× ই-পেপার প্রচ্ছদ সর্বশেষ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি শিক্ষা ধর্ম ফিচার ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

থমকে দাঁড়িয়েছে অর্থ পাচার অনুসন্ধান

প্রবা প্রতিবেদক

প্রকাশ : ০১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ২২:২৮ পিএম

প্রতীকী ছবি

প্রতীকী ছবি

সাবেক আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ২৪০ বিলিয়ন ডলার পাচার হয়েছে বাংলাদেশ থেকে। যার সবই অনিয়ম-দুর্নীতি ও লুটপাটের মাধ্যমে ব্যাংকিং চ্যানেল দিয়ে বের হয়ে গেছে। কিন্তু দেশের আর্থিক খাত পাহারার দায়িত্বে থাকা বাংলাদেশ ব্যাংক পাচার রোধ না করে উল্টো সহযোগিতা করে গেছে দীর্ঘ ১৬ বছর। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মাধ্যমে স্বৈরাচারের পতন হলেও বহাল তবিয়তে পাচারের সঙ্গে জড়িত কর্মকর্তারা। পাচারের টাকা ফেরতসংক্রান্ত টাস্কফোর্স গঠন হলেও গতি নেই কার্যক্রমে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বাংলাদেশ ব্যাংকের একাধিক কর্মকর্তা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘বিগত দুই গভর্নরের আমলে বাংলাদেশ ব্যাংকের সেরা পরিদর্শকদের বদলি করে ক্লারিক্যাল ডিপার্টমেন্টগুলোতে বহাল করা হয়েছিল। যারা এখনও ঐসব ডিপার্টমেন্টেই রয়েছেন। এরপরও বর্তমান গভর্নর (আহসান এইচ মনসুর) ব্যাংক সুপারভিশনের উন্নয়নে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করেননি। বরং তিনি টাকা পাচার উদ্ঘাটন করার জন্য তিনটি বিদেশি প্রতিষ্ঠানকে নিয়োগ করেছেন। এটা ২০১৬ সালের রিজার্ভ হ্যাকিং-পরবর্তী ঘটনার ভ্রান্ত কর্মপন্থার মতো হয়ে যাচ্ছে। নিজ প্রতিষ্ঠানের এক্সপার্টদের কাজে না লাগিয়ে বিদেশিদের কাজে লাগানো হচ্ছে। বিদেশি প্রতিষ্ঠানগুলো তো এ দেশের রেগুলেশন্স জানে না। পণ্য বা সেবা আমদানি অথবা অন্যান্য খাতে কোন কোন সুনির্দিষ্ট পন্থায় অর্থ প্রেরণের সুযোগ রয়েছে, তা তারা জানে না। রপ্তানিমূল্য প্রত্যাবাসনের আড়ালে অর্থ পাচারের ব্যাপারে এ দেশের ব্যাংকগুলোর অনুসৃত কৌশলও তাদের জানা নেই। এ দেশের এক্সচেঞ্জ রেগুলেশন অন্য কোনো দেশের মতো নয়। ফলে এটা নিশ্চিত যেÑ বিদেশি প্রতিষ্ঠানগুলো টাকা পাচারের প্রকৃত অবস্থা বের করতে ব্যর্থ হবে। অনেক সময়ক্ষেপণ হবে অযথাই। ফলে টাকা পাচারের বেনিফিশিয়ারিদের সঙ্গে কুশীলব বা কারিগররাও হাতছাড়া হয়ে যাবে।’ তাই স্পর্শকাতর এই বিষয় পুনরায় বিবেচনা করার জন্য অর্থ উপদেষ্টা ও গভর্নরের দৃষ্টি আকর্ষণ করে চিঠি দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক কর্মকর্তাদের একটি বড় অংশ। তারপরও কোনো কাজ হচ্ছে না। বর্তমান গভর্নরও যেন আগের গভর্নরদের মতোই আচরণ করছেন।

আওয়ামী লীগ সরকারের আমলেও আর্থিক গোয়েন্দা সংস্থা বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটকে (বিএফআইইউ) নিষ্ক্রিয় করে রাখা হয়েছিল। শেখ হাসিনার পতনের পর অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নিলে সংস্থাটির প্রধান মাসুদ বিশ্বাস পদত্যাগ করেন। এরপর মাসুদ বিশ্বাসের আমলের ডেপুটি হেড রফিকুল ইসলাম আওয়ামী রাঘব-বোয়ালদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছিলেন না। এমন প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তাদের পরামর্শে সৎ ও দক্ষ নির্বাহী পরিচালক একেএম এহসানকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। এরপরই হঠাৎ সক্রিয় হয়ে ওঠে সংস্থাটি। তার নেতৃত্বে শেখ হাসিনার পরিবারসহ শীর্ষ ১০ গ্রুপের আর্থিক অনিয়মের বিরুদ্ধে প্রতিবেদন তৈরি হয়। এসব প্রতিবেদনের ভিত্তিতে ইতোমধ্যে বিভিন্ন সংস্থা অনুসন্ধান কার্যক্রম শুরু করেছে। এই তদন্তের ভিত্তিতে প্রতিনিয়ত মামলা করছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এ ছাড়া অর্থ পাচারের অভিযোগে গত বছরের আগস্ট থেকে ডিসেম্বরের মধ্যে ৩৬৬ জন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক হিসাবে সাড়ে ২২ হাজার কোটি টাকা ও শেয়ার জব্দ করা হয়েছে। এত কাজ করার পরও অদৃশ্য কারণে তাকে সংস্থাটির প্রধান করা হয়নি। শুধু তাই নয়, তাকে উপপ্রধানের পদ থেকেও সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। 

তথ্য অনুযায়ী, আওয়ামী লীগ সরকারের আমলের বিএফআইইউর উপপ্রধান ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাবেক নির্বাহী পরিচালক এবং মাসুদ বিশ্বাসের ঘনিষ্ঠ সহযোগী এএফএম শাহীনুল ইসলামকে সংস্থাটির প্রধান করা হয়েছে। যদিও সংস্থাটির অপারেশন লেভেলের কাজ করা কোনো অভিজ্ঞতা নেই এই কর্মকর্তার। মাত্র আট মাস বিএফআইইউতে কাজ করার অভিজ্ঞতা রয়েছে। তবুও তাকে প্রধান বানানো হয়েছে। 

বিএফআইইউর কর্মকর্তারা জানান, নতুন হেড যোগদানের পর থেকেই কার্যক্রম থেমে গেছে। ইতোমধ্যে একটি মিটিংয়ে তিনি কোনো সংস্থা তথ্য চাইলে সেটা নিয়ে কাজ করতে বলেছেন। তবে নিজেদের উদ্যোগে কাজ না করার জন্য কর্মকর্তাদের নির্দেশ দিয়েছেন। 

জানা গেছে, বিদেশ থেকে পাচারের টাকা আদৌ ফেরত আসবে কি না তা নিয়ে সন্দিহান আর্থিক গোয়েন্দা সংস্থার এই প্রধান। তাই তিনি এ কাজে সময় নষ্ট করতে রাজি নন। অথচ বিভিন্ন সংস্থার সমন্বয়ে গঠিত ১১টি টিম পাচার অর্থ ফেরাতে কাজ করছে, যার নেতৃত্ব দিচ্ছে বিএফআইইউ। 

এদিকে গত মঙ্গলবার বিএফআইইউর ডেপুটি হেডের দায়িত্ব থেকে একেএম এহসানকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। তার স্থানে পদায়ন করা হয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক কাওসার মতিনকে। যার বিএফআইইউতে কাজ করার কোনো পূর্ব-অভিজ্ঞতা নেই। হঠাৎ কার স্বার্থে এসব সিদ্ধান্ত হচ্ছেÑ তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকসহ আর্থিক খাতের সব মহলে। অভিযোগ আছে শেখ হাসিনার পরিবারের অনিয়মের প্রতিবেদন কার্যক্রম থামানোর জন্যই এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের হিউম্যান রিসোর্সেস ডিপার্টমেন্টের দায়িত্বে থাকা ডেপুটি গভর্নর জাকির হোসেন চৌধুরী বলেন, ‘এটা অফিসের প্রয়োজনে করা হয়েছে। আর যেসব তদন্তকাজ চলমান তা চলবে। অন্য কোনো কারণে করা হয়নি। এটা রুটিন ওয়ার্ক। আর উনার চাকরির সময়ও বেশি নেই। যাকে দেওয়া হয়েছে তার সময় বেশি রয়েছে।’

যদিও রুটিন ওয়ার্ক হিসেবে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক অনেকের দায়িত্বে পরিবর্তন আনা হয়নি। এর মধ্যে রয়েছেন নির্বাহী পরিচালক সাইফুল ইসলাম ও মো. মেজবাউল হক। এখানে সাইফুল ইসলামের চাকরি রয়েছে মাত্র দুই মাসের মতো। তিনি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গুরুত্বপূর্ণ ব্যাংকিং প্রবিধি ও নীতি ডিপার্টমেন্টের দায়িত্বে রয়েছেন। তার দায়িত্বে কোনো পরিবর্তন আনা হয়নি। এ ছাড়া মেজবাউল হক রিজার্ভ চুরিতে জড়িত থাকার দায়ে দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা পেয়েছেন। অথচ তাকে দেওয়া হয়েছে গুরুত্বপূর্ণ সব বিভাগ।

কর্মকর্তারা জানান, বর্তমান প্রধান ও উপপ্রধানের বিএফআইইউতে কাজের কোনো অভিজ্ঞতা নেই। যেখানে সদ্যবিদায়ি ডেপুটি হেডের ৮ বছর অভিজ্ঞতা ছিল। ৫ আগস্টের পর বিএফআইইউর যে কাজের গতি ছিল তা এখন আবার স্থবির হয়ে পড়েছে। যা আর্থিক খাতের সংস্কারের জন্য খুবই ক্ষতিকর। সার্বিক পরিস্থিতিতে বিএফআইইউর কর্মকর্তাদের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। ইতোমধ্যে ৫ আগস্টের পর বিভিন্ন গ্রুপের অনিয়মের বিরুদ্ধে যারা কাজ করেছে, তাদের কয়েকজনকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। আবার মাসুদ বিশ্বাসের সহযোগীদের বহাল করা হয়েছে। 

সূত্র জানায়, গত ২৮ নভেম্বর কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এইচআরডির দায়িত্ব পান বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর মো. জাকির হোসেন চৌধুরী। এরপর ৩ ডিসেম্বর বাংলাদেশ ব্যাংক ট্রেনিং একাডেমি (বিবিটিএ) থেকে বিএফআইইউতে বহাল করা হয় যুগ্ম পরিচালক মো. রোকন-উজ-জামানকে। যিনি মাসুদ বিশ্বাসের সহযোগী হিসেবে পরিচিত। ইতোমধ্যে বিএফআইইউ মাসুদ বিশ্বাসকে নিয়ে কাজ শুরু করেছে। কিন্তু তার অন্যতম সহযোগী রোকন-উজ-জামানের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। বরং বিএফআইইউতে তাকে পদায়ন করা হয়। এক্ষেত্রে সংস্থাটির দুজন শীর্ষপর্যায়ের কর্মকর্তা ও বাংলাদেশ ব্যাংক অফিসার্স কাউন্সিলের অনুরোধ উপেক্ষা করে তাকে পদায়ন করা হয়।

গত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে মাসুদ বিশ্বাসের সহযোগীদের আবারও বিএফআইইউতে পুনর্বহাল করা হচ্ছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে জাকির হোসেন চৌধুরী বলেন, ‘এটা ঠিক নয়।’

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক : মোরছালীন বাবলা

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা