প্রবা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ০৭ অক্টোবর ২০২৪ ১৯:৫৫ পিএম
আপডেট : ০৭ অক্টোবর ২০২৪ ২১:১১ পিএম
সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক লিমিটেডের প্রধান কার্যালয়ে সোমবার আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দেন ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. ফোরকানউল্লাহ। প্রবা ফটো
সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক লিমিটেডের (এসআইবিএল) ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. ফোরকানউল্লাহ বলেছেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গ্যারান্টির মাধ্যমে তারল্য সহায়তা পেয়ে ব্যাংকে লেনদেনে গতি এসেছে। তবে গ্রাহকদের পুরো টাকা না দিতে পারলেও ছোট ছোট পরিমাণ চেক তৎক্ষণাৎ পরিশোধ করতে পারছে ব্যাংক। একই সঙ্গে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মাধ্যমে সরকার পতনের পর থেকে সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত ৭৯৪ কোটি টাকা বকেয়া এবং খেলাপি ঋণ আদায় করেছে ব্যাংকটি। আগামী ১০ থেকে ১৫ দিনের মধ্যে এসআইবিএলের ওপর গ্রাহকের পূর্ণ আস্থা ফিরে আসবে।
সোমবার ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে
এসব তথ্য জানায় ব্যাংকটির ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ।
ব্যাংকের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মো. সাদিক ইসলাম জানান, ১৯৯৫ সালে যাত্রা শুরু করা এই ব্যাংক দেশের প্রথম সারির ব্যাংকে পরিণত হয়েছে। কিন্তু সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক যখন সাফল্যের চূড়ার অভিমুখে এগিয়ে চলছিল দ্রুতগতিতে, ঠিক তখনই দুঃশাসন ও দুর্বৃত্তায়নের কবলে পড়ে। ২০১৭ সালে এস আলম গ্রুপ জোরপূর্বক দখল করে নেয় ব্যাংকটিকে। এস আলমের কবলে পড়ে ব্যাংকের আর্থিক ভিত্তি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। গত ৮ বছরে ব্যাংকটির মজবুত অর্থনৈতিক ভিত্তি যেমন দুর্বল হয়েছে তেমনি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ব্যাংকের গ্রাহক, কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ সংশ্লিষ্ট সবাই।
তিনি বলেন, ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে দেশ যখন স্বৈরাচারী শাসনমুক্ত
হয়ে পুনরায় স্বাধীনতার স্বাদ পেল, তখন দুর্বৃত্তের কালো থাবামুক্ত হলো আমাদের প্রাণপ্রিয়
প্রতিষ্ঠান সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে ব্যাংকিং খাত পড়ে যায় সাময়িক
সংকটে।
অনুষ্ঠানে জানানো হয়, বাংলাদেশের ৯টি ব্যাংক তারল্য সমস্যায় ভুগছে।
বাংলাদেশ ব্যাংক এক্ষেত্রে কোনোরকম টাকা না ছাপিয়ে ভিন্ন পদ্ধতিতে গ্যারান্টির মাধ্যমে
তারল্য সংকটের সমাধান করেছে, যা নিঃসন্দেহে প্রশংসার দাবি রাখে। ইতোমধ্যে বাংলাদেশ
ব্যাংকের গ্যারান্টির বিপরীতে ৪টি ব্যাংক থেকে ৯০০ কোটি টাকার তারল্যের প্রতিশ্রুতি
পেয়েছে এসআইবিএল। এর মধ্যে ৪৫০ কোটি টাকা তারল্য বা ডিপোজিট পাওয়া গেছে। এ ছাড়া আরও
কয়েকটি ব্যাংক ইতোমধ্যে তারল্য দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক বিভিন্ন
ব্যাংক থেকে প্রাপ্ত তারল্য ব্যবস্থাপনায় স্ট্র্যাটেজিক পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। প্রাথমিকভাবে
১৮টি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সাময়িকভাবে স্থগিত হওয়া কালেকশন হিসাবগুলো চালু করা হয়েছে।
যেমনÑ ডেসকো, তিতাস, পল্লী বিদ্যুৎ, ওয়াসা, বিটিসিএল, বিআরটিএ, ডিপিডিসি, বাখরাবাদ,
কর্ণফুলী ইত্যাদি।
ছোট অঙ্কের পে-অর্ডার ও ক্লিয়ারিং চেক অনার করা হচ্ছে। কিছুদিনের জন্য একটি নির্ধারিত অঙ্কের টাকা ওভার দ্য কাউন্টারে নগদ উত্তোলনের সুযোগ দেওয়া হবে। এর মাধ্যমে গ্রাহকদের মাঝে আস্থা ফিরবে।
রেমিট্যান্স গ্রাহকদের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে। ইতঃপূর্বে
যেসব রেমিট্যান্স গ্রাহক তাদের রেমিট্যান্সের কষ্টার্জিত টাকা এসআইবিএলের মাধ্যমে পাঠাতেন,
তাদের সঙ্গে পুনরায় যোগাযোগ করা হচ্ছে। যাতে তারা আগের মতো রেমিট্যান্স পাঠানো অব্যাহত
রাখেন। এটিএম ও এনপিএসবি সেবা গ্রাহকরা যাতে পুনরায় নিরবচ্ছিন্নভাবে পান, সে বিষয়টি
অগ্রাধিকার দিয়ে চালুর ব্যবস্থা করা হয়েছে।
চেয়ারম্যান বলেন, তারল্য প্রবাহ বাড়ানোর একটি উত্তম উপায় হলো রিকভারি।
আর রিকভারির ক্ষেত্রে আমাদের বৃহৎ কর্মপরিকল্পনা রয়েছে। ইতোমধ্যে ৫ আগস্ট থেকে ৩০ সেপ্টেম্বর
পর্যন্ত আমরা ৭৯৪ কোটি টাকা ওভারডিউ ও ক্লাসিফায়েড বিনিয়োগ থেকে রিকভারি করেছি। এই
দুঃসময়েও আমাদের এই রিকভারির পরিমাণ অত্যন্ত আশাব্যঞ্জক।
এ ছাড়া আমাদের পরিকল্পনা হলো ক্লাসিফায়েড ও অবলোপনকৃত বিনিয়োগ থেকে
আদায়ের কার্যক্রমকে আরও জোরদার করা। চলমান মামলাগুলো গতিশীল করা। স্থগিত হয়ে থাকা মামলাগুলোকে
পুনরায় সচল করা। এ ছাড়া ইচ্ছকৃত খেলাপিদের চিহ্নিত করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা
এবং ক্ষেত্রভেদে তাদের নামে নতুন মামলা দেওয়া।
এস আলম গ্রুপ নামে ও বেনামে এসআইবিএল থেকে যে ঋণ নিয়েছে এর মধ্যে কিছু প্রকল্প চলমান আছে, যা থেকে টাকা আদায় সম্ভব এবং সেগুলো আদায়ের ব্যাপারে আমরা অত্যন্ত সোচ্চার আছি। উল্লেখ্য, এই গ্রুপের প্রায় ২৫০ কোটি টাকার এমটিডিআর (মেয়াদি আমানত) হিসাব আমরা ইতোমধ্যেই স্থগিত করে রেখেছি।
এলসি খোলাসহ বিভিন্ন ব্যাংকিং কার্যক্রমে বাংলাদেশ ব্যাংক আমাদের
ওপর কিছু সীমাবদ্ধতা আরোপ করেছিল, যা পর্যায়ক্রমে তুলে নেওয়া হচ্ছে। এতে করে আমাদের
ব্যাংকিং কার্যক্রম স্বাভাবিক হতে চলেছে। তবে আশার বিষয় হলো, এস আলম গ্রুপ কর্তৃক দখলকৃত
ও পরিচালিত অন্যান্য ব্যাংকের চেয়ে আমরা কিছুটা শক্তিশালী অবস্থানে রয়েছি।
তিনি বলেন, আমরা গ্রাহকদের নিশ্চিত করতে চেই, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকে
গ্রাহকদের আমানত সম্পূর্ণ সুরক্ষিত থাকবে। আপনাদের ধৈর্য ও ভালোবাসার প্রতিদান আমরা
দেব আমানতের নিরাপত্তা ও সর্বোত্তম সেবা প্রদানের মাধ্যমে। আমরা আশা করি, নতুন বাংলাদেশে
নতুনভাবে উজ্জ্বল ভবিষ্যতের দিকে এগিয়ে যাব আপনাদের সঙ্গে নিয়ে। সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক
উৎকর্ষের পথে এগিয়ে যাবে, দরদি সমাজ গঠনে ভূমিকা রেখে নিজস্ব লক্ষ্য অর্জন করবে।