প্রবা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ০৮ জানুয়ারি ২০২৫ ২১:৪২ পিএম
রাজধানীর বারিধারায় বুধবার বিবিসিসিআই আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দেন ঢাকায় নিযুক্ত ব্রাজিলের রাষ্ট্রদূত পাওলো ফেরেস। ছবি : প্রবা ফটো
আমলাতান্ত্রিক জটিলতা ও প্রয়োজনীয় সনদ না পাওয়ার কারণে ব্রাজিল থেকে গরুর মাংস আমদানির প্রক্রিয়া শেষ পর্যন্ত ব্যর্থ হয়েছে বলে জানিয়েছেন ঢাকায় নিযুক্ত ব্রাজিলের রাষ্ট্রদূত পাওলো ফার্নান্দো দিয়াস ফেরেস।
বুধবার (৮ জানুয়ারি) রাজধানীর বারিধারায় এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা জানান।
আগামী ১৫ থেকে ১৮ জুন ব্রাজিলের সাও পাওলো শহরে অনুষ্ঠিতব্য ‘মেড ইন বাংলাদেশ এক্সপো ২০২৫’ উপলক্ষে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে ব্রাজিল বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (বিবিসিসিআই)।
সংবাদ সম্মেলনে স্বাগত বক্তব্য দেন বিবিসিসিআইয়ের ভাইস প্রেসিডেন্ট মো. সাইফুল আলম এবং মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেন বিবিসিসিআইয়ের মহাসচিব মো. জয়নাল আবদিন।
ব্রাজিল গত কয়েক বছর ধরেই বাংলাদেশে সস্তায় গরুর মাংস রপ্তানির আগ্রহ দেখিয়ে আসছিল। সর্বশেষ, ২০২৩ সালের এপ্রিলে ব্রাজিল প্রতি কেজি গরুর মাংস সাড়ে চার মার্কিন ডলারে (তৎকালীন বিনিময় হার অনুযায়ী প্রায় ৪৯৫ টাকা) রপ্তানির প্রস্তাব দিয়েছিল। তবে আমলাতান্ত্রিক জটিলতা এবং প্রয়োজনীয় সনদের অভাবে সেই প্রস্তাব বাস্তবায়ন সম্ভব হয়নি।
রাষ্ট্রদূত পাওলো ফেরেস জানান, গরুর মাংস আমদানির অনুমতির জন্য তিনি প্রথমে প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ে যোগাযোগ করেন। তবে সেখান থেকে তাকে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকে তিনি নীতিমালা ও সনদ সংক্রান্ত বিভিন্ন জটিলতার মুখোমুখি হন। তিনি বলেন, ‘বাংলায় লেখা বিভিন্ন নীতিমালার কথা তুলে ধরে অনুমতি দেওয়া হয়নি। তবে আমি আশা করছি, বিষয়টি এখনও প্রক্রিয়াধীন এবং ভবিষ্যতে অনুমতি পাওয়া যাবে।’
ব্রাজিল যখন গরুর মাংস রপ্তানির প্রস্তাব দেয়, তখন ঢাকার বাজারে প্রতি কেজি মাংস ৮০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছিল। বর্তমানে এই দাম ৬৫০ থেকে ৭০০ টাকার মধ্যে। ব্রাজিল থেকে সস্তায় মাংস আমদানির সুযোগ বাংলাদেশে মাংসের বাজার স্থিতিশীল রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারত বলে ধারণা করছেন বিশেষজ্ঞরা।
পাওলো ফেরেস জানান, ব্রাজিল শুধু গরুর মাংস রপ্তানি নয়, বাংলাদেশে প্রযুক্তি স্থানান্তর ও বিনিয়োগেও আগ্রহী। ব্রাজিলের কৃষি উৎপাদনশীলতা অত্যন্ত উচ্চমানের, যেখানে একটি গরু থেকে দৈনিক গড়ে ৪৫ কেজি দুধ পাওয়া যায়। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে স্থানীয় উৎপাদন বাড়াতে প্রযুক্তি স্থানান্তরের মাধ্যমে ব্রাজিল সহযোগিতা করতে পারে। তবে এর জন্য বেসরকারি খাতকে এগিয়ে আসতে হবে।’
ব্রাজিলের রাষ্ট্রদূত আরও বলেন, ‘দেশটির সর্বজনীন স্বাস্থ্য সুরক্ষা কর্মসূচির জন্য বিপুল পরিমাণ ওষুধ আমদানি করা হয়। বাংলাদেশের ওষুধ শিল্প এ সুযোগ নিতে পারে। তবে এ খাতেও সনদ সংক্রান্ত জটিলতা দূর করা প্রয়োজন।’
ব্রাজিলের রাষ্ট্রদূত তার বক্তব্যে দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বৃদ্ধির সম্ভাবনার ওপর গুরুত্বারোপ করেন। তবে তিনি স্বীকার করেন, আমলাতান্ত্রিক জটিলতা দূর করা না গেলে এসব উদ্যোগ সফল করা কঠিন হবে।
মো. সাইফুল আলম বলেন, ‘এই এক্সপো বিবিসিসিআইয়ের অর্থনৈতিক সহযোগিতা বৃদ্ধি এবং বাংলাদেশি উদ্যোক্তাদের জন্য নতুন পথ খোলার দৃষ্টিভঙ্গির সঙ্গে পুরোপুরি সামঞ্জস্যপূর্ণ। আমাদের রপ্তানিকারকদের জন্য নতুন বাজারে প্রবেশ এবং তাদের ব্যবসাকে বিশ্বব্যাপী উন্নীত করার জন্য এটি একটি সুবর্ণ সুযোগ।’
তিনি আরও বলেন, ‘আপনি যদি পোশাক শিল্পের একজন নেতা, পাটজাত পণ্যের অগ্রদূত, অথবা ওষুধ শিল্পের একজন প্রতিনিধি হন, এই ইভেন্টটি আন্তর্জাতিক প্রবৃদ্ধির জন্য একটি প্রবেশদ্বার। আমি ব্যবসায়ীদের সাও পাওলোতে আমাদের সঙ্গে যোগ দেওয়ার সুযোগটি হাতছাড়া না করার জন্য অনুরোধ করছি।’
মো. জয়নাল আবদিন বলেন, ‘২০২২ সালে বাংলাদেশ ও ব্রাজিলের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যের মূল্য ২.৫৩ বিলিয়ন ডলার হওয়ায়, তাৎপর্যপূর্ণ প্রবৃদ্ধির সম্ভাবনা অনস্বীকার্য। এই এক্সপো ব্রাজিলের টেকসই লক্ষ্যের সঙ্গে বাংলাদেশের পাট এবং বাংলাদেশের শিল্পায়নকে সমর্থনকারী ব্রাজিলীয় শিল্প সরঞ্জামের মতো সমন্বয় অন্বেষণের জন্য একটি প্ল্যাটফর্ম প্রদান করে।’
তিনি আরও বলেন, ‘এই অনুষ্ঠানের লক্ষ্যগুলো হলোÑ বাংলাদেশি রপ্তানিকারকদের জন্য বাজারের বৈচিত্র্য আনা, বাণিজ্যের পরিমাণ বৃদ্ধি করা, বিনিয়োগ অংশীদারত্ব বাড়ানো এবং শিল্পজুড়ে উদ্ভাবন ও সহযোগিতা প্রচার করা।’
তিনি যোগ করেন, ‘এই এক্সপোতে লক্ষ্যবস্তু থাকবে ব্যবসা-থেকে-ব্যবসা ম্যাচমেকিং, নীতি আলোচনা এবং সাংস্কৃতিক প্রদর্শনী, যা বাণিজ্যের বাইরে গিয়ে পারস্পরিক বোঝাপড়া এবং প্রবৃদ্ধি জোরদার করার জন্য অংশীদারত্বকে উৎসাহিত করবে।’
ব্রুনাই রাষ্ট্রদূত হাজী হারিস বিন ওসমান, ব্রিটিশ বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সাবেক সভাপতি মো. বশির আহমেদ, ঢাকাস্থ ব্রাজিল দূতাবাসের ডেপুটি হেড অব মিশন লিওনার্দো ডি অলিভেইরা জানুজ্জি, কৃষি অ্যাটাশে সিলভিও লুইজ রদ্রিগেজ টেস্টাসেক্কা উপস্থিত ছিলেন।