প্রবা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ০৬ নভেম্বর ২০২৪ ২০:৪০ পিএম
আপডেট : ০৬ নভেম্বর ২০২৪ ২১:০৯ পিএম
আমানতকারীদের জমাকৃত অর্থের নিরাপত্তা দিতে সর্বোচ্চ সংবেদনশীলতা বজায় রাখবে বাংলাদেশ ব্যাংক। ইতোমধ্যে ১১টি ব্যাংকের পর্ষদ ভেঙে দিয়ে সুশাসন প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ইতঃপূর্বে কিছু ভুল বার্তার কারণে ব্যাংক খাতে অনাস্থা তৈরি হয়েছে, তাই তারল্য সংকট মোকাবিলা করা কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংক কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে, প্রয়োজনে নতুন নতুন পদক্ষেপ নেওয়া হবে। সেক্ষেত্রে আমানত উত্তোলনের চাপ কমানো অপরিহার্য। কারণ সব গ্রাহক একসঙ্গে টাকা তুলতে চাইলে পৃথিবীর কোনো ব্যাংকের পক্ষে তা দেওয়া সম্ভব না। তাই বাংলাদেশ ব্যাংকের সংস্কার কার্যক্রমের ওপর আস্থা রেখে ধৈর্য ধরার আহ্বান জানিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র হুসনে আরা শিখা।
বুধবার (৬ নভেম্বর) কেন্দ্রীয় ব্যাংকের জাহাঙ্গীর আলম কনফারেন্স হলে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, ‘কিছু
ব্যাংকে সব গ্রাহক একসঙ্গে টাকা তুলতে হুমড়ি খেয়ে পড়ার কারণে টাকা দিতে পারছে না। তাই
প্রয়োজন ছাড়া টাকা না তুলতে অনুরোধ জানাচ্ছি। এক ব্যাংক থেকে টাকা তুলে অন্য ব্যাংকে
রাখার প্রবণতা বন্ধ করতে হবে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সুপরিকল্পনা আছে। আমরা আস্থা ফেরাতে
চাই। ব্যাংকের টাকা নিয়ে আতঙ্কিত হবেন না, সবাই তার আমানতের টাকা ফেরত পাবেন।’
তিনি বলেন, ‘সংকটে
থাকা ব্যাংকগুলোকে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দিষ্ট নীতিমালার ভিত্তিতে তারল্য ব্যবস্থা
করে দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু তারল্য সমস্যায় থাকা ব্যাংকগুলো প্রত্যাশা অনুযায়ী টাকা পাচ্ছে
না। ব্যাংকগুলো বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের সঙ্গে এ বিষয়ে ইতোমধ্যে আলোচনা করেছে। যে
পদ্ধতি অনুসরণ করলে তারল্য সংকটে থাকা ব্যাংকগুলো প্রত্যাশা অনুযায়ী তারল্য পাবে, সেই
বিষয়টি কেন্দ্রীয় ব্যাংক বিবেচনা করছে।’
মুখপাত্র বলেন,
‘বাংলাদেশ ব্যাংক স্বপ্রণোদিত হয়ে কোনো শিল্পপ্রতিষ্ঠানে প্রশাসক নিয়োগ করছে না, করবে
না। তবে উচ্চ আদালতের নির্দেশ মোতাবেক একটি শিল্পগ্রুপে প্রশাসক নিয়োগের কার্যক্রম
শুরু হয়েছে বা করবে। এর বাইরে কোনো শিল্পগ্রুপে প্রশাসক নিয়োগ করা হচ্ছে না।’
অর্থ পাচার নিয়ে
মুখপাত্র বলেন, ‘পাচার করা অর্থ ফরমাল চ্যানেলে হলে কেন্দ্রীয় ব্যাংক তদন্ত করবে। কিন্তু
হুন্ডির মাধ্যমে টাকা পাচার হলে সেটা তদন্ত করা কঠিন। বিএফআইইউ এ বিষয় নিয়ে কাজ করছে।
অর্থ পাচারের বিষয়ে আমরা সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছি, কিন্তু এটা আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে
হবে, জোরজবরদস্তি দিয়ে হবে না। আমাদের প্রচুর পরিমাণ রেমিট্যান্স আসছে। ইউএসএ রেমিট্যান্স
প্রেরণে শীর্ষে চলে এসেছে। এ দেশ থেকে শুধু যে রেমিট্যান্স এসেছে সেটা নয়, বিনিয়োগও
আসছে।’
বিভিন্ন ব্যাংকে
বিতর্কিত শিল্পগোষ্ঠীর ঋণ অনিয়মের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘বিএফআইইউ ইতোমধ্যে
অনেকের ব্যাংক হিসাব জব্দ করেছে। তারা এ বিষয় নিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে কোনো তথ্য
দেয়নি।’
টাস্কফোর্স কার্যক্রমের
অগ্রগতি নিয়ে মুখপাত্র বলেন, ‘একটি টাস্কফোর্স ব্যাংকিং সংস্কারে কাজ করছে। বাংলাদেশ
ব্যাংক জনবলের দক্ষতা বাড়াতে দ্বিতীয় টাস্কফোর্স কাজ করছে। তৃতীয়টা পাচার করা টাকা
ফেরত আনার জন্য কাজ করে যাচ্ছে। এখানে বিভিন্ন দেশের আইনজীবী ও কনসালট্যান্ট নিয়োগে
কাজ চলছে।’
কেন্দ্রীয় ব্যাংক
নিজেই তার ব্যাংকে সুশাসন প্রতিষ্ঠা করতে পারছে না, কেনÑ এমন প্রশ্নে মুখপাত্র বলেন,
‘কেন্দ্রীয় ব্যাংকে নামে-বেনামে অনেক অভিযোগ আসে। আমাদের এইচআর সেটা খতিয়ে দেখে। সুনির্দিষ্ট
অভিযোগ গভর্নর বরাবর না এলে আমরা ব্যবস্থা নিতে পারি না।’
নীতি সুদহার বাড়ানোসংক্রান্ত
এক প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ ব্যাংক পলিসি রেট বাড়ানোর পর মূল্যস্ফীতি কমে এসেছিল।
আগামী ছয় মাস এই ধারাবাহিকতা থাকলে মূল্যস্ফীতি আশা করছি ৬ শতাংশের কাছাকাছি নেমে আসবে।
ইতোমধ্যে অনেক দেশে এ পদ্ধতি কাজ করেছে। আমাদের দেশেও কাজ করবে।’
এনআরবিসি ব্যাংকের
চেয়ারম্যানের নানা অনিয়ম নিয়ে প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ ব্যাংকে তাদের বিরুদ্ধে
যেসব অভিযোগ আছে, সেটা তদন্ত করা হচ্ছে। আপনারা যেহেতু আবার বিষয়টি বলছেন, আমি সংশ্লিষ্ট
বিভাগে খোঁজ নেব।’
তিনি আরও বলেন,
‘আমরা ১১টা ব্যাংকের বোর্ড পুনর্গঠনে করেছি। এসব ব্যাংক নিয়ে কাজ করছি। আমাদের শুরুতে
মনোযোগ এখন ইসলামি ধারার ব্যাংকগুলো। অন্য ব্যাংকগুলোকে এখন এতটা গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে
না। এই ১১টার পরে হয়তো আরও ৪টা ব্যাংক নিয়ে কাজ শুরু করব।’