সাইফুল হক মোল্লা দুলু, মধ্যাঞ্চল
প্রকাশ : ০৪ জানুয়ারি ২০২৫ ১৭:২৭ পিএম
আপডেট : ০৪ জানুয়ারি ২০২৫ ২০:২৬ পিএম
হাওর ও উজানের খাদ্য উদ্বৃত্ত জেলা কিশোরগঞ্জে হঠাৎ চালের দাম অস্বাভাবিক বৃদ্ধি পেয়েছে। খুচরা বাজারে গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে প্রকারভেদে কেজিপ্রতি চালের দাম বেড়েছে ৮ টাকা থেকে ১০ টাকা। কোনো কোনো চালের দাম কেজিপ্রতি ২০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। জেলার চালের মোকামগুলোতেও বেড়েছে দাম। সেখানে বস্তাপ্রতি (৫০ কেজি) ১৫০ থেকে ২০০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। এতে নিম্নবিত্ত ও খেটে খাওয়া মানুষেরা বিপাকে পড়েছেন।
চাল ব্যবসায়ীরা বলেছেন, বাজারে চালের কোনো ঘাটতি নেই। সবজির দাম কিছুট কমার সাথে সাথে ধূর্ত ব্যবসায়ীরা হঠাৎ করে চালের দাম বাড়িয়ে দিয়েছে। ফলে জেলার প্রতিটি মোকাম ও বাজারে প্রতিকেজি চালের দাম ১০ টাকা বেড়েছে। এই মূহুর্তে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ না করলে চালের দাম আরও বেড়ে যাবে। যদিও কোনো কোনো ব্যবসায়ীর দাবি- চাল পরিবহন খরচ বেড়েছে প্রায় দ্বিগুণের কাছাকাছি। এছাড়া শ্রমমূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে। এ কারণে চালের দাম বেড়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গত বুধবার থেকে জেলা শহরের বড়বাজার, কাচারি বাজার, পুরানথানা বাজারসহ অর্ধ-শতাধিক বাজারে ৫০ কেজি বস্তা বি-৪৯ চালের দাম ছিল তিন হাজার টাকা, শনিবার (৪ জানুয়ারি) তা বেড়ে তিন হাজার ৫০০ টাকা থেকে তিন হাজার ৬০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। খুচরা বাজারে মোটা চাল হিসেবে এই চাল ৬৫ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। অথচ এক সপ্তাহ আগেও এই চাল সর্বোচ্চ ৫৬ টাকায় বিক্রি হতো।
বি-আর ২৯ চালের ৫০ কেজির বস্তার মূল্য ছিল ৩২০০ টাকা। এখন ৫০ কেজির বস্তা ৩২০০ থেকে ৩৬০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। খুচরা বাজারে ৭০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। যা কয়েকদিন আগেও ৬০ টাকা কেজি বিক্রি হতো।
৬০ টাকা কেজির বি-আর ২৮ চাল ৭০ টাকায় কিনতে হচ্ছে। জেলার জনপ্রিয় টেপি বোরো চাল ৭৫ টাকা কেজি বিক্রি হতো। এখন তা বিক্রি হচ্ছে ৮৫ টাকা কেজি। উন্নত মানের জনপ্রিয় রাতা বোরো কেজিতে ২০ টাকা বেড়েছে। রাতা বোরো ১০০ টাকা কেজি ছিল। এখন ১২০ টাকা প্রতিকেজি। এছাড়া স্বর্ণা, গুড়ি, কাটারিভোগসহ সব ধরনের চাল কেজিতে ১০ টাকা বেড়েছে।
কাচারি বাজারের চাল ব্যবসায়ী বিকাশ সাহা বলেন, রিকশা চালক, ঠেলা চালক থেকে খেটে খাওয়া মানুষ তার দোকানে আসেন। চালের দাম বেড়ে যাওয়ায় তারা পরিবারের জন্য কম চাল কিনছেন। অনেকেই দাম বেড়ে যাওয়ায় বিলাপ করে এসব দেখতে খু্ব খারাপ লাগে। একই কথা বলেন, বড় বাজারের ব্যবসায়ী আলাল মিয়া। তিনি বলেন, চাল থাকলে গরিবের আর কিছুর প্রয়োজন নেই। তাই চালের বিষয়টি নিশ্চিত করতে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে।
জেল চালকল মালিক সমিতির সভাপতি ফখরুল ইসলাম বলেন, ‘জেলার মোকামগুলোতে বেশ কয়েক দিন ধরে চালের দাম বেড়েই চলছে। মোকামের হাটবাজারে প্রয়োজনের তুলনায় ধান কম পাওয়া যাচ্ছে। ধানের দামও বেশি। এ ছাড়া শ্রমিক সংকট ও শ্রমমূল্য বাড়ায় মিলের উৎপাদন ও পরিবহন খরচ বেড়েছে। ফলে পাইকারি বাজারেও চালের দাম বাড়ছে।’
সচেতন নাগরিক কমিটির সনাক সদস্য এডভোকেট আবুল কাসেম বলেন, ‘মিলের মালিকরা বাজারে ধান নেই বলে দাম কিছুটা বাড়িয়ে দিয়েছে বলে যে দাবি করেছেন- তা সঠিক নয়, কারণ বাজারে ও বড় কৃষকের গোলায় পর্যাপ্ত ধান আছে। যা তারা বোরো মৌসুম শুরুর আগেই বিক্রি করে দিবে। বর্তমান অবস্থায় সরকার খোলাবাজারে চাল বিক্রি আরও বাড়িয়ে দিলে দাম নিয়ন্ত্রণে আসবে বলে তিনি মনে করেন।’
জেলা ক্যাব সভাপতি মো. সারওয়ার আলম টিটু জানান, এক শ্রেণির মুনাফালোভী পাইকার ব্যবসায়ীরা চাল মজুদ করে চালের দাম বাড়িয়ে দিয়েছে। শ্রমিক সংকট ও শ্রমিকের মজুরির কথা বলে খুচরা ব্যবসায়ীরাও কেনা দামের চেয়ে কেজিতে গড়ে ১০ টাকা বেশি দামে চাল বিক্রি করছে। এ জন্য কঠোর বাজার মনিটরিং জরুরি হয়ে পড়েছে।
ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক হৃদয় রঞ্জন বণিক বলেন, কোনো বাজারে অতিরিক্ত দামে বিক্রি হচ্ছে-এমন খবর পাওয়ার সাথে সাথে কিংবা অভিযোগ পেলে আমরা ব্যবস্থা গ্রহণ করে থাকি।
কিশোরগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (এডিএম) মোজাবে আলম জানান, চালের বাজার স্থিতিশীল রাখতে ভ্রাম্যমান আদালতের কার্যক্রম জোরদার করা হচ্ছে।