প্রবা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ০৫ অক্টোবর ২০২৪ ২১:৫৬ পিএম
আপডেট : ০৫ অক্টোবর ২০২৪ ২১:৫৮ পিএম
অর্থ, বাণিজ্য এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, বিগত সময়ে অনেক অপরাধ হয়েছে। আমরা নিশ্চিত করব যাতে সবাই শাস্তি পায়। তবে এটি নিয়ম মেনে হবে। আমরা কিছুদিনের জন্য এসেছি। সব কাজ করতে পারব না, তবে একটা মেসেজ দেওয়ার চেষ্টা করব আর্থিক খাতে অপরাধ করে কেউ পার পাবে না।
শনিবার (৫ অক্টোবর) ইন্সটিটিউট অব চার্টার্ড সেক্রেটারিজ অব বাংলাদেশ (আইসিএসবি) আয়োজিত করপোরেট গভর্নেন্স এক্সিলেন্স অ্যাওয়ার্ড প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
ড. সালেহউদ্দিন বলেন, ‘বাংলাদেশের মানুষ কাজ করতে আগ্রহী, সবাইকে কাজে লাগাতে হবে। আমাদের যে জনশক্তি আছে তাকে সঠিকভাবে কাজে লাগাতে পারলে দেশের অর্থনীতি দ্রুত সময় ঘুরে দাঁড়াবে। ইতোমধ্যে অনেক সম্পদ নষ্ট করা হয়েছে। দুর্নীতির মাধ্যমে অনেক সম্পদ লুট করা হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘ব্যক্তিগত হোক আর দেশের সম্পদ হোক অপচয় বা দুর্নীতি করা যাবে না। ইতোমধ্যে যেসব দুর্নীতি হয়েছে সেগুলো খুঁজে বের করতে হবে। প্রতিটি প্রতিষ্ঠানের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে। আমাদের সবাইকে পরকালে হিসাব দিতে হবে, তবে পার্থিব হিসাব নিশ্চিত করা অডিটরদের দায়িত্ব। অডিট প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করলে প্রতিষ্ঠানগুলোর আর্থিক স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা সম্ভব।’
অনুষ্ঠানে বাংলাদেশে করপোরেট গভর্নেন্স প্রতিষ্ঠায় উৎকর্ষতা সাধন এবং কোম্পানির সামগ্রিক ব্যবস্থাপনায় শৃঙ্খলা, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার সাফল্যের স্বীকৃতি হিসেবে ৪১ টি প্রতিষ্ঠানকে করপোরেট গভর্নেন্স এক্সিলেন্স অ্যাওয়ার্ড দিয়েছে ইন্সটিটিউট অব চার্টার্ড সেক্রেটারীজ অব বাংলাদেশ (আইসিএসবি)। রাজধানীর সোনারগাঁও হোটেলের গ্র্যান্ড বলরুমে ‘১১তম আইসিএসবি ন্যাশনাল অ্যাওয়ার্ড ফর করপোরেট গভর্ন্যান্স এক্সিলেন্স, ২০২৩’ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে আইসিএসবি।
ড. সালেহউদ্দিন বলেন, ‘বেসরকারি খাত এর প্রতিষ্ঠানগুলোকে শক্তিশালী করতে হবে। কারণ দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের বেশির ভাগই হয় বেসরকারি খাতে। আমাদেরকে আস্থা ধরে রাখতে হবে। ব্যাংকিং খাতে আস্থার সংকট তৈরি হয়েছে, আমরা এর নেতিবাচক ফলাফল লক্ষ্য করছি। বিনিয়োগের পরিবেশ ধরে রাখতে হবে। যদি আস্থা না থাকে তাহলে বিদেশ থেকে বিনিয়োগ আসবে না।’
তিনি বলেন, ‘যেকোনো প্রতিষ্ঠানের তিনটি অংশ থাকে। পরিচালনা পর্ষদ, ব্যবস্থাপনা পর্ষদ এবং হিসাব ব্যবস্থাপনা বিভাগ বা অডিটর প্রতিষ্ঠান। অডিটররা যদি কোম্পানির সঠিক তথ্য ব্যবস্থাপনা পর্ষদের কাছে তুলে ধরে তাহলে ওই প্রতিষ্ঠান সঠিক পথে পরিচালিত হবে। অডিটররা হলো প্রতিষ্ঠানের তৃতীয় নয়ন। তাদেরকে সব সময় সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে। অনেক পরিচালক আছেন, যারা সামান্য যোগ-বিয়োগ পর্যন্ত জানেন না। তাই অডিটরদেরকেই মুখ্য ভূমিকা পালন করতে হয়।’
আইসিএসবির নির্ধারিত মান অনুযায়ী, ২০২৩ সালে করপোরেট গভর্নেন্স, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা প্রতিষ্ঠায় কোম্পানিগুলোর প্রচেষ্টা এবং বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) করপোরেট গভর্নেন্স কোডের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণভাবে প্রাতিষ্ঠানিক কর্মকান্ড পরিচালনার ভিত্তিতে এ পুরস্কার প্রদান করা হয়। এবারের পুরস্কারের মূল প্রতিপাদ্য ছিল ‘প্রমোটিং গভর্নিং এক্সিলেন্স’।
ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘এই পুরস্কার শুধু একটি স্মারক নয়; বরং আমাদের দেশে করপোরেট শ্রেষ্ঠত্বের ক্ষেত্রে একটি মাপকাঠি। আইসিএসবি গত কয়েক দশকে করপোরেট গভর্ন্যান্সের ক্ষেত্রে একটি বিশ্বস্ত নাম হয়ে উঠেছে, যা সত্যিই প্রশংসনীয়।’
বিজয়ীদের অভিনন্দন জানিয়ে তিনি আরও বলেন, এ ধরনের স্বীকৃতির ফলে তালিকাভুক্ত কোম্পানিসমূহকে সুশাসন ও কমপ্লায়েন্সের বিষয়গুলো বজায় রাখার বিষয়ে আরও বেশি মনোযোগী হয়ে উঠছে। এই পুরস্কার প্রতিষ্ঠান ও তাদের নীতি-নির্ধারনী ও সুশাসনের ক্ষেত্রে আরও উন্নতি করার জন্য অনুপ্রাণিত করবে। আইসিএসবি করপোরেট নেতৃত্ব ও উন্নত করপোরেট সংস্কৃতি গড়ে তুলছে বলে উল্লেখ করেন তিনি।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিএসইসির চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদ, অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগের সচিব ড. মোঃ খায়েরুজ্জামান মজুমদার, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব সেলিম উদ্দিন এবং অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের সচিব ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান মো. আব্দুর রহমান খান, এফসিএমএ। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন করপোরেট গভর্ন্যান্স কমিটির চেয়ারম্যান এবং আইসিএসবির সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট এম নুরুল আলম এফসিএস।
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ পিএলসি ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ পিএলসির তালিকাভুক্ত কোম্পানিসমূহের মধ্য থেকে ১৪ টি ক্যাটাগরিতে বিজয়ী ৪১ টি কোম্পানিকে ক্রেস্ট ও সার্টিফিকেট প্রদান করেন প্রধান অতিথি ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ। গোল্ড, সিলভার ও ব্রোঞ্জ- এই তিনটি ক্যাটাগরিতে কোম্পানিসমূহকে পুরষ্কার প্রদান করা হয়।
জেনারেল ব্যাংকিং সেক্টরে গোল্ড অ্যাওয়ার্ড অর্জন করেছে ইস্টার্ন ব্যাংক পিএলসি; ব্র্যাক ব্যাংক পিএলসি সিলভার এবং সিটি ব্যাংক পিএলসি ব্রোঞ্জ অ্যাওয়ার্ড অর্জন করেছে। তবে ইসলামিক ব্যাংকিং ক্যাটাগরিতে কোনো কোম্পানি পুরস্কারের জন্য বিবেচিত হয়নি।
নন-ব্যাংকিং ফাইন্যান্সিয়াল ইন্সটিটিউশন ক্যাটাগরিতে গোল্ড অ্যাওয়ার্ড অর্জন করেছে আইডিএলসি ফাইন্যান্স পিএলসি; আইপিডিসি ফাইন্যান্স পিএলসি সিলভার এবং ডিবিএইচ ফাইন্যান্স পিএলসি ব্রোঞ্জ অ্যাওয়ার্ড অর্জন করেছে।
জেনারেল ইনস্যুরেন্স ক্যাটাগরিতে গোল্ড অ্যাওয়ার্ড অর্জন করেছে সিটি ইনস্যুরেন্স পিএলসি; গ্রীন ডেল্টা ইনস্যুরেন্স পিএলসি সিলভার এবং সেনা ইনস্যুরেন্স পিএলসি ব্রোঞ্জ অ্যাওয়ার্ড অর্জন করেছে।
লাইফ ইনস্যুরেন্স ক্যাটাগরিতে সিলভার অ্যাওয়ার্ড অর্জন করেছে প্রগতি লাইফ ইনস্যুরেন্স লিমিটেড এবং ন্যাশনাল লাইফ ইনস্যুরেন্স পিএলসি ব্রোঞ্জ অ্যাওয়ার্ড অর্জন করেছে।
ফার্মাসিউটিক্যালস ও কেমিক্যাল ক্যাটাগরিতে গোল্ড অ্যাওয়ার্ড অর্জন করেছে স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস পিএলসি; দি ইবনে সিনা ফার্মাসিউটিক্যাল ইন্ডাস্ট্রি পিএলসি সিলভার এবং দি একমি ল্যাবরেটরিজ লিমিটেড ও নাভানা ফার্মাসিউটিক্যালস পিএলসি উভয়েই ব্রোঞ্জ অ্যাওয়ার্ড অর্জন করেছে।
টেক্সটাইল ও আরএমজি ক্যাটাগরিতে গোল্ড অ্যাওয়ার্ড অর্জন করেছে প্যারামাউন্ট টেক্সটাইল পিএলসি; মতিন স্পিনিং মিলস পিএলসি সিলভার এবং স্কয়ার টেক্সটাইল পিএলসি ও শাশা ডেনিমস লিমিটেড উভয়েই ব্রোঞ্জ অ্যাওয়ার্ড অর্জন করেছে।
ফুড ও অ্যালায়েড ক্যাটাগরিতে গোল্ড অ্যাওয়ার্ড অর্জন করেছে ইউনিলিভার কনজিউমার কেয়ার লিমিটেড; অলিম্পিক ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড সিলভার এবং অ্যাগ্রিকালচারাল মার্কেটিং কোম্পানি লিমিটেড ব্রোঞ্জ অ্যাওয়ার্ড অর্জন করেছে। ইনফরমেশন অ্যান্ড কমিউনিকেশন টেকনলজি ক্যাটাগরিতে গোল্ড অ্যাওয়ার্ড অর্জন করেছে আইটি কনসালটেন্টস পিএলসি; এডিএন টেলিকম লিমিটেড সিলভার এবং বিডিকম অনলাইন লিমিটেড ও আমরা টেকনলজিস লিমিটেড উভয়েই ব্রোঞ্জ অ্যাওয়ার্ড অর্জন করেছে।
ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি ক্যাটাগরিতে গোল্ড অ্যাওয়ার্ড অর্জন করেছে ওয়ালটন হাই-টেক ইন্ডাস্ট্রিজ পিএলসি; সিঙ্গার বাংলাদেশ লিমিটেড সিলভার এবং বিএসআরএম স্টিলস লিমিটেড ব্রোঞ্জ অ্যাওয়ার্ড অর্জন করেছে।
ম্যানুফ্যাকচারিং ক্যাটাগরিতে গোল্ড অ্যাওয়ার্ড অর্জন করেছে লাফার্জহোলসিম বাংলাদেশ লিমিটেড; আরএকে সিরামিকস (বাংলাদেশ) লিমিটেড সিলভার এবং ইনডেক্স অ্যাগ্রো ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড ও ম্যারিকো বাংলাদেশ লিমিটেড উভয়েই ব্রোঞ্জ অ্যাওয়ার্ড অর্জন করেছে। ফুয়েল অ্যান্ড পাওয়ার ক্যাটাগরিতে গোল্ড অ্যাওয়ার্ড অর্জন করেছে ইউনাইটেড পাওয়ার জেনারেশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড; এমজেএল বাংলাদেশ পিএলসি সিলভার এবং লিনডে বাংলাদেশ লিমিটেড ব্রোঞ্জ অ্যাওয়ার্ড অর্জন করেছে। সার্ভিস ক্যাটাগরিতে গোল্ড অ্যাওয়ার্ড অর্জন করেছে ইউনিক হোটেল অ্যান্ড রিসোর্টস পিএলসি এবং ইস্টার্ন হাউজিং লিমিটেড সিলভার অ্যাওয়ার্ড অর্জন করেছে। টেলিকমিউনিকেশন্স ক্যাটাগরিতে গোল্ড অ্যাওয়ার্ড অর্জন করেছে গ্রামীণফোন লিমিটেড; রবি আজিয়াটা পিএলসি সিলভার এবং বাংলাদেশ সাবমেরিন কেবলস পিএলসি ব্রোঞ্জ অ্যাওয়ার্ড অর্জন করেছে।
অনুষ্ঠানে সমাজের বিশিষ্টজন, সরকারি কর্মকর্তা, পেশাজীবী, বিভিন্ন করপোরেট প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান, পরিচালক, ব্যবস্থাপনা পরিচালক, ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা সহ ব্যবসায়িক নেতারা উপস্থিত ছিলেন।