× ই-পেপার প্রচ্ছদ সর্বশেষ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ধর্ম ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

উন্নয়ন বাজেটে বড় কাটছাঁট

আরমান হেকিম

প্রকাশ : ৩১ ডিসেম্বর ২০২৪ ১৩:৫০ পিএম

উন্নয়ন বাজেটে বড় কাটছাঁট

২০২৪-২৫ অর্থবছরে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) বাস্তবায়নের ধীরগতির কারণে প্রায় ৫০ হাজার কোটি টাকা বাজেট কাটছাঁটের সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছে সরকার। চলতি অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে বরাদ্দকৃত অর্থের মাত্র ১২ দশমিক ২৯ শতাংশ খরচ হয়েছে, যা গত পাঁচ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন। বিশেষ করে, ভূমি অধিগ্রহণ, টেন্ডার প্রক্রিয়ায় বিলম্ব ও অগ্রাধিকারহীন প্রকল্পগুলোর কারণে এই পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। বৈদেশিক ঋণনির্ভর প্রকল্প এবং সরকারি অর্থায়নে বড় ধরনের পরিবর্তন এনে অপ্রয়োজনীয় প্রকল্পগুলো বাদ দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। এডিপি বাস্তবায়নের ধীরগতি এবং বাজেট কাটছাঁট উন্নয়ন কার্যক্রমে স্থবিরতা তৈরি করেছে, যা সরকারের সামগ্রিক অগ্রগতির পরিকল্পনায় নতুন ধরনের চ্যালেঞ্জের ইঙ্গিত দিচ্ছে। সংশোধিত বাজেট চূড়ান্ত করতে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আলোচনা চলছে।

রাজনৈতিক পটপরিবর্তনে স্থবির উন্নয়ন কার্যক্রম

সরকারি উন্নয়ন কার্যক্রমে এই স্থবিরতার পেছনে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের বড় ভূমিকা রয়েছে। সরকারের পরিবর্তনের পর নতুন প্রশাসন উন্নয়ন প্রকল্পগুলো এগিয়ে নেওয়ার ক্ষেত্রে উদ্যোগের অভাব দেখাচ্ছে। বিশেষ করে, রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে নেওয়া অনেক প্রকল্প এখন সংশোধিত এডিপি থেকে বাদ পড়ার ঝুঁকিতে রয়েছে।

স্বাস্থ্য ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মতো গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়গুলো পাঁচ মাসে এক টাকাও খরচ করতে পারেনি। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ১৩টি প্রকল্পের জন্য বরাদ্দ ছিল ৪ হাজার ৯৩৬ কোটি টাকা, তবে তা পুরোপুরি অব্যবহৃত রয়েছে। একইভাবে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বরাদ্দকৃত ১৪৩ কোটি টাকার এক পয়সাও ব্যয় করতে পারেনি।

সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরে সবচেয়ে বড় কাটছাঁট

সড়ক ও জনপথ (সওজ) অধিদপ্তরের বরাদ্দ কাটছাঁটের প্রক্রিয়া ইতোমধ্যেই শুরু হয়েছে। মূল এডিপিতে সওজের জন্য বরাদ্দ ছিল ৩২ হাজার ৮২ কোটি টাকা, যা সংশোধিত বাজেটে ১১ হাজার ১৮৬ কোটি টাকা কমানো হচ্ছে। এ ছাড়া বিআরটিসির প্রায় পুরো বরাদ্দ কেটে নেওয়া হচ্ছে, যদিও ডিটিসিএর বরাদ্দ অপরিবর্তিত থাকছে। সওজ জানিয়েছে, ভূমি অধিগ্রহণে সমস্যা, টেন্ডার প্রক্রিয়ার বিলম্ব ও প্রশাসনিক জটিলতার কারণে প্রকল্পগুলো এগোতে পারছে না।

সওজের প্রধান প্রকৌশলী সৈয়দ মঈনুল হাসান জানিয়েছেন, ‘২০২৪-২৫ অর্থবছরের শুরুতে আমাদের ১২৪টি প্রকল্প চলমান ছিল। ভূমি অধিগ্রহণ প্রক্রিয়া সময়সাপেক্ষ হওয়ায় সম্পূর্ণ অর্থ ব্যয় করা সম্ভব হবে না, তাই বরাদ্দ কমানো প্রয়োজন।’

আইএমইডি সচিব আবুল কাশেম মো. মহিউদ্দিন বলেন, ‘এডিপি কাটছাঁট করার কাজ শুরু হয়েছে। মন্ত্রণালয়গুলো তাদের প্রস্তাব পাঠাচ্ছে, এরপর চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। তবে সংশোধিত এডিপি কমবে। বড় আকারে প্রকল্প কাটছাঁট হবে।’

তিনি আরও যোগ করেন, ‘এডিপি মনিটরিং করছি যাতে সর্বোচ্চ উন্নয়ন ব্যয় নিশ্চিত করা যায়, তবে এবার প্রকল্পগুলোতে বরাদ্দ দেওয়া হবে না।’

দেশি ও বৈদেশিক অর্থায়নে বড় কাটছাঁট 

চলতি অর্থবছরের এডিপির সংশোধিত বাজেটে সরকারি অর্থায়ন কমতে পারে প্রায় ৩০ হাজার কোটি টাকা। গত কয়েক বছরে সরকারি অর্থায়নে এমন বড় ধরনের কাটছাঁট হয়নি। সংশোধিত এডিপির জন্য ২ লাখ ৭৮ হাজার ২৮৮ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছিল, যার মধ্যে ১ লাখ ৬৫ হাজার কোটি টাকা স্থানীয় উৎস থেকে এসেছে। তবে চলতি অর্থবছরে বড় আকারে কমতে পারে সরকারি অর্থায়ন, যা ইতোমধ্যে সরকারের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

এ ছাড়া সংশোধিত এডিপিতে বৈদেশিক ঋণের বরাদ্দ থেকে ২০ হাজার কোটি টাকা কমানোর প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। মূল এডিপিতে বৈদেশিক সহায়তার অংশ ছিল ১ লাখ কোটি টাকা, যা সংশোধিত বাজেটে নেমে আসবে ৮০ হাজার কোটি টাকায়। গত অর্থবছরে বৈদেশিক ঋণ থেকে ১০ হাজার ৫০০ কোটি টাকা কমানো হয়েছিল, তবে এবারের কাটছাঁটের পরিমাণ দ্বিগুণ হতে পারে।

ইআরডি ইতোমধ্যেই ৫১টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করেছে। উন্নয়ন প্রকল্পে বৈদেশিক সহায়তার বরাদ্দ দিতে এবার অনেক বেশি সতর্কতা অবলম্বন করা হচ্ছে।

অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) সচিব শাহরিয়ার কাদের সিদ্দিকী জানিয়েছেন, ‘এডিপিতে বিদেশি সহায়তাপুষ্ট নতুন প্রকল্পে বরাদ্দ কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করা হবে এবং বৈদেশিক ঋণের অনুমোদন দেওয়ার ক্ষেত্রে আরও সতর্কতা অবলম্বন করা হবে।’

মন্ত্রণালয়গুলো কাজে পিছিয়ে 

স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ, জননিরাপত্তা বিভাগ, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় এবং সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিভাগগুলো এডিপি বাস্তবায়নে চরম ব্যর্থ হয়েছে। স্বাস্থ্যসেবা ও জননিরাপত্তা বিভাগ পাঁচ মাসে মাত্র ২ দশমিক ৯১ শতাংশ, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় ১ দশমিক ২৪ শতাংশ এবং সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় ৪ দশমিক ১৫ শতাংশ বরাদ্দ বাস্তবায়ন করতে পেরেছে। তবে স্থানীয় সরকার বিভাগ তুলনামূলক ভালো অবস্থানে রয়েছে, যা পাঁচ মাসে ২০ দশমিক ৩১ শতাংশ এডিপি বাস্তবায়ন করেছে।

এডিপি কাটছাঁটের প্রক্রিয়া শুরু হলেও এতে দেশের উন্নয়ন কার্যক্রমের ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছে। দীর্ঘমেয়াদে এডিপি বাস্তবায়নের এই ধীরগতি দেশের অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদরা।

গত পাঁচ বছরের তুলনায় সর্বনিম্ন এডিপি বাস্তবায়ন

২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে এডিপি বাস্তবায়নের হার ছিল ১৭ দশমিক ০৬ শতাংশ, ২০২২-২৩ অর্থবছরে ১৮ দশমিক ৪১ শতাংশ এবং ২০২১-২২ অর্থবছরে ১৮ দশমিক ৬১ শতাংশ। তবে চলতি অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে এডিপি বাস্তবায়ন মাত্র ১২ দশমিক ২৯ শতাংশে নেমে এসেছে, যা গত পাঁচ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন।

অর্থনীতিবিদরা মনে করছেন, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা এবং প্রশাসনিক দক্ষতার অভাব এই পরিস্থিতির জন্য দায়ী। তারা সতর্ক করেছেন যে উন্নয়ন প্রকল্পের গতি না বাড়ালে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বাধাগ্রস্ত হতে পারে। সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডকে নতুন গতিতে ফিরিয়ে আনতে দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার ওপর জোর দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক : মোরছালীন বাবলা

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা