প্রবা ডেস্ক
প্রকাশ : ২৯ নভেম্বর ২০২২ ১৬:০২ পিএম
ছবি : সংগৃহীত
দেশজুড়ে কভিড সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় কঠোর নীতি মেনে চলছে চীন। নতুন করে আরোপিত লকডাউনের প্রভাব পড়তে শুরু করেছে অন্যান্য দেশেও। তবে জ্বালানি তেলের সবচেয়ে বড় আমদানিকারক দেশ চীনের চাহিদা কমায় উৎপাদন কমিয়েছে তেল উৎপাদন ও রপ্তানিকারক দেশগুলো। চাহিদা কমায় অপরিশোধিত ওয়েস্ট টেক্সাস ইন্টারমিডিয়েট-ডব্লিউটিআইয়ের দাম কমতে শুরু করেছে।
চীনের কঠোর কভিড নীতি বিশ্বের পণ্য সরবারহ প্রক্রিয়ায় ব্যাঘাত ঘটাচ্ছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। তবে জনসাধারণের অস্থিরতা দূর করতে কঠোর শূন্য নীতি শিথিল হতে যাচ্ছে বলে গুজব রয়েছে। দীর্ঘ লকডাউনে চীনের আবাসন খাতসহ অন্যান্য খাতেও এ অস্থিরতা ছড়িয়ে পড়েছে। বেইজিংয়ের আবাসন খাতকে সমৃদ্ধ করতে শিগগিরই আলোচনায় বসবে চীনের পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক প্রতিষ্ঠান এশিয়ান শেয়ার।
বার্তা সংস্থা রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, সাম্প্রতিক সময়ে চীনের জনসাধারণের অস্থিরতা কাটাতে শূন্য কভিড নীতি শিথিল হতে পারে এমন গুজব ছড়িয়ে পড়েছে। দেশটির স্বাস্থ্য বিভাগের দায়িত্বশীলদের দ্রুত করোনা ভাইরাস নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থাপণা নিয়ে আলোচনায় বসার কথাও শোনা গেছে। অস্ট্রেলিয়া অ্যান্ড নিউজিল্যান্ড ব্যাংকিং গ্রুপ এএনজেডের এশিয়া রিসার্চের প্রধান খুন গুহ বলেছেন, ‘পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সংবাদ সম্মেলনের খবর বেরিয়েছে। আমি মনে করি এটি বাজারকে চাঙ্গা করেছে। অবস্থা বিবেচনা করে চীন হয়তো সহজ সিদ্ধান্তের দিকে যাবে।’
এদিকে চীনের প্রতিষ্ঠানগুলোর ওপর নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ায় সংস্থাগুলোর শেয়ারের পরিমাণ বেড়েছে। সর্বশেষ সোমবার একমাসের ধারাবাহিক পতনের পর চীনা প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের পরিমাণ ৩ শতাংশ বেড়েছে। জাপানের বাইরে এশিয়া-প্যাসিফিক শেয়ারের সূচক ১ দশমিক ৮ শতাংশ বেড়েছে, একইসঙ্গে হংকংয়ে বৃদ্ধির পরিমাণ ৩ দশমিক ৯ শতাংশ।
তবে চীনের জ্বালানি আমদানি কমানোর সিদ্ধান্তে সর্বনিম্ন পর্যায়ে পৌঁছে গেছে যুক্তরাষ্ট্রের জ্বালানি তেলের দাম। অপরিশোধিত ডব্লিউটিআইয়ের দাম ১ ডলার ২৪ সেন্ট কমে সর্বনিম্ন পর্যায়ে ৭৮ ডলার ৪৮ সেন্টে দাঁড়িয়েছে। তবে ওপেক প্লাসের সিদ্ধান্তে উৎপাদন কমিয়ে দেওয়ায় দাম বেড়েছে অপরিশোধিত ব্রেন্টের। সর্বশেষ বিশ্ববাজারে ব্রেন্ট বিক্রি হচ্ছে ৮৫ ডলার ১৫ সেন্টে। তবে চীনের বাজার বন্ধ থাকায় বড় ধরণের ক্ষতির মুখে পড়েছে মার্কিন মাল্টি- ন্যাশনাল টেকনোলজি কোম্পানি অ্যাপল ইনকোরপারেশন। এরই মধ্যে প্রতিষ্ঠানটির আইফোন প্রো ইউনিটগুলির উৎপাদনে একটি বড় ঘাটতি দেখা দিয়েছে। সেইসঙ্গে প্রতিষ্ঠানটির শেয়ার কমেছে ২ দশমিক ৬ শতাংশ।
চীনের শূন্য কভিড নীতি অ্যাপলের সাপ্লাই চেইনের জন্য একটি নিখুঁত অন্ত্রের পাঞ্চ হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন বলেছেন ওয়েডবুশের বিশ্লেষক ড্যানিয়েল আইভস। তিনি বলেন, আমরা অনুমান করছি অ্যাপলের পণ্য আইফোনের যে ঘাটতি রয়েছে তা ত্রৈমাসিকে কমপক্ষে ৫ থেকে ১০ শতাংশ বাড়বে। ন্যাটওয়েস্ট মার্কেটসের বিশ্লেষক জ্যান নেভরুজি বলেন, ‘আমরা ডিসেম্বরের মিটিংয়ে ক্রমবর্ধমান উৎপাদন ঘাটতি আশঙ্কা করছি।’ এদিকে ইউরোপীয় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রেসিডেন্ট ক্রিস্টিন লাগার্ড সতর্ক করে বলেছেন, ‘ফেড একা নয় বরং ইউরো জোনের মূল্যস্ফীতি এখনো শীর্ষে ওঠেনি, তবে আরও বাড়তে পারে।’
এরই মধ্যে কয়েকটি চীনা বন্দরে অপেক্ষমান জাহাজের সংখ্যা বেড়েছে। বিশ্বজুড়ে মালবাহী জাহাজের চলাচল পর্যবেক্ষণ করা প্রজেক্ট-৪৪ অনুসারে, বিধিনিষেধে কার্যক্রম ধীর হয়ে যাওয়ায় চীনা বন্দরে অপেক্ষমান জাহাজের সংখ্যা বেড়েছে। প্রতিষ্ঠানটির সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট অ্যাডাম কমপেইন বলেন, ‘চীনের ইয়ানতিয়ান বন্দরের বাইরে অপেক্ষমান জাহাজের সংখ্যা ২৮ শতাংশ বেড়েছে। এটি ইউরোপ ও উত্তর আমেরিকার জন্য প্রধান রফতানি বন্দর।’
গত বছর কভিডজনিত বিধিনিষেধে শেনজেনের এ বন্দর বন্ধ করা হয়েছিল। ফলে বড়দিনের উৎসব মৌসুমে পশ্চিমা প্রতিষ্ঠানগুলো সময়মতো পণ্য সরবরাহ পায়নি। নতুন বিধিনিষেধ এমন সময়ে ঘোষণা করা হয়েছে যখন নববর্ষের ছুটির পর দেশটির উৎপাদন খাত পুনরুদ্ধার হতে শুরু করেছিল।