প্রবা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ২১:১৮ পিএম
চৌধুরী নাফিজ সরাফাত।
ব্যাংক ও পুঁজিবাজার কেলেঙ্কারিতে আলোচিত চৌধুরী নাফিজ সরাফাত ও তার পরিবারের মালিকানাধীন সম্পদ ব্যবস্থাপনা প্রতিষ্ঠান স্ট্র্যাটেজিক ইক্যুইটি ম্যানেজমেন্টের অনিয়ম তদন্ত করবে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)।
অতিরিক্ত পরিচালক মোহাম্মদ এমদাদুল হককে প্রধান করে তিন সদস্যের একটি কমিটি গঠন করেছে বিএসইসি। এই কমিটিকে ৬০ দিনের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে। কমিটির অন্যন্য সদস্যরা হলেন- বিএসইসির উপ পরিচালক মো. রাফিকুন্নবী ও সহকারী পরিচালক মোহাম্মদ আবু হেনা মোস্তফা।
জানা যায়, বিকল্প বিনিয়োগের নামে পদ্মা ব্যাংক থেকে কয়েকশ কোটি টাকার বেশি সরানো হয় স্ট্র্যাটেজিক ইক্যুইটি ম্যানেজমেন্ট কোম্পানিতে। পরে সেই অর্থ নাফিজ সরাফতের মালিকানাধীন অন্যান্য কোম্পানিতে বিনিয়োগ করা হয়।
নাফিজ সরাফাত ও তার পরিবারের মালিকানাধীন স্ট্র্যাটেজিক ইক্যুইটি ম্যানেজমেন্ট একটি সম্পদ ব্যবস্থাপক প্রতিষ্ঠান হিসেবে ২০২৩ সালে বিএসইসির নিবন্ধন পায়। এই প্রতিষ্ঠানের তত্ত্বাবধানে চারটি মিউচুয়াল ফান্ড রয়েছে। এই চারটি ফান্ডের প্রাথমিক আকার ৩২৩ কোটি টাকা। এর মধ্যে প্রায় পৌনে দুইশো কোটি টাকার দুটি তহবিলের উদ্যোক্তা বা স্পন্সর পদ্মা ব্যাংক সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান। আবার দীর্ঘদিন পদ্মা ব্যাংকের চেয়ারম্যান ছিলেন নাফিজ সরাফাত। অর্থাৎ নিজের স্বার্থসংশ্লিষ্ট এক প্রতিষ্ঠান থেকে নিজেরই আরেক প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগের নামে অর্থ সরিয়ে নেন তিনি।
বিএসইসি এক চিঠিতে জানায়, তদন্ত কমিটি অল্টারনেটিভ ইনভেস্টমেন্ট ফান্ড অব বাংলাদেশে শুরু থেকে বর্তমান পর্যন্ত সব বিনিয়োগ কার্যক্রম পর্যালোচনা করবেন। এসব বিনিয়োগ বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনে বিধিমালা, ২০১৫ এর বিনিয়োগের প্যারামিটার এবং গঠনমূলক নথিগুলোর সঙ্গে কতটা সঙ্গতিপূর্ণ তা তদন্ত করবেন তারা। এছাড়া ফান্ডের সব বিনিয়োগের বৈধ প্রমাণ সংগ্রহ এবং পরীক্ষা; ফান্ড ম্যানেজার ও ট্রাস্টির সঙ্গে জড়িত প্রত্যেকের বিনিয়োগের বিপরীতে স্বার্থের দ্বন্দ্ব (কনফ্লিক্ট অব ইন্টারেস্ট) খতিয়ে দেখা; ফান্ডের ব্যাংকিং লেনদেনের তথ্য সংগ্রহ; ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানে রাখা মেয়াদি আমানত এবং অন্যান্য অর্থ থেকে প্রাপ্ত সুদ বা লাভের বৈধ প্রমাণ সংগ্রহ করবেন তারা।
পাশাপাশি তালিকাভুক্ত সিকিউরিটিজ এবং অ-তালিকাভুক্ত সিকিউরিটিজের বিনিয়োগ থেকে ফান্ডের লভ্যাংশ বা মূলধন লাভের বৈধ প্রমাণ সংগ্রহ এবং বিশ্লেষণ, বিএসইসির বার্ষিক ফি, ম্যানেজমেন্ট ফি, ট্রাস্টি ফিসহ ফান্ডের অপারেটিং খরচ বিশ্লেষণ এবং রিপোর্ট তৈরি, ফান্ড ম্যানেজার এবং অন্যান্য পক্ষের সুবিধার জন্য ফান্ডের ব্যাংক হিসাব থেকে অবৈধ লেনদেনের প্রমাণ সংগ্রহ, ফান্ড পরিচালনায় ম্যানেজার ও ট্রাস্টির ভূমিকা বিশ্লেষণ এবং প্রয়োজন অনুযায়ী অন্যান্য বিষয় অনুসন্ধান করবেন বিএসইসির তদন্ত কমিটি।
সংস্থাটি জানিয়েছে, তদন্ত কমিটি স্ট্র্যাটেজিক ইক্যুইটি ম্যানেজমেন্টের অলটারনেটিভ ইনভেস্টমেন্ট ফান্ড বা বিকল্প বিনিয়োগ তহবিলের বিনিয়োগ সংক্রান্ত তথ্য যাচাইয়ের পাশাপাশি বিনিয়োগের ক্ষেত্রে আইনকানুন যথাযথভাবে পরিপালন করা হয়েছে কি না- তা খতিয়ে দেখবে। এ ছাড়া বিনিয়োগের বিপরীতে তথ্যপ্রমাণ যাচাই-বাছাই, বিনিয়োগের ক্ষেত্রে কোনো ধরনের স্বার্থের সংঘাত ঘটেছে কি না- তহবিলের ব্যাংক হিসাবের হালনাগাদ তথ্য যাচাই-বাছাই, তহবিলের অর্থ ব্যাংকে জমার বিপরীতে কী পরিমাণ সুদ পেয়েছে, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগের বিপরীতে কী পরিমাণ মুনাফা পেয়েছে-এসব তথ্যও খতিয়ে দেখতে বলা হয়েছে কমিটিকে। এর বাইরে সম্পদ ব্যবস্থাপনা কোম্পানিটির বিকল্প বিনিয়োগ তহবিলের ক্ষেত্রে সম্ভাব্য যেকোনো ধরনের অনিয়মও খতিয়ে দেখবে তদন্ত কমিটি।
বিএসইসি সূত্রে জানা যায়, স্ট্র্যাটেজিক ইক্যুইটি ম্যানেজমেন্টের তত্ত্বাবধানে গঠিত বিভিন্ন তহবিলের অর্থ নানাভাবে অপব্যবহার করে নিজে ব্যক্তিগতভাবে লাভবান হয়েছেন নাফিজ সরাফাত। কিন্তু বিগত আওয়ামী লীগ শাসনামলে সরকারঘনিষ্ঠ প্রভাবশালী ব্যক্তি হওয়ায় এসব অনিয়মের বিষয়ে বিএসইসিসহ কোনো সংস্থা ব্যবস্থা নিতে পারেনি। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে দেশের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর নাফিজ সরাফাতের বিভিন্ন অনিয়ম তদন্তে মাঠে নামে বিএসইসিসহ বিভিন্ন সংস্থা।