প্রবা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ০৩ নভেম্বর ২০২৪ ২১:৫৫ পিএম
আপডেট : ০৩ নভেম্বর ২০২৪ ২২:০৯ পিএম
চলতি বছরের শুরু থেকেই ধারাবাহিকভাবে বাড়ছে রেমিট্যান্স বা প্রবাসী আয়। প্রথম মাস জুলাইয়ে যে পরিমাণ রেমিট্যান্স এসেছে তার পরের মাসগুলোতে কিছুটা বেড়েছে রেমিট্যান্সের প্রবাহ। আগস্ট ও সেপ্টেম্বরের মতো সদ্য বিদায়ি অক্টোবর মাসেও প্রবাসী আয়ের গতি ছিল ঊর্ধ্বমুখী। এ মাসের পুরো সময়ে রেমিট্যান্স এসেছে প্রায় ২৪০ কোটি বা ২ দশমিক ৪০ বিলিয়ন ডলার। দেশীয় মুদ্রায় (প্রতি ডলার ১২০ টাকা ধরে) এর পরিমাণ প্রায় ২৯ হাজার কোটি টাকা। গত বছরের অক্টোবর মাসে এসেছিল ১৯৭ কোটি ডলার। সে হিসেবে আগের বছরের অক্টোবরের তুলনায় বেশি এসেছে ৪৩ কোটি ডলার। বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্র এ তথ্য জানিয়েছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম চার মাসে রেমিট্যান্স এসেছে ৮৯৩ কোটি ৫০ লাখ বা প্রায় ৯ বিলিয়ন ডলার। গত ২০২৩-২৪ অর্থবছরের একই সময়ে এসেছিল ৬৮৮ কোটি বা ৬ দশমিক ৮০ বিলিয়ন ডলার। অর্থাৎ চলতি অর্থবছরের প্রথম চার মাসে রেমিট্যান্সের প্রবৃদ্ধি হয়েছে ২০৫ কোটি ডলার বা ৩০ শতাংশ।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হালনাগাদ তথ্য বলছে, অক্টোবরে প্রতিদিন গড়ে ৭ কোটি ৭৩ লাখ ডলার বা ৯২৭ কোটি টাকার রেমিট্যান্স এসেছে। আর পুরো মাসে এসেছে ২৩৯ কোটি ৫০ লাখ ডলারের বেশি। আলোচিত সময়ে রাষ্ট্রমালিকানাধীন ব্যাংকের মাধ্যমে এসেছে ৭২ কোটি ৬১ লাখ ৬০ হাজার ডলার, বিশেষায়িত দুই ব্যাংকের মধ্যে একটি ব্যাংকের (কৃষি ব্যাংক) মাধ্যমে এসেছে ১১ কোটি ৯৯ লাখ ডলার। বেসরকারি ব্যাংকের মাধ্যমে এসেছে ১৫৪ কোটি ১৮ লাখ ৫০ হাজার ডলার এবং বিদেশি ব্যাংকের মাধ্যমে এসেছে ৭১ লাখ ৭০ হাজার ডলার।
তবে এ সময়ের মধ্যে ৯টি ব্যাংকের মাধ্যমে কোনো রেমিট্যান্স আসেনি। এসব ব্যাংকের মধ্যে রয়েছেÑ রাষ্ট্রমালিকানাধীন বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক বা বিডিবিএল, বিশেষায়িত রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক বা রাকাব। বেসরকারি ব্যাংকের মধ্যে রয়েছেÑ কমিউনিটি ব্যাংক, সিটিজেন্স ব্যাংক, আইসিবি ইসলামিক ব্যাংক ও পদ্মা ব্যাংক। আর বিদেশি খাতের মধ্যে রয়েছেÑ হাবিব ব্যাংক, ন্যাশনাল ব্যাংক অব পাকিস্তান ও স্টেট ব্যাংক অব ইন্ডিয়া।
এর আগের মাস সেপ্টেম্বর মাসের পুরো সময়ে ২.৪০ বিলিয়ন বা ২৪০ কোটি ৪৮ লাখ ডলার পাঠিয়েছেন বিভিন্ন দেশে বসবাসরত প্রবাসী বাংলাদেশিরা; যা বাংলাদেশি মুদ্রায় (প্রতি ডলার ১২০ টাকা হিসাবে) ২৮ হাজার ৮৫৬ কোটি টাকার বেশি। চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে দেশে ১৯০ কোটি মার্কিন ডলারের রেমিট্যান্স আসে। পরের মাস আগস্টে এসেছিল ২২২ কোটি ডলার। জুনে এসেছিল ২৫৪ কোটি ১৬ লাখ ডলার। তার আগের মে মাসে আসে ২২৫ কোটি ৩৮ লাখ ডলার। এ ছাড়া এপ্রিলে ২০৪ কোটি ৪২ লাখ, মার্চে ১৯৯ কোটি ৭০ লাখ, ফেব্রুয়ারিতে ২১৬ কোটি ৪৫ লাখ এবং জানুয়ারিতে ২১১ কোটি ৩১ লাখ ডলার পাঠিয়েছিলেন প্রবাসীরা।
এর আগে দেশের ইতিহাসে একক মাসে সর্বোচ্চ ২৬০ কোটি ডলার রেমিট্যান্স এসেছিল ২০২০ সালের জুলাই মাসে। বছরওয়ারি হিসাবে সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স আসে ২০২০-২১ অর্থবছরে। ওই অর্থবছরে মোট রেমিট্যান্স আসে ২৪ দশমিক ৭৮ বিলিয়ন বা ২ হাজার ৪৭৮ কোটি ডলার। আর চলতি বছরের জুন মাসে ব্যাংকিং চ্যানেলে মোট ২৫৪ কোটি ডলারের প্রবাসী আয় দেশে এসেছে; যা ছিল ইতিহাসের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ।
এদিকে রেমিট্যান্স বাড়ায় ইতিবাচক প্রভাব পড়েছে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার সঞ্চয় বা রিজার্ভে। আওয়ামী লীগ সরকারের শেষ আড়াই বছরে রিজার্ভ অব্যাহত পতন ঘটতে থাকে। রেকর্ড ৪৮ বিলিয়ন ডলারের রিজার্ভ ২০ বিলিয়নের নিচে নেমে যায়। সরকার পতনের পর অর্থ পাচারের পথ কিছুটা সংকুচিত হওয়ায় ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়তে শুরু করে। এর ওপর ভর করে রিজার্ভ স্থিতিশীল অবস্থায় রয়েছে। ক্ষয় না হয়ে সামান্য হলেও বাড়ছে।
গত বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ ব্যাংকের ওয়েবসাইটে ৩০ অক্টোবর পর্যন্ত রিজার্ভের স্থিতি প্রকাশ করা হয়। সেখানে দেখা যায়, দেশের বৈদেশিক মুদ্রার গ্রস বা মোট রিজার্ভ দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ৫৪৪ কোটি মার্কিন ডলার (২৫ দশমিক ৪৪ বিলিয়ন)। তবে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) হিসাব পদ্ধতি বিপিএম-৬ অনুযায়ী রিজার্ভ এখন ১ হাজার ৯৮৭ কোটি ডলার (১৯ দশমিক ৮৭ বিলিয়ন)।
রেমিট্যান্স পরিস্থিতি নিয়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সাবেক চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ আব্দুল মজিদ বলেন, ‘রেমিট্যান্স বাড়াতে আরবি ভাষা শিক্ষা নেওয়ার ওপর জনমত সৃষ্টি করতে হবে। মধ্যপ্রাচ্যে আমাদের দেশের শ্রমিকরা ভাষা না জানায় অনেক সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। আগামীতে যাতে আমাদের জনশক্তির অপচয় না হয়, সেদিকে সবার খেয়াল রাখতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের কর্মীরা মধ্যপ্রাচ্যে অধস্তনের অধস্তন হিসেবে কাজ করে। সবচেয়ে প্রতিবন্ধকতা হচ্ছে পাকিস্তানি ও শ্রীলঙ্কান বা অন্যরা বাংলাদেশিদের বস হন। এর অন্যতম কারণ ভাষা জানা। তারা ভাষা জানার কারণে মালিকদের কাছাকাছি যেতে পারলেও আমরা যেতে পারি না, তাদের বোঝাতেও পারি না। যে কারণে চাইলেও মধ্যপ্রাচ্যে আমাদের শ্রমিকরা বড় কোনো পদে যেতে পারেন না। এ কারণে রেমিট্যান্স কম আসে। ভাষা জানলে আমাদের কর্মীরা উচ্চ পদে গিয়ে অধিক রেমিট্যান্স পাঠাতে পারবে।’