প্রবা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ০৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ২১:৫১ পিএম
আপডেট : ০৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ২১:৫৪ পিএম
ঋণের নামে হাজার হাজার কোটি টাকা লুটপাটে এস আলমকে সহযোগিতা করায় কয়েক বছর ধরেই ইসলামী ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মনিরুল মওলার উপর ক্ষুব্ধ ব্যাংকের কর্মকর্তা-কর্মচারী ও গ্রাহকরা। আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে রোষানলে পড়ার ভয়ে তারা প্রকাশ্যে কিছু বলতে পারেনি। গত ৫ আগস্ট রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর ক্ষুব্ধ কর্মকর্তা ও গ্রাহকরা এস আলমকে লুটপাটে সহায়তাকারী কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ফুঁসে উঠে। এমনকি এস আলমের সহযোগী হিসেবে পরিচিত এমন কয়েকজন কর্মকর্তাকে তারা ব্যাংক ছাড়তেও বাধ্য করেন। কিন্তু ব্যাংকের মধ্যে এস আলমের প্রধান সহায়তাকারী হিসেবে পরিচিত এমডি মনিরুল মওলা তার পদে এখন পর্যন্ত বহাল তবিয়তেই আছেন। তাই তার অপসারণ ও গ্রেপ্তারের দাবিতে মঙ্গলবার (৪ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যায় ইসলামী ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ের সামনে বিক্ষোভ করেছে ব্যাংকটির গ্রাহকরা।
দেখা গেছে, ইসলামী ব্যাংক গ্রাহক ফোরামের ব্যানারে মঙ্গলবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা থেকে ৭টা পর্যন্ত ইসলামী ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ের সামনে তারা অবস্থান করেন। এসময় তারা ব্যাংকের সামনের রাস্তায় বিক্ষোভও করেন। বিক্ষোভে তারা ইসলামী ব্যাংকের এমডি মনিরুল মওলার অপসারণ ও গ্রেফতারের দাবিতে বিভিন্ন স্লোগান দেন। একই সঙ্গে ব্যাংকের বিভিন্ন পদে বসে থাকা এস আলমের সহযোগিদেরকে বের করে দেওয়ারও দাবি জানান।
গত ১৯ ডিসেম্বর জালিয়াতির মাধ্যমে ইসলামী ব্যাংক থেকে এক হাজার ৯২ কোটি ৪৬ লাখ টাকা ঋণ নিয়ে আত্মসাতের অভিযোগে ইসলামী ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান ও আলোচিত ব্যবসায়ী এস আলমের ছেলে আহসানুল আলম, ব্যাংকটির এমডি ও সিইও মনিরুল মওলাসহ ৫৮ জনের বিরুদ্ধে মামলা করে দুদক। দুদক চট্টগ্রামের সমন্বিত জেলা কার্যালয়-১-এ বাদী হয়ে মামলাটি করেন সংস্থাটির উপ-পরিচালক ইয়াছিন আরাফাত। মামলার এজাহারে বলা হয়, আসামিরা পরস্পর যোগসাজশে জালিয়াতির মাধ্যমে মুরাদ এন্টারপ্রাইজের নামে এই টাকা ঋণ নিয়ে আত্মসাৎ করেন।
কিন্তু মামলার পর দেড় মাস পেরিয়ে গেলেও মনিরুল মওলাকে গ্রেপ্তারে দুদকের কোনো উদ্যোগ চোখে পড়েনি। এতে করে ইসলামী ব্যাংকের কর্মকর্তারা ও গ্রাহকরা আরও ক্ষুব্দ হয়ে উঠেন।
মঙ্গলবার অনুষ্ঠিত বিক্ষোভে তারা মনিরুল মওলাকে গ্রেপ্তারে দুর্নীতি দমন কমিশনকে (দুদক) এক সপ্তাহের আল্টিমেটাম দিয়েছে। যদি এমডি মনিরুল মওলাকে এর মধ্যে গ্রেপ্তার করা না হয় তাহলে দুদক ঘেরাও করারও হুমকি দেন তারা।
অপরদিকে, ইসলামী ব্যাংকের এমডি মনিরুল মওলাকে বিশ্ববিখ্যাত দুর্নীতিবাজ, ইতিহাসের সেরা মিথ্যাবাদী ও শেখ হাসিনার অর্থনৈতিক দোসর আখ্যা দিয়ে তার অপসারণ ও গ্রেপ্তারের দাবি জানিয়েছেন আবুল কালাম আজাদ নামে ইসলামী ব্যাংকের একজন সিনিয়র প্রিন্সিপাল অফিসার।
গত ২৯ জানুয়ারি আবুল কালাম আজাদ তার নিজের ফেসবুক আইডিতে পোস্ট দিয়ে এমন দাবি জানান।
আজাদ তার ফেসবুকে লিখেছেন, ‘বিশ্ববিখ্যাত দূর্নীতিবাজ, ইতিহাসের সেরা মিথ্যাবাদী, ফ্যাসিষ্ট হাসিনার অর্থনৈতিক দোসর আইবিবিএল এর বর্তমান এমডি মনিরুল মাওলার অপসারন ও গ্রেফতার চাই।’
এদিকে, গত ২৯ জানুয়ারি আবুল কালাম আজাদকে প্রধান কার্যালয়ের এইচআর ওয়েলফেয়ার অ্যান্ড সার্ভিস ডিভিশন থেকে চক মোগলটুলি শাখায় বদলি করা হয়েছে। তাকে কী কারণে বদলি করা হয়েছে এ বিষয়ে জানতে ইসলামী ব্যাংকের মানবসম্পদ বিভাগের সাথে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। তবে, আবুল কালাম আজাদ দাবি করেছেন, ব্যাংকের এমডি এবং অনিয়ম-দুর্নীতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করায় তাকে বারবার বদলি করা হচ্ছে।
তিনি বলেন, গত কয়েক মাসে আমাকে তিন বার বদলি করা হয়েছে। গত বছরের আগস্টের ১৮ তারিখে আমাকে সিলেট লালদীঘি শাখা থেকে বদলি করে প্রধান কার্যালয়ের এইচআরে আনা হয়। এখান থেকে আবার বদলি করে এইচআরডব্লিউতে পাঠানো হয়। সর্বশেষ গত ২৯ জানুয়ারি চক মোগলটুলি শাখায় বদলি করা হয়েছে। আমার অপরাধ হল আমি এমডি ও দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে কথা বলেছি। এখন তারা আমাকে চাকরি থেকে বাদ দেয়ার হুমকিও দিচ্ছে।
ব্যাংকের অভ্যন্তরীণ বিষয় নিয়ে সামাজিক মাধ্যমে লেখা সার্ভিস রুল লঙ্ঘন হচ্ছে কিনা-এমন প্রশ্নের জবাবে আবুল কালাম আজাদ বলেন, সার্ভিস রুলস তো সবার জন্য। শুধু আমার ক্ষেত্রে প্রয়োগ হবে কেন? যারা এস আলমকে হাজার হাজার কোটি টাকা লুটপাটে সহযোগিতা করেছে। অনিয়ম-দুর্নীতির কারণে যাদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে তারা পদে বহাল থাকে কোন রুলে? সার্ভিস রুল অনুযায়ীতো তাদেরও চাকরি থাকে না।
এদিকে, গত ৩১ জানুয়ারি আবুল কালাম আজাদ তার ফেসবুকে দেওয়া আরেকটি পোস্টে লিখেন-‘‘প্রিয় আইবিবিএলকে ভালোবাসি হৃদয়ের অত্যান্ত গভীর থেকে কিন্তু এস আলম এবং তার চামচারা মিলে যেভাবে প্রিয় প্রতিষ্ঠানকে ক্ষত বিক্ষত করেছে সেটা মানতে পারছি না।’
এ বিষয়ে নাম প্রকাশ না করার শর্তে ইসলামী ব্যাংকের একজন কর্মকর্তা বলেন, মনিরুল মওলা হলেন লুটপাটকারীদের প্রধান এজেন্ট। শক্তিশালী এই ব্যাংকটা ধ্বংসের পেছনে তার হাত রয়েছে। তিনি এখন আর কোনো ফাইলে সই করেন না। তিনি আবার এস আলমকে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করছেন। দুর্নীতির অভিযোগে তার বিরুদ্ধে দুদক মামলা করেছে। ইসলামী ব্যাংকের নিয়ম অনুযায়ী এমন ব্যক্তি আর ব্যাংকে থাকতে পারেন না। তার মতো একজন দুর্নীতিবাজকে আমরা এখন আর ব্যাংকে প্রবেশ করতে দিবো না।