× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

আমদানি কমায় উৎপাদন ব্যাহত

আহমেদ ফেরদাউস খান

প্রকাশ : ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১২:১৫ পিএম

গ্রাফিক্স : প্রবা

গ্রাফিক্স : প্রবা

দুই বছরের বেশি সময় ধরে দেশে ডলার সংকট বিরাজ করছে। তাই সংকট কাটাতে আমদানিতে কড়াকড়ি আরোপ করা হয়। মূলধনি যন্ত্রপাতি আমদানি কমায় কমেছে শিল্প খাতের উৎপাদন। সঙ্গে বেড়েছে সুদহার ও গ্যাস-বিদ্যুৎ সংকট। এসব মিলে বড় বিপদে উদ্যোক্তরা। অন্যদিক রাজনৈতিক ও শ্রমিক অসন্তোষে বিপদ যেন আরও বেড়েছে। 

উদ্যোক্তারা বলছেন, আমদানি কমিয়ে ডলার-বাজার নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা অর্থনীতির জন্য হিতে বিপরীত হয়েছে। এতে অর্থ পাচার রোধ করা যায়নি। ডলার সংকট কমানোও যায়নি। তবে জিডিপি প্রবৃদ্ধি কমছে, সরকার রাজস্ব হারানোর পাশাপাশি ব্যাংকের আয়ও কমে যাচ্ছে। অনেক বড় কোম্পানি মুনাফা বা বিনিয়োগের অর্থ ফেরত নিতে পারছে না। আবার কাঁচামাল আনতে না পেরে অনেক কারখানা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। কোনো কোনো কারখানা সক্ষমতার তুলনায় কম উৎপাদন করছে। ফলে সময়মতো ঋণ পরিশোধ করতে না পারায় খেলাপি হয়ে পড়ছেন অনেকে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের পণ্য আমদানির সবশেষ যে তথ্য প্রকাশ করেছে, তাতে দেখা যায়, ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে (জুলাই-আগস্ট) মূলধনি যন্ত্রপাতি আমদানির জন্য ২৮ কোটি ৫৫ লাখ ডলারের এলসি (ঋণপত্র) খুলেছেন শিল্পদ্যোক্তারা। এ অঙ্ক গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ৪৩ দশমিক ৭১ শতাংশ কম। ২০২৩ সালের জুলাই-আগস্ট মাসে মূলধনি যন্ত্রপাতি আমদানির জন্য প্রায় দ্বিগুণ ৫০ কোটি ৭৩ লাখ ডলারের এলসি খুলেছিলেন শিল্পোদ্যোক্তারা।

এর অর্থ হচ্ছে, ব্যবসায়ী-শিল্পপতিরা কলকারখানা স্থাপন বা সম্প্রসারণে আগের চেয়ে যন্ত্রপাতি আমদানির ঋণপত্র (এলসি) খোলার পরিমাণ অনেক কমিয়ে দিয়েছেন, যা দেশে বিনিয়োগ ও উৎপাদন কমার ইঙ্গিত দিচ্ছে।

মূলধনি যন্ত্রপাতি আমদানি করে উদ্যোক্তারা সাধারণত নতুন শিল্প-কারখানা স্থাপন বা কারখানার সম্প্রসারণ করে থাকেন। অর্থাৎ শিল্প খাতে বিনিয়োগ বাড়ে। বিনিয়োগ বাড়লে নতুন কর্মসংস্থান তৈরি হয়। মানুষের ক্রয়ক্ষমতা বাড়ে। সামগ্রিক অর্থনীতিতে গতিশীলতা আসে।

কিন্তু কেন্দ্রীয় ব্যাংক যে তথ্য দিচ্ছে, তাতে এটা পরিষ্কার বোঝা যাচ্ছে, আগামী দিনগুলোতে দেশে শিল্প খাতে বিনিয়োগ কমবে। আর বিনিয়োগ কমা মানে নতুন কর্মসংস্থান তৈরি হবে না। মানুষের ক্রয়ক্ষমতা বাড়বে না। সামগ্রিক অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বলে জানিয়েছেন অর্থনীতিবিদরা।

অর্থনীতির গবেষক বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) জ্যেষ্ঠ গবেষণা পরিচালক মনজুর হোসেন বলেন, ‘ক্যাপিটাল মেশিনারি আমদানি কমা মানে, ভবিষ্যতে বিনিয়োগ কমে যাওয়া। অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। কিন্তু এ কথাও ঠিক যে, একটি কঠিন সময় পার করছি আমরা। ডলারের দাম অস্বাভাবিক বেড়ে গেছে।’

এদিকে শিল্প খাত নিয়ে হতাশার এক পরিসংখ্যান দিয়েছে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস)। সংস্থাটির সর্বশেষ পরিসংখ্যানের তথ্যমতে, ২০২০-২১ অর্থবছরে শিল্প খাতের প্রবৃদ্ধি ছিল ১০ দশমিক ২৯ শতাংশ। পরের ২০২১-২২ অর্থবছরে তা কমে দাঁড়ায় ৯ দশমিক ৮৬ শতাংশ। পরবর্তী সময়ে ২০২২-২৩ অর্থবছরে পতনের ধারা অব্যাহত থাকায় এ খাতের প্রবৃদ্ধি ছিল ৮ দশমিক ৩৭ শতাংশ। সর্বশেষ গত ২০২৩-২৪ অর্থবছরে শিল্পের প্রবৃদ্ধি গত চার বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন স্তরে নেমে আসে। সে বছর প্রবৃদ্ধি ছিল মাত্র ৬ দশমিক ৬৬ শতাংশ। 

বিবিএসের পরিসংখ্যানে আরও দেখা যায়, গত তিন বছরে বিনিয়োগের ক্ষেত্রেও তেমন কোনো পরিবর্তন ঘটেনি, যা সার্বিক শিল্প প্রবৃদ্ধি ও কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছিল। ২০২১-২২ অর্থবছরে জিডিপির তুলনায় বিনিয়োগ হার ছিল ৩২ শতাংশের বেশি। পরের ২০২২-২৩ অর্থবছরে তা নেমে আসে ৩০ দশমিক ৯৫ শতাংশে। সর্বশেষ ২০২৩-২৪ অর্থবছরেও তা ৩০ দশমিক ৯৮ শতাংশে সীমাবদ্ধ ছিল। 

তৈরি পোশাক শিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি ফারুক হাসান প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, ‘মূলধনি যন্ত্রপাতি আমদানি কমা মানে বিনিয়োগ কমে যাওয়া। সব ধরনের বিনিয়োগ কমে যাওয়া। যখনই এসব জিনিসের আমদানি কমে যায়, তখন মানুষজন বিনিয়োগ কমিয়ে দেয়। বিনিয়োগ যখন কম হবে, এমপ্লেয়িও কমে যায়।’ 

তিনি বলেন, ‘শিল্প খাতে এখন গ্যাস অনেক কম পাওয়া যাচ্ছে। নতুন করে কোনো গ্যাস পাওয়া যাচ্ছে না। গ্যাস সার্ভিস নির্বিঘ্ন করতে এলএমজি-এলপিজি আমদানি করা উচিত। সরকারের এ খাতে আরও বিনিয়োগ বাড়াতে হবে। আর গ্যাস সাপ্লাই বাড়ালে বিনিয়োগ আরও বাড়বে।’ 

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য ঘেঁটে দেখা যায়, গত ৩০ জুন শেষ হওয়া ২০২৩-২৪ অর্থবছরে মূলধনি যন্ত্রপাতি আমদানির জন্য ২৬৩ কোটি ১৪ লাখ ডলারের এলসি খুলেছিলেন উদ্যোক্তারা, যা ছিল আগের ২০২২-২৩ অর্থবছরের চেয়ে ১১ শতাংশ কম। ২০২২-২৩ অর্থবছরে ৪৮৫ কোটি ডলারের মূলধনি যন্ত্রপাতি আমদানি হয়েছিল, যা ছিল ২০২১-২২ অর্থবছরের তুলনায় ১১ দশমিক ৩ শতাংশ কম।

২০২১-২২ অর্থবছরে মূলধনি যন্ত্রপাতি আমদানির জন্য রেকর্ড ৬৪৬ কোটি ৩৭ লাখ ডলারের এলসি খুলেছিলেন উদ্যোক্তারা, যা ছিল আগের ২০২০-২১ অর্থবছরের চেয়ে ১৩ দশমিক ৩০ শতাংশ বেশি।

এই দুই মাসে শিল্পের মধ্যবর্তী কাঁচামাল আমদানির এলসি খোলার পরিমাণ কমেছে প্রায় ১০ শতাংশ। ৭৩ কোটি ৫৬ লাখ ডলারের এলসি খোলা হয়েছে। গত বছরের একই সময়ে এই পরিমাণ ছিল ৮১ কোটি ৫৬ লাখ ডলার।

বাংলাদেশ চেম্বার অব ইন্ডাস্ট্রিজের (বিসিআই) সভাপতি আনোয়ার-উল আলম চৌধুরী পারভেজ বলেন, ‘করোনা মহামারি, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, ডলারের দর বৃদ্ধিÑ একের পর এক ধাক্কায় বেশ কিছুদিন ধরেই আমাদের অর্থনীতি চাপের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে পোশাক শিল্পের অস্থিরতা আমাদের আরেক চিন্তার মধ্যে ফেলে দিয়েছে। এমনটি চলতে থাকলে তো শুধু ক্যাপিটাল মেশিনারি নয়, সবকিছুর আমদানিই কমবে। অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।’

দেশের শিল্প খাত পুরোপুরি ব্যক্তিনির্ভর একটি খাত। তাই ব্যক্তি খাতের বিনিয়োগ না বাড়ায় শিল্পের প্রবৃদ্ধি কমে এসেছে বলে মনে করছেন বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগের (সিপিডি) সম্মাননীয় ফেলো অধ্যাপক ড. মোস্তাফিজুর রহমান। তিনি বলেন, ‘খেলাপি ঋণের কারণে সুদহার বাড়ানো হয়েছিল। টাকার অবমূল্যায়নের নেতিবাচক প্রভাব পড়ায় বেসরকারি বিনিয়োগ কমে এসেছে। রিজার্ভের পতন এবং সামষ্টিক অর্থনীতির স্থিতিশীলতা না থাকায় বিনিয়োগের পরিবেশও বাধাগ্রস্ত হয়েছিল। তবে এসব ঠিক হতে সময় লাগবে।’

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা