× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

ব্যাংকে ফিরছে হাতের টাকা

প্রবা প্রতিবেদক

প্রকাশ : ১০ নভেম্বর ২০২৪ ২২:০৩ পিএম

আপডেট : ১০ নভেম্বর ২০২৪ ২২:০৪ পিএম

ফাইল ছবি

ফাইল ছবি

ব্যাংক খাতে উদ্বৃত্ত তারল্য বাড়ছে। একই সঙ্গে কমছে মানুষের হাতে থাকা টাকার অঙ্ক। দুর্বল ব্যাংকগুলোতে টাকার সংকট থাকলেও ভালো ব্যাংকে উপচে পড়ছে নগদ টাকা। বেসরকারি বিনিয়োগে স্থবিরতা থাকায় বেশিরভাগ ব্যাংকের কাছে রয়েছে উদ্বৃত্ত তারল্য। আস্থার সংকট অনেকটাই কেটে যাওয়ায় এমন চিত্র দেখা যাচ্ছে। আরও কিছু দিন সময় পেলে ঘুরে দাঁড়ানোর আশা দেখছে দুর্বল ব্যাংকগুলোর নতুন বোর্ড। 

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ব্যাংক খাতের অস্থিরতা কমাতে প্রয়োজনের অতিরিক্ত টাকা না ওঠানোই একমাত্র সমাধান। আতঙ্কিত না হয়ে ধৈর্য ধরার পরামর্শ দিচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক। একই সঙ্গে গ্রাহকের আমানতের নিরাপত্তা বিধানের প্রতিশ্রুতিও দিয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি।

টানা ১০ মাস পর ঘরে রাখা টাকা ব্যাংকে ফিরতে শুরু করেছে। গত বছরের নভেম্বর হতে ব্যাংক থেকে টাকা তুলে নিজের কাছে রাখার প্রবণতা হঠাৎ বেড়েছিল। এ প্রবণতা ব্যাংকগুলোর ওপর বাড়তি চাপ তৈরি করে। তবে গত দুই মাসে (সেপ্টেম্বর-অক্টোবর) ১৪ হাজার কোটি টাকার বেশি ব্যাংকে ফিরেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য পাওয়া গেছে।

খাতসংশ্লিষ্টরা বলেছেন, বেশ কিছু কারণে মানুষের হাতে টাকা রাখার প্রবণতা বেড়েছিল। উচ্চ মূল্যস্ফীতি, নির্বাচনকেন্দ্রিক অনিশ্চয়তা, দুই ঈদের বাড়তি খরচ, ব্যাংক একীভূতকরণের খবর এবং জুলাই-আগস্টে আন্দোলনের প্রভাবে অনেকে টাকা তুলে নিয়েছিল। তাই ব্যাংকের বাইরে টাকা বেড়েছিল। তবে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের নানা উদ্যোগে স্থিতিশীলতা ফেরায় ব্যাংক খাতের প্রতি মানুষের আস্থা বাড়ছে। তাই ঘরে থাকা টাকা ব্যাংকে ফিরছে।

সংশ্লিষ্টরা জানান, মানুষের কাছে নগদ টাকা বেড়ে যাওয়া বা কমে যাওয়ার হিসাব পাওয়া যায় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মুদ্রা সরবরাহের ওপর। ছাপানো নগদ টাকার একটি অংশ কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও সোনালী ব্যাংকের চেস্ট শাখায় গচ্ছিত থাকে। দৈনন্দিন চাহিদা মেটাতে ব্যাংকগুলোর ভল্টেও কিছু টাকা থাকে। এ ছাড়া ছাপানো টাকার একটা অংশ থাকে মানুষের হাতে।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, অক্টোবর শেষে ছাপানো টাকার পরিমাণ ছিল ৩ লাখ ৫২ হাজার ৮৯৫ কোটি টাকা। এর মধ্যে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও সোনালী ব্যাংকের চেস্ট শাখায় (যে বিভাগে টাকা জমা রাখা হয়) ছিল ৫১ হাজার ৮১৪ কোটি টাকা। বাকি অর্থের ২১ হাজার ৭৩৭ কোটি টাকা ব্যাংকগুলো ভল্টে এবং ২ লাখ ৭৯ হাজার ৩৪৪ কোটি টাকা ছিল মানুষের হাতে। অক্টোবর শেষে প্রচলনে থাকা মোট টাকার পরিমাণ (হাতে ও ব্যাংকের ভল্টে একত্রে) ছিল ৩ লাখ ১ হাজার ৮১ কোটি টাকা।

যদিও গত আগস্ট শেষে ছাপানো টাকার পরিমাণ ছিল ৩ লাখ ৫২ হাজার ৭২২ কোটি টাকা। এর মধ্যে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও সোনালী ব্যাংকের চেস্ট শাখায় ছিল ৩৫ হাজার ৯২২ কোটি টাকা। বাকি অর্থের ২৩ হাজার ১৭৭ কোটি টাকা ব্যাংকগুলো ভল্টে এবং ২ লাখ ৯৩ হাজার ৬২২ কোটি টাকা মানুষের হাতে ছিল। তবে ১৫ আগস্ট তা ছিল ৩ লাখ ১ হাজার ৯৪৭ কোটি টাকা। আগস্ট শেষে প্রচলনে থাকা টাকার পরিমাণ ছিল ৩ লাখ ১৬ হাজার ৮০০ কোটি টাকা। অর্থাৎ দুই মাসে মানুষের হাতে থাকা ১৪ হাজার ২৭৮ কোটি টাকা ব্যাংকে ফিরেছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র হুসনে আরা শিখা বলেন, ‘সরকার পতনের পর ব্যাংকের বাইরে নগদ টাকা বেড়ে গিয়েছিল। এ অঙ্ক ৩ লাখ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যায়। তবে ধীরে ধীরে তা কমে এখন ২ লাখ ৭৯ হাজার কোটি টাকায় নেমেছে। এতে বোঝা যায়, মানুষ ব্যাংকে টাকা ফেরত দিচ্ছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘গ্রাহকের আতঙ্কিত হওয়ার কোনো কারণ নেই। ইতঃপূর্বে যা হওয়ার হয়ে গেছে। এখন বাংলাদেশ ব্যাংক গ্রাহকের স্বার্থকে সর্বাধিক প্রাধান্য দিয়ে কাজ করছে। ইতোমধ্যে কয়েকটি ব্যাংকের বোর্ড ভেঙে দিয়ে সেখানে সুশাসন প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এখন আর ভয় পাওয়ার কোনো কারণ নেই। সব ঠিক হতে কিছু সময় অপেক্ষা করতে হবে।’

তথ্য বলছে, গত বছরের অক্টোবরে ব্যাংকের বাইরে নগদ টাকার পরিমাণ ছিল ২ লাখ ৪৫ হাজার ৯৪৩ কোটি টাকা। পরের মাস নভেম্বরে সেটা বেড়ে দাঁড়ায় ২ লাখ ৪৮ হাজার ৪৪১ কোটি টাকা, ডিসেম্বরে ২ লাখ ৫৪ হাজার ৮৬০ কোটি, জানুয়ারিতে ২ লাখ ৫৭ হাজার ২৯৫ কোটি, ফেব্রুয়ারিতে ২ লাখ ৫৭ হাজার ৫৭৪ কোটি, মার্চে ২ লাখ ৬১ হাজার ১৯৫ কোটি, এপ্রিলে বেড়ে দাঁড়ায় ২ লাখ ৭০ হাজার ৬৫৮ কোটি, মে মাসে ২ লাখ ৭০ হাজার ৬৫৮ কোটি, জুনে ২ লাখ ৯০ হাজার ৪৩৬ কোটি, জুলাইয়ে ২ লাখ ৯১ হাজার ৬৩০ কোটি এবং আগস্টে বেড়ে দাঁড়ায় ২ লাখ ৯২ হাজার ৪৩৪ কোটি ৪ লাখ টাকায়। সেপ্টেম্বরে এটি কমতে শুরু করেছে। সেপ্টেম্বরে কমে হয়েছে ২ লাখ ৮৩ হাজার ৫৫৩ কোটি টাকা। যা অক্টোবরে আরও কমে দাঁড়িয়েছে ২ লাখ ৭৯ হাজার কোটি টাকা।

এদিকে গত সেপ্টেম্বরে ব্যাংক খাতে আমানতের পরিমাণ গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ৭ দশমিক ২৬ শতাংশ বা ৯ হাজার ৭৪৮ কোটি টাকা বেড়ে ১৭ লাখ ৪১ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়েছে। যদিও আগের মাস আগস্টে মোট আমানত ১৭ লাখ ৩১ হাজার কোটি টাকায় নেমে আসে, যা ছিল জুলাইয়ের তুলনায় ০.১৬ শতাংশ কম। তবে আগের বছরের তুলনায় আগস্টে আমানত প্রবৃদ্ধি দাঁড়ায় ৭.০২ শতাংশে, যা ১৮ মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন। এর আগে ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে রেকর্ড ৬.৮৬ শতাংশ সর্বনিম্নে পৌঁছেছিল এই প্রবৃদ্ধি।

জানতে চাইলে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা ইনস্টিটিউট ফর ইনক্লুসিভ ফাইন্যান্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের নির্বাহী পরিচালক ড. মুস্তফা কে মুজেরি বলেন, ‘মানুষের হাতের টাকা ব্যাংকে ফিরেছে, এটা ভালো দিক। বোঝা যাচ্ছে, নতুন করে ব্যাংকের প্রতি মানুষের আস্থা তৈরি হয়েছে।’

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, ব্যাংক খাতে সাধারণত প্রতি মাসে আগের মাসের তুলনায় আমানত বাড়ে। তবে জুলাই ও আগস্ট মাসে আমানত বাড়ার বদলে উল্টো কমে যায়।

চলতি বছরের জুন শেষে ব্যাংক খাতে আমানত বা ডিপোজিট ছিল ১৭ লাখ ৪২ হাজার কোটি টাকা। অর্থাৎ দুই মাসের ব্যবধানে আমানত কমেছিল প্রায় ১১ হাজার কোটি টাকা। অবশ্য ব্যাংক খাত সংস্কারে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নানান পদক্ষেপের কারণে সেপ্টেম্বরে গ্রাহকদের ব্যাংক থেকে ডিপোজিট তুলে নেওয়ার প্রবণতা কমেছে বলে জানিয়েছেন ব্যাংকাররা।

বেশ কয়েকটি বেসরকারি ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, দেশের বর্তমান পরিস্থিতির মধ্যেও ভালো ব্যাংকগুলোতে ডিপোজিট অনেক বেড়েছে। পাশাপাশি দুর্বল ব্যাংকগুলোতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তারল্য সহায়তার কারণে গ্রাহকদের আস্থা কিছুটা ফিরেছে।

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা