হুমায়ুন মাসুদ, চট্টগ্রাম
প্রকাশ : ০১ ডিসেম্বর ২০২৪ ০০:৫৮ এএম
আপডেট : ০১ ডিসেম্বর ২০২৪ ০৮:৪২ এএম
ভোগ্যপণ্যের অন্যতম পাইকারি বাজার খাতুনগঞ্জে নিউজিল্যান্ড থেকে আমদানি করা প্রতি কেজি পেঁয়াজ পাইকারিতে বিক্রি হচ্ছে ৭০ টাকায়। সেখানে ভারত থেকে আমদানি করা প্রতি কেজি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৮০ থেকে ৮৫ টাকায়। ভারত তুলনায় নিউজিল্যান্ডের পেঁয়াজের দাম কম হওয়ার পরও ওই দেশ থেকে পেঁয়াজ আমদানি হয় কম। ব্যবসায়ীরা বলছেন, মূলত দুই কারণে বাংলাদেশে ভারতীয় পেঁয়াজের আমদানি বেশি। একটি হচ্ছে, মানে ভালো হওয়ার কারণেই বাজারে ভারতীয় পেঁয়াজের চাহিদা বেশি। অন্যটি হলো, নিউজিল্যান্ডসহ অন্যান্য দেশ থেকে পেঁয়াজ আমদানিতে সময় বেশি লাগে। তাই ব্যবসায়ীরা ওইসব দেশ থেকে আমদানিতে আগ্রহ দেখান কম।
খাতুনগঞ্জের হামিদুল্লাহ মিঞা মার্কেট ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ ইদ্রিস প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, ‘ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানি চালু থাকলে ব্যবসায়ীরা অন্য দেশ থেকে আমদানি করবেন না। কারণ ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানি করলে এলসি থেকে পেঁয়াজ দেশে ঢুকতে মাত্র ৩-৪ দিন সময় লাগে। কিন্তু নিউজিল্যান্ড, পাকিস্তানসহ বিকল্প দেশগুলো থেকে পেঁয়াজ আমদানি করতে হলে এলসি করার পর পেঁয়াজ দেশে আসতে ২৫ থেকে ৩০ দিন সময় লেগে যায়। তাই ভারত থেকে যদি পেঁয়াজ আমদানি চালু থাকে সেই ক্ষেত্রে কেউ ভিন্ন দেশ থেকে পেঁয়াজ আমদানিতে আগ্রহী হয় না। কারণ অন্য দেশ থেকে পেঁয়াজ আমদানির এলসি খোলার পর ভারতীয় পেঁয়াজের দাম যদি হঠাৎ কমে যায়, তখন ভিন্ন দেশ থেকে পেঁয়াজ আনলে আমদানিকারক লোকসানে পড়বেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘বিকল্প দেশ থেকে পেঁয়াজ আমদানি করে বাজার স্থিতিশীল রাখতে হলে সরকারকে ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানি পুরোপুরি বন্ধ ঘোষণা করতে হবে। তখনই কেবল ব্যবসায়ীরা অন্য দেশ থেকে পেঁয়াজ এনে চাহিদা পূরণ করবেন। কিন্তু যদি ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানি চালু থাকে, তাহলে বিকল্প দেশ থেকে পেঁয়াজ আমদানি কখনও বাড়বে না।’
কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, দেশে পেঁয়াজের বার্ষিক চাহিদা ৩০ থেকে ৩২ লাখ মেট্রিক টন। দেশেই এরচেয়ে বেশি উৎপাদন হলেও পেঁয়াজ সংগ্রহ করার সময় ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ নষ্ট হয়ে যায়। তাই চাহিদা পূরণ করতে প্রতিবছর ৮ থেকে ১০ লাখ মেট্রিক টন পেঁয়াজ আমদানি করতে হয়।
ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, বাংলাদেশে যে পরিমাণ পেঁয়াজ আমদানি হয়, তার প্রায় পুরোটাই ভারত থেকে। কিন্তু ভারত যখন মাঝে মাঝে পেঁয়াজ রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে বা রপ্তানি সীমিত করে, তখন নিউজিল্যান্ড, মিসর, পাকিস্তান, মিয়ানমার, তুরস্ক ও থাইল্যান্ড থেকে আমদানি করা হয়। কিন্তু সেটি পরিমাণে অনেক কম।
বিকল্প দেশ থেকে বছরে কী পরিমাণ পেঁয়াজ আমদানি হয়Ñ জানতে চাইলে উদ্ভিদ সংঘ নিরোধ (চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর) কেন্দ্রের উপপরিচালক মো. শাহ আলম প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, ‘সব সময় আমদানি এক রকম থাকে, তা নয়। বাজারে পেঁয়াজের দাম বাড়লে তখন বিকল্প দেশগুলো থেকে পেঁয়াজ আমদানি বাড়ে। তবে গত দুই-তিন বছর চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর দিয়ে ২৫ থেকে ৩০ হাজার মেট্রিক টনের বেশি কখনও আমদানি হয়নি। এবার কিছুটা আমদানি বেশি হচ্ছে। এরপরও গত ৫ মাসে আমদানি হয়েছে ১৩ হাজার ৬৩৩ মেট্রিক টন।’
ভারতীয় পেঁয়াজের তুলনায় বিকল্প দেশ থেকে আমদানি করা পেঁয়াজের দাম বাজারে সব সময় কম থাকে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। তাদের দাবি, যদি এসব দেশ থেকে পেঁয়াজ আমদানি বাড়ানো যায়, তাহলে মাঝে মাঝে যেভাবে পেঁয়াজের বাজার অস্থিতিশীল হয় সেটা রোধ করা যাবে। বিকল্প দেশ থেকে পেঁয়াজ আমদানি বাড়লে বাজারে পেঁয়াজের দামও কমবে।
পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে, ভারতীয় পেঁয়াজ যখন ১০০ টাকায় বিক্রি হয়েছিল, তখন বাজারে চীনের পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ৬০ থেকে ৬৫ টাকায়। পাকিস্তানি পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছিল ৭০ থেকে ৭৫ টাকায়। কিন্তু এরপরও ওইসব দেশ থেকে পেঁয়াজ আমদানিতে আগ্রহী হন না ব্যবসায়ীরা। বাজার স্থিতিশীল রাখতে ব্যবসায়ীরা বিকল্প দেশ থেকে পেঁয়াজ আমদানি বাড়ানোর পরামর্শ দিলেও বাস্তবে ভারত ছাড়া বিকল্প দেশ থেকে পেঁয়াজ আমদানি খুব একটা বাড়ছে না। উদ্ভিদ সংঘ নিরোধ (চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর) কেন্দ্রে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, চলতি অর্থবছরের গত ৫ মাসে এসব দেশ থেকে ১৩ হাজার ৬৩৩ মেট্রিক টন পেঁয়াজ আমদানি হয়েছে। প্রতিষ্ঠানটির তথ্য অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের জুলাই মাসে বিকল্প এসব দেশ থেকে পেঁয়াজ আমদানি হয় ৮৭১ মেট্রিক টন, আগস্ট মাসে আমদানি হয় ৪ হাজার ৫৫২ মেট্রিক টন, সেপ্টেম্বরে ২ হাজার ৪২৮ মেট্রিক টন, অক্টোবরে ৩ হাজার ৫৬২ মেট্রিক টন এবং সর্বশেষ নভেম্বর মাসে পেঁয়াজ আমদানি হয় ২ হাজার ৫১২ মেট্রিক টন।
এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি পেঁয়াজ আমদানি হয়েছে পাকিস্তান থেকে। সেখান থেকে গত পাঁচ মাসে ৬ হাজার ২৩২ মেট্রিক টন আমদানি হয়েছে। এরপরেই রয়েছে মিসর। ওই দেশ থেকে গত ৫ মাসে পেঁয়াজ আমদানি হয়েছে ৩ হাজার ৮৭০ মেট্রিক টন। গত ৫ মাসে চীন থেকে পেঁয়াজ আমদানি হয়েছে ১ হাজার ১৮ মেট্রিক টন। নিউজিল্যান্ড থেকে আমদানি হয়েছে ২৬৪ মেট্রিক টন এবং তুরস্ক থেকে ৫ মাসে এসেছে ১৭৪ মেট্রিক টন।