ঈশ্বরগঞ্জ (ময়মনসিংহ) প্রতিবেদক
প্রকাশ : ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ২০:০৩ পিএম
আপডেট : ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ২১:৫২ পিএম
বিক্রি করতে টমেটো সাজানো নিয়ে ব্যস্ত চাষি। প্রবা ফটো
ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জে টমেটোর দাম কমে যাওয়ায় দুশ্চিন্তায় পড়েছেন চাষিরা। ক্ষেত থেকে তুলে আড়ত পর্যন্ত টমেটো নিয়ে যেতে শ্রমিক ও পরিবহনের খরচই উঠছে না তাদের।
বুধবার (৫ ফেব্রুয়ারি) বিভিন্ন আড়তে মাত্র ৮ টাকা দরে প্রতি কেজি টমেটো বিক্রি করেছেন কৃষকেরা। দ্রুত সবজির দাম না বাড়লে লোকসানের মুখে পড়ার আশঙ্কা চাষিদের।
এদিকে তুলনামূলক কম দামে টমেটো কিনে বেশ খুশি ভোক্তারা। আর হতাশা বাড়ছে চাষিদের। তারা বলছেন, মাঠ থেকে হাটে টমটো নেওয়ার ভ্যান ভাড়া, বীজ, সার, কীটনাশক ও আবাদের খরচ উঠবে কীভাবে? শারীরিক পরিশ্রমের মূল্য তো থাকছেই না।
লোকসানের মুখে পড়েছেন পাইকার-আড়তমালিকরাও। এক পাইকারি ব্যবসায়ী বলেন, ‘বাজারে সবজির দাম কম হলেও শ্রমিক খরচ তো কমেনি। এতে আমরাও টমেটো কম কিনছি, কারণ লাভ হচ্ছে না। কৃষক তো শেষ। সেই সঙ্গে আমরাও কেনাকাটা সীমিত করে দিয়েছি।’
চাষিরা বলছেন, উৎপাদনের আধিক্য বিবেচনায় সবজি সংরক্ষণের জন্য হিমাগার ব্যবস্থা চালু না হওয়ায় সব মৌসুমেই তারা ন্যায্য দাম থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।
বড়হিত ইউনিয়নের কৃষক সালাম মিয়া বলেন, ‘উৎপাদনে সবচেয়ে বেশি খরচ হয় সার ও কীটনাশকের পেছনে। ডিলাররা সার মজুত করে দাম বাড়িয়ে দেয়। সেখানেই অনেক টাকা বেরিয়ে যায়। এ ডিলারদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নিতে দেখা যায় না।’
উপজেলায় কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, উপজেলায় মোট ১ হাজার ২৭৫ হেক্টর জমিতে শীতকালীন সবজি চাষ হয়েছে। হাইটম, বিউটিফুল-২, বিপুল প্লাস, মেজর, বাহুবলী, বিউটিসহ বিভিন্ন জাতের টমেটো চাষ করা হয়েছে এসব জমিতে। উপজেলায় বিরূপ আবহাওয়ার মধ্যেও ফলন ভালো হয়েছে এবার।’
কৃষকরা জানান, ফলন ওঠা শুরু হলে প্রথম দিকে প্রতি মণ টমেটো ৩ হাজার ৫০০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে। মাত্র এক সপ্তাহ আগে প্রতি কেজি টমেটো ২৫-৩০ টাকা দরে বিক্রি হলেও বুধবার দুপুরে তা প্রতি কেজি পাইকারি ৮ টাকা এবং খুচরা ১০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে।
উপজেলায় আড়তে টমেটো বিক্রি করতে আসা স্থানীয় চাষি হেলাল ও রবিকুল জানান, ময়মনসিংহ সদর পরানগঞ্জ ও ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার টমেটো ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেটসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় নিয়ে যান ব্যবসায়ীরা। প্রতিবছর এখানে টমেটোর ভালো উৎপাদন হয়। হঠাৎ টমেটোর দরপতনে আমরা চরম বিপাকে পড়েছি। সঠিক বাজার ব্যবস্থাপনা না থাকায় মধ্যস্বত্বভোগীরা সুযোগ নিচ্ছেন। আমরা দাম ভালো না পেলে লোকসানে পড়ব।
পাইকারি ক্রেতা খোকন মিয়া বলেন, ‘আজ প্রতি কেজি টমেটো ৮ টাকা দরে কিনেছি। দেশের যেসব অঞ্চলে ঈশ্বরগঞ্জে ও পরানগঞ্জে টমেটোর চাহিদা ছিল, সেসব এলাকায় এখন চাহিদা কম। তা ছাড়া উৎপাদন অনেক বেশি। ফলে এ দরপতন। এছাড়া দাম কমের কারণে বাজারে পাইকারি ক্রেতাও কম।’
উপজেলা কৃষি অফিসার রিপা রানী চৌহান বলেন, ‘আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এবার রেকর্ড পরিমাণ সবজি উৎপাদিত হয়েছে। এছাড়া মৌসুমের শুরুতে সব ধরনের সবজির ভালো দামও পেয়েছেন চাষিরা।
তিনি বলেন, বাজারে সরবরাহ বেড়ে যাওয়ায় দাম কিছুটা পড়ে গেলেও কৃষকের লোকসান হওয়ার কথা নয়। কারণ ক্ষেতের কিছু সবজি কৃষক আগেভাগে বেশি দামে বিক্রি করে দিয়েছেন। তবে বাজারদর এমন চলতে থাকলে চাষিরা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। উপজেলায় এখন টমেটো উৎপাদনের মাঝামাঝি সময় চলছে।’