× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

স্বস্তি ফিরছে ডলার বাজারে

রেদওয়ানুল হক

প্রকাশ : ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১৫:৫৮ পিএম

স্বস্তি ফিরছে ডলার বাজারে

দীর্ঘ সময় ধরে অস্থির দেশের ডলার বাজার। বিপুল অর্থ পাচার আর সিন্ডিকেটের কারণে ডলারের সংকট কাটছেই না। তবে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর পরিস্থিতি অনেকটা ‍উন্নতি হয়েছে। সিন্ডিকেট ভেঙে যাওয়ার পাশাপাশি বাংলাদেশ ব্যাংকের কঠোর অবস্থানের কারণে ডলার বাজারে স্থিতিশীলতা বিরাজ করছে। রেমিট্যান্স ও রপ্তানি আয়ে আশানুরূপ প্রবৃদ্ধির ফলে রিজার্ভের পতন ঠেকানো সম্ভব হয়েছে। বিশ্বব্যাংক, এডিবিসহ বিভিন্ন দাতাগোষ্ঠীর পক্ষ থেকে নতুন করে ঋণ সহায়তার প্রতিশ্রুতি মিলেছে। তাই স্বল্প সময়ের ব্যবধানে ডলার বাজারে স্বস্তি ফিরে আসবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রি পুরোপুরি বন্ধ করার কারণে এখন থেকে ধীরে ধীরে রিজার্ভের উন্নতি হবেÑ এমন প্রত্যাশা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের।

গতকাল মঙ্গলবার এক ভিডিও বার্তায় বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র হুসনে আরা শিখা বলেন, ‘গত জুলাই থেকে আগস্ট মাসে রেমিট্যান্সের প্রবাহ বেড়েছে। প্রবাসীরা বিপুল পরিমাণ রেমিট্যান্স পাঠাচ্ছেন। রিজার্ভ বৃদ্ধির বড় কারণ এটি।’

তিনি বলেন, ‘প্রবাসী আয়ের প্রবৃদ্ধির কারণে দেশে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের পরিমাণ বেড়েছে। শুধু তাই নয়, বাংলাদেশ ব্যাংক মনে করে রিজার্ভের পতন থামানো গেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভে বর্তমানে আছে ২ হাজার ৪৩০ কোটি ডলার। আর আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) বিপিএম-৬ পদ্ধতিতে এর পরিমাণ ২ হাজার কোটি ডলারের কাছাকাছি।’

হুসনে আরা শিখা বলেন, ‘সংকট কাটতে শুরু করায় ব্যাংকগুলো এখন নিজেরাই ডলার কেনাবেচা করতে পারছে। ডলারের দাম বর্তমানে ১১৮-১২০ টাকার মধ্যে রয়েছে। ব্যাংকিং চ্যানেল ও কার্ব মার্কেটে ডলারের দামের পার্থক্য এখন ১ শতাংশেরও কম। ডলারের বিনিময় হার বাজারভিত্তিক করা হয়েছে। আন্তঃব্যাংক লেনদেন সক্রিয় থাকার কারণে বৈদেশিক মুদ্রার বাজার এখন থেকে স্থিতিশীল থাকবে বলে আশা করা হচ্ছে।’

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী চলতি সেপ্টেম্বর মাসের দুই সপ্তাহে ১১৬ কোটি ৭২ লাখ ডলারের রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় (প্রতি ডলার ১২০ টাকা হিসাবে) ১৪ হাজার ৬ কোটি টাকার বেশি। সে হিসেবে প্রতিদিন আসছে ৮ কোটি ৩৪ লাখ ডলার করে। এভাবে রেমিট্যান্স আসার ধারাবাহিকতা থাকলে চলতি মাসে আড়াই বিলিয়ন ডলারের কাছাকাছি রেমিট্যান্স আসতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, চলতি সেপ্টেম্বরের শুরু থেকেই রেমিট্যান্স আসার গতি ভালো রয়েছে। এ ধারা অব্যাহত থাকলে মাসটিতে আড়াই বিলিয়ন ডলারের রেমিট্যান্স আসতে পারে। বৈধ পথে রেমিট্যান্স আসার পেছনে সচেতনতা কাজ করছে। আবার বৈধ পথে ডলারের দরবৃদ্ধিতে হুন্ডি থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন তারা। এতে বাড়ছে রেমিট্যান্স আসার গতি।

তবে ডলার বাজার পর্যালোচনা করে দেখা যায়, এখনও পুরোপুরি স্থিতিশীলতা ফিরে আসেনি। বাংলাদেশ ব্যাংকের বেঁধে দেওয়া দামে খোলা বাজারে (কার্ব মার্কেট) ডলার লেনদেন নেই। নির্ধারিত দরের চেয়ে ২ থেকে ৪ টাকার ব্যবধান রয়েছে। জোগানের চেয়ে চাহিদার ঘাটতি থাকায় বাড়তি দরে ডলার বেচাকেনা হয় মানি এক্সচেঞ্জের পার্শ্ববর্তী গলিপথ কিংবা হোটেল-রেস্তোরাঁয়। দরদাম নিয়ে ক্রেতা-বিক্রেতার মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা যায়। সরেজমিনে ঢাকার মতিঝিল দিলকুশা, ফকিরাপুল, পল্টন এলাকায় এসব চিত্রের দেখা মিলছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা অনুযায়ী, গত রবিবার রেমিট্যান্স ও আন্তঃব্যাংক ডলারের রেট ছিল ১২০ টাকা। আর খোলা বাজারের ক্রয় দর নির্ধারণ করা ছিল না। কিন্তু সর্বোচ্চ বিক্রয় দর ছিল ১২১ টাকা। সরেজমিন রাজধানীর মানি এক্সচেঞ্জগুলোর বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানে ডলার নেই বলা হচ্ছে। তবে দোকান থেকে বের হলেই পাশে অপেক্ষমাণ অপরিচিতরা ডলার কেনাবেচার প্রস্তাব দেন। তারা বেশি দামে গলিপথ বা হোটেল রেস্তোরাঁয় ডলার বিক্রি করছেন। এভাবেই ডলার কিনে ঠকছেন অনেকে। ক্রেতাদের অভিযোগ, বাজার মনিটরিং কমে যাওয়ার সুযোগ নিয়ে অবৈধ ডলার সিন্ডিকেট বাজার অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করছে। বিক্রেতারা বলছেন, ডলার সরবরাহের ওপর ভিত্তি করে বাজার ওঠানামা করছে।

ক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ১২১ থেকে ১২৪ টাকা পর্যন্ত দরে তারা ডলার কিনছেন। তবে সমস্যা হলো মানি এক্সচেঞ্জ প্রতিষ্ঠানগুলোতে ডলার পাওয়া যাচ্ছে না, কিনতে হচ্ছে দালালের কাছ থেকে। মানি এক্সচেঞ্জগুলোর কয়েকটিতে ডলার কেনা ১২০ ও বিক্রি ১২১ টাকা লেখা থাকলেও বিক্রির কোনো দৃশ্য চোখে পড়েনি। ক্রেতা দেখলেই দোকানের বাইরে নিয়ে দরদাম চালাচ্ছে কিছু ব্যক্তি।

মানি চেঞ্জার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সভাপতি এম এস জামান বলেন, ‘খোলা বাজারে ডলারের জোগান আগের চেয়ে কমেছে। এখন চাহিদামতো ডলার পাওয়া যাচ্ছে না। এজন্য বাজার বিষয়ে নতুন গভর্নরকে কিছু প্রস্তাব দিয়েছি। আশা করি পরিস্থিতি দ্রুতই উন্নতি হবে।’

রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রি বন্ধ

রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রি বন্ধ করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর। সম্প্রতি এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ তথ্য জানান। তিনি বলেন, ‘রিজার্ভ বাড়াতে বেশ কিছু উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে আমরা রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রি বন্ধ করে দিয়েছি। অন্যদিকে, রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়ছে। ডলারের বাজার স্থিতিশীল আছে। এ ছাড়া আইএমএফসহ অন্যান্য দাতাগোষ্ঠীর কাছ থেকেও সহায়তা পাওয়ার আশ্বাস মিলেছে। ফলে এখন আর রিজার্ভ কমবে না। ধীরে ধীরে বাড়বে।

মূলত, ২০২২-২৩ অর্থবছরের পর থেকে কেন্দ্রীয় ব্যাংক রিজার্ভ থেকে ব্যাংকগুলোতে ডলার বিক্রি করতে শুরু করে। কারণ ডলার সংকটে ভুগতে থাকা ব্যাংকগুলো আমদানি বিল মেটাতে হিমশিম খাচ্ছিল। ফলে দেশের রিজার্ভ বর্তমানে ঝুঁকিপূর্ণ পর্যায়ে নেমে এসেছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশ ব্যাংক ২০২১-২২ অর্থবছরে ৭ দশমিক ৬২ বিলিয়ন ডলার, ২০২২-২৩ অর্থবছরে ১৩ দশমিক ৫৮ বিলিয়ন ডলার এবং ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ১২ দশমিক ৭৯ বিলিয়ন ডলার দিয়েছে ব্যাংকগুলোকে।

অন্যদিকে ডলারের অভাবসহ বিভিন্ন কারণে চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম দুই মাস জুলাই ও আগস্টে দেশে পণ্যের আমদানি এলসি বা ঋণপত্র খোলার পরিমাণ এবং এলসি দায় নিষ্পত্তি উল্লেখযোগ্য হারে কমেছে। সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, প্রয়োজন অনুযায়ী ডলারের অভাব ছাড়াও সাম্প্রতিক রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে এলসি কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত হয়েছে। গত জুলাই মাসজুড়ে ছাত্র আন্দোলনের কারণে ইন্টারনেট সেবা বন্ধ থাকা এবং ব্যাংকে সাধারণ ছুটি এলসি কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত করেছে। এরপর গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ব্যাংকের মালিকানায় ব্যাপক পরিবর্তনসহ সার্বিক ব্যাংক খাতের অস্থির পরিস্থিতি বিরাজ করছে। তাই স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে কার্যক্রম কিছুটা হলেও থমকে গেছে। তবে পরিস্থিতির দ্রুতই উন্নতি হচ্ছে।

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা