প্রবা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ২১:৫২ পিএম
রাজধানীতে বৃহস্পতিবার ডিসিসিআই আয়োজিত মতবিনিময় সভায় বক্তব্য দেন সংগঠনটির সভাপতি তাসকীন আহমেদ। ছবি: সংগৃহীত
এলসি সমন্বয়ের দীর্ঘসূত্রতা, ডলারের মূল্যের অস্থিরতা, ব্যাংকঋণের সুদের উচ্চ হার, ভ্যাট প্রদানে হয়রানি, ট্রেড লাইসেন্স নবায়ন প্রক্রিয়ায় জটিলতা ও উচ্চ ফি, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি এবং অসহনীয় যানজটের কারণে ব্যবসা-বাণিজ্যের পরিস্থিতি ক্রমে অবনতি হচ্ছে বলে মত প্রকাশ করেছেন ব্যবসায়ীরা।
বৃহস্পতিবার (৬ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীতে ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই) আয়োজিত ‘আয়কর, ভ্যাট, শুল্ক, যানজট ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি’ শীর্ষক মতবিনিময় সভায় এসব বিষয় নিয়ে মত প্রকাশ করেন ব্যবসায়ী ও খাত-সংশ্লিষ্টরা। সভায় বাংলাদেশ ব্যাংকের অতিরিক্ত পরিচালক (বৈদেশিক মুদ্রানীতি বিভাগ-এফইপিডি) মো. সাইয়েদুল ইসলাম, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)-এর প্রথম সচিব (মূসক বাস্তবায়ন) মোহাম্মদ আরিফুল ইসলাম এবং ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি)-এর উপপুলিশ কমিশনার (গুলশান বিভাগ) মো. তারেক মাহমুদ উপস্থিত ছিলেন। এ ছাড়া গুলশান, মহাখালী, বনানী এবং বাড্ডা অঞ্চলের ১৪টি অ্যাসোসিয়েশনের নেতারা এবং বেশকিছু ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা অংশগ্রহণ করেন।
স্বাগত বক্তব্যে ঢাকা চেম্বারের সভাপতি তাসকীন আহমেদ বলেন, বর্তমানে বৈশ্বিক বাণিজ্যের চ্যালেঞ্জিং পরিস্থিতির কারণে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে গিয়ে আমাদের উদ্যোক্তাদের ক্রমশই কঠিনতর পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হচ্ছে। সেই সাথে কর ও ভ্যাট ব্যবস্থার জটিলতা ব্যবসায়ীদের জন্য একটি বড় প্রতিবন্ধক হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিশেষ করে, কর ও ভ্যাটের নিয়মিত পরিবর্তন, অগ্রিম আয়কর ও রেগুলেটরি ডিউটির অতিরিক্ত বোঝা, আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রমে বিদ্যমান প্রতিবন্ধকতার কারণে দেশের বেসরকারি খাতের ওপর অতিরিক্ত অর্থনৈতিক চাপ সৃষ্টি হচ্ছে বলে তিনি মত প্রকাশ করেন। এ ছাড়া সাম্প্রতিক অস্থিতিশীল আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি, যানজটÑ এসব কারণে বাণিজ্য ও বিনিয়োগের অনুকূল পরিবেশ পরিলক্ষিত হচ্ছে না বলে অভিমত জ্ঞাপন করেন ডিসিসিআই সভাপতি।
তিনি বলেন, ঋণপত্র খোলার জটিলতা, এসএমই খাতের উদ্যোক্তাদের ঋণপ্রাপ্তিতে পদ্ধতিগত প্রতিবন্ধকতা এবং উচ্চ সুদহার আমাদের স্থানীয় শিল্পায়নকে বাধাগ্রস্ত করছে। এ অবস্থায় দেশের সামগ্রিক অর্থনীতির উন্নয়নের লক্ষ্যে সরকারি-বেসরকারি খাতের সমন্বিত উদ্যোগ গ্রহণ এবং কার্যকর বাস্তবায়ন একান্ত অপরিহার্য বলে তিনি অভিমত জ্ঞাপন করেন।
