× ই-পেপার প্রচ্ছদ সর্বশেষ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি শিক্ষা ধর্ম ফিচার ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

গোপনে পরামর্শক নিয়োগ দিচ্ছে পল্লী সঞ্চয় ব্যাংক

রেদওয়ানুল হক

প্রকাশ : ২৯ জানুয়ারি ২০২৫ ১২:২৯ পিএম

পল্লী সঞ্চয় ব্যাংকের লোগো। ছবি : সংগৃহীত

পল্লী সঞ্চয় ব্যাংকের লোগো। ছবি : সংগৃহীত

পল্লী সঞ্চয় ব্যাংকে সরকারি কাঠামো অনুযায়ী কোনো পদ না থাকলেও আইটি পরামর্শক ও উপপরামর্শক পদে বিপুল বেতনে চাকরি করছেন দুই কর্মকর্তা। চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পেয়ে সরকারি বেতন কাঠামোর প্রায় দ্বিগুণ বেতন ভোগ করে আসছেন তারা। জনবল চাহিদা না থাকা সত্ত্বেও তাদের চুক্তি নবায়নের প্রক্রিয়া চলছে। এক্ষেত্রে প্রবিধান গোপন করা হয়েছে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের কাছে। ব্যবসায়িক চুক্তির ধারা প্রয়োগ করে এই দুই কর্মকর্তাকে বিধিবহির্ভূত নিয়োগ দিতে যাচ্ছে ব্যাংকটির বোর্ড। অথচ তাদের বিরুদ্ধে বেআইনিভাবে রাষ্ট্রীয় অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, পল্লী সঞ্চয় ব্যাংকের শুরুর দিকে সরকারি জনবল না থাকায় চুক্তিভিত্তিক লোক দিয়ে কার্যক্রম চলে। নতুন চালু হওয়া ব্যাংকের কার্যক্রম চলমান রাখার স্বার্থে ২০১৭ সালে সিস্টেম ইঞ্জিনিয়ার (হার্ড) পদে নাসিম আহমেদ এবং সহকারী প্রোগ্রামার হিসেবে মু. সাইমুম রহমান নিয়োগ পান। দক্ষ জনবলের আওতায় তাদেরকে সরকার নির্ধারিত বেতন কাঠামোর প্রায় দ্বিগুণ বেতনে এক বছরের জন্য নিয়োগ দেওয়া হয়। তবে দেনদরবারের মাধ্যমে তারা দফায় দফায় চুক্তি নবায়ন করে এখনও চাকরিতে বহাল আছেন। অথচ সরকারি কাঠামোর আওতায় জনবল নিয়োগ সম্পন্ন হয়েছে। অর্থাৎ দ্বিগুণ বেতনে অপ্রয়োজনীয় জনবল নিয়োগের মাধ্যমে সরকারি অর্থ অপচয় করছে পল্লী সঞ্চয় ব্যাংক। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে ফের চুক্তি নবায়নের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন তারা। আগের চেয়ে ১০ শতাংশ বেশি বেতন নির্ধারণ করে গত ৫ ডিসেম্বর তাদের চুক্তি নবায়নের প্রস্তাব অনুমোদন করে ব্যাংকটির পর্ষদ।

এরপর এটি আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের অনুমোদনের জন্য পাঠানো হয়। মন্ত্রণালয়ে পাঠানো সুপারিশে পল্লী সঞ্চয় ব্যাংক (কর্মকর্তা/কর্মচারী) চাকুরী প্রবিধানমালা-২০২২ গোপন করা হয়। ২০১৪ সালের আইনের ধারা উল্লেখ করে তাদের নিয়োগের সুপারিশ করে বোর্ড। বিষয়টি নিয়ে তখন প্রতিদিনের বাংলাদেশে সংবাদ প্রকাশ হলে তাদেরকে সরাসরি নিয়োগ না দিয়ে পুনরায় বোর্ডের কাছে পাঠিয়ে বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেয় আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ। সিনিয়র সহকারী সচিব মোহাম্মদ মিজানুর রহমান স্বাক্ষরিত ওই নির্দেশনাটি পাঠানো হয় গত ১৬ জানুয়ারি। 

ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, ২০১৪ সালের যে আইনের ধারার দোহাই দিয়ে এই দুই কর্মকর্তাকে নিয়োগ দেওয়ার যাবতীয় আয়োজন সম্পন্ন করেছে, সেটি মূলত ব্যবসায়িক চুক্তির ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। চুক্তিভিত্তিক জনবল নিয়োগের ক্ষেত্রে এই ধারা প্রয়োগের অপচেষ্টা চালাচ্ছে ব্যাংকটির একটি চক্র। অথচ ২০২২ সালে প্রণীত প্রবিধানে এ ধরনের নিয়োগের সুযোগ বন্ধ করা হয়েছে। ফলে বিগত সময়ে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পাওয়া অন্য কোনো কর্মকর্তার চুক্তি নবায়ন করা হয়নি। কেবল এই দুই কর্মকর্তার ক্ষেত্রে অদৃশ্য কারণে কোনো নিয়মকানুন মানা হচ্ছে না। 

জানা গেছে, চুক্তি নবায়নের সুপারিশে ব্যাংকের বোর্ড ভিপিএন পরিচালনায় এই দুই কর্মকর্তার প্রয়োজনীয়তা উল্লেখ করেছে। যদিও ব্যাংকটির ভিপিএন পরিচালনার জন্য তিনটি ভেন্ডর প্রতিষ্ঠান কাজ করছে। আর ভেন্ডরের কাজ তদারকি করার জন্য ব্যাংকের নিয়মিত জনবল আছেন। সেক্ষেত্রে ব্যাংকটির বোর্ড রাষ্ট্রের কাছে তথ্য গোপন করে এই দুই কর্মকর্তাকে বিধিবহির্ভূত নিয়োগ দেওয়ার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।

এসব বিষয়ে জানতে পল্লী সঞ্চয় ব্যাংকের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ মহিউদ্দিনের মোবাইল ফোনে অনেকবার কল করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি। পরে খুদেবার্তা পাঠানো হলে তিনি দেখেছেন কিন্তু সাড়া দেননি। 

এর আগে যখন নিয়োগের প্রস্তাব বোর্ডে উঠেছিল, তখন ব্যাংকটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক সালমা বানু প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেছিলেন, ‘বোর্ড যদি মনে করে জনবল দরকার আছে, তাহলে সুপারিশ করবে।’ তবে প্রবিধান কেন গোপন করা হলো, সেটি জানতে কয়েক দিন ধরে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি। 

এ বিষয়ে ব্যাংকটির অন্তত তিনজন বোর্ড সদস্যের সঙ্গে কথা বলে প্রতিদিনের বাংলাদেশ। তারা জানিয়েছেন, বিষয়টি সম্পর্কে তাদের স্পষ্ট ধারণা দেওয়া হয়নি। অর্থাৎ অন্যান্য বোর্ড সদস্যদের অন্ধকারে রেখে প্রবিধান গোপন করে সিস্টেম ইঞ্জিনিয়ার (হার্ড) পদে নাসিম আহমেদ এবং সহকারী প্রোগ্রামার হিসেবে মু. সাইমুম রহমানকে বিধিবহির্ভূত নিয়োগ দেওয়ার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও চেয়ারম্যান।

সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, যখন নিজস্ব কর্মী ছিল না, তখন বিপুল বেতনে চুক্তিভিত্তিক কর্মী নিয়োগ দিয়ে কাজ চালিয়ে নেওয়া হয়েছে। কিন্তু ওই পদে জনবল নিয়োগ হওয়ার পরও অহেতুক লোক নিয়োগ করে সরকারি অর্থের অপচয় করা হচ্ছে। তা ছাড়া আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সাংগঠনিক কাঠামো অনুযায়ী পল্লী সঞ্চয় ব্যাংকে আইটি পরামর্শক এবং উপপরামর্শক পদ নেই। কিন্তু নতুন দুটি পদ সৃষ্টি করে এই দুই কর্মকর্তার চুক্তি নবায়ন করেছে ব্যাংকের বোর্ড। বর্তমান বোর্ডও একই পথে হাঁটছে।

ব্যাংকের একজন বোর্ড সদস্য মহতাব জাবিন বলেন, ‘কারিগরি সহায়তার জন্য দক্ষ লোক নিয়োগ দেওয়ার চেষ্টা হয়ে থাকতে পারে। ভেন্ডরের কাছ থেকে কাজ বুঝে নিতে দক্ষ লোক প্রয়োজন। এ বিষয়ে ব্যাংকটির একাধিক কর্মকর্তা জানান, যে দুটি পদে তাদের চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল, সেগুলোতে সরকারিভাবে জনবল নিয়োগ হয়ে গেছে। একই পদে জনবল নিয়োগের পরও যদি অধিক দক্ষ জনবলের প্রয়োজন হয়, তাহলে প্রশ্ন দেখা দেয় যাদেরকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল তাদের দক্ষতা যাচাই করা হয়নি কেন। অর্থাৎ অদক্ষ কর্মী নিয়োগ দিয়ে তার বিপরীতে আবার চুক্তিভিত্তিক দক্ষ লোকবল নিয়োগ দেওয়া সরকারি অর্থের অপচয়। তা ছাড়া যখন লোক ছিল না, তখন বেশি অর্থ খরচ করে চুক্তিতে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এখন যেহেতু জনবল আছে, তাই তাদের চুক্তি নবায়নের কোনো যৌক্তিকতা নেই।

এই দুই কর্মকর্তার বিষয়ে গুরুতর অনিয়মের অভিযোগও রয়েছে। চাকরিবিধি অনুযায়ী বাসে যাতায়াত করার কথা থাকলেও সরকারি টাকা অপচয় করে তারা ঘুরে বেড়ান বিমানে। নিয়োগপত্রের তথ্য অনুযায়ী, এই দুই কর্মকর্তা বেশি বেতনে নিয়োগ পেলেও যাতায়াত ভাতা পাবেন সরকারি কাঠামো অনুযায়ী। কিন্তু তারা সরকারি কাঠামোর তোয়াক্কা না করে ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে বিপুল যাতায়াত ভাতা হাতিয়ে নেন। সরকারি কাঠামো অনুযায়ী সিস্টেম ইঞ্জিনিয়ার (হার্ড) ৬ষ্ঠ গ্রেডভুক্ত। এই পদে নিয়োগপ্রাপ্ত নাসিম আহমেদ বাসে যাতায়াতের সুযোগ পাবেন। তবে তিনি চতুর্থ গ্রেডভুক্ত কর্মকর্তাদের সমপরিমাণ অর্থাৎ বিমানে যাতায়াতের ভাতা নেন। অপর কর্মকর্তা সহকারী প্রোগামার সাইমুম রহমান কাঠামো অনুযায়ী ৯ম গ্রেডে যাতায়াত ভাতা পাবেন। তবে তিনি ভাতা নেন ৫ম গ্রেডের কর্মকর্তা হিসেবে। অর্থাৎ সরকারি টাকায় বিমানে ঘুরে বেড়ান এই দুই কর্মকর্তা। এর বাইরেও তাদের বিরুদ্ধে ব্যাপক অনিয়ম দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে, যা তদন্ত করা প্রয়োজন বলে মনে করেন ব্যাংকের কয়েকজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ব্যাংকটির পরামর্শক নাসিম আহমেদ প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, ‘আমাকে স্থায়ী করার কথা বলে নিয়ে আসা হয়েছিল। পরে স্থায়ী করা হয়নি। আমি বৈষম্যের শিকার হয়েছি।’

একই ধরনের দাবি করেছেন উপপরামর্শক সাইমুম রহমান। তিনি প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, ‘আমি দ্বিতীয় গ্রেডে ভাতা পাওয়ার কথা, আমাকে বরং কম দেওয়া হচ্ছে। আমাকে স্থায়ী করার কথা থাকলেও অভ্যন্তরীণ ষড়যন্ত্রের কারণে তা হয়নি।’

জানা গেছে, পরীক্ষার মাধ্যমে ব্যাংকে লোকবল নিয়োগ দেওয়া হয়। কিন্তু ২০২০ সালে এই দুই কর্মকর্তাসহ চারজনকে সরাসরি স্থায়ী করার প্রক্রিয়া শুরু হলে তা বন্ধ করে দেয় আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ। ওই বছরের ৯ ডিসেম্বর জারি করা এক আদেশে তাদের স্থায়ীকরণ বন্ধের নির্দেশ দেওয়া হয়।

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক : মোরছালীন বাবলা

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা