প্রবা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ০১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ২০:৩৫ পিএম
ফাইল ছবি।
বাংলাদেশের কৃষি খাতে নতুন সম্ভাবনার দুয়ার খুলতে যাচ্ছে বিল অ্যান্ড মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশন। কৃষি খাতের উন্নয়ন ও আধুনিকায়নের লক্ষ্যে সংস্থাটি ৫২ কোটি ২৬ লাখ টাকা অনুদান দিচ্ছে। বিশ্বের অন্যতম এই দাতব্য সংস্থার অনুদানে বাস্তবায়িত ‘টেকনিক্যাল সাপোর্ট টু সাসটেইনেবল অ্যান্ড রেজিলিয়েন্ট ইনভেস্টমেন্ট টুওয়ার্ডস অ্যাগ্রিকালচার সেক্টর ট্রান্সফরমেশন প্রোগ্রাম অব বাংলাদেশ’ নামের প্রকল্পটি ২০২৮ সাল পর্যন্ত চলবে। এটি বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিল (বিএআরসি) ও জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (ফাও)-এর নেতৃত্বে বাস্তবায়ন হবে।
নানা খাতে ব্যয় নিয়ে প্রশ্ন
প্রকল্পের ব্যয় বিভাজন বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, প্রকল্পটিতে পরামর্শক সেবা খাতে ব্যয় ধরা হয়েছে ১৩ কোটি টাকা, যা মোট প্রাক্কলিত ব্যয়ের প্রায় ২৫ দশমিক ৪৫ শতাংশ। এ পরামর্শ সেবার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে কি না, সে বিষয়ে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় সভায় ব্যাখ্যা চাওয়া হয়েছে।
পরিকল্পনা কমিশনের যুগ্ম প্রধান ফেরদৌসী আখতার বলেছেন, ‘প্রকল্পে যেন কোনো ধরনের অপ্রয়োজনীয় ব্যয় না হয়, সে বিষয়ে আমরা বিশেষভাবে নজর রাখছি। কৃষকদের জন্য টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করতে চাই।’
বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিল জানিয়েছে, পরিকল্পনা কমিশনের পরামর্শ অনুযায়ী বাজেট পুনর্নির্ধারণ করা হবে। প্রকৃতপক্ষে এত বেশি পরামর্শক প্রয়োজন নেই, তাই ব্যয় কমিয়ে আরও কার্যকর খাতে বিনিয়োগ করা হবে।
প্রকল্পটিতে ন্যাশনাল প্রজেক্ট সাপোর্ট অ্যাসিস্ট্যান্ট, ন্যাশনাল প্রকিউরমেন্ট সাপোর্ট অ্যাসিস্ট্যান্ট, ন্যাশনাল অ্যাডমিন সাপোর্ট অ্যাসিস্ট্যান্ট, ন্যাশনাল অপারেশন স্পেশালিস্ট, ন্যাশনাল আইওটি স্পেশালিস্ট রাখার যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে কমিশন। কন্ট্রাক্ট স্পেশালাইজড সার্ভিসেস রিলেটেড টু ইনোভেশনস রিচার্স নেটওয়ার্কিং বাবদ ১৮ কোটি ১৯ লাখ টাকার সংস্থান রাখা হয়েছে। একান্ত প্রয়োজন না হলে কমিশন এগুলো বাদ দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছে।
প্রকল্পের মূল্যায়ন কার্যক্রমের জন্য বিভিন্ন স্থানে রাখা হয়েছে অর্থের সংস্থান। যেমন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়নের জন্য ১০ জন; মাস হিসাবে ন্যাশনাল প্রফেশনাল অফিসার বাবদ ৫৪ লাখ টাকার সংস্থান রাখা হয়েছে। আবার কার্যক্রম পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়নের জন্য ৩০ জন; মাস হিসাবে ন্যাশনাল এমঅ্যান্ডই স্পেশালিস্ট বাবদ সংস্থান রাখা হয়েছে ৭২ লাখ টাকা। প্রকল্প মূল্যায়ন ব্যয় বাবদ আছে ৪২ লাখ ২৩ হাজার টাকা।
পরিকল্পনা কমিশন থেকে জানা যায়, প্রশাসনিক ব্যয় বাবদ মোট ৩ কোটি ৩৯ লাখ ৫৩ হাজার টাকার সংস্থান রাখা হয়েছে; যা অত্যধিক বলে দাবি কমিশনের। এ ব্যয় কমাতে বলা হয়েছে। ম্যানেজমেন্ট চার্জ ইনডাইরেক্ট সাপোর্ট কস্ট ফর এক্সিকিউশন অব দ্য ডেলিভারি অব প্রজেক্ট অ্যাক্টিভিটিস বাবদ ৩ কোটি ৮২ লাখ টাকা নিয়ে ভাবতে হবে। স্থানীয় প্রশিক্ষণ ও কর্মশালা বাবদ ১ কোটি ৪৪ লাখ টাকা এবং বৈদেশিক প্রশিক্ষণ ও কর্মশালা বাবদ ১ কোটি ৯৩ লাখ ৬৮ হাজার টাকার সংস্থান রাখার যৌক্তিকতা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছে কমিশন।
প্রকল্পের আওতায় কম্পিউটার, ল্যাপটপ, প্রিন্টার, আইটি যন্ত্রপাতি ও অফিস সরঞ্জাম বাবদ ৪২ লাখ টাকার সংস্থান রাখা হয়েছে। এ খাতের বিস্তারিত ব্যয় বিভাজন দরকার। টেকনিক্যাল সাপোর্ট টু ফিল্ড প্রজেক্টস বাবদ ১ কোটি ৩৬ লাখ টাকার সংস্থান রাখার যৌক্তিকতা ব্যাখ্যা করা প্রয়োজন।
কৃষি মন্ত্রণালয়ের আইসিটি বিভাগ শক্তিশালীকরণে ২ কোটি ৬০ লাখ ১৯ হাজার টাকা সংস্থান রাখার যৌক্তিকতা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছে কমিশন। মেশিনারি, যন্ত্রপাতি ও যানভাড়া বাবদ ৩৬ লাখ টাকা সংস্থান রাখার প্রয়োজনীয়তা ব্যাখ্যা করা প্রয়োজন। প্রকল্পটির প্রস্তাবিত মেয়াদ ৩৮ মাস। উন্নয়ন প্রকল্প প্রণয়ন-সংক্রান্ত নির্দেশিকা অনুসারে প্রকল্পটির মেয়াদ তিন বছর বা ৩৬ মাস নির্ধারণ করা যেতে পারে বলে মত কমিশনের।