সেমিনারে জ্বালানি উপদেষ্টা
প্রবা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ৩০ নভেম্বর ২০২৪ ২১:৪৪ পিএম
বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান বলেছেন, সরকার সব বিদ্যুৎ কিনবে সেখান থেকে বের হয়ে আসব। মার্চেন্ট বিদ্যুৎ নীতি গ্রহণ করা হবে। বিনিয়োগকারী বিদ্যুৎ উৎপাদন করবেন এবং তারাই বিক্রির জন্য গ্রাহক ঠিক করবেন। কারণ সরকার স্বতন্ত বিদ্যুৎ উৎপাদনকারীদের (আইপিপি) থেকে সরে আসতে চায়। সরকার ১০ থেকে ২০ শতাংশ আইপিপি থেকে বিদ্যুৎ কিনবে। কারণ আইপিপির ক্রেতা সরকার হওয়ায় এখন টাকা দিতে পারছে না। এই নীতি থেকে সরে আসবে সরকার।
শনিবার (৩০ নভেম্বর) পল্টনে অর্থনীতি বিটের সাংবাদিকদের সংগঠন ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরাম (ইআরএফ) মিলনায়তনে আয়োজিত ‘নবায়নযোগ্য জ্বালানি রূপান্তরে অভ্যন্তরীন আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ভূমিকা’ শীর্ষক সেমিনারে এ কথা জানান উপদেষ্টা। ইআরএফ, সেন্টার ফর এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড পার্টিসিপেটরি রিসার্চ, কোস্টাল লাইভলিহুড অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল একশন নেটওয়ার্ক (ক্লিন) ও বিডাব্লিউজিইডি যৌথভাবে এ সেমিনারের আয়োজন করে।
সেমিনারে উপদেষ্টা আরো বলেন, খেলাপি ঋণের বেশিরভাগই ব্যালেন্স সিট নির্ভর। ব্যাংকগুলো ব্যালেন্স সিট নির্ভর অর্থায়নে মগ্ন। এই ঋণ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় লাঞ্চ বা ডিনারে বসে। বেক্সিমকো ও এস আলম এখন বেতন দিতে পারছে না। অথচ ব্যালেন্স সিট দেখে এসব প্রতিষ্ঠানকে ঋণ দিয়েছে ব্যাংক। সম্পদ দেখা হয়নি। এখন এই প্রতিষ্ঠানের ব্যালেন্স সিট যাচাই করে দেখা যাচ্ছে সবই ফাঁকা। এভাবে ঋণ দেওয়া কতটা যৌক্তিক এমন প্রশ্ন রাখেন তিনি।
ফাওজুল কবির বলেন, ‘নবায়নযোগ্য জ্বালানির বিকল্প নেই। এ খাতে ব্যাংকের ঋণ দিতে আগ্রহ নেই বললে চলে। তাই নতুন নীতিতে এই খাতে অর্থায়নের ব্যবস্থা করার পাশাপাশি সোলার স্থাপনের জায়গা ও সঞ্চালন লাইনে যুক্ত হওয়ার ব্যবস্থা সরকার করে দেবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণ ৩ লাখ কোটি টাকা। এর মধ্যে নাবায়নযোগ্য জ্বালানির কত? বরং বেশিরভাগই অন্যান্য খাতে। অথচ ব্যাংকগুলো নাবায়নযোগ্য জ্বালানিতে ঋণ দিতে এগোয়নি। নাবায়নযোগ্য জ্বালানিতে কেন অর্থায়ন করছে না ব্যাংক। এ সমস্যা সমাধান বিগত সরকার আন্তরিকভাবে চায়নি। এমনকি নবায়নযোগ্য জ্বালানির প্রসার হোক তা চায়নি। তাই অর্থায়ন সমস্যা রয়ে গেছে। অন্তর্বর্তী সরকার নতুন নীতির মাধ্যমে এ সমস্যা সমাধান করবে।’
তিনি বলেন, ‘নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাতের উদ্যোক্তাদের মতো সাধারণ উদ্যোক্তাদের এ ধরনের লাঞ্চ বা ডিনারে যেতে পারেন না। ফলে তাদের জন্য ঋণ পাওয়া সহজ হয়না। ব্যাংকগুলো সম্পদ বিবেচনা করে ঋণ অনুমোদন করার পরামর্শ দেন জ্বালানি উপদেষ্টা।’
নবায়নযোগ্য শক্তি ছাড়া দেশকে সামনে এগিয়ে নেয়ার কোনো বিকল্প নেই উল্লেখ করে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ উপদেষ্টা ফাওজুল কবীর খান বলেছেন, নবায়নযোগ্য জ্বালানি উৎপাদনে সরকার রেল, সড়কসহ বিভিন্ন খাতের অব্যবহৃত জমি ব্যবহার করবে। এ জন্য শিগগিরই একটি নীতি করা হবে।’
নবায়নযোগ্য জ্বালানির প্রসার ঘটুক উল্লেখ করে উপদেষ্টা বলেন, ‘এটি আগের সরকার আন্তরিকভাবে চায়নি। দেশে এখন নবায়নযোগ্য জ্বালানি উৎপাদনে যেতে হবে। নবায়নযোগ্য শক্তি ছাড়া দেশকে সামনে এগিয়ে নেয়ার কোনো বিকল্প নেই।’
তিনি বলেন, ‘নবায়নযোগ্য জ্বালানির জন্য সোলার স্থাপন করা যাবে না আমাদের জায়গা নেই এমটা বলা হতো। এটি ভ্রান্ত ধারণা। বরং জোর করে মানুষের জমি নিয়ে ফেলে রাখা হয়েছে। এটা বন্ধ করতে চাচ্ছি। অব্যবহৃত জমি নবায়নযোগ্য জ্বালানির জন্য ব্যবহার করার চেষ্টা চলছে। তবে নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাতের ইক্যুইপমেন্ট আমদানি শুল্ক কমানো হবে না। স্থানীয় পর্যায়ে ব্যাকওয়ার্ড লিংকেজ শিল্প গড়ে তোলার জন্য সরকার এ খাতে শুল্ক রাখবে।’
অনুষ্ঠানে সিপিডির গবেষণা পরিলাচক খন্দকার গোলদম মোয়াজ্জেম বলেন, ‘নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাতে অর্থায়ন সহজ করতে হবে। বিশ্বব্যাপি ১৮ ধরনের ঋণ ইনস্ট্রুমেন্ট অনুসরন করা হয়। বাংলাদেশে শুধু মাত্র নন কনসেশনাল ঋণ দেওয়া হয়। ফাইন্যান্সিয়াল ইনষ্ট্রুমেন্ট বাড়াতে হবে। বিদেশি বিনিয়োগ আসার পথ সুগম করতে হবে।’
অনুষ্ঠানে মুল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সেন্টার ফর এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড পার্টিসিপেটরি রিসার্চের চেয়ারপার্সন গৌরাঙ্গ নন্দী। তিনি সহজে অর্থায়নের জন্য একটি বিশেষ তহবিল গঠনের প্রস্তাব করেন। পাশাপাশি ব্যক্তি উদ্যোক্তাদের উৎপাদিত বাড়তি বিদ্যুৎ সরকারের কাছে বিক্রির ব্যবস্থা করার সুপারিশ করেন তিনি।
ইআরএফের সভাপতি রেফায়েত উল্লাহ মীরধার সভাপতিত্বে সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক আবুল কাশেম অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন। অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন দ্য সিটি ব্যাংকের চিফ ইকোনমিস্ট ও কান্ট্রি বিজনেস ম্যানেজার মো: আশানুর রহমান, ক্লিনের চীফ এক্সিকিউটিভ হাসান মেহেদী প্রমুখ।