ডিএমপির উপপুলিশ কমিশনার (গুলশান বিভাগ) মো. তারেক মাহমুদ বলেন, রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর জনগণের আস্থা ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়নের লক্ষ্যে বাংলাদেশ পুলিশ নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। সকলের সম্মিলিত উদ্যোগে বিদ্যমান অচলাবস্থা নিরসন হবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
বাংলাদেশ ব্যাংকের অতিরিক্ত পরিচালক মো. সাইয়েদুল ইসলাম বলেন, এলসি মার্জিন শতভাগ হবে কি না, এটি নির্ভর করে ব্যাংক ও ভোক্তার সম্পর্কের ওপর এবং এলসি মার্জিনের বিষয়টি সকল পণ্যের ক্ষেত্রে এক নয়।
তিনি বলেন, কোভিড মহামারি, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে সৃষ্ট বৈশ্বিক অস্থিরতার পাশাপাশি মার্কিন ডলারের মূল্যের অস্বাভাবিক ওঠানামার কারণে আমাদের স্থানীয় ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। তবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ডলারের মূল্য স্থিতিশীল রাখতে কাজ করে যাচ্ছে।
এনবিআরের প্রথম সচিব মোহাম্মদ আরিফুল ইসলাম বলেন, চলতি অর্থবছরে এনবিআরের রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রা বেশ চ্যালেঞ্জিং। সম্প্রতি স্বর্ণ ব্যবসায়ীদের নিবন্ধনের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে এবং প্রান্তিক পর্যায়ে করজাল বিস্তারের লক্ষ্যে এনবিআর কাজ করছে। এ ছাড়া সার্বিকভাবে রাজস্ব আহরণ বাড়াতে একটি অটোমেটেড এবং স্বচ্ছ রাজস্ব ব্যবস্থাপনার কোনো বিকল্প নেই বলে তিনি অভিমত জ্ঞাপন করেন।
মুক্ত আলোচনায় অংশ নিয়ে গুলশান ১ নং ডিএনসিসি দক্ষিণ পাকা মার্কেট ব্যবসায়ী সমিতির সহসভাপতি মো. আবু তাহের বলেন, এলসি খোলা থেকে সমন্বয় পর্যন্ত প্রায় তিন মাস সময় লেগে যায়। পাশাপাশি ডলারের মূল্যের অস্থিরতার কারণেও ব্যবসায়ীরা এলসির মূল্য পরিশোধে বিরাট ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন।
মহাখালী বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি ফিরোজ আলম স্বপন জানান, ভ্যাটহার বৃদ্ধি, ট্রেড লাইসেন্স নবায়নের উচ্চ ফি এবং দীর্ঘসূত্রতার কারণে ব্যবসায়ীরা প্রতিনিয়ত নানা প্রতিবন্ধকতার মুখোমুখি হচ্ছেন। আমিন হোসেন অ্যান্ড কোং-এর পার্টনার মোহাম্মদ আল আমিন জানান, আয়কর আইনের ১৬৩ ধারা এবং অগ্রিম আয়কর সমন্বয়ের দীর্ঘসূত্রতার কারণে ব্যবসায়ীরা আর্থিকভাবে মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন এবং অনেক ক্ষেত্রে ব্যবসায়ের মূলধন থেকে ঋণ পরিশোধ করতে হচ্ছে, যা কোনোভাবেই কাম্য নয়।
মেট্রোপলিটন শপিং প্লাজা মার্কেট সমিতির জেনারেল সেক্রেটারি মো. আলমগীর হোসেন বলেন, সম্প্রতি বেশকিছু দোকান-মালিক দুর্বৃত্তদের হাতে আক্রান্ত হয়েছেন এবং সংশ্লিষ্ট থানায় এ ব্যাপারে সহযোগিতা চাওয়া হলে কাঙ্ক্ষিত সাড়া মেলেনি। বিদ্যমান পরিস্থিতিতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর জোরালো ভূমিকার ওপর জেরারোপ করেন তিনি। মওলা ট্রেডার্সের চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন বলেন, ব্যাংকঋণের সুদের উচ্চ হার, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি, এলসি পেমেন্টে দীর্ঘসূত্রতা, ভ্যাট প্রদানে হয়রানি ইত্যাদি কারণে ব্যবসা-বাণিজ্যি চালিয়ে নেওয়া যাচ্ছে না।