× ই-পেপার প্রচ্ছদ সর্বশেষ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ধর্ম ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

বিদায় ২০২৪

ঋণের বোঝায় টালমাটাল ছিল অর্থনীতি

আরমান হেকিম

প্রকাশ : ২৯ ডিসেম্বর ২০২৪ ১৩:১১ পিএম

ফাইল ফটো

ফাইল ফটো

২০২৪ সাল। বাংলাদেশের অর্থনীতির জন্য চ্যালেঞ্জের বছর ছিল। বৈদেশিক ঋণের বিপুল বোঝা, ঋণ পরিশোধের ক্রমবর্ধমান চাপ এবং বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ সংকট পুরো অর্থনীতিকে নাজুক অবস্থায় ফেলে দেয়। বছরের শেষে রেকর্ড ৪ বিলিয়ন ডলার ঋণ পরিশোধ করতে হয়েছে, যার মধ্যে শুধু সুদই গুনতে হয়েছে দেড় বিলিয়ন ডলার। এই চাপের মূল কারণ ছিল আন্তর্জাতিক ঋণের সুদহার রেকর্ড ৬ শতাংশে পৌঁছানো এবং মেগা প্রকল্পগুলোর গ্রেস পিরিয়ডের সমাপ্তি। 

রিজার্ভ সংকট ও অর্থ পাচারের প্রভাব

২০২৪ সালের শুরুতে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ১৮ বিলিয়ন ডলারে নেমে আসে, যা ২০২১ সালের রেকর্ড ৪৮ বিলিয়ন ডলার থেকে বিশাল পতন। বিশ্লেষকরা মনে করেন, ২০২৩ সালের নির্বাচনের আগে ক্ষমতাচ্যুত হাসিনা সরকারের নেতাকর্মীরা বিপুল পরিমাণ অর্থ বিদেশে পাচার করেন। এর ফলে রিজার্ভে বড় ধরনের ঘাটতি তৈরি হয় এবং সরকার বৈদেশিক ঋণ পরিশোধ নিয়ে সংকটে পড়ে। এ অবস্থায় অনেক আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানের বিল বকেয়া থেকে যায়।

ঋণ পরিশোধের চাপে অর্থনীতি

অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) সূত্রমতে, ২০২৪ সালে রেকর্ড ৪ বিলিয়ন ডলার বৈদেশিক ঋণ পরিশোধ করা হয়। এর মধ্যে দেড় বিলিয়ন ছিল শুধু সুদের খাত। গত কয়েক বছরে উন্নয়নের নামে ভুল পরিকল্পনায় অযৌক্তিকভাবে বিদেশি ঋণ নেওয়া হয়েছিল। এসব ঋণের বেশিরভাগই উচ্চ সুদে নেওয়া হয়, যা ২০২৪ সালে পরিশোধের ব্যয়কে বাড়িয়ে তুলেছে। বিশেষ করে পদ্মা সেতু রেল সংযোগ ও বঙ্গবন্ধু টানেলের মতো মেগা প্রকল্পের গ্রেস পিরিয়ড শেষ হওয়ায় ঋণ পরিশোধের চাপ মারাত্মকভাবে বেড়ে যায়।

ভবিষ্যতের শঙ্কা

অর্থনীতিবিদদের মতে, আগামী কয়েক বছরে বৈদেশিক ঋণ পরিশোধের চাপ আরও বাড়বে। ২০২৬ থেকে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র ও মেট্রোরেলের প্রথম পর্যায়ের ঋণের মূলধন পরিশোধ শুরু হবে, যা অর্থনীতির ওপর নতুন করে চাপ সৃষ্টি করবে। ইআরডির তথ্য অনুযায়ী, ২০২২-২৩ অর্থবছরে বাংলাদেশ ২.৭ বিলিয়ন ডলার ঋণ পরিশোধ করেছিল। ২০২৪ সালে বেড়ে ৪ বিলিয়নে পৌঁছে এবং ২০২৫-২৬ অর্থবছরে দাঁড়াবে ৫.২ বিলিয়ন ডলারে।

বিশ্বব্যাংকের সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন বলেছেন, ‘আগামী দুই-তিন বছরের মধ্যে ঋণ পরিশোধের পরিমাণ ৫-৬ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছতে পারে। যদি আমরা রাজস্ব আয় ও বৈদেশিক মুদ্রার সরবরাহ বাড়াতে না পারি, তাহলে অর্থনীতিতে গুরুতর সংকট তৈরি হবে।’

বৈদেশিক ঋণ ও গ্রেস পিরিয়ড

ইআরডির সর্বশেষ প্রতিবেদনে দেখা যায়, ২০২৪ সালের প্রথম ১০ মাসে বাংলাদেশ ৭ বিলিয়ন ডলার বৈদেশিক ঋণ গ্রহণ করেছে। এর মধ্যে বিশ্বব্যাংক দিয়েছে ১.৪৪ বিলিয়ন, এডিবি ১.২৯ বিলিয়ন, জাপান ১.৩৭ বিলিয়ন এবং রাশিয়া শূন্য দশমিক ৯৫ বিলিয়ন ডলার। তবে এই ঋণগ্রহণের সঙ্গে তুলনায় প্রতিশ্রুত ঋণের পরিমাণ ছিল অনেক কম। ২০২৪ সালে নতুন ঋণের প্রতিশ্রুতি আসে মাত্র ৪ বিলিয়ন ডলার, যা বৈদেশিক ঋণ ব্যবস্থাপনায় অস্থিরতা বাড়িয়ে তুলেছে।

সমাধানের পথ

অর্থনীতিবিদরা মনে করেন, বৈদেশিক ঋণের চাপ কমাতে প্রকল্প নির্বাচন ও ঋণগ্রহণে আরও সঠিক পরিকল্পনা প্রয়োজন। পাশাপাশি রাজস্ব আদায় বাড়ানো ও রপ্তানি আয় বৃদ্ধি করতে না পারলে বৈদেশিক ঋণ পরিশোধের চাপে অর্থনীতি আরও বেশি দুর্বল হয়ে পড়বে।

২০২৪ সাল বাংলাদেশের অর্থনীতির জন্য সতর্কবার্তা হিসেবে কাজ করেছে। ভুল অর্থনৈতিক পরিকল্পনা ও অপ্রয়োজনীয় ঋণগ্রহণের প্রভাব যে কতটা বিপর্যয়কর হতে পারে, তা স্পষ্ট হয়ে উঠেছে এই বছরে। ভবিষ্যতে অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা ধরে রাখতে সঠিক নীতি গ্রহণ ও বাস্তবায়নের বিকল্প নেই।

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক : মোরছালীন বাবলা

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা