× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

ক্ষুদ্র গ্রাহক হারাচ্ছে আর্থিক প্রতিষ্ঠান

রেদওয়ানুল হক

প্রকাশ : ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ২১:৪৯ পিএম

ক্ষুদ্র গ্রাহক হারাচ্ছে আর্থিক প্রতিষ্ঠান

ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানে (এনবিএফআই) ব্যক্তি আমানতকারীর সংখ্যা আশঙ্কাজনক হারে কমছে। স্বাভাবিক নিয়মে দিনে দিনে আমানতকারীর সংখ্যা বাড়ার কথা থাকলেও উল্টো বিদ্যমান আমানতকারীরাই প্রতিষ্ঠান ছেড়ে যাচ্ছেন। মাত্র তিন মাসের ব্যবধানে সাড়ে ৪৭ হাজারের বেশি আমানতকারী আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোতে তাদের হিসাব বন্ধ করে অন্যত্র চলে গেছেন। তবে কিছু প্রাতিষ্ঠানিক আমানতকারীর ওপর ভর করে সার্বিক খাতে মোট আমানতে তেমন কোন পরিবর্তন হয়নি। 

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ব্যাপারে আস্থাহীনতা ও অব্যবস্থাপনার কারণেই এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। তবে প্রতিষ্ঠানগুলো বলছে, মূল্যস্ফীতির চাপ এবং বন্ডে সুদহার বেড়ে যাওয়ার প্রেক্ষাপটে কিছু ক্ষুদ্র আমানতকারী তাদের হিসাব বন্ধ করেছেন। তবে বড় আমানতকারীদের অংশগ্রহণে সার্বিক আমানত কমেনি।

তথ্য বলছে, ২০২২ সাল থেকেই ধারাবাহিকভাবে কমছে আমানতকারীর সংখ্যা। সর্বশেষ চলতি বছরের এপ্রিল থেকে জুন সময়ে ৪৭ হাজার আমানতকারী আর্থিক প্রতিষ্ঠান ছেড়ে চলে গেছেন। এছাড়া আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোতে এখন আমানত সংগ্রহের চেয়ে ঋণ বিতরণের পরিমাণ বাড়ছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য জানা গেছে।

খাত-সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ঋণ জালিয়াতিসহ নানা অনিয়মের কারণে বেশ কিছু আর্থিক প্রতিষ্ঠান দুর্বল হয়ে পড়েছে। এসব কারণে সাধারণ মানুষও এখন আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোতে আমানত রাখতে ভয় পান। যার কারণে প্রতি মাসেই আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর আমানতকারীর সংখ্যা কমছে। আর বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে যেভাবে তদারকি করার দরকার ছিল, সেটাও হচ্ছে না। এখন গ্রাহকদের আস্থা ফেরাতে বাংলাদেশ ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে যথাযথ উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ ফাইন্যান্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক কায়সার হামিদ প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, ‘উচ্চ মূল্যস্ফীতির চাপে কিছু ক্ষুদ্র আমানতকারী তাদের হিসাব বন্ধ করেছে। কয়েকটি আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ক্ষুদ্র আমানত হিসাব প্রডাক্ট ছিল, যেগুলো এখন কম সাড়া পাওয়া যাচ্ছে। তবে বড় আমানতকারী কমেনি। বিশেষ করে প্রাতিষ্ঠানিক আমানত বেড়েছে। ফলে সার্বিক আমানত প্রবৃদ্ধি ইতিবাচক রয়েছে।’

নানা অনিয়মের কারণে মানুষ আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর উপর থেকে আস্থা হারিয়ে ফেলার কারণে আমানত তুলে নিচ্ছে কি না-এমন প্রশ্নের জবাবে গোলাম সরওয়ার ভুঁইয়া বলেন, ‘বিভিন্ন কারণে কিছু আস্থার সংকট আছে। আমরা চেষ্টা করতেছি কীভাবে মানুষের আস্থা বাড়ানো যায়।’

প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২৪ সালের মার্চ শেষে দেশের আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর আমানতকারীর সংখ্যা ছিল ৪ লাখ ২৭ হাজার ৩৪১ জন। আর জুন শেষে অর্থাৎ তিন মাস পর আমানতকারীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৩ লাখ ৭৯ হাজার ৭৩৭ জন। সেই হিসাবে তিন মাসে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর আমানতকারীর সংখ্যা কমেছে ৪৭ হাজার ৬০৪ জন ।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকে (জানুয়ারি-মার্চ) আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর আমানতকারীর সংখ্যা কমেছিল ৩ হাজার ৮৮০ জন। এর আগে ২০২৩ সালের চতুর্থ প্রান্তিকে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর আমানতকারীর সংখ্যা কমেছিল ২৫ হাজার ৭৮২ জন। এর আগের তিন মাসে (এপ্রিল-জুন) এ সংখ্যা কমেছিল ১৮ হাজার ৪৯৩ জন। এছাড়া ২০২৩ সালের প্রথম প্রান্তিকে (জানুয়ারি-মার্চ) এ সংখ্যা কমেছিল ৩৫ হাজার ৫ জন।

আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর সংগঠন বাংলাদেশ লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্স কোম্পানিজ অ্যাসোসিয়েশনের (বিএলএফসিএ) চেয়ারম্যান ও ইন্ডাস্ট্রিয়াল অ্যান্ড ইনফ্রাস্ট্রাকচার ডেভেলপমেন্ট ফাইন্যান্স কোম্পানি (আইআইডিএফসি) লিমিটেডের এমডি ও সিইও মো. গোলাম সরওয়ার ভূঁইয়া বলেন, জুন প্রান্তিকে আমানতকারীর সংখ্যা কমেছে। বাস্তবতা হলো এই সময়ে সরকারের বিল-বন্ডের সুদহার বেশি থাকায় আমানতকারীরা আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে তাদের আমানত তুলে সেখানে রেখেছে। মানুষতো টাকা রাখে লাভের জন্য। আর যেখানে বেশি লাভ পাবে সেখানেই তো তারা যাবেন।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ হালনাগাদ প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, জুন প্রান্তিকে এসব প্রতিষ্ঠানে আমানত বেড়েছে মাত্র ১ দশমিক ৮৩ শতাংশ। তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিক (এপ্রিল-জুন) শেষে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর আমানত দাঁড়িয়েছে ৪৫ হাজার ১১৬ কোটি ৮ লাখ টাকা। আর প্রথম প্রান্তিক (জানুয়ারি-মার্চ) শেষে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর আমানত ছিল ৪৪ হাজার ৩০৪ কোটি ৬৯ লাখ টাকা। সেই হিসাবে তিন মাসে আমানত বেড়েছে ৮ হাজার ১১৩ কোটি ৯ লাখ টাকা।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২৪ সালের মার্চ শেষে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর ঋণ বিতরণের স্থিতি ছিল ৭৪ হাজার ৫২৯ কোটি ৭৬ লাখ টাকা। আর তিন মাস পর (এপ্রিল-জুন) আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর ঋণের স্থিতি দাঁড়িয়েছে ৭৪ হাজার ৯১৮ কোটি ৪১ লাখ টাকা। সে হিসেবে তিন মাসে ঋণ বিতরণ বেড়েছে ৩৮ হাজার ৮৬৫ কোটি টাকা।

এদিকে আলোচ্য এই প্রান্তিকে সবেচেয়ে বেশি আমানত কমেছে চট্টগ্রাম বিভাগে। চলতি বছরের মার্চ শেষে এ বিভাগে আমানত ছিল ২১ হাজার ৭৩৫ কোটি ২ লাখ টাকা। আর জুন শেষে এ বিভাগের আমানত দাঁড়িয়েছে ২০ হাজার ৬৪৪ কোটি টাকা।

আর আমানত কমার দিক থেকে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে খুলনা বিভাগ। এ বিভাগে জুন শেষে আমানত দাঁড়িয়েছে ৩ হাজার ৪৭১ কোটি ৮ লাখ টাকা। আর মার্চ শেষে এ বিভাগে আমানত ছিল ৩ হাজার ৫৪০ কোটি ৭ লাখ টাকা। সে হিসেবে তিন মাসে খুলনা বিভাগে আমানত কমেছে ৬৮৯ কোটি টাকা।

অপরদিকে ঢাকা বিভাগে আমানত বেড়েছে ২ শতাংশ, রাজশাহী বিভাগে বেড়েছে ১ দশমিক ২৭ শতাংশ, সিলেটে বেড়েছে ১ দশমিক ১২ শতাংশ এবং রংপুর বিভাগে বেড়েছে ৭ দশমিক ৩৯ শতাংশ।

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা