গোলটেবিল বৈঠকে বক্তারা
প্রবা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ১৭ অক্টোবর ২০২৪ ২১:২৮ পিএম
বাংলাদেশে সাম্প্রতিক রাজনৈতিক পট-পরিবর্তনের সুবাদে জনবান্ধব নীতি প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের সুবর্ণ সুযোগ তৈরি হয়েছে। জনস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর পণ্য সিগারেটের খুচরা মূল্য বাড়িয়ে ঐ বর্ধিত মূল্যের ওপর কার্যকর করারোপের লক্ষ্যে এই সুযোগকে কাজে লাগাতে হবে। কেননা দেশের নাগরিকদের, বিশেষ করে কমবয়সীদের সিগারেট ব্যবহারের ফলে জনস্বাস্থ্য যেমন হুমকির মুখে পড়ছে তেমনি সামষ্টিক অর্থনীতিও দীর্ঘমেয়াদি ঝুঁকির মুখে পড়ছে।
বৃহস্পতিবার (১৭ অক্টোবর) রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা উন্নয়ন সমন্বয়ের আয়োজনে ‘জনস্বাস্থ্য ও অর্থনৈতিক সুরক্ষায় সিগারেটে কার্যকর করারোপ’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে এমন মতামত জানান বিশিষ্ট নাগরিকরা। প্রখ্যাত অর্থনীতিবিদ ও উন্নয়ন সমন্বয়ের ইমেরিটাস ফেলো ড. এ. কে. এনামুল হকের সভাপতিত্বে গোলটেবিল বৈঠকে আলোচক হিসেবে অংশ নেন অর্থনীতিবিদ, গবেষক, স্বাস্থ্যসেবা বিশেষজ্ঞ, বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক, উন্নয়ন সংস্থার প্রতিনিধি-সহ বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের শিক্ষার্থীরা।
বৈঠকে স্বাস্থ্যসেবা বিশেষজ্ঞদের মধ্যে অংশ নেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ড. হালিদা হানুম আখতার, আইইডিসিআর-এর সাবেক প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. মুশতাক হোসেন, বিএসএমএমইউ-এর অধ্যাপক ডা. মো. আতিকুল হক, এবং সহযোগি অধ্যাপক ডা. খালেকুজ্জামান । নাগরিক সংগঠনের প্রতিনিধি হিসেবে আলোচনা করেন বাপা-এর যুগ্ম সম্পাদক মো. আমিনুর রসুল, এবং ন্যাশনাল চর অ্যালায়েন্সের সদস্য সচিব জাহিদ রহমান। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন উন্নয়ন সমন্বয়ের হেড অব প্রোগ্রামস শাহীন উল আলম।
আসন্ন ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেট ঘোষণার আগে যথেষ্ট সময় হাতে রেখেই সিগারেটে কার্যকর করারোপের জন্য নাগরিক সংগঠনগুলোর সঙ্গে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড-সহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষগুলোর মতবিনিময় শুরু করার ওপর জোর দেন মো. আমিনুর রসুল।
ডা. খালেকুজ্জামান বলেন যে, কিশোর-তরুণরা যেহেতু প্রধানত নিম্ন স্তরের সিগারেট ব্যবহার করে থাকে, তাই তাদেরকে বিরত রাখতে নিম্ন স্তরের সিগারেটের ওপর প্রযোজ্য সম্পূরক শুল্ক অন্য উচ্চতর স্তরের সিগারেটের সমান করতে হবে।
সাম্প্রতিক অর্থবছরগুলোতে মাথাপিছু আয়বৃদ্ধি এবং মূল্যস্ফীতির সঙ্গে সঙ্গতি রেখে সিগারেটের দাম না বাড়ানোয় মারাত্মক ক্ষতিকারক এই পণ্যগুলো সহজলভ্যই থেকে গেছে। তাই আগামী ২০২৫-২৬ অর্থবছরে এই গতানুগতিক ধারা থেকে বেরিয়ে আসার দাবি জানিয়েছেন গোলটেবিল বৈঠকের আলোচকবৃন্দ। সাম্প্রতিককালে সিগারেটে কার্যকর করারোপ না করায় সরকার প্রতি বছর গড়ে ৬ হাজার ৬০০ কোটি টাকা রাজস্ব হারিয়েছে উল্লেখ করে আগামীতে সিগারেটে কার্যকর করারোপের মাধ্যমে বাড়তি রাজস্ব আদায়ের সম্ভাবনার কথা বলেন ড. এ. কে. এনামুল হক।
বৈঠক শেষে স্বল্পতম সময়ের মধ্যে সিগারেটের কার্যকর করারোপ বিষয়ক দাবি ও পরামর্শগুলো লিখিত আকারে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ও কর্মকর্তাদের কাছে পৌঁছানো হবে বলে জানান আলোচনায় অংশ নেওয়া বিশিষ্ট জনেরা। এছাড়া তরুণ প্রজন্মের সুরক্ষায় ই-সিগারেট নিষিদ্ধের দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ তামাক বিরোধী জোট।
এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে সংস্থাটি জানায়, স্কুল কলেজের কিশোর ও তরুণদের মধ্যে এই ক্ষতিকর পণ্যটির ব্যবহার উদ্বেগজনক হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিশ্বের ৩২টি দেশ ইতিমধ্যে ই-সিগারেট বিক্রয় নিষিদ্ধ করেছে। জনস্বাস্থ্যকে প্রাধান্য দিয়ে বাংলাদেশেও এটি নিষিদ্ধ করা প্রয়োজন। বর্তমানে ই-সিগারেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা ২ শতাংশের কম হলেও কিশোর ও তরুণদের মধ্যে এর আসক্তি ও জনপ্রিয়তা খুব দ্রুত বাড়ছে।