× ই-পেপার প্রচ্ছদ সর্বশেষ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি শিক্ষা ধর্ম ফিচার ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

বিপিসি

জ্বালানি তেল আমদানিতে সুদিন ফিরছে

হুমায়ুন মাসুদ, চট্টগ্রাম

প্রকাশ : ০৭ জানুয়ারি ২০২৫ ১১:৪৮ এএম

আপডেট : ০৭ জানুয়ারি ২০২৫ ১১:৪৯ এএম

জ্বালানি তেল আমদানিতে সুদিন ফিরছে

জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পর পাঁচ মাসে জমে থাকা বিপুল অঙ্কের বকেয়া পরিশোধ করে তেল সরবরাহকারী বিদেশি প্রতিষ্ঠানগুলোর পাওনা শূন্যের কোঠায় নিয়ে এসেছে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি)। পাশাপাশি আন্তর্জাতিক বাজার স্থিতিশীল হওয়ায় এবং প্রিমিয়াম কমে আসার সুবাদে সুদিন ফিরেছে জ্বালানি তেল আমদানিতে।

উপরন্তু আগামী ছয় মাসের তেল আমদানিতে আগের ছয় মাসের তুলনায় ৭৯৭ কোটি টাকা সাশ্রয় করেছে রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানটি। এর মধ্যে আন্তর্জাতিক দরপত্র প্রক্রিয়ায় ৩৭১ কোটি ও জিটুজি প্রক্রিয়ায় ৪২৬ কোটি টাকা সম্ভাব্য সাশ্রয় হয়েছে।

পাঁচ মাস আগে গত আগস্ট মাসের দিকে চাহিদা অনুযায়ী ব্যাংকগুলো ডলার সরবরাহ করতে না পারায় জ্বালানি তেলের বিল পরিশোধে হিমশিম খেতে হয় বিপিসিকে। ডলার সংকটের কারণে একদিকে বাড়তে থাকে বকেয়া, অন্যদিকে বিল পরিশোধে চাপ বাড়তে থাকে তেল সরবরাহকারী বিদেশি কোম্পানিগুলোর। 

বিপিসির কাছে গত ১২ আগস্ট পর্যন্ত জ্বালানি তেল সরবরাহকারী বিদেশি আটটি প্রতিষ্ঠানের পাওনা ছিল ৪০৬ মিলিয়ন ডলার। ২৭ আগস্ট তা বেড়ে দাঁড়ায় ৪২০ মিলিয়ন ডলার। 

অক্টোবর পর্যন্ত জ্বালানি তেল আমদানিতে এমন সংকটময় পরিস্থিতি বিরাজ করলেও এখন তা নেই বলে জানিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। ডলার সংকট কিছুটা কমে আসার পাশাপাশি তেল আমদানিতে বেসরকারি ব্যাংকে এলসি খোলার সুযোগ তৈরি হওয়ায় কেটে গেছে এই সংকট। বেসরকারি ব্যাংকের সহযোগিতায় আগের পাওনা পরিশোধ করার পর বর্তমানে বিপিসির কাছে তেল সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর এক টাকাও বকেয়া নেই। 

বিপিসির মহাব্যবস্থাপক (বাণিজ্য ও অপারেশনস) মনি লাল দাশ প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, ‘বিপিসির কাছে তেল সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর আর কোনো বকেয়া নেই। সেপ্টেম্বরের শুরুতেও বিদেশি প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছে বিপিসির বকেয়া ছিল ৩৪৬ মিলিয়ন ডলার। অক্টোবরের মধ্যে সব বকেয়া পেমেন্ট করে দেওয়া হয়েছে।’ 

তিনি বলেন, ‘বকেয়া পরিশোধ করায় বিপিসির প্রতি তেল সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর আস্থা ফিরে এসেছে। পাশাপাশি আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের মূল্য স্থিতিশীল হয়ে আসায় সরবরাহকারী বিদেশি কোম্পানিগুলোর আগ্ৰহ বেড়েছে। সে সুবাদে নতুন করে তেল আমদানিতে বিপিসি লাভবান হচ্ছে। নেগোসিয়েশনের ক্ষেত্রে গত বছরের তুলনায় প্রিমিয়াম কমেছে। প্রিমিয়াম কমায় জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত ছয় মাসে তেল আমদানিতে বিপিসির সাশ্রয় হচ্ছে প্রায় ৭৯৭ কোটি টাকা।’

তেলের দাম নির্ধারণ করা হয় আন্তর্জাতিক বাজারদরের সঙ্গে সমন্বয় করে। আর তেলের দামের সঙ্গে সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান জাহাজ ভাড়া, ইনস্যুরেন্সসহ আনুষঙ্গিক যে খরচ ধরে তা-ই প্রিমিয়াম।

বিপিসি সূত্রে জানা যায়, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত সময়ের জন্য প্রাপ্ত প্রিমিয়ামের ভিত্তিতে জিটুজি ও দরপত্র প্রক্রিয়ায় আমদানিতব্য সর্বোচ্চ পরিমাণ বিবেচনায় বিগত প্রান্তিকের তুলনায় সম্ভাব্য সাশ্রয় ৭৯৭ কোটি টাকা। এর মধ্যে ২০২৪ সালের জুলাই থেকে ডিসেম্বর সময়ের তুলনায় আন্তর্জাতিক দরপত্র প্রক্রিয়ায় সম্ভাব্য সাশ্রয় ৩৭১ কোটি টাকা এবং ২০২৪ সালের জুলাই থেকে ডিসেম্বর সময়ের তুলনায় জিটুজি প্রক্রিয়ায় সম্ভাব্য সাশ্রয় ৪২৬ কোটি টাকা।

২০২২ সালে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের আগে ডিজেলের প্রিমিয়াম ছিল সর্বনিম্ন তিন ডলার। যুদ্ধ শুরুর পর পর তা বেড়ে দাঁড়ায় ৯ ডলার। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধকে কেন্দ্র করে জ্বালানি তেলের আন্তর্জাতিক বাজার অস্থিতিশীল হয়ে পড়ার পর থেকে বিদেশি সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানগুলোও তাদের খরচ পোষাতে জ্বালানি বিক্রির সময় প্রিমিয়াম বাড়িয়ে দেয়। 

সবশেষ প্রতি ব্যারেল গ্যাস অয়েল আমদানিতে সর্বনিম্ন প্রিমিয়াম ছিল ১১ দশমিক ১৫ ডলার, জেট এ-১ আমদানিতে ১২ দশমিক ৭ ডলার, ফার্নেস অয়েল আমদানিতে ৫৮ দশমিক ৪ ডলার ও মেরিন ফুয়েল আমদানিতে ৮৪ দশমিক ৯০ ডলার। 

তবে আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের মূল্য স্থিতিশীল হয়ে আসায় প্রিমিয়াম কমিয়েছে তেল সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানগুলো। 

বিপিসি সূত্রে জানা যায়, আগামী ছয় মাসে দেশে কমপক্ষে ২৫ লাখ ৬৫ হাজার টন জ্বালানি তেল প্রয়োজন হবে। বিভিন্ন ধরনের এসব জ্বালানি তেল আমদানির জন্য ইতোমধ্যে আটটি বিদেশি কোম্পানির সঙ্গে চুক্তি করেছে বিপিসি। এই চুক্তির নেগোসিয়েশনের সময় ব্যারেলপ্রতি ৬ দশমিক ৮৪ ডলার কমে প্রতি ব্যারেল গ্যাস অয়েল আমদানিতে সর্বনিম্ন প্রিমিয়াম নির্ধারণ করা হয় ৫ দশমিক ১১ ডলার। এ ছাড়া জেট এ-১ আমদানিতে ৫ দশমিক ৩৮ ডলার কমিয়ে ৭ দশমিক ৩২ ডলার, ফার্নেস অয়েল আমদানিতে ১৩ দশমিক ৭২ ডলার কমিয়ে ৪৪ দশমিক ৬৮ ডলার এবং মেরিন ফুয়েল আমদানিতে ১২ ডলার কমিয়ে ৭২ দশমিক ৯০ ডলার প্রিমিয়াম নির্ধারণ করা হয়। প্রিমিয়াম কমে যাওয়ায় আগামী ছয় মাসে তেল আমদানিতে সাশ্রয় হবে প্রায় ৭৯৭ কোটি টাকা। 

অন্যদিকে জ্বালানি তেল আমদানির নতুন চুক্তির আগেই গত ২৯ অক্টোবরের মধ্যে তেল সরবরাহকারী ৮টি প্রতিষ্ঠানের সব বকেয়া পরিশোধ করে দিয়েছে বিপিসি। বেসরকারি ব্যাংকের সহযোগিতায় সেপ্টেম্বর ও অক্টোবর মাসে সব বকেয়া পরিশোধ করা হয়। 

বিপিসির কর্মকর্তারা জানান, প্রতি মাসে ৫ লাখ টন পরিশোধিত ও ১ লাখ টন অপরিশোধিত জ্বালানি তেল আনতে ১৭ থেকে ১৮টি ঋণপত্র খোলার দরকার হয় বিপিসির। আগে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকে এলসি খোলার মাধ্যমে এই তেল আমদানি করা হতো। তেল আমদানির জন্য বেসরকারি ব্যাংকে এলসি খোলার সুযোগ ছিল না। 

ডলার সংকটের কারণে গত জুলাই ও আগস্ট থেকে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলো জ্বালানি তেল আমদানির জন্য নতুন এলসি খুলতে পারছিল না। একই সময়ে ডলারের অভাবে পুরোনো এলসির পেমেন্টও পরিশোধ করতে পারছিল না রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলো। এমন পরিস্থিতিতে বিদেশি সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছে বিপিসির বকেয়া দিন দিন বাড়তে থাকে। বকেয়া বেড়ে যাওয়ায় প্রতিষ্ঠানগুলো তেল সরবরাহে গড়িমসি শুরু করে। পরে বিপিসি কর্তৃপক্ষ অন্তর্বর্তী সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের অনুমতি নিয়ে বেসরকারি ব্যাংকে এলসি খোলা শুরু করে। 

বর্তমানে সরকারি ব্যাংকের পাশাপাশি জ্বালানি তেল আমদানিতে সিটি ব্যাংক, মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক, ব্র্যাক ব্যাংক, ইসলামী ব্যাংক, মেঘনা ব্যাংক, প্রাইম ব্যাংক ও এবি ব্যাংকে এলসি খুলতে পারছে বিপিসি। বেসরকারি ব্যাংকগুলো এলসির বিপরীতে পর্যাপ্ত ডলার সরবরাহ দিতে পারায় বিপিসির বকেয়া কমতে থাকে অক্টোবরের শুরু থেকেই। ২৯ অক্টোবরের মধ্যে বিদেশি সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর সব বকেয়া পরিশোধ করে দেওয়া হয়।

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক : মোরছালীন বাবলা

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা