প্রবা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ০৭ জানুয়ারি ২০২৫ ২১:১২ পিএম
দেশে সরকারি-বেসরকারি ১০০টি ইকোনমিক জোন (অর্থনৈতিক অঞ্চল) করার কথা ছিল বাংলাদেশ অর্থনৈতিক জোন কর্তৃপক্ষের (বেজা)। তবে আপাতত একসঙ্গে সবগুলোর কার্যক্রম চলবে না। প্রথম ধাপে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে সরকারি মাত্র পাঁচটি ইকোনমিক জোন (ইজেড) নিয়ে কাজ করবে বেজা। এগুলোর সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করার পাশাপাশি সার্বিক কাজ আগামী ২০২৬ সালের মধ্যে শেষ করা হবে। পরবর্তীতে আরও ৫টি অর্থনৈতিক অঞ্চলের কাজ শুরু হবে।
মঙ্গলবার (৭ জানুয়ারি) রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বেজার সম্মেলন কক্ষে মিট দ্য প্রেসে এ তথ্য জানান সংস্থাটির নির্বাহী চেয়ারম্যান আশিক চৌধুরী। চেয়ারম্যান বলেন, ‘১০০ ইকোনমিক জোন নির্মাণের জায়গা থেকে আমরা সরে যাচ্ছি না। তবে এখন আমাদের মনে হচ্ছে, আগামী ১০ বছরের মধ্যে আমরা ১০টি ইকোনমিক জোনের কাজ পরিপূর্ণভাবে শেষ করতে চাই। এই পাঁচটা সম্পূর্ণভাবে ইন্ডাস্ট্রিয়ালাইজেশন হয়ে গেলে এবং পরবর্তী প্রয়োজন হলে বাকি জোনগুলোতে কাজ শুরু করব। যেসব এলাকায় মানুষ পিছিয়ে, সেখানে বেজার কাজ হচ্ছে ইন্ডাস্ট্রিয়াল ও কর্মসংস্থান সৃষ্টি। বেজার কাজ প্রফিট করা নয়।’
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমরা এখনও সরকারি এই পাঁচটি ইকোনমিক জোনে বিদ্যুৎ ও গ্যাসের সংযোগ দিতে পারিনি। তবে পরিকল্পনা করেছি, আগামী ২০২৬ সালের মধ্যে এই পাঁচ ইকোনমিক জোনে পানি, বিদ্যুৎ, গ্যাস ও যোগাযোগ ব্যবস্থা করা সম্ভব হবে। এ ছাড়া বেসরকারি ইকোনমিক জোনের জন্য রোডম্যাপ করা হবে। এই রোডম্যাপ অনুযায়ীই বেসরকারি ইকোনমিক জোনগুলোতে যোগাযোগ, পানি, বিদ্যুৎ ও গ্যাস সরবরাহ কর হবে বলে জানান তিনি।
আশিক চৌধুরী বলেন, আগামী দুই বছরের মধ্যে আড়াই লাখ কর্মসংস্থান নিশ্চিত করা হবে। সরকারের দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা আছে। কিন্তু তা বাস্তবায়ন হয় না। আশা করি আগামী দুই বছরের মধ্যে এই পাঁচ ইকোনমিক জোনে সব সুযোগ-সুবিধা দেওয়া সম্ভব হবে। আমাদেরও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনাও আছে। বর্তমানে বেজার ওয়েবসাইট থেকে ৬০টি ওয়ান স্টপ সার্ভিস চালু আছে এবং আরও চালুর অপেক্ষায় আছে বলে জানান তিনি।
তিনি জানান, আগামী ২০২৬ সালের মধ্যে আরও ১৩৩টি বিনিয়োগকারীর মাধ্যমে সাড়ে ৫০০ কোটি ডলার বিনিয়োগ আনার পরিকল্পনা রয়েছে। ১০০টি ইজেড বন্ধ বা বাতিল করার কোনো পরিকল্পনা নেই। আমরা অগ্রাধিকার নির্ধারণ করে কাজ করছি। এ পর্যন্ত ৭ হাজার ২০০ একর জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে। ৪৫ হাজার কর্মসংস্থান হয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত বাংলাদেশের ৮৩টি বিনিয়োগকারী ছাড়া বাইরের সবচেয়ে বেশি চীনের, ১১টি। এরপর জাপান ৬টি ও যুক্তরাজ্যের ৪টি রয়েছে। এ ছাড়া ৯টি দেশের বিনিয়োগকারী রয়েছে।
বিনিয়োগকারীদের সমস্যার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, নীতিমালার দফায় দফায় পরিবর্তন, সরকারি সেবার মান কম, মিরসরাই জোনে পানির সমস্যা, বিভিন্ন সেবা সংস্থার মধ্যে সমন্বয়হীন রয়েছে।
অর্থনৈতিক অঞ্চলে শ্রমিকদের আবাসন এখনও গড়ে ওঠেনি জানিয়ে চৌধুরী আশিক মাহমুদ বলেন, বিদেশি বিনিয়োগকারীরা অভিযোগ করেন অবকাঠামোসহ প্রণোদনা পান না। উনারা এসে যেন ফ্যাক্টরি সেটআপ করতে পারেন, সেটা দেখবে বেজা। একাধিক অফিসে যেন বিনিয়োগকারীদের যেতে না হয়, সেজন্য ডিজিটালাইজেশন করা হচ্ছে বেজার কার্যক্রম। এ ছাড়া আশুলিয়ায় বন্ধ হওয়া কারখানাগুলোর শ্রমিকদের পুনর্বাসন করতে মিরসরাইয়ে নেওয়া যায় কি না সেটা নিয়ে ভাবনা আছে বেজার।
বেজার চলমান অর্থনৈতিক অঞ্চলের অগ্রগতি
চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে জাতীয় বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলের কাজ শুরু হয় ২০১৫ সালে। এ প্রকল্পের জন্য ৫ হাজার ২৪৮ একর জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে। ১৪৪ উদ্যোক্তা এ অঞ্চলে ১ হাজার ৮৩৬ কোটি ডলার বিনিয়োগের প্রস্তাব দিয়েছে। এর মধ্যে ১২৩ কোটি বিনিয়োগ হয়েছে। এ অঞ্চলে ৭ লাখ ৫৯ হাজার ৬৯২ জনের কর্মসংস্থান হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
মৌলভীবাজারের শ্রীহট্ট অর্থনৈতিক অঞ্চলের জন্য ২২৭ একর জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে। প্রকল্পটি শুরু হয় ২০১৬ সালের ফেব্রুয়ারি। এখানে ৬ উদ্যোক্তা ১৩০ কোটি ৬১ লাখ ডলার বিনিয়োগের প্রস্তাব করেছে। বিনিয়োগ এসেছে ৩ কোটি ৯৩ লাখ ডলার। এখানে ৪৪ হাজার ৯৩১ জনের কর্মসংস্থান হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজারে জাপানি অর্থনৈতিক অঞ্চলের জন্য ১ হাজার একর জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে। অবকাঠামো নির্মাণ শেষ হওয়ার পর ৫ জন উদ্যোক্তা ১৫ কোটি ডলার বিনিয়োগের প্রস্তাব করেছে। এর মধ্যে ৮ কোটি ২৭ লাখ ডলার বিনিয়োগ হয়েছে। দ্রুততম সময়ের মধ্যে উৎপাদন শুরু হবে। এখানে ৫ হাজার মানুষের কর্মসংস্থান হবে।
কক্সবাজারের মহেশখালী অর্থনৈতিক অঞ্চলের জন্য ৭৭০ একর জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে। এখানে ৪ উদ্যোক্তা ৩১২ কোটি ২৩ লাখ ডলার বিনিয়োগের প্রস্তাব দিয়েছে। এর মধ্যে ৮ কোটি ২৭ লাখ ডলার ইতোমধ্যে বিনিয়োগ হয়েছে। এ অঞ্চলে ৩ হাজার ৪৬০ জনের কর্মসংস্থান হবে।
জামালপুর অর্থনৈতিক অঞ্চলের জন্য ১৬৩ একর জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে। ১৬ জন উদ্যোক্তা ১৭ কোটি ৫৬ লাখ ডলার বিনিয়োগের প্রস্তাব করেছে। বিনিয়োগ এসেছে ২ কোটি ১৬ লাখ ডলার। এখানে আগামী মার্চ-এপ্রিলে উৎপাদন শুরু হবে।
সাবরাং ট্যুরিজম পার্কে ১০০ একর জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে। এখানে ২১ উদ্যোক্তা ৩৬ কোটি ৭৭ লাখ ডলার বিনিয়োগের প্রস্তাব দিয়েছে। তাদের মধ্যে নেদারল্যান্ডস ও সিঙ্গাপুরের বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এর মধ্যে ৫৮ লাখ ডলার বিনিয়োগ হয়েছে। চলতি বছরের এপ্রিল-মে মাসে কারখানার উৎপাদন শুরু হবে। এ অঞ্চলে ১১ হাজার ৬৩৪ জনের কর্মসংস্থান হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
চীনের অর্থায়নে পরিচালিত আনোয়ারা অর্থনৈতিক অঞ্চলে দ্রুত উৎপাদন শুরু হবে। চাঁদপুর অর্থনৈতিক অঞ্চলে জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে। এখানে সোলার প্যানেল স্থাপন করা হবে।
কুষ্টিয়া অর্থনৈতিক অঞ্চলের জন্য ৪০০ একর জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে। কুড়িগ্রামে ভুটানি অর্থনৈতিক অঞ্চল বাস্তবায়ন করা হবে।