× ই-পেপার প্রচ্ছদ সর্বশেষ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি শিক্ষা ধর্ম ফিচার ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

রিজার্ভ চুরির ৯ বছর

পালাবদলে গতি ফিরেছে তদন্তে

প্রবা প্রতিবেদক

প্রকাশ : ০৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ০৯:৫৪ এএম

ছবি : সংগৃহীত

ছবি : সংগৃহীত

বাংলাদেশ ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণে থাকা বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ থেকে চুরির ৯ বছর পূর্ণ হয়েছে। চুরি যাওয়ার বছরই সামান্য অর্থ ফেরত পেয়েছিল বাংলাদেশ। বাকি অর্থ ফেরত পেতে ফিলিপাইন ও যুক্তরাষ্ট্রের আদালতে মামলা চলছে। মামলা পরিচালনায় আইনজীবী ও আইনি সহায়তা প্রতিষ্ঠানের ফি বাবদ মোটা অঙ্কের অর্থ খরচ হচ্ছে। তবে অর্থ ফেরত বা চলমান মামলার কোনো অগ্রগতি নেই। সমঝোতার মাধ্যমে অর্থ ফেরতের প্রস্তাবেও সাড়া নেই ফিলিপাইনের। 

তবে সম্প্রতি দেশের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর এ বিষয়ে তৎপরতা বেড়েছে গোয়েন্দা সংস্থা সিআইডির। ইতোমধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর আতিউর রহমানসহ বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা, ব্যবসায়ীসহ ১৪ জনের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে সংস্থাটি। 

বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, ফিলিপাইন থেকে স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় অর্থ ফেরত না পেয়ে ছয় বছর আগে যুক্তরাষ্ট্রের আদালতে মামলা করে বাংলাদেশ। ২০২৩ সালের জানুয়ারিতে সমঝোতার মাধ্যমে অর্থ আদায়ের একটি রায় দেন দেশটির আদালত। সমঝোতার জন্য ২০২৩ সালের ২৭ জানুয়ারি থেকে ৩ ফেব্রুয়ারি ফিলিপাইনে যায় বাংলাদেশের পাঁচ সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল। সেখানে বিভিন্ন পক্ষের সঙ্গে আলোচনা হয়। তারা দেশটিতে চলমান বিভিন্ন মামলায় তিনটি আদালতে সাক্ষ্য দেন। তবে সমঝোতায় সাড়া মেলেনি। আবার ফিলিপাইনের আদালত থেকে কোনো রায় হয়নি। যুক্তরাষ্ট্রের আদালতেও কোনো অগ্রগতি নেই। ফলে আদৌ অর্থ ফেরত পাওয়া যাবে নাকি মামলা পরিচালনায় বছরের পর বছর শুধু অর্থ খরচ করতে হবেÑ তা নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে।

২০১৬ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক অব নিউইয়র্কে রক্ষিত বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাব থেকে ১০ কোটি ১০ লাখ ডলার চুরি হয়। শ্রীলঙ্কায় নেওয়া ২ কোটি ডলার ওই সময় ফেরত পায় বাংলাদেশ। আর ফিলিপাইনে নেওয়া ৮ কোটি ১০ লাখ ডলারের মধ্যে দেশটির আদালতের নির্দেশে ক্যাসিনো মালিক কিম অং ২০১৬ সালের নভেম্বরে প্রায় দেড় কোটি ডলার ফেরত দেন। বাকি ৬ কোটি ৬০ লাখ ডলার উদ্ধারে ফিলিপাইনের বিভিন্ন সরকারি সংস্থা বাংলাদেশের পক্ষে ১২টি মামলা করে। অর্থাৎ চুরি যাওয়া রিজার্ভ থেকে ফেরত এসেছে মাত্র ৩৫ শতাংশ। শুরুর দিকে অর্থ ফেরতে দেশটির জোর তৎপরতা ছিল। পরে তা থেমে গেছে। এখন পর্যন্ত একটি মামলায়ও রায় হয়নি। পরে চুরি হওয়া অর্থ ফেরত এবং দোষীদের চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য প্রথমে ২০১৯ সালের ৩১ জানুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের ম্যানহাটন সাউদার্ন ডিস্ট্রিক্ট কোর্টে মামলা করে বাংলাদেশ। এতে ফিলিপাইনের আরসিবিসি ব্যাংক, ক্যাসিনো মালিক কিম অংসহ ২০ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে অভিযুক্ত করা হয়। তবে ২০২০ সালের মার্চে এই কোর্ট জানিয়ে দেন, মামলাটি তাদের এখতিয়ারাধীন নয়। ওই বছরের ২৭ মে নতুন করে যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট কোর্টে মামলার আবেদন করা হয়।

মামলার বিষয়ে বাংলাদেশের আইনি সহায়তা প্রতিষ্ঠান কোজেন ও’কনর বিবাদীদের নোটিস দেয়। এরপর আরসিবিসি, অভিযুক্ত ব্যক্তি লরেঞ্জ ভি টান, রাউল টান, সোলায়ের ক্যাসিনো, ইস্টার্ন হাওয়ায়ে ও কিম অং যুক্তরাষ্ট্রের আদালতে ‘মোশন টু ডিসমিস’ বা মামলাটি না চালানোর অনুরোধ জানিয়ে আবেদন করে। তাদের আবেদনের বিষয়ে ২০২১ সালের ১৪ জুলাই ও ১৪ অক্টোবর শুনানি হয়। ২০২২ সালের ৮ এপ্রিল আংশিক রায় হয়। ২০২৩ সালের ১৩ জানুয়ারি ছয় বিবাদীর ‘মোশন টু ডিসমিস’ বা মামলা না চালানোর আবেদন খারিজ করে দিয়েছেন নিউইয়র্ক সুপ্রিম কোর্ট। একই সঙ্গে ২ ফেব্রুয়ারির মধ্যে আরসিবিসিসহ অন্য বিবাদীদের মধ্যস্থতার নির্দেশ দেন স্টেট কোর্ট। তবে সমঝোতায় সাড়া দেয়নি ফিলিপাইন। যুক্তরাষ্ট্রের আদালতেও পরে কোনো শুনানি হয়নি।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা বলেন, ‘আইনি প্রক্রিয়া শেষ করে অর্থ ফেরত পাওয়া অনেক জটিল। যে কারণে শুরু থেকেই সমঝোতার মাধ্যমে চেষ্টা ছিল। তবে তাতে ফিলিপাইনের দিক থেকে সাড়া মিলছে না। আবার যুক্তরাষ্ট্রের আইনি প্রক্রিয়া শেষ হওয়া অনেক সময়সাপেক্ষ। ফলে বাংলাদেশের অর্থ ফেরত পাওয়ায় অনিশ্চয়তা বাড়ছে।’

প্রসঙ্গত, বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির ঘটনায় এখনও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তৎকালীন গভর্নর আতিউর রহমান বা ব্যাংকের কর্মকর্তাদের জবাবদিহির আওতায় আনা হয়নি বলে মন্তব্য করেছেন অর্থনৈতিক কৌশল নির্ধারণে সরকার গঠিত টাস্কফোর্স। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আন্তর্জাতিক সাইবার হ্যাকাররা বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ থেকে ৬৭৯ কোটি ৬০ লাখ টাকা চুরি করে নিয়ে যায়। এ ঘটনায় তৎকালীন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরকে পদত্যাগ করতে হয়েছিল। কিন্তু এখন পর্যন্ত রিজার্ভ চুরির জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের তৎকালীন গভর্নর কিংবা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তাদের জবাবদিহির আওতায় আনা হয়নি। 

অন্যদিকে রিজার্ভ চুরির ঘটনায় তদন্তপ্রক্রিয়া দীর্ঘায়িত করার কথাও বলা হয়েছে টাস্কফোর্সের প্রতিবেদনে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির ঘটনার সিআইডির তদন্ত প্রতিবেদন ৮০ বার পেছানো হয়।

তবে সম্প্রতি সিআইডির তৎপরতা বেড়েছে। ইতোমধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর আতিউর রহমানসহ বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা, ব্যবসায়ীসহ ১৪ জনের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে সংস্থাটি। বিদেশযাত্রায় নিষেধাজ্ঞা পাওয়া ১৪ জনের মধ্যে চারজন ছাড়া অন্যদের নাম-পরিচয় পাওয়া গেছে। তারা হলেনÑ বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর আতিউর রহমান, সামিট অ্যালায়েন্স পোর্ট ও ইনস্টিটিউট অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের সাবেক পরিচালক আনিসউদ্দিন আহমেদ খান ওরফে আনিস এ খান, বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক মেইনটেন্যান্স ইঞ্জিনিয়ার দিপঙ্কর কুমার চৌধুরী, সাবেক উপমহাব্যবস্থাপক এসএম রেজাউল করিম, সাবেক নির্বাহী পরিচালক শুভংকর সাহা, মামলার বাদী জুবায়ের বিন হুদা, সাবেক উপপরিচালক (সুইফট অপারেটর) জিএম আব্দুল্লাহ সালেহীন, সহকারী পরিচালক শেখ রিয়াজ উদ্দিন, কর্মকর্তা একলাস উদ্দিন ও বর্তমান নির্বাহী পরিচালক মেজবাউল হক। তদন্তসংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, বিদেশযাত্রায় নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার আগেই দেশ ছেড়ে গেছেন আতিউর রহমান। তবে অন্যরা এখনও দেশে আছেন। 

বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে হওয়া রিজার্ভ চুরির ঘটনায় মতিঝিল থানায় যে মামলা হয়েছিল, তার তদন্ত ৯ বছরেও শেষ করতে পারেনি পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। এখন মামলাটির তদন্তের দায়িত্ব চাইছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। নাম প্রকাশ না করার শর্তে দুদকের একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, রিজার্ভ চুরির ঘটনাটি দুদকের তফসিলভুক্ত অপরাধ। সাবেক শেখ হাসিনা সরকার ঘটনাটি ধামাচাপা দিতে একটি সাজানো মামলা করে তদন্তের দায়িত্ব দিয়েছিল সিআইডিকে। ঘটনার ৩৯ দিন পর মতিঝিল থানায় মামলা করা হয়। মামলায় চুরিসহ তিনটি ধারা অন্তর্ভুক্ত করা হয়। 

ওই কর্মকর্তা বলেন, ‘রিজার্ভ চুরির ঘটনাটি ঘটেছে মূলত হ্যাকিংয়ের মাধ্যমে, কিন্তু মামলায় কৌশলে চুরির ধারা দেওয়া হয়। আইনে হ্যাকিংয়ের স্পষ্ট ধারা থাকলেও সেটি মামলায় উল্লেখ করা হয়নি, যাতে অভিযোগপত্র দিলেও মামলাটি বিচারে গিয়ে আসামিরা ছাড় পান। আসামিদের সুবিধা দিতেই এই ধারা যুক্ত করা হয়।’

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক : মোরছালীন বাবলা

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা