× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

অনিয়ম

পুঁজিবাজারে এখন খেলছে কারা!

আহমেদ ফেরদাউস খান

প্রকাশ : ০৭ অক্টোবর ২০২৪ ০৯:৪৯ এএম

আপডেট : ০৭ অক্টোবর ২০২৪ ১২:৩৪ পিএম

প্রবা ফটো

প্রবা ফটো

‘শর্ষের মাঝে ভূত থাকলে আমি কী করতে পারি’, এভাবেই আদালতকে বলেছিলেন ২০১০ সালে পুঁজিবাজারের কারসাজি নিয়ে গঠিত তদন্ত কমিটির প্রধান প্রয়াত খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ। তার করা তদন্তে অভিযুক্ত হিসেবে উঠে আসে বেক্সিমকো গ্রুপের স্বত্বাধিকারী সালমান এফ রহমানসহ সরকারের শীর্ষ কর্মকর্তাদের নাম। তবে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা না নেওয়ায় পুঁজিবাজারে প্রতিনিয়ত কারসাজির ঘটনা ঘটেছে বলেও মন্তব্য করেছিলেন তিনি। গত সপ্তাহে বেক্সিমকোর শেয়ার কারসাজির কারণে চার ব্যক্তি ও পাঁচ প্রতিষ্ঠানকে ৪২৮ কোটি টাকা জরিমানা করায় খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদের বক্তব্য ঠিকঠাক মিলে গেল। কেননা কারসাজির সঙ্গে যুক্ত উল্লেখিত ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানগুলো বেক্সিমকো গ্রুপেরই সুবিধাভোগী।

তবে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন কারসাজিতে অভিযুক্ত অধিকাংশ খেলোয়াড়। তাদের মূল হোতা সালমান এফ রহমান এখন কারাগারে। এরপরও পুঁজিবাজারে টানা দরপতন হচ্ছে। সঙ্গত কারণেই প্রশ্ন উঠেছে, এখন তাহলে পুঁজিবাজার নিয়ে খেলছে কারা? কোন গোষ্ঠীর তৎপরতায় দুর্বল কোম্পানির শেয়ারের দাম ওঠানামা করছে।

এদিকে টানা দরপতনে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীরা। প্রতিনিয়ত পুঁজি হারানোর প্রতিবাদে তারা বিক্ষোভ সমাবেশ এবং মানববন্ধন করছেন। তবে এবার তাদের অভিযোগের তীর পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজি অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) দিকে।       

দীর্ঘকাল ধরেই পুঁজিবাজারে নানা ধরনের কারসাজি ও অনিয়মের ঘটনা ঘটছে। ১৯৯৬ ও ২০১০ সালে বড় দরপতনের পর পুঁজিবাজারে আস্থার সংকট দেখা দেয়। দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারীদের অধিকাংশই এখন পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করতে সাহস করছেন না। তারা মনে করছেন, সেখানে বিনিয়োগ করলেই কারসাজির মাধ্যমে তাদের টাকা লুটে নেওয়া হবে। আবার ব্যাংক খাতেও এক ধরনের আস্থাহীনতা ও অবিশ্বাসের সৃষ্টি হয়েছে। সিন্ডিকেটের মাধ্যমে বেশ কয়েকটি ব্যাংকে লুটপাট হওয়ায় সেখানেও চরম বিশৃঙ্খলতা বিরাজ করছে।

বিষয়টি নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে বিনিয়োগকারী ও ব্রোকারদের মধ্যে। বিনিয়োগকারীরা বলছেন, এখনও সেই পুরোনো খেলোয়াড়রাই পুঁজিবাজার নিয়ে খেলছেন। তাদের নিয়ন্ত্রণ করতে না পারায় বিএসইসির নতুন চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদের পদত্যাগও দাবি করেন তারা। 

বাংলাদেশ পুঁজিবাজার বিনিয়োগকারী ঐক্য পরিষদের অর্থ সম্পাদক মো. সাজ্জাদুর রহমান বলেন, ‘পুঁজিবাজারে সদস্যভুক্ত মার্চেন্ট ব্যাংকগুলোকে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে অংশগ্রহণ থেকে বিরত রাখতে হবে। পুঁজিবাজারকে অব্যাহত দরপতন থেকে রক্ষায় এ মুহূর্তে বিএসইসি চেয়ারম্যানকে পদত্যাগ করতে হবে।’ 

তিনি বলেন, ‘সরকারের কাছে আমাদের বিনীত আবেদন, দেশের দুই স্টক এক্সচেঞ্জকে বাদ দিয়ে একটি ন্যাশনাল স্টক এক্সচেঞ্জ গঠন করতে হবে। অব্যাহত দরপতনে আমাদের পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেছে। সরকারের কাছে অনুরোধ অবিলম্বে পুঁজিবাজারে স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনুন।’ 

অন্যদিকে ব্রোকাররা বলছেন, কারসাজি যারা করছে, তাদের শাস্তি হওয়াটা জরুরি ছিল। এ দাবি আমাদের পুরোনো। আগের কমিশন করেনি, বর্তমান নতুন কমিশন তাদের শাস্তি দিয়ে সঠিক কাজ করেছে। এছাড়া বিনিয়োগকারীরা দুর্বল কোম্পানির শেয়ারে বিনিয়োগ করছে বলে মার্কেট পড়ে যাচ্ছে। পলিসি রেট বৃদ্ধি পাওয়ার প্রভাবও রয়েছে বলে তারা জানিয়েছেন। 

মিডওয়ে সিকিউরিটিজ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আশিকুর রহমান প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, ‘বেশ কয়েক বছর ধরে পুঁজিবাজারে অনিয়ম হয়ে আসছে। এখন নতুন কমিশন অনেক পলিসি নেওয়ার চেষ্টা করছে। গত বুধবারের কথা যদি বলি, তাহলে তার আগের দিন কারসাজি যারা করেছে, তাদের সাড়ে ৪০০ কোটি টাকা জরিমানা করেছে; যা আমাদের পুঁজিবাজারের ইতিহাসে কখনও হয়নি।’ 

তিনি বলেন, ‘এখন আমরা যারা মার্কেট অপারেটর আছি, আমরা পজিটিভ হিসেবে দেখছি। কারণ আমরা বিষয়টি নিয়ে আগে বলছি যে, ৩০০ কোটি টাকার কারসাজি করলে জরিমানা হয় মাত্র ৫ লাখ টাকা। এতে করে তারা আরও বেশি কারসাজি করার সাহস পায়। এখন সমস্যা হচ্ছে, আমাদের বিনিয়োগকারীরা কয়েক বছর ধরে কারসাজি দেখতে দেখতে তারা মনে করছে বড় বিনিয়োগকারীদের জরিমানা করলে মার্কেট পড়ে যাবে। এটা একটা ভুল ধারণা। আপনি যদি ভালো শেয়ারে বিনিয়োগ করেন, তখন মার্কেট পড়বে না। মার্কেটে ভালো শেয়ারগুলোর কোনো পরিবর্তন হয়নি। দাম পড়েছে খারাপ শেয়ারের।’

যারা এখন জরিমানা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন এবং বিএসইসি চেয়ারম্যানের পদত্যাগ দাবি করছেন, তারা ভুল করছেন উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, ‘তারা যদি ভালো শেয়ারে বিনিয়োগ করতেন, তাহলে তাদের এত চিন্তা করতে হতো না। খারাপ শেয়ারে যারা বিনিয়োগ করেছেন, তাদের উচিত এখন ভালো শেয়ারে বিনিয়োগ করা।’

অন্যদিকে বিশ্লেষকরা বলছেন, পুঁজিবাজারের বর্তমান দুর্দশার জন্য বিএসইসিরও দায় রয়েছে। বাজারে একটি বিষয় খেয়াল করা দরকার গত দুই বছর ধরে কোনো ভালো শেয়ারের দাম বাড়েনি। সব মন্দ শেয়ারের দাম বাড়ানো হয়েছে। অনেক মন্দ শেয়ারের দাম তিন-চার গুণ বাড়ানো হয়েছে।

পুঁজিবাজারে বর্তমান পরিস্থিতিতে করণীয় পদক্ষেপ নিয়ে জানতে চাইলে গবেষণা ও নীতিসহায়ক সংস্থা ইনস্টিটিউট ফর ইনক্লুসিভ ফাইন্যান্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (আইএনএফ) নির্বাহী পরিচালক ড. মোস্তফা কে মুজেরী প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, ‘পুঁজিবাজারে এখন অনেক বেশি কারসাজি হয়। পুঁজিবাজারকে এখন পারফেক্টলি অপারেট করা উচিত। বিভিন্ন মহল অনৈতিকভাবে এই কারসাজির কারিগর। এই কারসাজিগুলো বন্ধ করতে হবে। তাদের শাস্তি নিশ্চিত করে পুঁজিবাজারকে বিনিয়োগকারীদের আস্থায় নিয়ে আসা উচিত। পুঁজিবাজারে এখন আস্থার সংকট চলছে।’ 

তিনি আরও বলেন, কারা কারসাজি করছে, এটা বিএসইসি ভালো করেই জানে। তারা চাইলেই এটা বন্ধ করতে পারে। পুরো বাজারকে এখন কঠোর মনিটরিং করা উচত বলে মনে করেন তিনি।

প্রসঙ্গত, অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনে পুঁজিবাজারে কেটে গেল প্রায় দুই মাস। এ সরকারের দায়িত্ব নেওয়ার পর পুঁজিবাজারে সাত সপ্তাহের মধ্যে পাঁচ সপ্তাহেই দরপতন হয়েছে। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান মূল্যসূচক ডিএসইএক্স কমেছে ৪৭৪ পয়েন্ট। বাজার মূলধন কমেছে সাড়ে ২৮ হাজার কোটি টাকা। 

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা