× ই-পেপার প্রচ্ছদ সর্বশেষ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি শিক্ষা ধর্ম ফিচার ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

সুদহার বাড়িয়েও কমছে না মূল্যস্ফীতি

প্রবা প্রতিবেদক

প্রকাশ : ০৭ নভেম্বর ২০২৪ ২০:০২ পিএম

সুদহার বাড়িয়েও কমছে না মূল্যস্ফীতি

কোনোভাবেই নিত্যপণ্যের ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা ঠেকানো যাচ্ছে না। ফলে আবারও নিয়ন্ত্রণের বাইরে মূল্যস্ফীতি। বেশ কয়েক ধাপে ব্যাংকঋণের সুদহার বাড়িয়েও মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হচ্ছে না। গত অক্টোবরে গড় মূল্যস্ফীতি আবার বেড়ে ১০ দশমিক ৮৭ শতাংশ হয়েছে। খাদ্য মূল্যস্ফীতি বেড়ে ১২ দশমিক ৬৬ শতাংশে ঠেকেছে।

বৃহস্পতিবার (৭ নভেম্বর) মূল্যস্ফীতির হালনাগাদ তথ্য প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস)। এটিকে ভোক্তা মূল্যসূচক (সিপিআই) বলা হয়।

অক্টোবরের সিপিআই তথ্যে দেখা যায়, ওই মাসে দেশের গড় মূল্যস্ফীতি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১০ দশমিক ৮৭ শতাংশে। এটি আগের মাস সেপ্টেম্বরে কিছুটা কমে ৯ দশমিক ৯২ শতাংশে ঠেকেছিল। গড় মূল্যস্ফীতি ১০ দশমিক ৮৭ শতাংশের অর্থ হলো ২০২৩ মাসের অক্টোবরে যে পণ্য ১০০ টাকায় কিনতে হয়েছিল, এ বছরের অক্টোবরে তা কিনতে হয়েছে ১১০ টাকা ৮৭ পয়সায়।

অক্টোবরে খাদ্য মূল্যস্ফীতি বেড়ে ১২ দশমিক ৬৬ শতাংশে ঠেকেছে। যদিও গত জুলাইয়ে ১৬ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ বেড়ে খাদ্য মূল্যস্ফীতি দাঁড়িয়েছিল ১৪ দশমিক ১ শতাংশে।

সাম্প্রতিক মাসগুলোতে খাদ্য মূল্যস্ফীতি বেড়ে যাওয়ার মূল কারণ আগস্টের মাঝামাঝি থেকে শুরু হওয়া বন্যা, প্রাকৃতিক দুর্যোগ। দেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চল প্লাবিত হওয়ার পর উত্তরাঞ্চলও বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ফলে এসব এলাকায় কৃষিজমি ডুবে ফসল নষ্ট হয়, খামারগুলো নষ্ট হয়ে হাঁস-মুরগির সরবরাহ ব্যবস্থায় ঘাটতি দেখা দেয়। তা ছাড়া দেশের সিন্ডিকেট ব্যবস্থা সরকারের নিয়ন্ত্রণের বাইরে থাকায় পণ্যের দাম কোনোভাবেই নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হচ্ছে না।

উচ্চ মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে নীতি সুদহার বাড়িয়ে চলেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এতে ব্যাংক ঋণের সুদহার ক্রমশ বাড়ছে। ইতোমধ্যে সুদের হার প্রায় ১৬ শতাংশে উঠেছে। গত দেড় বছরের কম সময়ে সুদহার বেড়েছে প্রায় ৭ শতাংশ। এতে ছোট-বড় সব খাতের ব্যবসায়ীর মধ্যে উদ্বেগ বাড়ছে।

খাদ্য মূল্যস্ফীতির লাগাম ছাড়িয়ে গেলেও বিবিএসের তথ্য বলছে, অক্টোবরে খাদ্যবহির্ভূত পণ্যের মূল্যস্ফীতি কমে ৯ দশমিক ৩৪ শতাংশে নেমেছে, যেটি আগের মাস সেপ্টেম্বরেও ছিল ৯ দশমিক ৫ শতাংশ।

মূল্যস্ফীতির ধকল শহরের চেয়ে গ্রামের মানুষের বেশি। তথ্য বলছে, অক্টোবরে শহরের চেয়ে গ্রামের মানুষকে বেশি দামে পণ্য কিনতে হয়েছে। এ মাসে গ্রামাঞ্চলে গড় মূল্যস্ফীতি ছিল ১১ দশমিক ২৬ শতাংশ, খাদ্য মূল্যস্ফীতি ছিল ১২ দশমিক ৭৫ শতাংশ। বিপরীতে একই সময়ে দেশের শহর এলাকাগুলোতে গড় মূল্যস্ফীতি ছিল ১০ দশমিক ৪৪ শতাংশ, খাদ্য মূল্যস্ফীতি ছিল ১২ দশমিক ৫৩ শতাংশ।

বেসরকারি বিনিয়োগ উৎসাহিত করতে ২০২০ সালের এপ্রিলে ব্যাংকঋণের সুদহারের সর্বোচ্চ সীমা ৯ শতাংশ বেঁধে দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। তখন মূল্যস্ফীতির সঙ্গে সমন্বয় করে মেয়াদি আমানতের সুদহার ৬ শতাংশ বেঁধে দেওয়া হয়। এরপর দীর্ঘ তিন বছরের বেশি সময় ধরে ঋণ ও আমানতের সুদহার এর মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল। তবে উচ্চ মূল্যস্ফীতিসহ অর্থনীতি নানা সংকটে পড়লে গত বছরের জুলাই থেকে স্মার্ট পদ্ধতির আওতায় সুদের হার বাড়াতে শুরু করে বাংলাদেশ ব্যাংক। আর আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ঋণের শর্ত পূরণে চলতি বছরের মে মাসে সুদের হার পুরোপুরি বাজারের ওপর ছেড়ে দেওয়া হয়। সেই সঙ্গে উচ্চ মূল্যস্ফীতির লাগাম টানতে সংকোচনমূলক মুদ্রানীতির আওতায় নীতি সুদহার কয়েক দফা বাড়ানো হয়। এতে ব্যাংকঋণের সুদহার ক্রমাগত বাড়তে থাকে এবং গত মাসে তা প্রায় ১৬ শতাংশে উঠেছে।

সর্বশেষ গত ২২ অক্টোবর নীতি সুদহার ৫০ ভিত্তি পয়েন্ট বাড়িয়ে ১০ শতাংশে উন্নীত করার ঘোষণা দেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক, যা ২৭ অক্টোবর থেকে কার্যকর হয়েছে। এতে সব ধরনের ঋণের সুদের হার চলতি মাসে আরও বাড়ার আশঙ্কা করছেন ব্যবসায়ীরা।

এর আগে গত আগস্টে দেশের সার্বিক মূল্যস্ফীতি ছিল ১০ দশমিক ৪৯ শতাংশ। অর্থাৎ সেপ্টেম্বরে কমার পর অক্টোবরে আবারও বেড়েছে মূল্যস্ফীতি। আর গত জুলাইয়ে দেশে জাতীয় পর্যায়ে সাধারণ মূল্যস্ফীতি ছিল ১২ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। ওই মাসে পয়েন্ট-টু-পয়েন্ট ভিত্তিতে মূল্যস্ফীতি হয়েছিল ১১ দশমিক ৬৬ শতাংশ।

শেখ হাসিনার সরকারের আমলে মূল্যস্ফীতির পরিসংখ্যানে কারসাজি করা হতো বলে প্রমাণ খুঁজে পেয়েছে অর্থনীতির শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটি। জনগণের সামনে অসাধারণ অর্থনৈতিক পারফরম্যান্স তুলে ধরে সরকারের ভাবমূর্তি বাড়াতেই এসব করা হতো বলে জানিয়েছে কমিটি।

শ্বেতপত্র কমিটির এক সদস্য জানান, বিবিএস এ ধরনের কারসাজির কারণে মনগড়া তথ্য প্রকাশ করত। শেখ হাসিনার আমলে বিবিএস প্রথমে মূল্যস্ফীতির তথ্য প্রস্তুত করে পরিকল্পনামন্ত্রীর কাছে জমা দিত। পরিকল্পনামন্ত্রী নিজের ইচ্ছামতো কমিয়ে আনার নির্দেশ দিতেন। তার পছন্দমতো তথ্য সাজিয়ে পাঠালে তা অনুমোদন করতেন মন্ত্রী।

পরে তা অনুমোদনের জন্য তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে পাঠানো হতো। তিনি আরেক দফায় তা কমিয়ে অনুমোদন করতেন। আর হাসিনা যে তথ্য অনুমোদন দিতেন, বিবিএস সেটিই প্রকাশ করতে বাধ্য হতো। মূল্যস্ফীতির হার ১০ শতাংশের কাছাকাছি হলে বা বেশি হলে পরিকল্পনামন্ত্রীরা তা কোনোমতেই অনুমোদন করতেন না, বরং অনেকটাই কমিয়ে দিতেন তারা।

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক : মোরছালীন বাবলা

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা