× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

মূল্যস্ফীতি রুখতে আরও বাড়লো ঋণের সুদ

প্রবা প্রতিবেদক

প্রকাশ : ২২ অক্টোবর ২০২৪ ২১:৫১ পিএম

আপডেট : ২২ অক্টোবর ২০২৪ ২২:১৩ পিএম

মূল্যস্ফীতি রুখতে আরও বাড়লো ঋণের সুদ

বাজারে টাকার প্রবাহ কমিয়ে ঊর্ধ্ব মূল্যস্ফীতির লাগম টানতে চায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এ লক্ষ্যে ঋণে চড়া সুদ আরোপ করে বিনিয়োগ ঠেকানো এবং আমানতে সুদহার বাড়িয়ে বাজার থেকে টাকা তুলে আনার চেষ্টা করা হচ্ছে। দীর্ঘ সময় ধরে সংকোচনমূলক এ নীতি অনুসরণ করে চলেছে আর্থিক নিয়ন্ত্রণক সংস্থাটি। এতে তেমন কোন সূফল না পেলেও আরও কঠোর মুদ্রানীতি আরোপ করা হয়েছে। প্রবৃদ্ধি, কর্মসংস্থান এবং সার্বিক ব্যবসা বাণিজ্যে বড় ধকল সত্তেও আরও কিছুদিন ধৈর্য ধরতে বলছেন গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর। ফলে গতকাল মঙ্গলবার আরও এক দফা বৃদ্ধি করা হয়েছে নীতি সুদ হার। বাংলাদেশ ব্যাংক এক বিজ্ঞপ্তিতে এই সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, ব্যাংকগুলো যখন কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ধার করে তখন তার সুদহার ঠিক হয় রেপোর মাধ্যমে। আর রিভার্স রেপোর মাধ্যমে ব্যাংকগুলো তাদের উদ্বৃত্ত অর্থ কেন্দ্রীয় ব্যাংকে জমা রাখে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে যে সুদ হারে দীর্ঘমেয়াদি ঋণ দেয়, তাকে বলে ব্যাংক রেট। রেপো রেট বৃদ্ধি করায় ব্যাংকগুলোর অর্থ নেওয়ার খরচ বাড়বে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছ থেকে। নতুন এ সিদ্ধান্তের ফলে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ব্যাংকগুলো যে টাকা ধার করে, তার সুদহার বাড়বে। পাশাপাশি ব্যাংকগুলোতে রাখা আমানত ও ব্যাংকঋণের সুদহারও বেড়ে যাবে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, নীতি সুদহার বা রেপো রেট দশমিক ৫০ শতাংশ পয়েন্ট বাড়িয়ে ৯ দশ‌মিক ৫০ শতাংশ থেকে ১০ শতাংশে পুনর্নির্ধারণ করা হয়েছে। এর ফলে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ব্যাংকগুলো যে টাকা ধার করবে, তার সুদহার বাড়বে। অর্থাৎ বাংলাদেশ ব্যাংক আরও সংকোচনমূলক মুদ্রা সরবরাহের পথে হাঁটছে। এতে বলা হয়, নীতি সুদহার বাড়ানোর এ সিদ্ধান্ত ২৭ অক্টোবর থেকে কার্যকর হবে।

নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, নীতি সুদহার করিডরের ঊর্ধ্বসীমা স্ট্যান্ডিং ল্যান্ডিং ফ্যাসিলিটি (এসএলএফ) সুদহার ১১ শতাংশ থেকে ৫০ বেসিস পয়েন্ট বাড়িয়ে ১১ দশ‌মিক ৫০ শতাংশে পুনর্নির্ধারণ করা হয়েছে। এছাড়া নীতি সুদহার করিডরের নিম্নসীমা স্ট্যান্ডিং ডিপোজিট ফ্যাসিলিটি (এসডিএফ) সুদহার ৮ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৮ দশ‌মিক ৫০ শতাংশে বেসিস পয়েন্ট করা হয়েছে।

এর আগে গত ২৪ সেপ্টেম্বর নীতি সুদহার ৯ শতাংশ থেকে ৫০ বেসিস পয়েন্ট বৃদ্ধি করে সাড়ে ৯ শতাংশ নির্ধারণ করেছিল কেন্দ্রীয় ব্যাংক। তারও আগে গত ২৫ আগস্ট ৫০ বেসিস পয়েন্ট বৃদ্ধ করে নীতি সুদহার সাড়ে ৮ শতাংশ থেকে ৯ শতাংশ করা হয়েছে। এর মাধ্যমে ড. আহসান এইচ মনসুর গত আগস্টে গভর্নর হিসেবে দায়িত্বে নেওয়ার পর তৃতীয়বারের মতো নীতি সুদহার বাড়ানো হলো। এর আগে ২০২৪ সালের জানুয়ারি মাসে নীতিসুদ হার ২৫ বেসিস পয়েন্ট বৃদ্ধি করে ৮ শতাংশ এবং মে মাসে আরও ৫০ বেসিস পয়েন্ট বৃদ্ধি করে নীতি সুদহার করা হয় সাড়ে ৮ শতাংশ। যদিও ২০২৩ সালের নভেম্বরে নীতি সুদহার ছিল ৭ দশমিক ৭৫ শতাংশ এবং একই বছরের জুলাইয়ে নীতি সুদহার ছিল ৬ দশমিক ৫০ শতাংশ।

সরকারি সংস্থা বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্য অনুযায়ী, জুলাই-সেপ্টেম্বর প্রান্তিক শেষে দেশে খাদ্যবহির্ভূত পণ্যের মূল্যস্ফীতির হার ৯ দশমিক ১৫ থেকে বেড়ে ৯ দশমিক ৫ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। পণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে ২০২২ সালের মে মাস থেকে বেশ কয়েকবার সংকোচনমূলক নীতি অনুসরণ করছে বাংলাদেশ ব্যাংক এবং পলিসি রেট বাড়াচ্ছে। নীতি সুদহার বাড়ানোর ফলে ব্যাংক ঋণের সুদ বেড়েছে এবং ঋণ নেওয়া আগের চেয়ে ব্যয়বহুল হয়ে পড়েছে।

অপরদিকে উচ্চ সুদের কারণে ব্যবসা-বাণিজ্যে বড় ধরনের চাপ তৈরি হয়েছে। ব্যবসায়ীরা তাদের ওয়ার্কিং ক্যাপিটাল বা কার্যকরী মূলধন ঘাটতিতে ভুগছেন। উৎপাদন কমিয়ে কিংবা কর্মী ছাটায়ের মাধ্যমে সমস্য সমাধানের চেষ্টা করা হচ্ছে। উভয় ক্ষেত্রেই কর্মসংস্থান কমে যাচ্ছে এবং উৎপাদন খরচ বৃদ্ধি পেয়ে মূল্যস্ফীতি বাড়াতে পরোক্ষ ভুমিকা রাখছে। সংকটকালীন পরিস্তিতি বিবেচনায় ব্যবসায়ীদের উদ্বেগ সত্তেও আরও কিছুদিন ধৈর্য ধরার অনুরোধ করেছেন গভর্নর আহসান এইচ মনসুর। শিগগিরিই পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার আশ্বাস দিয়ে বিশেষ ব্যবস্থায় ঋণ দিয়ে রপ্তানিমুখি ব্যবসা টিকিয়ে রাখার পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা চেম্বারের সভাপতি আশরাফ আহমেদ বলনে, ‘সুদের হার দিনদিন বেড়েই যাচ্ছে। কিন্তু বিনিয়োগের পরিবেশ এখানো স্থিতিশীল না। উচ্চ সুদে ঋণ নিয়ে ব্যবসা করা কঠিন। বিনিয়োগ না বাড়লে উৎপাদন এবং কর্মসংস্থান হ্রাস পাবে। এভাবে চলতে থাকলে একটা সময় পরে বাজারে পণ্য সরবরাহ কমে গিয়ে প্রকান্তরে মূল্যস্ফীতিকে উস্কে দিবে।’

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, গত জুলাইয়ে ব্যাংকগুলোর আমানতের গড় সুদ ছিল ৫ দশমিক ৬৮ শতাংশ, জুনে ৫ দশমিক ৪৯ শতাংশ, মে মাসে ৫ দশমিক ৪২ শতাংশ, এপ্রিলে ৫ দশমিক ৩০ শতাংশ, মার্চে ৫ দশমিক ১৭ শতাংশ, ফেব্রুয়ারিতে ৫ দশমিক শূণ্য ১ শতাংশ ও জানুয়ারিতে ৪ দশমিক ৯২ শতাংশ।

অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশ লিমিটেডের (এবিবি) চেয়ারম্যান সেলিম আর এফ হোসেন জানিয়েছেন, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে না আসা পর্যন্ত নীতি সুদ হার বাড়তে থাকবে বলে জানিয়েছেন গভর্নর। তবে লক্ষ্য পুরণের বিষয়ে কোন সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা নেই কেন্দ্রীয় ব্যাংকের।

তথ্য বলছে, উচ্চ সূদের চাপে ঋণ প্রবাহ কমে যাওয়ায় বেসরকারি খাতে বিনিয়োগের প্রবৃদ্ধি নিম্নমূখী রয়েছে। গত আগস্টে বেসরকারি ঋণের প্রবৃদ্ধি কমে দাঁড়িয়েছে ৯ দশমিক ৮৬ শতাংশে।

এদিকে ব্যাংক খাতের আস্থার সংকটের কারণে কয়েকটি ব্যাংক থেকে আমানত তুলে নিচ্ছেন গ্রাহকরা। এতে বাজারে টাকার প্রবাহ বৃদ্ধি পাচ্ছে। সংকোচনমূখী মুদ্রানীতির সুফল পেতে হলে আস্থাহীনতা দূর করে মানুষের হাতে থাকা অর্থ ব্যাংকে ফিরিয়ে আনতে হবে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক : মোরছালীন বাবলা

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা