পল্লী সঞ্চয় ব্যাংক
রেদওয়ানুল হক
প্রকাশ : ০৪ ডিসেম্বর ২০২৪ ২২:৫৮ পিএম
আপডেট : ০৫ ডিসেম্বর ২০২৪ ০০:০৯ এএম
চাকরিবিধি অনুযায়ী বাসে যাতায়াত করার কথা থাকলেও ঘুরে বেড়ান বিমানে। সরকারি টাকা অপচয় করার এমন সব অভিযোগ পল্লী সঞ্চয় ব্যাংকের দুই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে। এ ছাড়া সরকারি কাঠামো অনুযায়ী কোন পদ না থাকলেও আইটি পরামর্শক ও উপ-পরামর্শক পদে বিপুল বেতনে চাকরি করছেন তারা। সরকারি বেতন কাঠামোর প্রায় দ্বিগুণ বেতন ভোগ করে আসছেন চুক্তিভিত্তিক নিয়োগপ্রাপ্ত এই দুই কর্মকর্তা। জনবল চাহিদা না থাকা সত্তেও তাদের চুক্তি নবায়নের প্রক্রিয়া চলছে বলে জানা গেছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, পল্লী সঞ্চয় ব্যাংকের শুরুর দিকে সরকারি জনবল না থাকায় চুক্তিভিত্তিক লোক দিয়ে কার্যক্রম চলে। নতুন চালু হওয়া ব্যাংকের কার্যক্রম চলমান রাখার স্বার্থে ২০১৭ সালে সিস্টেম ইঞ্জিনিয়ার (হার্ড) পদে নাসিম আহমেদ এবং সহকারী প্রোগ্রামার হিসেবে মুঃ সাইমুম রহমান নিয়োগ পান। দক্ষ জনবলের আওতায় তাদেরকে সরকার নির্ধারিত বেতন কাঠামোর প্রায় দ্বিগুণ বেতনে এক বছরের জন্য নিয়োগ দেওয়া হয়। তবে দেনদরবারের মাধ্যমে তারা দফায় দফায় চুক্তি নবায়ন করে এখনো চাকরিতে বহাল আছেন। অথচ সরকারি কাঠামোর আওতায় জনবল নিয়োগ সম্পন্ন হয়েছে। অর্থাৎ দ্বিগুণ বেতনে অপ্রয়োজনীয় জনবল নিয়োগের মাধ্যমে সরকারি অর্থ অপচয় করছে পল্লী সঞ্চয় ব্যাংক। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে ফের চুক্তি নবায়নের চেষ্টা চালিয়ে যাছেন তারা। আগের চেয়ে ২০ শতাংশ বেশি বেতন নির্ধারণ করে আজ বৃহস্পতিবার তাদের চুক্তি নবায়নের প্রস্তাব অনুমোদন দিতে যাচ্ছে ব্যাংকটির পর্ষদ।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, যখন নিজস্ব কর্মী ছিল না তখন বিপুল বেতনে চুক্তিভিত্তিক কর্মী নিয়োগ দিয়ে কাজ চালিয়ে নেওয়া হয়েছে। কিন্তু ওই পদে জনবল নিয়োগ হওয়ার পরও অহেতুক লোক নিয়োগ করে সরকারি অর্থের অপচয় করা হচ্ছে। তাছাড়া আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সাংগঠনিক কাঠামো অনুযায়ী পল্লী সঞ্চয় ব্যাংকে আইটি পরামর্শক এবং উপ-পরার্শক পদ নেই। কিন্তু নতুন দুটি পদ সৃষ্টি করে এই দুই কর্মকর্তার চুক্তি নবায়ন করেছে ব্যাংকের বোর্ড। বর্তমান বোর্ডও একই পথে হাটছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে পল্লী সঞ্চয় ব্যাংকের চেয়ারম্যান ড. মো. মহিউদ্দিন প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, ‘কারিগরি কাজে দক্ষ জনবল দরকার হলে নিয়োগ দেওয়ার সুযোগ রয়েছে। বোর্ড সুপারিশ করার পর আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ অনুমোদন করলে নিয়োগ দেওয়া যায়। আইনে এতে কোন বাধা নেই।’
তবে ব্যাংকটির একাধিক কর্মকর্তা জানান, যে দুটি পদে তাদের চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল সেগুলোতে সরকারিভাবে জনবল নিয়োগ হয়ে গেছে। একই পদে জনবল নিয়োগের পরও যদি অধিক দক্ষ জনবলের প্রয়োজন হয় তাহলে প্রশ্ন দেখা দেয় যাদেরকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল তাদের দক্ষতা যাচাই করা হয়নি কেন। অর্থাৎ অদক্ষ কর্মী নিয়োগ দিয়ে তার বিপরীতে আবার চুক্তিভিত্তিক দক্ষ লোকবল নিয়োগ দেওয়া সরকারি অর্থের অপচয়। তাছাড়া যখন লোক ছিল না তখন বেশি অর্থ খরচ করে চুক্তিতে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে এখন যেহেতু জনবল আছে তাই তাদের চুক্তি নবায়নের কোন যৌক্তিকতা নেই।
এদিকে নিয়োগপত্রের তথ্য অনুযায়ী, এই দুই কর্মকর্তা বেশি বেতনে নিয়োগ পেলেও যাতায়াত ভাতা পাবেন সরকারি কাঠামো অনুযায়ী। কিন্তু তারা সরকারি কাঠামোর তোয়াক্কা না করে ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে বিপুল যাতায়াত ভাতা হাতিয়ে নেন। সরকারি কাঠামো অনুযায়ী সিস্টেম ইঞ্জিনিয়ার (হার্ড) ৬ষ্ঠ গ্রেডভুক্ত। এই পদে নিয়োগপ্রাপ্ত নাসিম আহমেদ বাসে যাতায়াতের সুযোগ পাবেন। তবে তিনি ৪র্থ গ্রেডভুক্ত কর্মকর্তাদের সমপরিমাণ অর্থাৎ বিমানে যাতায়াতের ভাতা নেন। অপর কর্মকর্তা সহকারি প্রোগামার সাইমুম রহমান কাঠামো অনুযায়ী ৯ম গ্রেডে যাতায়াত ভাতা পাবেন। তবে তিনি ভাতা নেন ৫ম গ্রেডের কর্মকর্তা হিসেবে। অর্থাৎ সরকারি টাকায় বিমানে ঘুরে বেড়ান এই দুই কর্মকর্তা। অথচ তারা ২০১৭ সালে যে পদে নিয়োগ পেয়েছিলেন বর্তমানে সে পদে কর্মী নিয়োগ করেছে সরকার। এখন তারা নতুন সৃষ্ট পরামর্শক এবং উপ-পরামর্শক হিসেবে কাজ করছেন। তাদের বিরুদ্ধে ব্যাপক অনিয়ম দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে যা তদন্ত করা প্রয়োজন বলে মনে করেন ব্যাংকের কয়েকজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ব্যাংকটির পরামর্শক নাসিম আহমেদ প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, ‘আমাকে স্থায়ী করার কথা বলে নিয়ে আসা হয়েছিল। পরবর্তীতে স্থায়ী করা হয়নি। আমি বৈষম্যের স্বীকার হয়েছি।’
একই ধরনের দাবি করেছেন উপ-পরামর্শক সাইমুম রহমান। তিনি প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, ‘আমি ২য় গ্রেডে ভাতা পাওয়ার কথা, আমাকে বরং কম দেওয়া হচ্ছে। আমাকে স্থায়ী করার কথা থাকলেও অভ্যন্তরীণ ষড়যন্ত্রের কারণে তা হয়নি।’
জানা গেছে, পরীক্ষার মাধ্যমে ব্যাংকে লোকবল নিয়োগ দেওয়া হয়। কিন্তু ২০২০ সালে এই দুই কর্মকর্তাসহ চারজনকে সরাসারি স্থায়ী করা প্রক্রিয়া শুরু হলে তা বন্ধ করে দেয় আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ। ওই বছরের ৯ ডিসেম্বর জারি করা এক আদেশে তাদের স্থায়ীকরন বন্ধের নির্দেশ দেওয়া হয়।
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে ব্যাংকটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক সালমা বানু প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, ‘বোর্ড যদি মনে করে জনবল দরকার আছে তাহলে সুপারিশ করবে। আর কেউ অতিরিক্ত ভাতা নিয়ে থাকলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’