প্রবা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ২৭ জানুয়ারি ২০২৫ ২০:৩১ পিএম
সোমবার রাজধানীর এনইসি সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত এক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ। ছবি: সংগৃহীত
টেবিলের নিচে টাকা দেওয়ার সংস্কৃতি বন্ধ করে সুনির্দিষ্ট কর ব্যবস্থার মাধ্যমে বাড়তি ভ্যাট দেওয়া দেশের জন্য লাভজনক হবে বলে মন্তব্য করেছেন অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ।
সোমবার (২৭ জানুয়ারি) নগরীর এনইসি সম্মেলন কক্ষে ‘রিফর্মস ইন কাস্টমস, ইনকাম ট্যাক্স অ্যান্ড ভ্যাট ম্যানেজমেন্ট টু অ্যাড্রেস দ্য এলডিসি গ্রাজুয়েশন’ শীর্ষক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
তিনি বলেন, “বাড়তি ভ্যাট দিলেও জনগণকে নানান খাতে অতিরিক্ত অর্থ ব্যয় করতে হবে না। এটি শুধু ভ্যাটের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে। আমরা এই ব্যবস্থাকে সুশৃঙ্খল ও সঠিক পথে পরিচালিত করছি। উদাহরণস্বরূপ, ঢাকা থেকে বগুড়া পর্যন্ত ট্রাক ভাড়া কমেছে। আমরা মাতারবাড়ী পোর্টসহ বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পে এই অর্থ ব্যবহার করছি। জনগণের জন্য কাজ করছি, নিজের পকেট ভারী করছি না।”
অর্থ উপদেষ্টা বলেন, “আমরা ট্যাক্স, পলিসি এবং ভ্যাট ব্যবস্থায় গুরুত্বপূর্ণ সংস্কার আনব। আমার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে জানি, একসময় টেলিফোন লাইন নিতে ২০ হাজার টাকা ঘুষ দিতে হতো। কিন্তু আমরা এই ঘুষের সংস্কৃতি বদলাতে চাই। যাতে কোনো নাগরিককে এমন সমস্যার সম্মুখীন হতে না হয়। ভ্যাটের সংস্কার নিয়ে অনেক কথা হচ্ছে, তবে আমরা অবশ্যই এই সংস্কারগুলো কার্যকর করব।”
সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, “স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণের জন্য ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রবৃদ্ধি নিশ্চিত করতে হবে। এই লক্ষ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের দক্ষতা বাড়ানো অপরিহার্য। একইসঙ্গে, স্থানীয় উদ্যোক্তাদের প্রতিযোগিতার সক্ষমতা বৃদ্ধি এবং শ্রমিকদের অধিকার ও পরিবেশ সুরক্ষার বিষয়গুলোর উপর জোর দিতে হবে।”
তিনি আরও বলেন, সরকার এবং বেসরকারি খাতকে যৌথভাবে কাজ করতে হবে। এলডিসি উত্তরণের পর বাংলাদেশের অর্থনীতিকে শক্তিশালী করতে সম্প্রতি অনুমোদিত স্মুথ ট্রানজিশন স্ট্র্যাটেজি বাস্তবায়ন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন বলেন, “ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের ভ্যাটের আওতায় আনা এবং অভিন্ন করহার চালু করা সময়ের দাবি। স্থানীয় শিল্পের দক্ষতা বাড়ানোর মাধ্যমে উত্তরণের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা সম্ভব।”
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান মো. আব্দুর রহমান খান তার বক্তৃতায় কর প্রদান খরচ কমিয়ে আনার উপর গুরুত্বারোপ করেন। তিনি বলেন, “আগামী মার্চ মাসের মধ্যে ন্যাশনাল সিঙ্গল উইন্ডো পদ্ধতি চালু করা হবে এবং আয়কর প্রদানের পুরো প্রক্রিয়া ডিজিটাল পদ্ধতিতে স্বয়ংক্রিয় করা হবে।”
বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনের প্রাক্তন সদস্য এবং এসএসজিপি প্রকল্পের কম্পোনেন্ট ম্যানেজার ড. মোস্তফা আবিদ খান বলেন, “বাংলাদেশের আমদানি ও রপ্তানির খরচ প্রতিবেশী দেশগুলোর তুলনায় অনেক বেশি। কাস্টমস ক্লিয়ারেন্স সময় একদিন কমাতে পারলে রপ্তানি ৭.৪ শতাংশ বৃদ্ধি পাবে। শুল্ক প্রক্রিয়া সহজীকরণের মাধ্যমে স্থানীয় পণ্যের প্রতিযোগিতা সক্ষমতা ৫ শতাংশ বাড়ানো সম্ভব।”
সেমিনারে উপস্থিত ব্যবসায়ী প্রতিনিধিরা স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণের সময়সীমা কিছুদিন বাড়ানোর আহ্বান জানান। তারা মনে করেন, এর মাধ্যমে প্রস্তুতির জন্য আরও সময় পাওয়া যাবে।
সেমিনারের প্যানেল আলোচনায় অংশ নেন চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল এস. এম. মনিরুজ্জামান, ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট রাজিব এইচ চৌধুরী এবং বাংলাদেশ ফ্রেইট ফরোয়ার্ডার্স অ্যাসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট কবির আহমেদ।
ইআরডি সচিব মো. শাহ্রিয়ার কাদের ছিদ্দিকী বলেন, “স্মুথ ট্রানজিশন স্ট্র্যাটেজি বাস্তবায়নে সরকার বদ্ধপরিকর। এই কৌশল বাস্তবায়নের জন্য মাল্টিস্টেকহোল্ডার ডায়লগসহ আরও কার্যক্রম নেওয়া হবে।”
এলডিসি উত্তরণের পর শুল্কমুক্ত বাণিজ্যের সুযোগ কমে আসবে এবং অভ্যন্তরীণ রাজস্ব বৃদ্ধির লক্ষ্যে কর কাঠামোর সংস্কার অপরিহার্য হয়ে উঠবে বলে বক্তারা মত প্রকাশ করেন।