প্রবা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ০২ নভেম্বর ২০২৪ ২১:৩১ পিএম
আপডেট : ০২ নভেম্বর ২০২৪ ২২:০১ পিএম
ওকে/কবির
ট্যাগ : সেমিনার
সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশন (এসডিএফ) চেয়ারম্যান ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সাবেক চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ আব্দুল মজিদ বলেছেন, রেমিট্যান্স বাড়াতে আরবি ভাষা শিক্ষা নেওয়ার ওপর জনমত সৃষ্টি করা দরকার। মধ্যপ্রাচ্যে আমাদের দেশের শ্রমিকরা ভাষা না জানার কারণে অনেক সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। আগামী দিনে যাতে আমাদের জনশক্তির অপচয় না হয় সেদিকে সবার খেয়াল রাখা দরকার।
শনিবার
জাতীয় প্রেস ক্লাবে বাংলাদেশ কুরআন প্রচার ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে ‘মধ্যপ্রাচ্য কর্মসংস্থান
বৃদ্ধি ও দেশে রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়ানো অপরিহার্য’ শীর্ষক সেমিনারে প্রধান অতিথির
বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
ড. মোহাম্মদ আব্দুল
মজিদ বলেন, ‘রেমিট্যান্স বাড়াতে আরবি ভাষা শিক্ষা নেওয়ার ওপরে জনমত সৃষ্টি করা দরকার।
মধ্যপ্রাচ্যে আমাদের দেশের শ্রমিকরা ভাষা না জানায় অনেক সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।
আগামী দিনে যাতে আমাদের জনশক্তির অপচয় না হয় সেদিকে সবার খেয়াল রাখা দরকার। মধ্যপ্রাচ্যে
যাওয়া শ্রমিকদের ‘কাইফা হালুকা, আনা বিখায়ের’ শুধু এটুকু আরবি সেন্টেন্স জানলে-ই হবে
না, একজন শ্রমিক যাতে আরবি বুঝতে ও বোঝাতে পারে পাশাপাশি লিখতে পারে, সেটা জানা খুবই
দরকার। এজন্য দেশ থেকেই আরবি ভাষা শিখিয়ে পড়িয়ে পাঠাতে হবে। যদি তা করা না হয় তাহলে
মানবিক মর্যাদা, সামাজিক মর্যাদা ও আর্থিক মর্যাদায়ও আমরা অন্যদের থেকে পিছিয়ে থাকব।’
তিনি আরও বলেন,
‘কারিগরী শিক্ষা বোর্ড অন্তত লাখ-কোটি সার্টিফিকেটধারী লোক সৃষ্টি করেছে। সেই সার্টিফিকেটধারী
লোকেরা বিদেশ হয়তো গিয়েছে বা যায়নি। যদি না যায়, তাহলে কেন যায়নি। অর্থাৎ আমাদের এখানে
বড় একটা শুভঙ্করের ফাঁকি বা অপরিকল্পিত ব্যবস্থাপনা কাজ করেছে বলেই আজকে রেমিট্যান্স
প্রাপ্তিতে এই দুর্গতি। অথচ এরাই আমাদের মানবসম্পদ।’
সাবেক এনবিআর
চেয়ারম্যান বলেন, ‘আমাদের কর্মীরা মধ্যপ্রাচ্যে অধস্তনের অধস্তন হিসেবে কাজ করে। সবচেয়ে
প্রতিবন্ধকতা হচ্ছে পাকিস্তানি ও শ্রীলঙ্কান বা অন্যরা হন বাংলাদেশিদের বস। এটার অন্যতম
কারণ ভাষা জানা। তারা ভাষা জানার কারণে মালিকদের কাছাকাছি যেতে পারলেও আমরা যেতে পারি
না, তাদের বোঝাতেও পারি না। যে কারণে চাইলেও মধ্যপ্রাচ্যে আমাদের শ্রমিকরা বড় কোনো
পদে যেতে পারেন না।’
তিনি আরও বলেন,
‘জমিজমা বিক্রি করে শ্রমিকরা মধ্যপ্রাচ্যে গিয়েই টেনশনে পড়েন কীভাবে সেই টাকা তুলবেন।
বিদেশে গিয়ে শুধু আরবি ভাষা না জানার কারণে তারা নানা সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত হন।
এরপর বিদেশে নানান চড়াই-উতরাই পেরিয়ে যখন দেশে ফেরেন, আমাদের রেমিট্যান্সযোদ্ধাদের
সঙ্গে তখন বিমানবন্দরে যে আচরণ করা হয়, মনে হয় একজন আসামি এসেছেন। আমাদের এই মানবিক
মূল্যবোধ, সামজিক মূল্যবোধগুলো পরিবর্তন আনা দরকার।’
ইসলামী ব্যাংকের
সাবেক চেয়ারম্যান ও ফাস্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের চেয়ারম্যান মো. আব্দুল মান্নান
বলেন, ‘বাংলাদেশের অর্থনীতি মূলত তিনটি ভিতের ওপর দাঁড়িয়ে রয়েছে। সেগুলো হলোÑ রেমিট্যান্স,
গার্মেন্টস ও গ্রামীণ উন্নয়ন।’
তিনি বলেন, ‘প্রবাসীদের
বলা হয় রেমিট্যান্সযোদ্ধা। সত্যিকার অর্থে তারাই আসল যোদ্ধা। আমরা জাতিগতভাবে স্বাধীনতা
লাভ করেছি, তবে অর্থনৈতিকভাবে এখনও স্বাধীনতা অর্জন করতে পারিনি। এজন্য বিভিন্ন সময়ে
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ), বিশ্বব্যাংকসহ অন্যদের কাছে কম্প্রোমাইজ করতে হয়েছে।’
প্রবাসীরা যে
কয় টাকা বেতনে চাকরি করেন তারচেয়ে কয়েকগুণ বেশি অর্থ দেশে পাঠান। তারা ওভারটাইম করে
বাড়তি আয় করেন। বৈদেশিক মুদ্রার পুরোটাই তারা দেশে পাঠান। প্রবাসীরাই অর্থনৈতিক মুক্তিযোদ্ধা।
সেমিনারে সভাপতিত্ব
করেন বাংলাদেশ কুরআন প্রচার ফাউন্ডেশনের প্রধান উপদেষ্টা ও বাংলাদেশ বিমানের সাবেক
উপপ্রধান প্রকৌশলী মো. তামজিদুর রহমান। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন জনসংখ্যা গবেষণা
ও প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটের (নিপোর্ট) প্রাক্তন ইকোনমিক কাউন্সিল ও সৌদি আরবে বাংলাদেশ
দূতাবাসের মিনিস্টার ড. মো. আবুল হাসান।
সেমিনারে বিশেষ
অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেনÑ ইসলামী আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য প্রফেসর ড. মোহাম্দ
শহীদুল ইসলাম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আরবি বিভাগের চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. যুবাইর মুহাম্মদ
এহসানুল হক, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংকের চেয়ারম্যান নূরুল আমীন এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের
সাবেক নির্বাহী পরিচালক আব্দুল আউয়াল সরকার।