কোম্পানিগুলো ডিএসইতে পিএসআই পাঠায় এবং ডিএসইকে তথ্য যাচাই করে তারপর তাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করতে হয়। কিন্তু সমস্যা হলো ডিএসই এটিকে অবৈধ লেনদেনের জন্য ব্যবহার করে। ফলে বাজারে ডেটা প্রচার ধীরগতি হয়। অন্যদিকে এই সেক্টরে সীমিতসংখ্যক কর্মী কাজ করে। এখানে শত শত কোম্পানি একসঙ্গে এই জাতীয় তথ্য সরবরাহ করে। ফলে এই সমস্যা সৃষ্টি হয়।’