রেমিট্যান্স
প্রবা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ১৩ অক্টোবর ২০২৪ ২০:৩১ পিএম
মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস (এমএফএস) বা মোবাইল ব্যাংকের মাধ্যমে রেমিট্যান্স প্রবাহ দিন দিন বাড়ছে। গত আগস্টে এই মাধ্যমে দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ অঙ্কের প্রবাসী আয় এসেছে। আলোচ্য মাসে হাজার কোটি টাকার মাইলফলক অতিক্রম করেছে। যা ছিল আগের মাসের চেয়ে প্রায় ৫৪ শতাংশ বেশি এবং এক বছরের ব্যবধানে বেড়েছে ১১৩ শতাংশ।
বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত আগস্টে এক হাজার ১০১ কোটি ৮১ লাখ টাকা রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। মাস-ভিত্তিতে আসা রেমিট্যান্স হিসাবে এটি এ যাবৎকালের সর্বোচ্চ। এছাড়া আগের মাস জুলাই থেকে প্রায় ৪০০ কোটি টাকা বেশি। জুলাইয়ে মোবাইল ব্যাংকের মাধ্যমে রেমিট্যান্স এসেছিল ৭১৪ কোটি ৪৮ লাখ টাকা।
অপরদিকে ২০২৩ সালের আগস্টে এমএফএসের মাধ্যমে রেমিট্যান্স এসেছে ৫১৫ কোটি ৪০ লাখ টাকা। সে হিসাবে বছরের ব্যবধানে প্রবৃদ্ধি হয়েছে প্রায় ৬০০ কোটি বা ১১৩ শতাংশ।
তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে রিজার্ভ আছে প্রায় ২০ বিলিয়ন ডলার। ২০২১ সালের আগস্টে ছিল রেকর্ড ৪০ দশমিক সাত বিলিয়ন ডলার। সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, গত আগস্টে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর ব্যাংকিং কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত হওয়া, এটিএম বুথে টাকা কম থাকার কারণে এমএফএসের মাধ্যমে রেমিট্যান্স লেনদেন বেশি হয়েছে। এ ছাড়াও, প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়ানো, ব্যাংকের মাধ্যমে আসা রেমিট্যান্সের ওপর আড়াই শতাংশ সরকারি প্রণোদনা ও এমএফএস সেবা প্রতিষ্ঠানগুলোর নানান সুবিধার কারণে রেমিট্যান্স বেড়েছে। বর্তমানে দেশে বিকাশ, নগদ ও রকেটসহ অন্তত ১৩ এমএফএস প্রতিষ্ঠান আছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, এমএফএসের মাধ্যমে চলতি বছরের জানুয়ারিতে রেমিট্যান্স এসেছে ৫৯৩ কোটি ডলার। এছাড়া ফেব্রুয়ারিতে ৫৯১ কোটি, মার্চে ৮১৩ কোটি, এপ্রিলে ৮৫৬ কোটি, মে মাসে ৭২৩ কোটি এবং জুনে ৯৪৯ কোটি টাকা রেমিট্যান্স এসেছে। অর্থাৎ মোবাইল ব্যাংকের মাধ্যমে রেমিট্যান্স প্রবাহ ক্রমাগত বাড়ছে।
এদিকে গত ৫ আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের মুখে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ার পর রেমিট্যান্স বেড়েছে। গত আগস্টে এমএফএস-সহ সব আনুষ্ঠানিক চ্যানেলের মাধ্যমে মোট রেমিট্যান্স প্রায় ৩৯ শতাংশ বেড়ে যায়। ওই মাসে আসে ২২২ কোটি ডলার।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, গত সেপ্টেম্বরে রেমিট্যান্স আরও বেড়েছে। আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় তা ৮০ দশমিক ২৮ শতাংশ বেড়ে হয়েছে দুই দশমিক ৪০ বিলিয়ন ডলার। এ ছাড়াও, আগস্টের তুলনায় সেপ্টেম্বরে আট দশমিক ১২ শতাংশ বেশি রেমিট্যান্স এসেছে।
সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, সহজলভ্যতা ও নগদ টাকার সুবিধা ছাড়াও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নীতি ও এমএফএস প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রচেষ্টা প্রবাসীদের আনুষ্ঠানিক চ্যানেল ব্যবহারকে উৎসাহিত করছে। পাশাপাশি, বাংলাদেশ ব্যাংকের কিছু নীতিগত সিদ্ধান্ত যেমন—ব্যক্তিগত এমএফএস অ্যাকাউন্ট থেকে রেমিট্যান্স পাঠানোর ক্ষেত্রে একক লেনদেনের সর্বোচ্চ সীমা এক লাখ ২৫ হাজার টাকা থেকে বাড়িয়ে আড়াই লাখ টাকা করা—রেমিট্যান্স বেশি আসার পেছনে কাজ করছে বলে মনে করেন ব্যাংকাররা।
দেশের অন্যতম এমএফএস প্রতিষ্ঠান বিকাশের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এমএফএস প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রযুক্তিগত ও বিতরণমূলক সহায়তায় প্রবাসীরা ডিজিটাল চ্যানেলে সফলভাবে রেমিট্যান্স পাঠাতে আগ্রহী হচ্ছেন। ১৩০টিরও বেশি দেশ থেকে টাকা পাঠানো ও ব্যাংকের মাধ্যমে ঝামেলা ছাড়াই বিদেশে টাকা পাঠানোর সুযোগ পাচ্ছেন বিকাশের গ্রাহকেরা। তাছাড়া প্রবাসীদের পরিবার রেমিট্যান্সের টাকা দিয়ে তাদের বিকাশ একাউন্টের মাধ্যমে পণ্য ও সেবা কেনা, ইউটিলিটি বিল, শিক্ষা ও সরকারি ফি পরিশোধসহ অন্যান্য সেবা নিতে পারছেন।
জানা গেছে, সুবিধাজনক, তাৎক্ষণিক ও নিরাপদে রেমিট্যান্স পাঠানোর পাশাপাশি বিকাশ টাকা তোলার খরচ কমিয়েছে, দেশের ১৯ ব্যাংকের প্রায় আড়াই হাজার এটিএম বুথ থেকে প্রতি হাজারে কমপক্ষে সাত টাকায় রেমিট্যান্সের টাকা তোলা যাচ্ছে। স্বাভাবিক লেনদেনের ক্ষেত্রে ক্যাশ-আউট করতে ১৮ টা ৫০ পয়সা পর্যন্ত খরচ হয়। সে হিসাবে রেমিট্যান্স সংগ্রাহকরা কম বড় সুবিধা পাচ্ছেন।
অপর এমএফএস প্রতিষ্ঠান নগদের মিডিয়া অ্যান্ড কমিউনিকেশনস বিভাগের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, বেশি রেমিট্যান্স আনার চেষ্টা হিসেবে বিদেশি প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে প্রতিষ্ঠানটি। বর্তমানে ২০০-র বেশি দেশ থেকে নগদ'র মাধ্যমে রেমিট্যান্স পাঠানো যাচ্ছে।'