× ই-পেপার প্রচ্ছদ সর্বশেষ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি শিক্ষা ধর্ম ফিচার ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

শেয়ারবাজার থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে বিদেশিরা

আহমেদ ফেরদাউস খান

প্রকাশ : ২৯ জানুয়ারি ২০২৫ ১০:২২ এএম

গ্রাফিক্স : প্রতিদিনের বাংলাদেশ

গ্রাফিক্স : প্রতিদিনের বাংলাদেশ

দেশের পুঁজিবাজারে ধারাবাহিকভাবে কমছে বিদেশি ও প্রবাসী বিনিয়োগকারীর সংখ্যা। কয়েক মাস ধরে বিদেশিদের পুঁজিবাজার ছাড়ার যে ধারা চলছে, তা এখনও থামেনি। তবে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর অন্যান্য খাতের মতো পুঁজিবাজারে আশার আলো দেখা যায়। নতুন করে আসতে শুরু করে বিদেশি বিনিয়োগ। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সম্ভাব্য সংস্কারের আশায় আসা এই বিনিয়োগে সাময়িকভাবে সক্রিয় হয় দেশের পুঁজিবাজার। ফলে আগস্টের পুরো সময় ইতিবাচক ধারা দেখা যায়। তবে বেশিদিন অটুট থাকেনি এ ধারা। আগস্টে শুরু হওয়া বিনিয়োগ জানুয়ারিতে এসে ভাটায় পড়ে। বেশিরভাগ বিদেশি বিনিয়োগকারী তাদের বিনিয়োগ তুলে নিয়ে যাচ্ছেন। 

খাতসংশ্লিষ্টরা বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার বিদায় নিলে আশাবাদী হয়ে ওঠেন বিদেশি বিনিয়োগকারীরা। ফলে বিশাল অঙ্কের অর্থ পুঁজিবাজারে আসে। তবে ফ্লোর প্রাইস ও মুদ্রার অবমূল্যায়নের কারণে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের আত্মবিশ্বাসে ভাটা পড়ে। তার সঙ্গে যোগ হয় সামষ্টিক অর্থনৈতিক অস্থিরতা। তবে পুঁজিবাজার সংস্কারের কাজ চলমান বলে জানিয়েছেন তারা। এটি চলতি বছরের জুনের মধ্যেই সম্পন্ন হবে। সংস্কার সম্পন্ন হলে এবং অর্থনীতি স্থিতিশীল হলে বিদেশি বিনিয়োগকারীরা ফিরে আসবেন বলে আশা প্রকাশ করেছেন সংশ্লিষ্টরা। অনাবাসী বাংলাদেশিদের বিনিয়োগে আকৃষ্ট করতে নতুন পণ্য আনার পরিকল্পনাও রয়েছে।

ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) তথ্য অনুযায়ী, আগস্টে গত বছরের একই সময়ের তুলনায় বিদেশি বিনিয়োগকারীদের লেনদেন বাড়ে ৫০১ শতাংশ। যা টাকার অঙ্কে ৪০৪ কোটি ৮২ লাখ। সেপ্টেম্বর ও অক্টোবরেও এ প্রবণতা অব্যাহত থাকে। বিদেশি বিনিয়োগকারীরা সেপ্টেম্বর মাসে ১৭০ কোটি টাকার শেয়ার কেনেন এবং ১৬৬ কোটি টাকার শেয়ার বিক্রি করেন। অক্টোবরে তারা ১২৩ কোটি টাকার শেয়ার কেনেন এবং ৩৪ কোটি টাকার শেয়ার বিক্রি করেন। নভেম্বর মাসে কেনেন ১৬৫ কোটি টাকার শেয়ার এবং ২০০ কোটি টাকার শেয়ার বিক্রি করেন। ফলে নিট ৩৫ কোটি টাকার মূলধন উত্তোলন ঘটে। ডিসেম্বর মাসে ৯৬ কোটি টাকার শেয়ার বিক্রির বিপরীতে ৭৩ কোটি টাকার শেয়ার কেনা হয়, ফলে ২৩ কোটি টাকার নিট উত্তোলন দেখা যায়। 

দৈনন্দিন বাজার তথ্য অনুযায়ী, জানুয়ারি মাসেও বিদেশি বিনিয়োগে তেমন কোনো উন্নতি দেখা যায়নি। এ ছাড়া এ সময়ে ডিএসইতে টার্নওভার এবং সূচক উভয়ই উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়ে যায়। মাত্র চারটি ট্রেডিং সেশনেই বেঞ্চমার্ক সূচক ৭৮৬ পয়েন্ট বৃদ্ধি পায়। ফলশ্রুতিতে গত ১১ আগস্টে ডিএসইএক্স ছয় হাজার ০১৫ পয়েন্টে পৌঁছে। কিন্তু ধারাবাহিক শেয়ার বিক্রি এবং বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) কিছু পরিবর্তনের কারণে বাজারে পতন শুরু হয়। ২৭ অক্টোবরের মধ্যে ডিএসইএক্স পাঁচ হাজার পয়েন্টের নিচে নেমে যায়।

বাজারে বিদেশি বিনিয়োগ পরিস্থিতি নিয়ে ডিএসই ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশন সভাপতি সাইফুল ইসলাম প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, ‘অনেক বছর পর রেজিম চেঞ্জ হয়। এরপর সংস্কার শুরু হয়। এ কারণে আগস্টে বিনিয়োগ বাড়ে। এখনও বিদেশি বিনিয়োগকারীরা বাজার পর্যবেক্ষণ করছেন যে, কী কী সংস্কার হয়। বিশেষ করে ব্যাংক খাতে কী সংস্কার হয়Ñ তার দিকে তাকিয়ে আছে। যদি দুয়েক মাসে কোনো সংস্কার হয়, তাহলে বিদেশি বিনিয়োগ আবার আসবে।’

তিনি বলেন, ‘আগের সরকারের পতনের পরপর বিদেশি বিনিয়োগকারীদের মধ্যে শেয়ার ক্রয়ে কিছুটা সক্রিয়তা দেখা যায়। বিনিয়োগকারীদের আস্থা পুনর্নির্মাণে এখনও উল্লেখযোগ্য কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। ফলে তারা এখনও সতর্ক অবস্থানে। বিদেশি বিনিয়োগকারীরা বাজার সংস্কার এবং সামষ্টিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছেন। তারা বিনিয়োগে আগ্রহী হলেও আস্থা ফিরিয়ে আনতে কার্যকর পদক্ষেপ প্রয়োজন।’

ডিএসইর তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের লেনদেন কার্যক্রম ২০২৩ সালের তুলনায় ৬৮ শতাংশ বেড়েছে। তবে তারা শেয়ার বিক্রির পরিমাণ ক্রয়ের তুলনায় বেশি রেখে বাজার থেকে নিট বিনিয়োগ কমিয়েছে। ২০২৪ সালে ডিএসইতে মোট লেনদেনের পরিমাণ ছিল ১ লাখ ৪৮ হাজার ৫১২ কোটি টাকা, যা আগের বছরের তুলনায় ৫.২৮ শতাংশ বেশি। গড় দৈনিক লেনদেনের পরিমাণ দাঁড়ায় ৬৩২ কোটি টাকায়। বিদেশি বিনিয়োগকারীদের লেনদেনের মোট পরিমাণ ছিল ৩ হাজার ৬৩৯ কোটি ২৮ লাখ টাকা, যা ২০২৩ সালের তুলনায় উল্লেখযোগ্যভাবে বেশি। তবে তারা ১ হাজার ৯৫৫ কোটি টাকার শেয়ার বিক্রি করে ১ হাজার ৬৮৩ কোটি টাকার শেয়ার কেনে, যার মাধ্যমে এ বিনিয়োগকারীরা ২০২৪ সালে বাজার থেকে ২৭১ কোটি টাকার নিট মূলধন প্রত্যাহার করে। গতকাল মঙ্গলবার সূচক ৫ হাজার ১২৬ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে।

ডিএসইর তথ্যানুসারে, ২০১৬ সালে ডিএসইতে বিদেশিদের লেনদেনের পরিমাণ ছিল ৮ হাজার ৭৭৩ কোটি টাকা, যা ছিল এক্সচেঞ্জটির মোট লেনদেনের ৩ দশমিক ৬৮ শতাংশ। ২০১৭ সালে এক্সচেঞ্জটির মোট লেনদেনের ২ দশমিক ৬৪ শতাংশ ছিল বিদেশিদের, টাকার অঙ্কে যা ১১ হাজার ৪৪৮ কোটি। ২০১৮ ও ২০১৯ সালে ডিএসইতে বিদেশিরা যথাক্রমে ৯ হাজার ২৭৩ কোটি ও ৭ হাজার ৮২৩ কোটি টাকার শেয়ার লেনদেন করেছেন এবং এক্সচেঞ্জটির মোট লেনদেনে তাদের অংশগ্রহণের হার ছিল যথাক্রমে ৩ দশমিক ৪৮ ও ৩ দশমিক ৪৪ শতাংশ। কোভিডের বছর ২০২০ সালে পুঁজিবাজারে বিদেশিদের লেনদেনের পরিমাণ ছিল ১০ হাজার ৩৮৮ কোটি টাকা, যা ছিল ডিএসইর মোট লেনদেনের ৩ দশমিক ৮৫ শতাংশ। ২০২১ সালে এক্সচেঞ্জটির মোট লেনদেনে বিদেশিদের অংশগ্রহণের হার নেমে যায় ১ দশমিক ১০ শতাংশে এবং টাকার অঙ্কে লেনদেন দাঁড়ায় ৭ হাজার ৭৬৪ কোটিতে। ২০২২ ও ২০২৩ সালে ডিএসইতে বিদেশিদের লেনদেনের পরিমাণ তলানিতে গিয়ে ঠেকে। এই দুই বছরে এক্সচেঞ্জটির মোট লেনদেনে বিদেশিদের অংশগ্রহণের হার ছিল যথাক্রমে দশমিক ৮৯ ও দশমিক ৭৭ শতাংশ। এ সময়ে টাকার অঙ্কে বিদেশিদের লেনদেনের পরিমাণ ছিল যথাক্রমে ৪ হাজার ১৮০ কোটি ও ২ হাজার ১৬৭ কোটি টাকা। সর্বশেষ ২০২৪ সালে ডিএসইতে বিদেশিদের লেনদেন কিছুটা বেড়ে ৩ হাজার ৯২৯ কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে, যা ছিল গত বছরে এক্সচেঞ্জটির মোট লেনদেনের ১ দশমিক ২২ শতাংশ।

রাষ্ট্রায়ত্ত বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠান ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশের (আইসিবি) চেয়ারম্যান ও পুঁজিবাজার বিশ্লেষক অধ্যাপক আবু আহমেদ প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, ‘বাংলাদেশে তো এমনিতেই বিদেশি বিনিয়োগ কম। গত দুই-তিন বছর ধরেই কমছে। অন্যান্য দেশের তুলনায় আগস্টে যা বাড়ছে, তা খুবই কম। সরকার পরিবর্তন হওয়ায় কিছু আসছিল। কিন্তু বাজারে এখনও সরকার পরিবর্তনের ভালো কোনো প্রভাব পড়েনি। এ ছাড়া বাজারে লাভ হচ্ছে না, তাই চলে যাচ্ছে। সুদহার বাড়ছে, ডলার শক্তিশালী হচ্ছে। বাংলাদেশে বিনিয়োগ করলে তারা টাকায় প্রোফিট পেত। কিন্তু টাকায় তো মূল্য হারাচ্ছে। তাই বিদেশি বিনিয়োগ চলে যাচ্ছে।’

ডিএসইর তথ্য অনুযায়ী, স্থানীয় বিনিয়োগকারীরা ২০২৪ সালে বাজারের ৯৯.১২ শতাংশ টার্নওভার নিশ্চিত করলেও, বিদেশি বিনিয়োগকারীদের অংশ ছিল মাত্র ০.৮৮ শতাংশ। ২০২৩ সালে বিদেশি বিনিয়োগকারীরা শেয়ার ক্রয় বৃদ্ধি করে পাঁচ বছরের শেয়ার বিক্রির ধারা উল্টে দিয়েছিল। তারা সে বছর ১ হাজার ১১৫ কোটি টাকার শেয়ার কিনে ১ হাজার ৫০ কোটি টাকার শেয়ার বিক্রি করেছিল, যার ফলে নিট বিনিয়োগ দাঁড়িয়েছিল ৬৪ কোটি টাকা। তবে ২০১৮ থেকে ২০২২ পর্যন্ত বিদেশি বিনিয়োগকারীরা ধারাবাহিকভাবে বাজার থেকে মূলধন তুলে নিয়েছিল। ২০১৭ সালে সর্বোচ্চ বিদেশি লেনদেন রেকর্ড করা হয়েছিল ১১ হাজার ৪৪৮ কোটি টাকা।

২০২৩ সালের ডিসেম্বরে গ্রামীণফোনে বিদেশি মালিকানার পরিমাণ ১.৫৮ শতাংশ থাকলেও, ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে তা কমে ০.৯৮ শতাংশে নেমে আসে। রেনাটা পিএলসিতেও একই চিত্র দেখা গেছে-২০২৩ সালে ২২.২৩ শতাংশ থেকে কমে ২০২৪ সালে ২১.১৮ শতাংশে নেমে এসেছে।

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক : মোরছালীন বাবলা

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা