আটকে গেল রূপালী ব্যাংকের এমডি নিয়োগ
প্রবা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ২৩ অক্টোবর ২০২৪ ২৩:২১ পিএম
আপডেট : ২৪ অক্টোবর ২০২৪ ১০:৩৪ এএম
মো. আঃ রহিম
সরকারি ১০টি ব্যাংকে ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) নিয়োগের সুপারিশ করেছে অর্থ মন্ত্রণালয়ের বাছাই কমিটি। এর ভিত্তিতে ৯টি ব্যাংকে এমডি নিয়োগ করা হলেও আটকে গেছে রূপালী ব্যাংকের এমডি নিয়োগ। সুপারিশপ্রাপ্ত মো. আঃ রহিমের বিরুদ্ধে শেখ হাসিনা ও শেখ মুজিবকে নিয়ে কবিতা লেখার অভিযোগ আনা হয়েছে। ঋণ খেলাপিদের একটি চক্র এ অভিযোগের ভিত্তিতে তার নিয়োগ আটকে দিয়েছে বলে অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে। তবে আঃ রহিম দাবি করেছেন তিনি এ ধরনের কোন কবিতা লিখেননি। তার কবিতার সঙ্গে বঙ্গবন্ধু এবং শেখ হাসিনার ছবি যুক্ত করে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে। প্রতিদিনের বাংলাদেশের অনুসন্ধানে তার দাবির সত্যতা মিলেছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ‘মাসিক জনপ্রশাসন’ নামে একটি পত্রিকায় আঃ রহিমের লেখা দুটি কবিতা ‘নি:শেষে সৃষ্টি’ এবং ‘বৃক্ষের শিক্ষা’ প্রকাশ হয়। যদিও এই কবিতা দুটি আগেই আঃ রহিমের নিজের বইয়ে ‘সময় কর্ম’ প্রকাশ হয়। ওই পত্রিকাটিতে বইয়ের বিজ্ঞাপনের উদ্দেশ্যে কবিতা দুটি প্রকাশ করা হয়। তবে লেখকের অনুমতি না নিয়েই অপ্রাসঙ্গিকভাবে বঙ্গবন্ধ ও শেখ হাসিনার ছবি যুক্ত করে ছাপা হয়। যার প্রতিবাদ জানিয়েছিলেন লেখক।
প্রচ্ছদ বিকৃতির বিষয়ে ভুল স্বীকার করেছেন মাসিকটির সম্পাদক এবং প্রকাশক নঈম মাশরেকী। তিনি প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, ‘২০২২ সালের আগস্ট সংখ্যায় কবিতা দুটি প্রাকশ হয়। তখন আগস্ট শোকের মাস হিসেবে পালন হত। তাই প্রতিটি পৃষ্ঠায় বঙ্গবন্ধ ও তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীর ছবি ছাপা হয়। এটি আমাদের গ্রাফিক্স বিভাগের ভুল ছিল। আমার অনুপস্থিতির কারণে অনিচ্ছাকৃত ভুলটি হয়ে গেছে। কবিতা দুটিতে বঙ্গবন্ধু এবং তার পরিবার নিয়ে কিছুই নেই। লেখক তখনই প্রতিবাদ জানিয়েছেন। আমরা দুঃখপ্রকাশ করেছি। তিনি চাইলে মামলা করতে পারতেন, কিন্তু আমাদের ভুল স্বীকার করায় তিনি তা করেননি।’
নঈম মাশরেকী বলেন, ‘মন্ত্রণালয় বা অন্য যে কেউ ডাকলে আমরা আমাদের বক্তব্য স্পষ্ট করব। এটা আমাদের ভুল ছিল। লেখকের কোনো দায় নেই। তাছাড়া কবিতা পড়লেই বুঝা যাবে সেখানো বঙ্গবন্ধু নিয়ে কিছু লেখা নেই।’
জানা গেছে, একটি মহল পতিত সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং বঙ্গবন্ধুর ছবি সংযুক্ত কবিতা মন্ত্রণালয়ে জমা দিয়ে আব্দুর রহিমকে আওয়ামী লীগ ট্যাগ দেওয়ার চেষ্ট করছে। এর সঙ্গে রূপালী ব্যাংকের ঋণ খেলাপিদের একটি চক্র জড়িত রয়েছে বলে জানা গেছে। আর ভিত্তিহীন অভিযোগটি তদন্ত এবং যাচাই ছাড়াই আমলে নিয়ে নিয়োগ বন্ধ আটকে দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। অথচ এমডি হিসাবে নিয়োগের জন্য গঠিত বাছাই কমিটি তার সঙ্গে পতিত সরকারের কোনো সংশ্লিষ্টা খুঁজে পায়নি বলে সুপারিশ করেছে। এমনকি তার দীর্ঘ ২৬ বছরের ক্যারিয়ারে আওয়ামী পন্থীদের দ্বারা বঞ্চিতের অভিযোগ রয়েছে। তার যোগ্যতা, কর্মদক্ষতা এবং শক্তিশালী নৈতিকতা সহ্য করতে না পেরে একটি স্বার্থান্বেষী মহল রটনা ছড়াচ্ছে বলে অভিযোগ করেছে রূপালী ব্যাংকের একটি সূত্র।