প্রবা ডেস্ক
প্রকাশ : ৩০ নভেম্বর ২০২২ ১৮:৩৪ পিএম
ছবি : সংগৃহীত
অর্থনৈতিক মন্দা ও মূল্যস্ফীতির প্রভাবে নাকাল যুক্তরাজ্য। দেশটিতে প্রতিনিয়ত বাড়ছে নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের দাম। জ্বালানি খরচ থেকে শুরু করে জীবনধারণ ব্যয় বেড়েছে লাগামহীন ভাবে। চলতি মাসে যুক্তরাজ্যের বাজারে ডিম, দুগ্ধজাত পণ্য এবং কফির মতো মৌলিক জিনিসের দাম বেড়েছে ১২ দশমিক ৪ শতাংশে। খাদ্য দ্রব্যে মূল্যস্ফীতি গত ৪০ বছরের এবার এমন রেকর্ড অবস্থানে পৌঁছেছে।
ব্রিটিশ গণমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ানের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, সতেজ খাবারের দাম গত অক্টোবরে যেখানে ছিল ১৩ দশমিক ৩ শতাংশ চলতি মাসে তা বেড়ে ১৪ দশমিক ৩ শতাংশে পৌঁছেছে। সব পণ্যের ওপর অক্টোবর মাসে যেখানে মূল্যস্ফীতি ছিল ৬ দশমিক ৬ শতাংশ সেখানে নভেম্বরে এসে তা দাঁড়িয়েছে ৭ দশমিক ৪ শতাংশে। একইসঙ্গে বেড়েছে খেলাধুলার সরঞ্জামের মতো আইটেমগুলোর দামও। সামগ্রিক বাজারে একমাসে এত মূল্যবৃদ্ধি ২০০৫ সালের পর এবারই প্রথম দেখা গেল। ব্রিটিশ খুচরা বাজার বিষয়ক সংস্থার সাম্প্রতিক তথ্য থেকে জানা যায়, আগামী বছরেও খুচরা বাজারে পণ্যের দাম বাড়তে থাকবে।
নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসের দাম বৃদ্ধির ফলে দরিদ্র পরিবারগুলো সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। অনেকেই ইতোমধ্যে জ্বালানি বিল শোধ করতে লড়াই করছে। অধিকাংশ দরিদ্র পরিবারগুলোর সঞ্চয় করার সুযোগ কমেছে। যারা উচ্চ আয়ের তারাও খাবারের বাইরে অপ্রয়োজনীয় ব্যয় কমাচ্ছে। শুধু তাই নয় তারাও সস্তা পণ্যের বাজারের দিকে ঝুঁকছে। তবে কখনো কখনো নিজেদের অবস্থান ধরে রাখতে বড় সুপারমার্কেট থেকে কেনাকাটার দরকার হলে তারা অ্যালডি এবং লিডলের মতো ডিসকাউন্ট প্রদান করা প্রতিষ্ঠানের থেকেই প্রয়োজন মিটিয়ে নিচ্ছে।
অক্টোবরে ভোক্তা মূল্য সূচক ৪১ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ পর্যায়ে উন্নীত হয়েছে। নতুন করারোপ ও সরকারি ব্যয়ে কাটছাঁট পরিকল্পনা প্রকাশের মধ্যে এমন তথ্য জীবনযাত্রার সংকট নিরসনে আরো পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি জোরালো করেছে।
এপির খবরে বলা হয়েছে, ইউক্রেনে রুশ আগ্রাসনের পর থেকেই জ্বালানি ও খাদ্যপণ্যের বাজারে অস্থিরতা চলছে। এ পরিস্থিতি জীবনযাত্রার ব্যয় নিয়ে সংকটে পড়া পরিবারগুলোকে বিপর্যয়ে ফেলে দিয়েছে। অফিস ফর ন্যাশনাল স্ট্যাটিস্টিকস জানিয়েছে, গত মাসে ভোক্তা মূল্য সূচক ১১ দশমিক ১ শতাংশ বেড়েছে। এ হার সেপ্টেম্বরের ১০ দশমিক ১ শতাংশকেও ছাড়িয়ে গিয়েছে। যেখানে অর্থনীতিবিদরা ১০ দশমিক ৭ শতাংশ বাড়ার পূর্বাভাস দিয়েছিলেন। খাদ্য ও জ্বালানির উচ্চ দাম যুক্তরাজ্যের মূল্যস্ফীতির হারকে ১৯৮১ সালের অক্টোবরের পর সর্বোচ্চ পর্যায়ে নিয়ে গিয়েছে। গত মাসে দেশটিতে খাদ্যের দাম এক বছর আগের তুলনায় ১৬ দশমিক ৪ শতাংশ বেড়েছে। এ হার ১৯৭৭ সালের সেপ্টেম্বরের পর সর্বোচ্চ। এ সময়ে বিদ্যুৎ ও প্রাকৃতিক গ্যাসের দাম ২৪ শতাংশ বেড়েছে।
খুচরা বাজার বিশ্লেষকরা বলছেন, বছরের শেষ মাসে বেশিরভাগ ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো অধিক মুনাফা করে। তবে এবার বাজারে মূল্যস্ফীতির প্রভাব পড়বে। পণ্যে অধিক ছাড় দেওয়ার পরেও স্বাভাবিক দাম বেড়ে যাওয়ার কারণে ক্রেতাদের খরচ বেড়ে যাবে। ব্রিটিশ রিটেইল কনসোর্টিয়ামের প্রধান নির্বাহী হেলেন ডিকিনসন বলেন, “ শীতে অবস্থা আরও বেশি খারাপের দিকে যাবে। পণ্যের দাম বাড়া সামনেও অব্যাহত থাকবে। খাদ্যের দাম ক্রমাগত বাড়তেই আছে। জ্বালানি খরচ ও সরবারহ খরচ বেড়ে যাওয়ায় বিশেষ করে মাংস, ডিম এবং দুগ্ধজাত খাবারের দাম ব্যাপক ভাবে প্রভাবিত হয়েছে। কফির দামও গত মাসে বেড়েছে। ক্রিসমাস উপলক্ষ্যে উপহার সামগ্রীর দাম আগের বছরের তুলনায় আরও বেশি ব্যয়বহুল হয়ে ওঠবে। খেলাধুলা এবং বিনোদনের সরঞ্জামগুলো উচ্চ মূল্যের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।"
তবে আগামী বছর পণ্যের দাম কমতে পারে উল্লেখ করে ডিকিনসন আরও বলেন, "পরিবারগুলো প্রয়োজনীয় জিনিসগুলোকে অগ্রাধিকার দেওয়ার জন্য মৌসুমী খরচ কমিয়ে দিয়েছে। তাই এবছর বড়দিনের উল্লাস অনেকটাই নির্জীব হবে। খরচের চাপ আগামী বছর সহজ হতে পারে। ক্রেতাদের জন্য দামের চাপ কমাতে পারে।"