প্রবা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ২২ অক্টোবর ২০২৪ ২১:৪০ পিএম
খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতে ৩১৯টি খাদ্যগুদাম সংস্কারের উদ্যোগ নিয়েছে খাদ্য মন্ত্রণালয়। প্রকল্পটির মোট ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ৩০০ কোটি টাকা। এর মধ্যে ৫০০ মেট্রিক টনের গুদাম ২৫০টি, ৬৫০ মেট্রিক টনের ৪টি, ৭৫০ মেট্রিক টনের ১৮টি, ১ হাজার মেট্রিক টনের ৪৫টি, ১ হাজার ৫০০ মেট্রিক টনের ১টি এবং ২ হাজার মেট্রিক টনের ১টি গুদাম সংস্কার করা হবে।
সম্প্রতি পরিকল্পনা কমিশনে প্রস্তাবিত প্রকল্পের ওপর মূল্যায়ন কমিটির সভায় এ বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। এতে সভাপতিত্ব করেন কমিশনের কৃষি, পানিসম্পদ ও পল্লী প্রতিষ্ঠান বিভাগের সদস্য (সচিব) মো. জাহাঙ্গীর আলম।
এর আগে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে ‘সারা দেশে অবস্থিত ক্ষতিগ্রস্ত খাদ্যগুদাম এবং অন্যান্য আনুষঙ্গিক অবকাঠামোর মেরামত ও সংস্কার’ শীর্ষক প্রকল্পটি পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে পাঠায় খাদ্য মন্ত্রণালয়। তখন প্রকল্পটির ব্যয় প্রস্তাব করা হয় ৬৪৫ কোটি ৫০ লাখ টাকা। তবে প্রস্তাবিত প্রকল্পটির ব্যয় নিয়ে আপত্তি জানায় পরিকল্পনা কমিশন।
সে সময় প্রকল্পটিতে একটি গুদামের প্রতি বর্গমিটার সংস্কার ও মেরামতের জন্য ব্যয় প্রস্তাব করা হয় ৪৫ হাজার টাকা। অথচ নতুন গুদাম তৈরি করতেই প্রতি বর্গমিটারে খরচ হয় ২৫ হাজার টাকা। এরপর প্রকল্পটি পরিকল্পনা কমিশন ফেরত পাঠানো হয়। তার পরিপ্রেক্ষিতে বর্তমানে ব্যয় কমিয়ে পুনরায় পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানো হয়েছে। নতুন প্রস্তাবেও প্রকল্পটির কিছু খাতের ব্যয় বেশি বলে মনে হয়েছে কমিশনের কাছে।
প্রকল্পটি গ্রহণের যৌক্তিকতার বিষয়ে খাদ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব ইয়াসমীন পারভীন বলেন, দেশের মানুষের জন্য সব সময় খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সরকারের অন্যতম দায়িত্ব। দেশের জনসংখ্যা বৃদ্ধি ও খাদ্য উৎপাদনের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে খাদ্য সংকটের সময় খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতকল্পে ভবিষ্যতে বাংলাদেশ সরকারের অধিক পরিমাণে খাদ্য মজুদ সক্ষমতার প্রয়োজন হবে। বর্তমানে খাদ্য মন্ত্রণালয়ের আওতায় ৪৭৬টি উপজেলায় ৬৩৫টি স্থানীয় সরবরাহ ডিপো (এলএসডি), বিভিন্ন কৌশলগত স্থানে ১২টি কেন্দ্রীয় সংরক্ষণাগার (সিএসডি), সমুদ্র ও নদীবন্দরকেন্দ্রিক ৬টি সাইলো এবং বগুড়া জেলার সান্তাহারে ১টি আধুনিক খাদ্য সংরক্ষণাগার রয়েছে। এগুলোর অধিকাংশই ৯০ দশকে নির্মিত হওয়ায় বেশিরভাগই জরাজীর্ণ হয়ে পড়েছে। এ জন্য এগুলোর সংস্কার প্রয়োজন।
সভায় এ প্রসঙ্গে কৃষি, পানিসম্পদ ও পল্লী প্রতিষ্ঠান বিভাগের সদস্য (সচিব) মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘৩১৯টি খাদ্যগুদামের তালিকা অনুযায়ী যে ডিপিপি প্রস্তাব করা হয়েছে তা অধিকতর যাচাই-বাছাই করা আবশ্যক।’
এ বিষয়ে খাদ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. আব্দুল খালেক বলেন, ‘ডিপিপিতে প্রস্তাবিত ৩১৯টি খাদ্যগুদামের মধ্যে অধিক ক্ষতিগ্রস্ত বিবেচনা করে প্রয়োজনীয় সংখ্যক খাদ্যগুদাম পুনরায় সরেজমিনে যাচাই-বাছাই করা হবে।’
কৃষি, পানিসম্পদ ও পল্লী প্রতিষ্ঠান বিভাগের প্রধান মো. ছায়েদুজ্জামান বলেন, ‘প্রকল্পের পিডি ও ডিপিডির জন্য ২টি যানবাহন ভাড়া খাতে ১ কোটি ৬৯ লাখ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে, যা বেশি বলে মনে হচ্ছে।’
এ প্রসঙ্গে খাদ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক জানান, যানবাহন ভাড়া যৌক্তিক পর্যায়ে পুনর্নির্ধারণ করে ডিপিপি সংশোধন করা হবে। প্রস্তাবিত প্রকল্পের মাধ্যমে খাদ্যগুদামসমূহের প্রয়োজনীয় মেরামত ও সংস্কারের পর খাদ্য অধিদপ্তরের নিজস্ব জনবল দ্বারা নিয়মিতভাবে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম চলমান রাখা হবে।
সভায় কৃষি, পানিসম্পদ ও পল্লী প্রতিষ্ঠান বিভাগের খাদ্য ও সার-মনিটরিং অনুবিভাগের কর্মকর্তারা জানান, বিভিন্ন ধারণক্ষমতার ৩১৯টি খাদ্যগুদাম মেরামত করতে যে ব্যয় ধরা হয়েছে তা আরও যুক্তিযুক্ত করা প্রয়োজন। এ ছাড়া ১ লাখ ৯০ হাজার ৬৪ বর্গমিটার অভ্যন্তরীণ আরসিসি ও এইচবিবি রাজা, ফ্লাইং ইয়ার্ড ও আরসিসি জেটি সংস্কার এবং ৩৫ হাজার ৮৩৭ মিটার সীমানাপ্রাচীর, টোওয়াল ও রিটেনিং ওয়াল মেরামত কার্যক্রম এইচবিবি না করে আরসিসি করা যায় কি না সে বিষয়টি বিবেচনা করা যেতে পারে।
এ প্রসঙ্গে খাদ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব ইয়াসমীন পারভীন জানান, বিভিন্ন ধারণক্ষমতার ৩১৯টি খাদ্যগুদাম মেরামত বাবদ যে প্রাক্কলন প্রস্তুত করা হয়েছে তা বর্তমান প্রেক্ষাপট বিবেচনায় অধিকতর যুক্তিযুক্ত করে ডিপিপি সংশোধন করা হবে। অভ্যন্তরীণ সংযোগ রাস্তাসমূহ এইচবিবিকরণের পরিবর্তে আরসিসিকরণের বিষয়টি বিবেচনা করা হবে।
কৃষি, পানিসম্পদ ও পল্লী প্রতিষ্ঠান বিভাগের খাদ্য ও সার-মনিটরিং অনুবিভাগের সিনিয়র সহকারী প্রধান খাদ্য মন্ত্রণালয়ের পরিচালন বাজেটের আওতায় প্রতি বছর খাদ্যগুদামসমূহ সংস্কার ও মেরামত কার্যক্রম বাস্তবায়ন করা যায় কি না সে বিষয়ে জানতে চান।
এ বিষয়ে খাদ্য অধিদপ্তরের নির্মাণ ও রক্ষণাবেক্ষণ ইউনিটের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী আবু বকর সিদ্দিকী বলেন, ‘বছরভিত্তিক মেরামত বা সংস্কার কাজ করা হলে একই অর্থবছরে একটি খাদ্যগুদামের সকল প্রকার মেরামত বা সংস্কার কাজ করা সম্ভব হয় না। এ ছাড়া একই খাদ্যগুদামে প্রতি বছর কাজ করলে অডিট আপত্তির সম্ভাবনা থাকে।’ বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের সহকারী পরিচালক তৈয়াবুর রহমান মোল্যা বলেন, ‘প্রস্তাবিত প্রকল্পটি প্রয়োজনীয়তা ও চাহিদাভিত্তিক হওয়ায় বর্তমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতি বিবেচনায় প্রাক্কলিত ব্যয় আনুপাতিক হারে হ্রাস করে প্রকল্প ব্যয় পুনর্নির্ধারণ করা প্রয়োজন।’