বেনাপোল ইমিগ্রেশন
তরিকুল ইসলাম মিঠু, যশোর
প্রকাশ : ০৩ নভেম্বর ২০২৪ ১৬:৫৪ পিএম
আপডেট : ০৩ নভেম্বর ২০২৪ ১৭:১৯ পিএম
দেশের প্রধান ও বৃহত্তম স্থলবন্দর বেনাপোল। এ বন্দর থেকে প্রতিবেশী দেশ ভারতের কলকাতার দূরত্ব কম হওয়ায় দেশটিতে ভ্রমণকারীদের সিংহভাগই বন্দরটি ব্যবহার করে। তবে সম্প্রতি কয়েকটি কারণে দেশের এ বৃহত্তম বন্দর দিয়ে ভারতে যাওয়া-আসা উল্লেখযোগ্য হারে কমে গেছে।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, এসব কারণের মধ্যে প্রধান কারণ তিনটি। ভারতীয় ভিসা সেন্টার থেকে ভিসা পাওয়া, ভ্রমণ কর বাড়ানো, বিজিবি ও কাস্টমস, ইমিগ্রেশন পুলিশসহ বাংলাদেশ ও ভারতের চেকপোস্টে হয়রানি। এ ছাড়া যাত্রীদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার, শারীরিক নির্যাতন এবং টাকার বিনিময়ে সিরিয়াল ভঙ্গ করে যাত্রীদের আগে যাওয়ার সুযোগ করে দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে দীর্ঘদিনের। এসব কারণে দুই দেশের পাসপোর্টধারী যাত্রীসহ ব্যবসায়ীদের মধ্যেও সৃষ্টি হয়েছে হতাশা ও ক্ষোভ।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ২০২৩ সালের জানুয়ারি থেকে পরবর্তী ১০ মাসে বেনাপোল বন্দর দিয়ে যাতায়াত করেছে ১৮ লাখ ৯৯ হাজার ৪৭০ জন। এর মধ্যে ভারতে গমন করেছে ৯ লাখ ৬০ হাজার ১৪৮ জন যাত্রী এবং ভারত থেকে এসেছে ৯ লাখ ৩৯ হাজার ৩২২ জন। গত বছরের তুলনায় চলতি বছর ১০ মাসে ভারতে যাত্রী কমেছে ১ লাখ ৬৮ হাজার ২৪৪ জন। এতে ভ্রমণ কর ও বন্দর চার্জসহ একই সময় সরকারের রাজস্ব আদায় কম হয়েছে ১৭ কোটি ৭৪ লাখ ৯৭ হাজার ৪২০ টাকা।
পাসপোর্ট যাত্রী সুমন হোসেন জানান, ভারতীয় ভিসা করতে একজন যাত্রীর ১ হাজার থেকে ১,৫০০ টাকা খরচ হয়। এ ছাড়া ভারতে প্রবেশের সময় এক হাজার টাকা ভ্রমণ ট্যাক্স ও ৫৫ টাকা বন্দর চার্জ দিতে হয়। এরপর ভারতে ৪০০ টাকার হোটেল ভাড়া এখন ৭০০ থেকে এক হাজার টাকা। এত টাকা খরচ করে ভ্রমণ শেষে কিছু কেনাকাটা করলে ইমিগ্রেশন কাস্টমস সেগুলো আটকে দেয়। সেখান থেকে কোনো রকম ছাড়া পেলে আবার বন্দরের প্যাসেঞ্জার টার্মিনালে দায়িত্বরত বিজিবি সদস্যরা ব্যাগ খুলে সেসব মালামাল বের করে নেন। নিজ টাকায় পাসপোর্ট ভিসা ও ভ্রমণ ট্যাক্স, বন্দর চার্জ দিয়ে বিজিবি মানুষের সঙ্গে এমন আচরণ করে যে যেন ভারত থেকে আসা সবাই চোর। এ সময় তারা মালামালও রেখে দিয়ে ভয়ভীতি দেখিয়ে তাড়িয়ে দেন। এমনকি দেওয়া হয় না মালামাল নিয়ে নেওয়ার কোনো রসিদ।
বেনাপোলের ট্রান্সপোর্ট এজেন্সি মালিক সমিতির সভাপতি আতিকুজ্জামান সনি বলেন, ‘বিজিবি ও কাস্টমসের হয়রানি তো আছেই। সেই সঙ্গে ট্যুরিস্ট, বিজনেস, স্টুডেন্ট ভিসা বন্ধ থাকায় বেকায়দায় পড়েছে যাত্রীরা। এসব কারণে বৃহত্তম এই স্থলবন্দর দিয়ে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যে ব্যাপক প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। তা ছাড়া ইমিগ্রেশনকেন্দ্রিক দালালদের উৎপাতের কারণেও যাত্রীসংখ্যা কমছে।’
বেনাপোল আন্তর্জাতিক ইমিগ্রেশনের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ইমতিয়াজ ভূঁইয়া বলেন, ‘গত ৫ আগস্ট ছাত্র আন্দোলনের পর সরকার পরিবর্তন হয়। এর পর থেকেই ভারত সরকার বাংলাদেশিদের ভিসা বন্ধ রাখে। এ কারণে ভারতগামী যাত্রী কমে গেছে। তবে ভারত সরকার আবার ভিসা চালু করলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে।’
বেনাপোল উপপরিচালক মামুন কবির তরফদার প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, ‘আমি বন্দরে নতুন যোগদান করেছি। তবে কারও বিরুদ্ধে পাসপোর্ট যাত্রী হয়রানির অভিযোগ পেলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
বিষয়টি নিয়ে যশোর ৪৯ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্নেল সাইফুল্লা সিদ্দিকীর কাছে জানতে চাইলে তিনি প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, ‘বিজিবি সদস্যদের কারও বিরুদ্ধে কোনো পাসপোর্ট যাত্রীকে অহেতুক হয়রানি করার অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’