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আঃ রহিম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ভূগোল ও পরিবেশ বিষয়ে প্রথম শ্রেণীতে বিএসসি সম্মান এবং এমএসি সম্পন্ন করেন। তিনি ১৯৯৮ সালে রূপালী ব্যাংকে জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা হিসাবে যোগদান করেন। পরে বিভিন্ন পদে দায়িত্ব শেষে ২০২১ সালে ব্যাংকটির উপ-ব্যবস্থাপক পরিচালক (ডিএমডি) হিসাবে পদোন্নতি পান। পরে বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক এবং বেসিক ব্যাংকে সুনামের সঙ্গে ডিএমডি হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন। বর্তমানে তিনি রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংকে ডিএমডি হিসাবে কর্মরত রয়েছেন।
তার স্থায়ী ঠিকানা মানিকগঞ্জের সিংগাইর উপজেলায়। তিনিসহ তার পরিবারের কেউ আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত না। তবে সততা এবং যোগ্যতায় তিনি আপোষহীন। তিনি ব্যাংকিং ক্যারিয়ারের পাশাপাশি গবেষনাকর্ম এবং কবিতা চর্চায় করেন।
এ বিষয়ে মো. আঃ রহিম প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, ‘শেখ মুজিব এবং শেখ হাসিনাকে নিয়ে আমি দুটি কবিতা লিখেছি মর্মে যে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে সে দুটি কবিতা আমার মূল বইয়েও রয়েছে, কিন্তু আগেই প্রকাশিত মূল বইয়ে কোথাও ওই দুটি কবিতাতে শেখ মুজিব এবং শেখ হাসিনার ছবি নেই এবং তাদেরকে নিয়ে একটি শব্দ ব্যবহৃত হয়নি, এমনকি তাদেরকে ইঙ্গিত করেও কোনো শব্দ নেই।’
এ বিষয়ে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের অতিরিক্ত সচিব অমল কৃষ্ণ মণ্ডলের বরাত দিয়ে একটি পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশ হয়। সেখানে তিনি বলেন, ‘শিগগিরই নতুন কাউকে এমিড নিয়োগ দেওয়া হবে।’
তবে প্রতিদিনের বাংলাদেশের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ বক্তব্য থেকে সরে আসেন। বলেন, ‘কবিতা ইস্যুতে আমরা কোনো সিদ্ধান্ত নেইনি। একটি পত্রিকায় সংবাদ হয়েছে তা আমি দেখেছি। তবে আঃ রহিমকে বাদ দেওয়া হয়নি। অর্থ উপদেষ্টা দেশে না থাকায় দেরি হচ্ছে।’
অন্য ব্যাংকে নিয়োগ দেওয়া হলেও কেবল রূপালীর ক্ষেত্রে কেন দেরি হচ্ছে? জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘দেরি হওয়ার কোনো বিশেষ কারণ নেই। যেকোন কারণেই দেরি হতে পারে।’
তবে এ বিষয়ে আরেক অতিরিক্ত সচিব বদরে মুনির ফেরদৌস জানান, একটা বিশেষ কারণে এ নিয়োগ স্থগিত রাখা হয়েছে। অর্থ উপদেষ্টা দেশে ফিরলে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
জানা গেছে, ঋণ খেলাপিদের চক্রে অর্থমন্ত্রণালয়ে কয়েকজন কর্মকর্তা জড়িত আছেন। তাদের চক্রান্তেই বিষয়টি নিয়ে জল ঘোলা করা হচ্ছে।