প্রবা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ২৭ নভেম্বর ২০২৪ ২১:১৪ পিএম
আমদানিনির্ভরতা কমাতে ডাল ও তেলবীজ উৎপাদন বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এজন্য প্রায় ২৬৬ কোটি টাকা ব্যয়ের একটি প্রকল্প নিয়েছে কৃষি মন্ত্রণালয়। প্রকল্পটি যাচাই-বাছাই শেষে অনুমোদনের জন্য জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় উপস্থাপনের প্রস্তুতি চলছে বলে পরিকল্পনা কমিশন সূত্রে জানা গেছে।
উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবনা (ডিপিপি) সূত্রে জানা গেছে, ‘ডাল ও তেলবীজ উৎপাদনের মাধ্যমে টেকসই পুষ্টি নিরাপত্তা জোরদারকরণ (২য় পর্যায়)’ শীর্ষক প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশন (বিএডিসি)। ৫ বছর মেয়াদি প্রকল্প বাস্তবায়নে খরচ ধরা হয়েছে ২৬৫ কোটি ৭৮ লাখ টাকা। বাস্তবায়নকাল নির্ধারণ করা হয়েছে ২০২৪ সালের নভেম্বর থেকে ২০২৯ সালের জুন পর্যন্ত।
আমদানিনির্ভরতা কমানোর পাশাপাশি পুষ্টি নিরাপত্তা ও কৃষি উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধির জন্য নেওয়া প্রকল্পের উদ্দেশ্য হিসেবে বলা হয়েছে, দেশের ক্রমবর্ধমান বীজের চাহিদা পূরণ এবং ডাল ও তেলবীজ উৎপাদনের ক্ষেত্রটি সুষম এবং টেকসই করে তোলা। গুণগত মানসম্পন্ন ডাল ও তেলবীজ উৎপাদন, প্রক্রিয়াজাতকরণ, সংরক্ষণ এবং কৃষকের মাঝে বিতরণ বা সরবরাহের মাধ্যমে দেশের ক্রমবর্ধমান বীজের চাহিদা পূরণ করে জাতীয়ভাবে ডাল ও তেলবীজ ফসলের উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি করা।
প্রকল্পটির বিষয়ে বিএডিসি জানিয়েছে, ডাল ও ভোজ্য তেলে আমদানিনির্ভরতা কমিয়ে স্বয়ংসম্পন্ন হতে নতুন প্রকল্পটি নেওয়া হয়েছে, যা ভালো ডাল ও তেলবীজ উৎপাদনের মাধ্যমে টেকসই পুষ্টি নিরাপত্তা জোরদার করবে, এর পাশাপাশি ভোক্তাদের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিতকরণ এবং কৃষকদের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করবে। প্রকল্পটি দেশের আমদানিনির্ভরতা কমানোর মাধ্যমে কৃষি খাতের উন্নয়ন সাধন করতে সহায়তা করবে এবং দেশের পুষ্টি নিরাপত্তা ও কৃষি উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি করবে।
প্রকল্পের বিষয়ে বিএডিসি পরিকল্পনা বিভাগের প্রধান মো. ফেরদৌস রহমান বলেন, ‘আমাদের মূল লক্ষ্য হলো কৃষকদের ডাল ও তেলবীজের প্রক্রিয়াজাতকরণ, সংরক্ষণের কলাকৌশল এবং কারিগরি জ্ঞান ও দক্ষতা প্রশিক্ষণের মাধ্যমে বৃদ্ধি করা। কৃষকদের কাজ থেকে উৎপাদিত ভালো জাতের ডাল ও তেলবীজ সংগ্রহ করে আরও বেশি কৃষকের কাছে পৌঁছে দেওয়া।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের লক্ষ্য হলো আমদানিনির্ভরতা কমিয়ে আনা। কারণ বর্তমানে দেশের ডাল ও তেলের বেশিরভাগই আমদানি করতে হয়। এ প্রকল্পের মাধ্যমে আমাদের আমদানিনির্ভরতা কমিয়ে আনতে সাহায্য করবে এবং ন্যায্যমূল্যে বীজ সরবরাহ করা হবে। ডাল ও তেলবীজ উৎপাদনের মাধ্যমে কৃষককে স্বনির্ভর করে গড়ে তোলা হবে।’
ফেরদৌস রহমান বলেন, ‘এ প্রকল্পের মাধ্যমে আমরা বীজ উৎপাদন করে দেশের যেসব জেলায় ভালো ডাল ও তেলবীজ উৎপাদন হয়, সেখানে ডিলারের মাধ্যমে বিক্রি করা হবে। এতে করে আমদানির ওপর চাপ কমবে এবং স্বল্পমূল্যে কৃষকের কাছে উন্নতমানের বীজ সরবরাহ করা। এতে কৃষকরা যেমন উপকৃত হবেন, পাশাপাশি আমাদের দেশের উৎপাদনও অনেক বাড়বে।’
প্রকল্পের মাধ্যমে ১৮ হাজার মেট্রিক টন গুণগত মানসম্পন্ন ডাল ও তেলবীজ উৎপাদন এবং কৃষকদের মাঝে বিতরণ করা হবে। এ ছাড়া ২ হাজার চুক্তিবদ্ধ কৃষককে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে, যাতে তারা ডাল ও তেলবীজের প্রক্রিয়াজাতকরণ, সংরক্ষণ এবং ব্যবস্থাপনায় দক্ষতা অর্জন করতে পারেন। পাশাপাশি ৬০০ মেট্রিক টন ধারণ ক্ষমতাসম্পন্ন প্রি-ফেব্রিকেটেড ট্রানজিট বীজ গুদাম নির্মাণ করা হবে এবং উন্নত প্রযুক্তির সহায়তায় খামারের কার্যক্রমকে সহজতর করা হবে।
প্রকল্পের প্রধান কার্যক্রমের মধ্যে রয়েছে প্রি-ফেব্রিকেটেড ট্রানজিট বীজ গুদাম নির্মাণের মাধ্যমে বীজ সংরক্ষণ ব্যবস্থার উন্নয়ন, ৯০০ বর্গমিটার সানিং ফ্লোর, ২ হাজার ৫০০ রানিং মিটার হেরিং বোন বন্ড রাস্তা, ১ হাজার ৮০০ রানিং মিটার সীমানা প্রাচীর নির্মাণ, খামারের জমি চাষাবাদ, ফসল কর্তন, প্রক্রিয়াজাতকরণ, সংরক্ষণ ও বিতরণ কার্যক্রম সহজতর করার জন্য ট্রাক্টর, কাল্টিভেটর, বীজ ক্লিনার কাম গ্রেডার, ময়েশ্চার মিটার, জার্মিনেটর, ত্রিপল, ফিউমিগেশন শিট, ডানেজ ইত্যাদি কেনা হবে।
প্রকল্পের সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে কৃষি মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (প্ল্যানিং অনুষদ) মো. মাহাবুবুল হক পাটোওয়ারী বলেন, ‘এ প্রকল্পের মাধ্যমে ডাল ও তেলবীজ উৎপাদনের মাধ্যমে কৃষককে স্বনির্ভর করে গড়ে তোলা হবে। বীজ উৎপাদন করে সেটা ডিলারের মাধ্যমে কৃষকদের কাছে বিক্রি করা হবে। এতে করে আমদানির ওপর চাপ কমবে এবং স্বল্পমূল্যে কৃষকদের ভালো বীজ সরবরাহ করা যাবে। বাংলাদেশের যেসব জেলায় ভালো ডাল ও তেলবীজ উৎপাদন হয়, সেখানে ডিলারের মাধ্যমে বিক্রি করা হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের বর্তমানে ৮০ শতাংশের ওপরে আমদানি করে ডাল ও তেলবীজ সরবরাহ করা হয়। তাই আমাদের লক্ষ্য হলো, আমদানিনির্ভরতা কমিয়ে আনা। তার সঙ্গে স্বল্পমূল্যে কৃষকের কাছে উন্নতমানের বীজ সরবরাহ করা। এতে করে কৃষকরা যেমন উপকৃত হবেন পাশাপাশি আমাদের দেশের উৎপাদনও অনেক বাড়বে।’